• কিক অফের আগে
  • " />

     

    কিক অফের আগে: ফরাসী সৌরভ না ক্রোয়েশিয়ার প্রথম?

    কিক অফের আগে: ফরাসী সৌরভ না ক্রোয়েশিয়ার প্রথম?    

    ফরাসী সৌরভ না ক্রোয়েশিয়ার প্রথম?

    ফ্রান্স বনাম ক্রোয়েশিয়া; বিশ্বকাপ ফাইনাল; ১৫ জুলাই, রাত ৯টা; লুঝনিকি স্টেডিয়াম; বিটিভি, মাছরাঙ্গা, টেন ২/৩

     


     

     স্বাধীন দেশ হিসেবে প্রথমবার বিশ্বকাপে এসেই বাজিমাত করল ক্রোয়েশিয়া। ১৯৯৮ সালে ফ্রান্স বিশ্বকাপে জার্মানিকে হারিয়ে শেষ চারে আসা সুকার-বোবানদের গর্জনে তখন মুখর সমগ্র ফুটবলবিশ্ব। সেমিতে স্বাগতিকদের মুখোমুখি ক্রোয়েশিয়া। লিডটাও নিয়ে নিল তারাই। কিন্তু লিলিয়ান থুরামের জোড়া গোলে হল স্বপ্নভঙ্গ। বোবান-সুকারদের কান্নার ছবিটা তখন থেকেই মনে গেঁথে গেছে ক্রোয়াটদের।মাঝে কেটে গেছে দুই দশক। সুকারদের পরে এসেছেন মদ্রিচ-রাকিটিচরা। ছাপিয়ে গেছেন পূর্বসূরিদের। একবিংশ শতাব্দীর ক্রোয়েশিয়ার সোনালী প্রজন্ম আজ লুঝনিকি স্টেডিয়ামে মাঠে নামবে নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপ ফাইনালে। প্রতিপক্ষ ফ্রান্স, ১৯৯৮-এ যাদের হাতে অপমৃত্যু ঘটেছিল ক্রোয়াট রূপকথার। এক যুগ পর ফুটবলের সবচেয়ে বড় ম্যাচে নামবে ফরাসীরা। ২০০৬-এর ভাগ্য যেন বরণ করে নিতে না হয়, সেটাই একমাত্র চাওয়া ‘লা ব্লুজদের"।

     

    তাহারা বলেন

    ১৯৯৮-এ ফ্রান্সের বিপক্ষে নিজেদের হারটা মাঠে বসেই দেখেছিলেন। ২০ বছর পর নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ম্যাচে দল সাজানোর দায়িত্বটা তার কাঁধেই। অন্যান্য কোচেরা হয়ত এমন ম্যাচের আগে পুরনো ইতিহাস ঘাটানোর জোর বিরোধিতা করতেন, কিন্তু ক্রোয়েশিয়ার কোচ ডালিচ এড়িয়ে যাচ্ছেন না সেই ম্যাচের কথা, “২০ বছর আগে সুকারের গোলের পর আমাদের উল্লাস ছিল বাঁধভাঙ্গা। ফাইনালে যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিলাম আমরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত থুরামের কারণে স্বপ্নভঙ্গ হয় আমাদের। মাঠে ডুঁকরে কেঁদেছিলাম আমি। সেই ম্যাচ পুরো ক্রোয়েশিয়াকে যে কত নির্ঘুম রাত ‘উপহার’ দিয়েছে, তা চিন্তা করতে চাই না। ফ্রান্সের বিপক্ষে যেকোনো ম্যাচ, হোক না প্রীতি, আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এক আলাদা শক্তির সঞ্চারণ করে। আপনারা হয়ত ভাবছেন আমি অনেক আবগেপ্রবণ। হ্যাঁ আসলেই আমি এমন। আমাদের পুরো দেশটাই এমন। আবেগটাই আমাদের মূল শক্তি। আজ ফ্রান্সের বিপক্ষে সেই প্রতিশোধের আগুনটাই হবে আমাদের সঞ্জীবনী শক্তি। মাঠের ফুটবলের শক্তিমত্তায় তারা আমাদের চেয়ে এগিয়ে। কিন্তু আবেগের দিক দিয়ে আমরা অদ্বিতীয়।”

    কোচের সাথে একমত মিডফিল্ডার ইভান রাকিটিচ, “বিশ্বকাপের ফাইনালের ইতিহাসে আমরা সবচেয়ে ছোট দেশ। তবে অন্যান্যদের তুলনায় আমাদের আবেগটা একটু বেশিই। আজ আমরা যখন মাঠে নামব, তখন আমরা কেবল ১১ জন খেলব না। আমাদের সাথে থাকবে আরও ৪৫ লাখ ক্রোয়েশিয়ান।”

    ক্রোয়েশিয়ানরা প্রতিশোধের আগুনে জ্বলন্ত। আর মাঠের খেলায় তাদের হারানোও বেশ কষ্টসাধ্য। কিন্তু প্রতিপক্ষের মত আবেগের জোয়ারে ভাসছেন না ফ্রেঞ্চ কোচ দিদিয়ের দেশম, “এক যুগ আগে আমরা তীরে এসে তরী ডুবিয়েছিলাম। এই বিশ্বকাপের আগে অনেকেই আমাদের ‘ফেভারিট’-এর তকমা দিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু আমরা পা মাটিতেই রেখেছি। একত্রিত এবং সংবদ্ধতার ফলই আমাদের আজকের ফাইনালে আসা। ক্রোয়াটরা প্রতিশোধের আগুনে জ্বলবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমরা অতীত নিয়ে ভাবছি না। অনেকেই অনেক ধরনের কথা বলেছে আমাদের নিয়ে। প্রচুর সমালোচনা সইতে হয়েছে আমাদের। কিন্তু আমরা হাল ছাড়িনি। আশা করি আজ আমরা প্রমাণ করব কেন এবারের বিশ্বকাপের সেরা দল আমরাই।”

    ক্রোয়াটদের মত আবেগে নয়, বরং জয়ের দৃঢ়প্রত্যয় নিয়েই মাঠে নামছেন ফ্রেঞ্চ ডিফেন্ডার রাফায়েল ভারান, “আগামীকাল আমাদের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় ম্যাচ। বিশ্বকাপ ফ্রান্সবাসীর কাছে এক অন্য ধরণের অনুভূতি। ১২ বছর আগে আমরা তাদের মুখে হাসি ফোটানোর সুযোগ হারিয়েছিলাম, এবার আর ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি চাই না আমরা। ক্রোয়াটরা আবেগের দিকেই ঝুঁকবে বেশি। কিন্তু আমরা বাস্তববাদী। মাঠের খেলা দিয়েই হারাতে চাই তাদের।”

     

     

    দলের খবর

    সাম্প্রতিক সময়ে নিজেদের সবচেয়ে বড় ম্যাচের আগে পূর্ণশক্তির দলই পাচ্ছেন দেশম। তবে প্রতিপক্ষের মত এতটা নির্ভার থাকতে পারছেন না ডালিচ। সুবাসিচ, পেরিসিচ, ভ্রাসালকো, স্ট্রিনিচদের খেলা নিয়ে আছে সংশয়। তবে নিজেদের ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে তাদের খেলানোর ঝুঁকিটা ঠিকই নেবেন ক্রোয়াট কোচ। 

     

    সম্ভাব্য মূল একাদশ

    ফ্রান্স (৪-৩-৩): লরিস; পাভার্ড, ভারান, উমতিতি, হার্নান্দেজ; কান্তে, মাতুইদি, পগবা; গ্রিযমান, জিরু, এম্বাপ্পে

    ক্রোয়েশিয়া (৪-২-৩-১): সুবাসিচ; ভ্রাসালকো, ভিদা, লভ্রেন, স্ট্রিনিচ; রাকিটিচ, ব্রোজোভিচ; রেবিচ, মদ্রিচ, পেরিসিচ; মানজুকিচ

     

    ট্যাকটিক্সের টুকিটাকি

    নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ম্যাচে ক্রোয়াটদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে কিলিয়ান এম্বাপ্পেকে আটকানো। ডানপ্রান্ত দিয়ে প্রতি ম্যাচেই প্রতিপক্ষের লেফটব্যাকদের প্রচন্ড ভুগিয়েছেন এই ফরোয়ার্ড। স্ট্রিনিচের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে ক্রোয়াটদের। আবার মাঝমাঠে পগবাকে আটকানোটাও হবে ডালিচের অন্যতম লক্ষ্য। এজন্য ক্রোয়াট কোচের মূল ভরসা হবেন ব্রোজোভিচ এবং রাকিটিচ। সেটপিস থেকে দুই দলই বেশ শক্তিশালী। সেক্ষেত্রে ভারান-উমতিতির বিপক্ষে মানজুকিচের লড়াইটাও হবে দেখার মত। ইউরোপের অন্যতম সৃজনশীল মিডফিল্ডার লুকা মদ্রিচকে আটকানোর দায়িত্বটা পড়বে ইউরোপের আরেক দুর্দান্ত ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার এন’গোলো কান্তের ওপর। ‘অলস্টার’ এই দ্বৈরথে মদ্রিচ জিতলে অভূতপূর্ব সাফল্যের পাল্লাটা ভারী হবে ক্রোয়েশিয়ার ওপর। আবার আক্রমণভাগে গ্রিযমানকে আটকাতেই হবে ক্রোয়েশিয়াকে। কারণ ‘ফ্রি রোল’-এ খেলা গ্রিযমানই এম্বাপ্পে-জিরুদের বল যোগানের মূল দায়িত্বে থাকবেন। সেটপিসে লভ্রেন-জিরুর ওপরও নির্ভর করছে অনেক কিছু। ফ্রেঞ্চ লেফটব্যাক হার্নান্দেজের একেবারে উলটো দিকে খেলবেন তারই অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের সতীর্থ সিমে ভ্রাসালকো। ৯০ মিনিটের জন্য প্রিয় বন্ধুরাও পরিণত হবেন শত্রুতে। মদ্রিচ-ভারান, গ্রিযমান-ভ্রাসালকো, রাকিটিচ-উমতিতি; ক্লাব ফুটবলের অনেক বন্ধুত্বই থমকে যাবে আজ, অন্তত ৯০ মিনিটের জন্য।

     

    সংখ্যায় সংখ্যায়

    • ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে নিজেদের শেষ ৫ ম্যাচে অপরাজিত  ফ্রান্স
    • বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে আজকের আগে খেলা ৫ ফাইনালের ৩টিতে জিতেছে ‘লা ব্লুজ’রা
    • ১৯৯৮ বিশ্বকাপেই শেষবার ফ্রেঞ্চ ডিফেন্ডাররা গোল পেয়েছিলেন। সেবার শিরোপাটাও ঘরে তুলেছিল ফ্রান্স
    • ১৩ তম ভিন্ন দল হিসেবে বিশ্বকাপের ফাইনালে এসেছে ক্রোয়েশিয়া
    • এর আগে প্রথমবার ফাইনাল খেলা দু’দলই হয়েছে চ্যাম্পিয়ন (ফ্রান্স ১৯৯৮, স্পেন ২০১০)