• এফ এ কাপ
  • " />

     

    এফএ কাপ জিতে মৌসুম বাঁচালেন কন্তে

    এফএ কাপ জিতে মৌসুম বাঁচালেন কন্তে    

    আন্তোনিও কন্তে-হোসে মরিনহোর কথার লড়াই ঝাঁঝ ছড়িয়েছে পুরো মৌসুম। অবশ্য ওই পর্যন্তই, মাঠে প্রত্যাশামতো খেলতে পারেনি দুই দলের কোনোটাই। হতাশা ভোলার একটা উপলক্ষ্য ছিল এফএ কাপ ফাইনাল। দুই কোচের সামনেই ছিল শিরোপাখরা কাটানোর সুযোগ। লিগে পাঁচ নম্বরে থেকে শেষ করায় চেলসির দরকারটা যেন আরেকটু বেশিই ছিল। মাঠের খেলাতেও সেই ছাপ পাওয়া গেল। জয়ের জন্য কিছুটা হলেও চেলসিকেই বেশি মরিয়া মনে হলো। শেষ পর্যন্ত জিতলও তারা।  ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে ১-০ গোলে হারিয়ে এফএ কাপের শিরোপা ঘরে তুলেছে চেলসি। স্পটকিক থেকে ফাইনালের মহা গুরুত্বপূর্ণ গোলটা করেছেন এডেন হ্যাজার্ড। 

    ইংল্যান্ডে প্রথম মৌসুমে দাপট দেখানোর পর এবার ম্লান ছিল কন্তের চেলসি। কিন্তু মৌসুমের শেষ ম্যাচে শিরোপা জিতে কিছুটা হলেও মান বাঁচিয়েছেন নিজের। আর ইংল্যান্ডে প্রথমবারের মতো ফাইনাল ফেরে নিজের বিখ্যাত 'দ্বিতীয়' মৌসুমটা ইউনাইটেডে শিরোপাশুন্যই গেল মরিনহোর।  

     

     

    ওয়েম্বলিতে শুরুটা আক্রমণাত্মক ছিল চেলসির। কন্তের প্রিয় ৩-৫-২ ফর্মেশনে দুই উইংব্যাক ভিক্টর মোসেস এবং মার্কোস আলোন্সো ইউনাইটেড অর্ধেই ছিলেন প্রথমার্ধের বেশিরভাগ সময়। আর স্ট্রাইকার অলিভিয়ের জিরুর ঠিক পেছনে ‘সেকেন্ড স্ট্রাইকার’ বা ‘ফ্রি রোল’-এ শুরু থেকেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিলেন এডেন হ্যাজার্ডকে। ম্যাচের ১০ মিনিটে চেলসির প্রথম সুযোগটা এসেছিল তার হাত ধরেই। সেস ফ্যাব্রেগাসের পাসে ইউনাইটেড ডিবক্সের বাঁ-প্রান্তে বল পান বেলজিয়ান উইঙ্গার। হ্যাজার্ডের ডানপায়ে নেওয়া নেয়ার পোস্টের শট ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন ডি গিয়া। তবে এর মিনিট দশেক পর চেলসিকে লিড এনে দিয়েছেন তিনিই। ফ্যাব্রেগাসের ডিফেন্সচেরা পাস থেকে ডি গিয়ার সঙ্গে ওয়ান অন ওয়ানে ছিলেন হ্যাজার্ড। শট নেওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে তাকে ডিবক্সে ফেলে চেলসিকে পেনাল্টি উপহার দেন জোন্স। ১২ গজ থেকে ডি গেয়াকে পরাস্ত করতে ভুল করেননি হ্যাজার্ড।

     

     

    পেনাল্টিতে থেকে লিড নিয়েও মাঠে চেলসির খেলোয়াড় এবং ডাগআউটে কন্তেকে অসন্তোষই প্রকাশ করতে দেখা গেছে। কারণ? গোল করার নিশ্চিত সুযোগ থেকে হ্যাজার্ডকে বঞ্চিত  করায় জোন্সের জন্য হয়ত লাল কার্ড চেয়েছিলেন কন্তে। যদিও রেফারি সিদ্ধান্ত সঠিকই প্রমাণ হয়েছে। হ্যাজার্ডের গোলের মিনিট পাঁচেক আগেও রেফারির সিদ্ধান্তে নাখোশ হয়েছিলনে কন্তে। ডিবক্সে তিয়েমুয়ে বাকায়োকোকে ইউনাইটেড ডিফেন্ডার ক্রিস স্মলিং ফেলে দিলেও পেনাল্টির বাঁশি দেননি রেফারি। তবে প্রথমার্ধে বিতর্কিত সব সিদ্ধান্তই যে ইউনাইটেডের পক্ষে গেছে- তা অবশ্য নয়। ডিবক্সে অ্যালেক্সিস সানচেজকে ফেলে দিয়েছিলেন সিজার অ্যাজপিলিকুয়েতা, সে দফায়েও নীরবই ছিলেন রেফারি। প্রথমার্ধের প্রায় পুরোটা সময়ই কন্তের ‘ইতালিয়ান রক্ষণদুর্গ’ ভেদ করতে রীতিমত গলদঘর্ম হয়েছিল ইউনাইটেডের। প্রথমার্ধের একেবারে শেষদিকে দুর্দান্ত এক প্রতি আক্রমণে পল পগবার পাস থেকে মার্কাস র‍্যাশফোর্ডের শটই ছিল গোলমুখে প্রথমার্ধে ইউনাইটেডের একমাত্র সুযোগ।

     

     

     

    চেলসিময় এক প্রথমার্ধে যতবারই ক্যামেরায় ধরা পড়েছেন, প্রায় প্রতিবারই নোটবুকে কিছু না কিছু টুকতে ব্যস্ত ছিলেন। হয়ত দ্বিতীয়ার্ধে দলের আক্রমণভাগের ট্যাকটিকসই সাজাচ্ছিলেন। বিরতির পর অবশ্য আক্রমণাত্মক শুরু করেছিল ইউনাইটেড। আক্রমণভাগে স্বভাবসুলভ বোঝাপড়ায় চেলসির রক্ষণভাগকে পরীক্ষায় ফেলতে শুরু করেন পগবা-সানচেজরা। দ্বিতীয়ার্ধের বাকি গল্প ইউনাইটেডের আক্রমণজোয়ারের বিপরীতে প্রতি আক্রমণে চেলসির খেলার। ৫৩ এবং ৫৬ মিনিটে র‍্যাশফোর্ডের জোরাল শট দারুণভাবে ফিরিয়ে চেলসির লিড অক্ষুণ্ণ রাখেন চেলসি গোলরক্ষক থিবো কর্তোয়া।

    দ্বিতীয়ার্ধে যেন গোল হজম না করার দৃঢ়প্রতিজ্ঞা নিয়েই নেমেছিলেন চেলসির বেলজিয়ান গোলরক্ষক। ৬৩ মিনিটে অবশ্য ঠিকই চেলসির জালে বল পাঠিয়েছিল ইউনাইটেড। রাশফোর্ডের ফ্রিকিকে জোন্সের হেড অসামান্য দক্ষতায় ফিরিয়ে দেন কর্তোয়া। ফিরতি বল সানচেজ জালে পাঠালেও অফসাইডের কারণে বাতিল হয় সেটা। পুরো দ্বিতীয়ার্ধই প্রতি আক্রমণে খেলা চেলসি ব্যবধান দ্বিগুণ করার দারুণ এক সুযোগও পেয়েছিল ৭১ মিনিটে। এন’গোলো কান্তের পাস থেকে ডি গেয়াকে একা পেয়ে যান আলোন্সো। কিন্তু স্বদেশী আলোন্সোর শট ফিরিয়ে দেন ডি গেয়া। ফিরতি বলে মোসেসের ক্রস অ্যাশলি ইয়ংয়ের হাতে লাগলে এবারও পেনাল্টির বাঁশি দেননি রেফারি। দ্বিতীয়ার্ধের শেষ ১৫ মিনিটে গোলের আশায় রোমেলু লুকাকু এবং অ্যান্থনি মার্শিয়ালকে নামিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি মরিনহোর। শেষদিকে  অবশ্য দারুণ একটা সুযোগ হাতছাড়া করেছেন পল পগবা। কর্নার থেকে ফাঁকায় থেকেও হেডে গোলটা করতে পারেননি আর। তাই ইউনাইটেডেরও আর ফিরে আসা হয়নি।

    শেষ বাঁশি বাজার পর শত্রুতা ভুলে কন্তেকে জড়িয়েই ধরলেন মরিনহো। সময়মতো শুভেচ্ছাটা জানাতে ভোলেননি ম্যান ইউনাইটেড ম্যানেজার। আরও একটা ইংলিশ ফুটবল মৌসুমের শেষ, এখন তো 'শত্রুতাটা' কিছুদিনের জন্য ভুলে যাওয়াই যায় বোধ হয়।