• প্রমীলা এশিয়া কাপ
  • " />

     

    রূপকথার ফাইনাল জিতে এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ

    রূপকথার ফাইনাল জিতে এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ    

    স্কোর

    ভারত ২০ ওভারে ১১২/৯ ( হারমানপ্রিত ৫৬*, রুমানা ২/২২, কুব্রা ২/২৩)

    বাংলাদেশ ২০ ওভারে ১১৩/৭ ( নিগার ২৭, রুমানা ২৩, পুনাম ৪/৯)

    বাংলাদেশ ৩ উইকেটে জয়ী 



    এর চেয়ে রোমাঞ্চকর ফাইনাল আপনি আর চাইতে পারতেন না! এর চেয়ে রোমাঞ্চকরভাবে জিততে পারতো না বাংলাদেশ! এর চেয়ে বেশি উত্তেজনা ছড়িয়ে ইতিহাস তৈরি হতে পারতো না। সেই ইতিহাস পেরিয়ে এর চেয়ে রোমাঞ্চকর আর কোন রূপকথাই বা হতে পারতো! এশিয়া কাপের ইতিহাস মানেই চ্যাম্পিয়ন ছিল ভারত, সেই ভারতকে হারিয়েই এবার চ্যাম্পিয়ন হলো বাংলাদেশ! ফাইনালে ভারতকে শেষ বলে ৩ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ! তৈরি হয়েছে অসাধারণ এক ক্রিকেট রূপকথা! 

    শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ৯ রান। সানজিদা সিঙ্গেল দিয়ে রুমানাকে স্ট্রাইক দিলেন, ডিপ এক্সট্রা কাভার দিয়ে তিনি মারলেন চার। এরপর তার সিঙ্গেল, তবে চতুর্থ বলে ছয় মারতে গিয়ে লং-অনে ধরা পড়লেন সানজিদা। রুমানা স্ট্রাইকে গেলেন, সিঙ্গেল নিয়ে রান-আউট হলেন অদ্ভুতভাবে! প্রথম রানটা ধীরগতিতে দৌড়েছিলেন রুমানা, জাহানারার ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন বড্ড দেরিতে, ততক্ষণে থ্রো এসে জমা পড়েছে হারমানপ্রিতের হাতে! 

    সব গিয়ে ঠেকলো ওই জাহানারার ওপরই। আরেকবার চোখ রাঙাচ্ছে তখন এতো কাছে গিয়ে এতদূরের গল্প। তবে স্নায়ু ধরে রাখলেন জাহানারা, মিড-উইকেটে ঠেলে নিলেন দুই। শেষ রানটা সম্পূর্ণ করতে ডাইভ দিতে হলো, তার সঙ্গে এরপর উঠে দাঁড়ালো মেয়েদের ক্রিকেটটাও! 

    ১১৩ রানের লক্ষ্য, ৩৫ রানের ওপেনিং জুটিতে ঠিক পথেই ছিল বাংলাদেশ। পর পর দুই বলে ফিরেছিলেন আয়েশা ও আয়েশা। স্লগ করতে গিয়ে প্রথমে আয়েশা, অফস্টাম্পের অনেক বাইরের বলে আক্রমণ করতে গিয়ে পরের বলেই ক্যাচ দিয়েছেন শামিমা। এরপর ২০ রানের জুটি, টেনে খেলতে গিয়ে আন্ডার-এজড ফারজানার উইকেটে ভেঙেছে সেটা। তিনটি উইকেটই নিয়েছেন পুনম যাদব। 

    রান আর বলের ব্যবধান এরপর বাড়াচ্ছিল চাপ। ৩৬ বলে প্রয়োজন ছিল ৪৭ রান। ১৪তম ওভারের তৃতীয় বলে নিগারের কাভার ড্রাইভ। চার। পরের বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে আরেকটি। বল রানের ব্যবধান নেমে এলো তিনে। এরপর থার্ডম্যান দিয়ে চার। রান-বল সমান।

    সেই ব্যবধান বাড়লো নিগারের ক্যাচেই,  পুনমের ফুলটসে ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে খেলতে গিয়ে ডিপ-মিডউইকেটে দিলেন ক্যাচ। ১৮ বলে প্রয়োজন ছিল ২৩, এবার ত্রাতা ফাহিমা। তার সুইপ টপ-এজড হয়ে উইকেটকিপারের মাথার ওপর দিয়ে চার। পরের বলে আরও পোক্ত সুইপ, এবার দুই। তবে পরের বলেই তিনি স্টাম্পড।

    আরেকবার ম্যাচ হেললো অন্যদিকে।  

    প্রথম ইনিংসে অবশ্য দাঁড়িপাল্লার একদিকে ছিল বাংলাদেশের বোলিং, আরেকদিকে হারমানপ্রিত। খাদিজাকে শেষ বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ডিপ মিড-উইকেটে জাহানার হাতে ধরা পড়লেন হারমানপ্রিত কৌর, তবে তার আগে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ধরা দেননি একমাত্র তিনিই। চার নম্বরে নেমে এর আগেই খেলেছেন ৪২ বলে ৫৬ রানের ইনিংস, ৭৪ রানে ভারতের ৭ উইকেট নেওয়ার পরও ভারত ১১২ রান পর্যন্ত গেছে তার ইনিংসেই। তবে ভারতকে এতো অল্পতে বেঁধে ফেলার কৃতিত্ব বাংলাদেশের বোলিংয়ের, ফিল্ডিংয়ের, আক্রমণাত্মক অধিনায়কত্বের। 

    প্রথম ব্রেকথ্রু রান-আউটে, তিন রান নিতে গিয়ে নাহিদার থ্রো-তে মাশুল গুণেছেন স্মৃতি মানধানা। এর আগেই অবশ্য স্টাম্পড হতে পারতেন তিনি, যেটা মিস করেছেন শামিমা। চাপে পড়ে আলগা শট খেলতে গিয়ে জাহানারার বলে বোল্ড দীপ্তি শর্মা। সে চাপ আরও বাড়িয়েছেন খাদিজাতুল কুবরা, তার বলে লেগসাইডে খেলতে গিয়ে লিডিং এজড ভারত অধিনায়ক মিথালি রাজ, মিড-অফে ফারজানাকে দিয়েছেন সহজ ক্যাচ। 

    পরের ওভারে ভারতের দুর্দশা বেড়েছে অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ডে, সিঙ্গেল নিতে গিয়ে ফেরার পথে পথ পরিবর্তন করেছিলেন অনুজা পাতিল। ভেদা কৃষ্ণামূর্তির লেগস্টাম্প ছত্রখান হয়েছে সালমা খাতুনের বলে। এরপর দৃশ্যপটে রুমানা খাতুন, প্রথমে তার ফ্লাইটে বোকা বনেছেন তানিয়া ভাটিয়া, ওভারের দ্বিতীয় বলে। শেষ বলে টপস্পিনে কাট করতে গিয়ে উইকেটকিপারের হাতে ধরা পড়েছেন শিখা পান্ডে। 

    ১৮তম ওভারেই রান-আউট হতে পারতেন ঝুল গোস্বামি, তবে স্ট্রাইকিং প্রান্তে থ্রোটা ছিল বাজে। শেষ ওভারের প্রথম বলে রান-আউটই হয়েছেন গোস্বামি। তবে তার আগে কৌরের সঙ্গে ৮ম উইকেটে তার জুটি ৩৩ রানের। ফাইনালের প্রেক্ষিতে যা মহাগুরুত্বপূর্ণ। 

    তবে সেই জুটিকে ছাপিয়ে রূপকথা গড়েছে বাংলাদেশ। ম্যাচশেষে মাঠে ঢুকে পড়লেন দর্শকরা, তাদেরকে আটকে রাখলেন নিরাপত্তাকর্মীকে। 

    বাংলাদেশের মেয়েদের আটকাবে কে!