‘বডিলাইন’ অথবা ‘ফাস্ট লেগ থিওরি’ র গল্প - ১
অ্যাশেজ! ক্রিকেটের সবচাইতে পুরানো দ্বৈরথ। এর রন্ধ্রে রন্ধ্রে ইতিহাস, পরতে পরতে আভিজাত্য। ক্রিকেট এখানে শুধুই খেলা নয়, ক্রিকেট এখানে জাতিগত বৈরিতার প্রতীক। শত বছরের পুরানো এই সিরিজে কারো স্বপ্ন ভেঙ্গেছে, নতুন তারকার জন্ম হয়েছে, কেউবা আবার সবুজ মাঠের আশ্রয় ছেড়ে জায়গা পেয়েছেন অমর রূপকথার কাব্যে।
অ্যাশেজে ক্রিকেট জীবনের অংশ নয়, বরং জীবনই এখানে হয়ে যায় ক্রিকেট। ছোট্ট এই ভস্মাধারের প্রতি আবেগ যে কত তীব্র, তা প্রথম অনুভূত হয় ১৯২৮-২৯ সালে, ইংল্যান্ডের অস্ট্রেলিয়া সফরে। জন্ম হয় ক্রিকেটের অলটাইম কিছু গ্রেটদের। এর ফলশ্রুতিতে আসে কুখ্যাত বডিলাইন সিরিজ। এই ধারাবাহিকটি বডিলাইন অ্যাশেজেরই পূর্বাপর আর খুঁটিনাটির উপর আলোকপাত করার একটা প্রয়াস।
১. বোম্বে থেকে স্কটল্যান্ড
এখন মুম্বাইয়ের মালাবার হিলে বিজনেস টাইকুন আর ফিল্মস্টারদের বাস। প্রতি বর্গমিটার ফ্ল্যাট এখন ২৫০০০ ডলারে বিকোয়। আলোর রোশনাইয়ে রাতের অন্ধকার বুঝবার উপায় থাকে না। আচ্ছা, ১০০ বছর আগে ডগলাস যখন এখানে জন্ম নিয়েছিলেন তখন কি তিনি জানতেন তার জন্মস্থান এতো মর্ত্যের তারার আলোয় জ্বলজ্বল করবে? নাকি মালাবার হিলের বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে তারার জন্ম দেয়া?
১৯০০ সালের ২৩ অক্টোবর, ব্রিটিশ ভারতে জন্ম এই ডগলাসের। পুরো নাম ডগলাস রবার্ট জারডিন। আধুনিক ক্রিকেট অনুরাগীদের কাছে এই নাম অপরিচিত লাগাটা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু ক্রিকেট ইতিহাসের মনোযোগী ছাত্র মানেই জানেন, এই ডগলাসই তাঁর জন্মের ৩২ বছর পর ক্রিকেট দুনিয়া কাঁপানো এক সিরিজে নেতৃত্ব দিবেন, হবেন একই সাথে তুমুল নন্দিত এবং নিন্দিত অধিনায়ক।
নয় বছর ভারতের জল হাওয়াতে বড় হবার পর জার্ডিনের ব্যারিস্টার বাবা আধুনিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে ছেলেকে পাঠিয়ে দিলেন খালার কাছে, স্কটল্যান্ডের সেইন্ট এন্ড্রুজে। খালা ছিলেন বিশাল ধনী, থাকতেন একা এক বিশাল ম্যানসনে। আভিজাত্য, সচ্ছলতা আর কাউকে পরোয়া না করার মানসিকতা জার্ডিনের মধ্যে গড়ে ওঠাটা তাই অবাক করা কোন বিষয় নয়। স্থানীয় স্কুলে তাঁর একাডেমিক জীবনটাও মন্দ ছিল না। তবে সবকিছু ছাপিয়ে তাঁর পরিচয় বড় হয়ে উঠে ক্রিকেটার হিসেবে। একজন নেতার গড়ে উঠার গল্প আসলে সেখান থেকেই।
২. একজন অলরাউন্ডারের জন্ম
স্কুলের মূল দলের হয়ে জার্ডিন যখন খেলা শুরু করেন তখন তাঁর মুখ্য পরিচয় ছিল বোলার। ডানহাতি লেগ স্পিনার। ক্রিকেটের সবচাইতে কঠিন শিল্পটি আয়ত্ত্ব করার প্রয়াস ছিল তাঁর সেই ছেলেবেলা থেকেই। ব্যাটিংটাও পারতেন একটু আধটু। যদিও স্কুলের কোচ তাঁর ব্যাটিং টেকনিক একটুও পছন্দ করতেন না। কিন্তু জার্ডিন কখনোই কোচের কথা শুনে তাঁর টেকনিক বদলাননি। কম স্ট্রাইক রেট থাকার পরও আউট না হবার মানসিকতা আর জিততে চাওয়ার অদম্য জিদের কারণেই তাঁকে অন্য দৃষ্টিতে দেখতে কোচ বাধ্য হতেন, ম্যাচ খেলতে সুযোগ দিতেন। নেতৃত্বের গুণাবলী ঐ অল্প বয়সেই প্রস্ফুটিত হয়েছিল, স্কুল ছাড়ার আগ পর্যন্ত এজন্যেই তাঁর দল ছিল অপরাজিত।
জার্ডিনের ব্যাটিং প্রতিভা প্রস্ফুটিত হয় উইনচেস্টার কলেজে এসে। সময়কাল ১৯১৪, চারিদিকে মহাযুদ্ধের বারুদের গন্ধ। ঐ অস্থির সময়ে কলেজের নীতিই ছিল শিক্ষার্থীদের কঠোর শৃঙ্খলার মধ্যে গড়ে তোলা, যেকোন খারাপ পরিস্থিতিতে টিকে থাকার মন্ত্র মনের মধ্যে গেঁথে দেয়া। কিশোর বয়সে বোর্ডিং স্কুলের সেই দুঃসহ শাসনের দিনগুলোই যে লড়াকু জার্ডিনের জন্ম দিয়েছিল তা আজ অস্বীকার করার উপায় নেই।
শারীরিক কষ্টকে উপেক্ষা করে ছুটে চলার মন্ত্রে দীক্ষিত জার্ডিন উইনচেস্টার টিমের হয়ে এথলেটিজমের ফোয়ারা ছুটান। একাধারে ফুটবল টিমের গোলকিপার, র্যাকেট হাতে দুর্দান্ত। আর ব্যাট হাতে নিলে হয়ে যান অদমনীয়। যেবছর কলেজ থেকে বের হয়ে আসেন, সেই বছর তাঁর ব্যাটিং গড় ছিল ৬০ এর উপরে, করেছিলেন ৯৯৭ রান। একজন লেগস্পিনার, বাজে টেকনিক আর কম স্ট্রাইক রেট নিয়ে বনে গেলেন পুরোদস্তুর পেশাদার ব্যাটসম্যান।
তাঁর নেতৃত্বগুণ নিয়ে তখনো প্রশ্ন ছিল অনেক, কোচরা বলছিলেন তাঁর মতো একগুঁয়ে কাউকে দিয়ে দলকে উজ্জীবিত করা সম্ভব না। এর জবাব তিনি দিলেন ইটন কলেজকে হারিয়ে। ১২ বছরের মধ্যে সেটাই ছিল উইনচেস্টার কলেজের ইটনের বিপক্ষে প্রথম জয়!
৩. এবং অস্ট্রেলিয়া...
উইনচেস্টারের হয়ে ব্যাট হাতে পারফরম্যান্স আর অসাধারণ অধিনায়কত্বের বীরত্বগাঁথা সেই সময়ের সংবাদপত্রে ব্যাপক পরিচিতি পায়। ফলাফল হচ্ছে, অক্সফোর্ডে পড়তে আসার পরে বিশ্ববিদ্যালয় দলের হয়ে তাঁর ফার্স্ট-ক্লাস অভিষেক। আর এখানে খেলেই সূচনা হয় অস্ট্রেলিয়ানদের প্রতি তাঁর তীব্র ঘৃণার!
১৯২১ সালের অ্যাশেজ সিরিজ। ওয়ারউইক আর্মস্ট্রং-র নেতৃত্বে ইংল্যান্ড সফর করা ঐ অস্ট্রেলিয়া দল ছিল প্রায় ‘ইনভিন্সিবল’। পুরো সফরে ৩৮টা ম্যাচ খেলে ২২ টিতে জয়, ১৪টি ড্র আর মাত্র দুইটি হার। ইংল্যান্ডের সাথে প্রথম তিন টেস্টে অনায়াস জয়, শেষ দুইটি টেস্ট ড্র। তখন টেস্ট ম্যাচের বাইরেও কাউন্টি আর 'ইউনিভার্সিটি টিম'-গুলোর সাথে প্রচুর ফার্স্ট-ক্লাস ম্যাচ হত।
অক্সফোর্ডের হয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এমন এক ম্যাচে জার্ডিন ৯৬ রানে অপরাজিত থেকে যান দিনের খেলা শেষে। অপরাজিত থাকতেই পারেন সেটা কথা না, কিন্তু ম্যাচটা ক্রিকেট ইতিহাসে ঢুকে যায় পুরাপুরি অক্রিকেটীয় কারণে। অস্ট্রেলিয়ান দল ৩ দিনের ম্যাচ বিশেষ অনুরোধ করে ২ দিনে নিয়ে আসে তৃতীয় দিন বিশ্রাম নেয়ার জন্যে! আজকের দিনে এটা অকল্পনীয় লাগতে পারে হয়তো, কিন্তু তখনকার দিনে এটা খুবই সাধারণ ব্যাপার ছিল।
খেলার পরদিন ব্রিটিশ প্রেস অজি অধিনায়ক আর্মস্ট্রংকে একেবারে ধুয়ে দেয়। জার্ডিনকে সেঞ্চুরি না করতে দেয়ার জন্যই অস্ট্রেলিয়ানরা এমন করেছে বলেও দাবি করা হয়। জার্ডিনের মনে তখন থেকেই অস্ট্রেলিয়ানদের প্রতি বাজে ধারণা জন্মে, এমন একটা তত্ত্বও দাঁড়িয়ে যায় পরে। যদিও জার্ডিন কখনোই তা স্বীকার করেন নি। তবুও ম্যাচটি যে তাঁর মনে কিছু একটা প্রভাব ফেলে তা পরিষ্কার হয় আরো ১২ বছর পর।
আধুনিককালে যেমন অনুর্ধ্ব-১৯ দলে কেউ ভাল করলে তাঁকে জাতীয় দলে নেয়ার জন্যে হাঁকডাক শুরু হয়ে যায়, তখনও এর ব্যতিক্রম ছিল না। মিডলসেক্সের তখনকার অধিনায়ক প্লুম ওয়ার্নার জার্ডিনকে জাতীয় দলে নেয়ার জন্যে সুপারিশ করেন, সাথে ব্রিটিশ প্রেসের ক্রমাগত চাপ তো ছিলই। তবুও নির্বাচকরা উপেক্ষা করলেন জার্ডিনকে। নাহলে ঐ অ্যাশেজেই হয়তো অভিষেক হয়ে যেত জার্ডিনের।
অবশেষে আরো ৭ বছর ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের পর ১৯২৮ সালে জার্ডিনের টেস্ট অভিষেক ঘটে। পার্থক্যটা ধরতে পারছেন? টেস্ট হচ্ছে অভিজাতদের জায়গা, আপনাকে ফার্স্টক্লাস ম্যাচে টানা ভাল খেলে তারপরই এখানে আসতে হবে; একেবারেই টেস্ট খেললে আপনি ভাল খেলতে শিখে যাবেন না! ফার্স্টক্লাস ম্যাচের কাঠামো যে শক্তিশালী করা দরকার, এটা ইংল্যান্ড ১০০ বছর আগে থেকেই বুঝতে পারতো, আর আমরা সেটা এখনো পারছি না!
যাই হোক, জার্ডিনের প্রথম টেস্ট ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজেরও অভিষেক টেস্ট। একমাত্র ইনিংসে ২২ রান করেন জার্ডিন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ফলোঅনে পড়ে ইনিংস ব্যবধানে ম্যাচ হারে।
৪. অস্ট্রেলিয়া যাত্রা
১৯২৮-২৯ সালের অস্ট্রেলিয়া সফরের ইংল্যান্ড দলে ডাক পান জার্ডিন। ঐ সিরিজটা ক্রিকেট ইতিহাসে অমর হয়ে আছে ওয়াল্টার হ্যামন্ড এর জন্যে। অ্যাশেজ যে কাউকে অমরত্বের চাবি হাতে গুঁজে দিতে পারে আর ক্রিকেট যে খেলার সীমানা ছাড়িয়ে জাতীয়তার প্রতীক হয়ে উঠতে পারে হ্যামন্ড ঐ সিরিজে তাঁর ব্যাটের ফল্গুধারাতে খুব ভালভাবে অস্ট্রেলিয়ান দর্শকদের বুঝিয়ে দিয়েছিলেন।
১১৩.১২ গড়ে হ্যামন্ড সেবার করেন মোট ৯০৫ রান; অ্যাশেজের ইতিহাসে এত রান আগে কখনো করেনি কেউ। পুরো সফরের সব ফার্স্টক্লাস ম্যাচ হিসাব করলে তাঁর রান ছিল ১৫৫৩, গড় ৯১ এর উপরে! আপনাকে মনে রাখতে হবে, তখন মাঠ ছিল এখনকার চেয়ে অনেক বড়, ব্যাট এখনকার ব্যাটের প্রায় অর্ধেক আর উইকেট ছিল খোলা, মানে খেলা শেষে উইকেট ঢেকে রাখার প্রচলন তখনো শুরু হয়নি।
ঐ অ্যাশেজেরই প্রথম টেস্টে স্বাগতিকদের হয়ে একটা পাতলা গড়নের ছেলে টেস্ট খেলতে নামে। প্রথম ইনিংসে সাত নম্বরে নেমে মাত্র ১৮ রান করে আউট, দ্বিতীয় ইনিংসে আরো খারাপ অবস্থা। এবার ছয় নম্বরে নেমে মাত্র ১ রান করেই আউট। অস্ট্রেলিয়ার রিক্ত অবস্থারই যেন প্রতীক এই ব্যাটিং পারফরম্যান্স। ৬৭৫ রানের বিশাল ব্যবধানে টেস্ট হারা অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় টেস্টের দল থেকে ছেলেটিকে বাদই দিয়ে দেয়।
সকাল যে সবসময় দিনের পূর্বাভাস দেয়না, তা এখান থেকেই আপনি ভেবে নিতে পারেন। জীবনে ঐ একবারই ছেলেটি দল থেকে বাদ পড়েছিল খারাপ পারফরম্যান্সের জন্যে। ক্যারিয়ার শেষে ঐ ছেলেটির ব্যাটিং গড় অল্পের জন্যে তিন অঙ্কের হয়নি। ছেলেটির নাম কি আর বলার দরকার আছে? গ্রেট স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যানের ওটাই ছিল প্রথম অ্যাশেজ। হ্যামন্ড আগুনে পুড়ে ছারখার অস্ট্রেলিয়ান ছাই থেকেই যেন শুরু হল আরেক গ্রেটের অনন্তযাত্রা!
জার্ডিন ঐ অস্ট্রেলিয়ান সফর শুরু করেছিলেন টানা তিনটি সেঞ্চুরি দিয়ে, যদিও সেগুলো সবই ছিল ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচ। সফরের শুরু থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল তিনিই হবেন অস্ট্রেলীয়দের জন্যে সবচাইতে বড় আতঙ্ক, তাই ব্যাটিংয়ে নামলেই গ্যালারি থেকে চিৎকার, শিস আর অপমানসূচক কথাবার্তা ভেসে আসত। প্রথম ম্যাচে ব্যাপারগুলো খেলোয়াড়ি থাকলেও দ্বিতীয় ম্যাচ থেকে তা ক্রমশ বাজে রূপ ধারণ করে। অস্ট্রেলীয়রা তাঁর ধীরগতির ব্যাটিংকে এতই অপছন্দ করে যে তিনি প্রায় প্রতি বলেই তীব্র কটুকথার মুখোমুখি হতে থাকেন জার্ডিন। তৃতীয় ম্যাচের সেঞ্চুরিটা কিন্তু অতো স্লথগতির ছিল না; বরং ডন ব্র্যাডম্যান ঐ ইনিংসকে বলেছিলেন, তাঁর দেখা অন্যতম স্ট্রোকপ্লের অনুপম প্রদর্শনী, কিন্তু দর্শকদের তাতে কিছুই এসে যায়নি।
অস্ট্রেলীয়দের তাঁকে অপছন্দ করার আরেকটা কারণ ছিল রঙিন হার্লেকুইন ক্যাপ। অক্সফোর্ডের সেরা খেলোয়াড়টিকে এই ক্যাপ দেয়া হত, তাদের জন্যে হার্লেকুইন ছিল গর্বের প্রতীক। জার্ডিন সেই গর্ববোধ এবং কিছুটা কুসংস্কার থেকেই ঐ ক্যাপ পড়ে ব্যাট করতেন, এমনকি ফিল্ডিংও। কোন এক অজ্ঞাত কারণে অস্ট্রেলীয়রা একে সহজভাবে নিতে পারেনি। এর একটা কারণ হতে পারে, অক্সফোর্ডের হয়েই তাঁর সেই অপরাজিত ৯৬ রান, যার রেশ ধরে আর্মস্ট্রং-র অস্ট্রেলিয়াকে ১৯২১-র ইংল্যান্ড সফরে ব্রিটিশ পত্রিকাগুলো ধুয়ে দিয়েছিল। অস্ট্রেলীয়দের ইতিহাস মনে রাখা আর স্লেজিং এর ধারাবাহিকতা যে অনেক পুরানো - তা এখান থেকেই আপনি কিছুটা অনুমান করে নিতে পারেন। যাই হোক, টেস্টে জার্ডিন তেমন সুবিধা করতে পারেন নি, তবে ওয়ালি হ্যামন্ডের ব্যাটিং তান্ডবে ইংল্যান্ড খুব সহজেই অ্যাশেজ ঘরে তোলে, শুধুমাত্র শেষ টেস্টটা হেরে ৪-১ এ সিরিজ জিতে নেয়।
ওয়ালি হ্যামন্ড সুপারস্টার থেকে ঐ সিরিজেই হয়ে যান গ্রেট, আর তৃতীয় টেস্টে আবার সুযোগ পেয়ে ব্র্যাডম্যান শুনান আরেক সুপারস্টারের আগমনী গান। ঐ টেস্টের প্রথম ইনিংসে তিনি করেন ৭৯, দ্বিতীয় ইনিংসে পেয়ে যান সেঞ্চুরি। সাথে অস্ট্রেলীয়রা দেখে এক ইংলিশ পেসার হ্যারল্ড লারউডের উত্থান। তখন কি তারা জানত, এই লারউডই পরের অস্ট্রেলিয়া সফরে তাদের জন্য কি নিয়ে আসছে?
আর আমাদের জার্ডিন? ফার্স্টক্লাস ম্যাচগুলোতে সমানে রান করে গেলেও টেস্টে তিনি কোন সেঞ্চুরি ঐ সিরিজে পাননি। তবে প্রথম চার টেস্টেই তিনি খেলেছিলেন গুরুত্বপূর্ণ কিছু ইনিংস, গড়েছিলেন বেশ কিছু জরুরি পার্টনারশিপ। হ্যামন্ডের ছায়ায় ঢাকা ছিলেন বলে অতোটা আলো নিজের করে নিতে পারেন নি। তবে দর্শকদের ঘৃণা ঠিকই কুড়িয়ে নিচ্ছিলেন। হারবার্ট সাটক্লিফের ইনজুরির সুবাদে শেষ টেস্টে তিনি হয়ে যান ওপেনার। খুবই বাজে পারফর্ম্যান্স ছিল ঐ ম্যাচে তাঁর। পঞ্চম দিনে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে 'গোল্ডেন ডাক' মারেন। অস্ট্রেলিয়া একনাগাড়ে ৩ দিন ব্যাট করে অবশেষে ৫ উইকেটের জয় তুলে নেয়। তখন ছিলো 'টাইমলেস টেস্ট'-র যুগ, শেষ টেস্ট মোট আট দিনে গড়ায়। হিসাবে অবশ্য টেস্টটি নয়দিনের, কারণ ৩ নাম্বার দিনটি আবার 'রেস্ট ডে' ছিল!
পঞ্চম দিনে 'গোল্ডেন ডাক' মেরেই জার্ডিন পুরো ম্যাচ না খেলে চলে যান পোর্টে, তারপর জাহাজ ধরে সোজা ভারতে। আধুনিককালে যারা টেস্ট খেলেন অথবা দেখেন, তাঁদের কাছে ব্যাপারগুলো স্বপ্নের মতো মনে হলে আমার কিন্তু কোন দায় নেই!
দ্বিতীয় পর্বঃ 'বডিলাইন’ অথবা ‘ফাস্ট লেগ থিওরি’ র গল্প - ২