• এফ এ কাপ
  • " />

     

    টটেনহামকে হারিয়ে ফাইনালে ইউনাইটেড

    টটেনহামকে হারিয়ে ফাইনালে ইউনাইটেড    

    একজন প্রকৃত গোলদাতার অভাব মেটাতেই গত জানুয়ারিতে তাকে দলে ভিড়িয়েছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। মাস চারেক কেটে গেলেও নিজেকে মেলে ধরতে পারছিলেন না একেবারেই। ‘রেড ডেভিল’দের হয়ে মাত্র ২ বার লক্ষ্যভেদ করেছিলেন, যা ডিফেন্ডার ক্রিস স্মলিংয়ের চেয়েও কম (৩)। ইউনাইটেডের প্রয়োজনে তিনি কি পারবেন সামর্থ্যের জানান দিতে- ম্যাচের শুরুতেই এমন প্রশ্ন রেখেছিলেন ধারাভাষ্যকার। গোল করে এবং দলকে এফএ কাপের ফাইনালে নিয়ে গিয়ে সেই প্রশ্নের উত্তরটা মাঠেই দিলেন অ্যালেক্সিস সানচেজ। টটেনহাম হটস্পারকে ২-১ গোলে হারিয়ে এফএ কাপের ফাইনালে চলে গেছে ইউনাইটেড। ‘রেড ডেভিল’দের হয়ে জয়সূচক গোলটি করেছেন অ্যান্ডার হেরেরা।

    এফএ কাপ সেমিফাইনালে এই নিয়ে টানা ৮ বার বাদ পড়ল টটেনহাম। ১৯৯৭, ২০০৮ এবং ২০০৯- এর পর ইংল্যান্ডের সবচেয়ে পুরনো টুর্নামেন্টে টটেনহামের বিপক্ষে অপরাজিত থাকার রেকর্ডটা অক্ষুণ্ণ রাখল ইউনাইটেড (৪)। এফএ কাপের ইতিহাসে আর্সেনালের সাথে যৌথভাবে সবচেয়ে বেশিবার সেমিফাইনাল খেলার রেকর্ডটা (২৯) জয় দিয়েই স্মরণীয় করে রাখল হোসে মরিনহোর দল।

    ওয়েম্বলিতে নিজেদের সাম্প্রতিক রেকর্ডটা সুবিধার না হলেও ম্যাচের শুরু থেকেই ইতিহাস বদলানোর প্রতিজ্ঞা নিয়েই যেন মাঠে নেমেছিল স্পার্স। শুরু থেকেই হ্যারি কেইন, ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেনদের আটকাতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছিল ইউনাইটেডের রক্ষণভাগ। ‘হাই প্রেসিং’ ফুটবলে ইউনাইতটেডকে চাপে রেখে ম্যাচের শুরুতেই লিড নেয় মরিসিও পচেত্তিনোর দল। ১০ মিনিটে ডানপ্রান্ত থেকে এরিকসেনের মাপা ক্রসে ডেভিড ডি গেয়াকে পরাস্ত করেন ড্যালে আলি। গোলের পর আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে স্পার্স। লিড নেওয়ার মিনিট চারেক পরই ব্যবধান দ্বিগুণের দারুণ এক সুযোগ পেয়েছিলেন কেইন। তবে বাঁ-প্রান্ত থেকে আলির ক্রসে অল্পের জন্য পা ছোঁয়াতে পারেননি ইংলিশ স্ট্রাইকার। ১৭ মিনিটে গোলের সামনে থেকে দুর্দান্ত ট্যাকেল করে আলিকে গোলবঞ্চিত করেন ফিল জোনস।

    ওয়েম্বলি স্পার্সের জন্য যত অপয়া সানচেজের জন্য ঠিক ততোটাই 'লাকি গ্রাউন্ড'। সেই প্রমাণ আজও দিয়েছেন চিলিয়ান ফরোয়ার্ড। ম্যাচে যখন স্পার্সের একচ্ছত্র আধিপত্য তখনই দলকে ম্যাচে ফেরান সানচেজ।  বাঁ-প্রান্তে মুসা ডেম্বেলের থেকে বল ছিনিয়ে নেন পল পগবা। ফ্রেঞ্চ মিডফিল্ডারের ক্রসে স্পার্সের দুই সেন্টারব্যাককে ফাঁকি দিয়ে ২৪ মিনিটে হেডে গোল করেন সানচেজ। এই নিয়ে ওয়েম্বলিতে খেলা ৮ ম্যাচে সানচেজ গোল করলেন ৮ বার!

    সমতায় ফেরার মিনিট চারেক পরই এগিয়ে যাওয়ারও  দারুণ এক সুযোগ পেয়েছিলেন জেসি লিনগার্ড। কিন্তু রোমেলু লুকাকুর ক্রসে তার হেড চলে যায় গোলের উপর দিয়ে। তবে এর চেয়েও কাছে গিয়ে ফেরত আসতে হয়েছিল স্পার্সকেও। ২৫ গজ দূর থেকে এরিক ডায়ারের জোরালো শট বারপোস্টে লেগে ফেরত আসলে গোলবঞ্চিত হয় টটেনহাম। 

     

     

    প্রথমার্ধে বেশ কয়েকবার নিজ নোটবুকে মাথা গুঁজে কিছু না কিছু টুকতে দেখা গেছে তাকে। স্পার্সের লিড বা ইউনাইটেডের সমতায় ফেরা- অভিব্যক্তিতে তেমন পরিবর্তন আসেনি হোসে মরিনহোর। বরং নোট নেওয়াতেই ব্যস্ত ছিলেন তিনি। ‘হাফটাইম টিম টক’-এ মরিনহোর সেই নোটের মাহাত্ম্য বোঝা যায় কিছুক্ষণ পর। দ্বিতীয়ার্ধে স্পার্সের আক্রমণ ঠেকানোর পাশাপাশি নিজেদেরও গুছিয়ে নিয়েছিল ইউনাইটেড। নিখুঁত পাসিং, দারুণ বোঝাপড়ায় স্পার্সকে দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই চেপে ধরেছিল ‘রেড ডেভিল’রা। ফলাফলটাও আসে হাতেনাতেই। ৬২ মিনিটে পগবার লম্বা পাস থেকে হেড করে সানচেজের দিকে বাড়ান লুকাকু। বাঁ-প্রান্ত থেকে সানচেজের ক্রস লুকাকুর পায়ে লেগে আসে লিনগার্ডের দিকে। পেছন থেকে ডিফেন্ডারের চাপে বল নিয়ন্ত্রণে না এনে এগিয়ে আসা অ্যান্ডার হেরেরার জন্য ছেড়ে দেন তিনি। ডানপায়ের জোরাল শটে ইউনাইটেডকে লিড এনে দেন হেরেরা। প্রথমবারের মত হাসির দেখা মেলে মরিনহোর মুখে। কোচের সাথে উল্লাসে মাতেন মাঠে উপস্থিত ইউনাইটেড সমর্থকেরাও।

    গোল হজম করে একেবারে খেই হারিয়ে ফেলে স্পার্স। পজেশন ধরে রাখলেও গোলমুখে ডি গেয়াকে তেমন পরীক্ষায়ই ফেলতে পারেনি পচেত্তিনোর দল। উলটো প্রতি আক্রমণে ইউনাইটেডকেই মনে হচ্ছিল ভয়ঙ্কর। গোলের আশায় দুই লাতিন আমেরিকান লুকাস মউরা এবং এরিক লামেলাকে নামিয়ে দিয়েও শেষরক্ষা হয়নি স্পার্সের। ৮৮ মিনিটে লামেলার ফ্রিকিকে ডেভিনসন সানচেজের হেড বারের উপর দিয়ে চলে গেলে হার নিয়েই মাঠ ছাড়েন কেইনরা।

    ফাইনালে ইউনাইটেডের প্রতিপক্ষের নাম জানতে অপেক্ষা করতে হবে আগামীকাল পর্যন্ত। দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে সাউদাম্পটন ও চেলসি।