• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    ওয়েঙ্গারের শেষ অথবা আর্সেনালের শুরু?

    ওয়েঙ্গারের শেষ অথবা আর্সেনালের শুরু?    

    ৮ আগস্ট থেকে শুরু হচ্ছে প্রিমিয়ার লিগের নতুন মৌসুম। প্যাভিলিয়নে শুরু হয়েছে বড় দলগুলোর প্রাক মৌসুম বিশ্লেষণ। তৃতীয় পর্বে আজ  থাকছে  আর্সেনালের শক্তি ও সম্ভাবনার খতিয়ান।

     


    প্রথম পর্ব - অগ্নিপরিক্ষায় উৎরাতে পারবেন রজার্স ?

    দ্বিতীয় পর্ব- ফন গালের "প্রতিদানের" সময়


     

    ২০০৫ এফএ কাপ ফাইনাল। গোলশূন্য ম্যাচের পর টাইব্রেকারে খেলা চলছে। দলের পক্ষে পঞ্চম পেনাল্টি নিতে আসলেন প্যাট্রিক ভিয়েরা। ঠাণ্ডা মাথায় বলটি জালে জড়ালেন। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে হারিয়ে ১০ম বারের মত এফএ কাপ জিতে নিল আর্সেনাল।

     

    সেই বোধহয় ট্রফিমোড়ানো বিখ্যাত আর্সেনাল যুগের শেষ দৃশ্য।

     

    ২০০৫ থেকে শুরু করে ২০১৪, টানা ৯ বছর কোন ধরণের মেজর শিরোপা এমিরেটসের ট্রফি কেসে যোগ হয়নি। তারপর হঠাৎ সবাইকে চমকে এফএ কাপ জিতে নিল আর্সেনাল। আর্সেন ফুরিয়ে যাননি। ২০১৫ তে এফএ কাপ ধরে রাখল গানাররা। কিন্তু লীগ তো সেই ১১ বছর আগে জিতেছে। সেই আকাঙ্ক্ষিত ট্রফিটা আবার আসবে কবে?

     

    গোলকিপার নাকি লীগ জেতার হলি গ্রেইল?

     

    শেযনি ভাল, অসপিনা তার চেয়েও ভাল কিন্তু পিটার চেক!

     

    গত দুই মৌসুম ধরে দলে জায়গা হারানো চেককে চেলসির ঘর ভেঙ্গে নিয়ে এসে বাজিমাত করে দিয়েছেন আর্সেন ওয়েঙ্গার। ৪ বার চেলসিকে লীগ জেতানো এই গোলরক্ষক ৩ বার প্রিমিয়ার লীগের সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার পেয়েছেন। দখলে আছে প্রিমিয়ার লীগে সবচেয়ে কম ম্যাচে ১০০ ক্লিন শিটের রেকর্ড, প্রিমিয়ার লীগের সর্বকালের সবচেয়ে বেশি ক্লিন শিট রাখার তালিকায় ১৬৮ ক্লিন শিট নিয়ে আছেন দু নম্বরে। আগামী কিছুদিনের মধ্যে নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, এই রেকর্ড বগলদাবা করে ফেলবেন। 

      

    চেক বর্তমানে লীগের সবচেয়ে অভিজ্ঞ গোলরক্ষক। গোল বাঁচাতে যা যা করা দরকার তাতে তো তিনি সেরাদের মধ্যে একজন বটেই, পাশাপাশি বল ডিস্ট্রিবিউশন দক্ষতা, দলকে পেছন থেকে নেতৃত্ব দেওয়া, পর্যবেক্ষণ ক্ষমতাও অসাধারণ।

     

    এই মৌসুমে শিরোপা দৌড়ে আর্সেনালের কিছু পয়েন্ট বেশি হবে চেকের জন্যই। এই বাড়তি পয়েন্টগুলো ১১ মৌসুম পর আর্সেনালকে নিয়ে যেতে পারে শিরোপার দিকে!

     

    ব্যাকআপ গোলকিপার হিসেবে আছেন অসপিনা। সম্ভবত লীগে কিছু ম্যাচ এবং এফএ কাপে তিনি খেলবেন। গতও মৌসুমের শেষ অর্ধ এবং কোপা আমেরিকায় তার পারফর্মেন্স চেককে ব্যতিব্যস্ত রাখবে কিছুটা। এফএ কাপ জিতেছেন প্রথম মৌসুমেই। গত মৌসুমে সেরা ৫ গোলরক্ষকের তালিকায় ছিলেন মাত্র ১৮ ম্যাচ খেলে।

     

    নিঃসন্দেহে বলা যায়, গোলরক্ষকদের শক্তিমত্তায় আর্সেনাল লীগের অন্যতম সেরা এখন। 

     

    হঠাৎ করে হয়ে ওঠা রক্ষণদুর্গ!

     

    গত মৌসুমের প্রথম ভাগে রক্ষণভাগ আর্সেন ওয়েঙ্গারের চাকরীর আয়ু শেষ করে দিয়েছিল প্রায়!

     

    কিন্তু সাউদাম্পটনের কাছে জানুয়ারির হারের পর হঠাৎ গা ঝাড়া দিয়ে ওঠে গানারদের ডিফেন্স। শেষ ১৮ লীগ ম্যাচে মাত্র ১১ গোল হজম করা, যার ফল হিসেবে ১৩ জয়ের বিপরীতে মাত্র দুটি হার, আর ৬ নম্বর থেকে ৩ নম্বরে লীগ শেষ করা, সাথে এফএ কাপ ধরে রাখার বিশাল অর্জন তো ছিলই।

     

    সেন্ট্রাল ডিফেন্সে জার্মান দৈত্য মার্টেসেকার আর ফরাসী কশিয়েলনি ২-৩ মৌসুম ধরেই নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড় হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করেছেন। জিতেছেন দুটি এফএ কাপ।

     

    তাদের বদলি হিসেবে আছেন ভিলারিয়াল থেকে আসা পাওলিস্তা আর ইংলিশ সেন্টার ব্যাক ক্যালাম চেম্বার্স। পাওলিস্তা লা লিগায় নিয়মিত পারফর্মার ছিলেন। আর চেম্বার্স রাইট ব্যাক আর সেন্টার ব্যাক হিসেবে বেশ খেলেছেন। তাই মাঠে নেমে নিজেদেরকে উজাড় করে খেলবেন। বাড়তি চাপ দেবে নিয়মিত জুটিকে আরও ভাল করতে।

     

    রাইট ব্যাকে ম্যাথিউ ডেবুশি আর ব্যালেরিন দুজনই দারুণ ফর্মে আছেন। ডিফেন্সের পাশাপাশি উইং ধরে লম্বা দৌড় দিয়ে কাউন্টার অ্যাটাকে যেতে পছন্দ করেন। আর স্ট্যামিনা ধরে রেখে রক্ষণেও ভাল নৈপুণ্য রাখেন পুরো ম্যাচ জুড়ে। যেটা প্লাস পয়েন্ট হিসেবে কাজ করবে।

     

    লেফট ব্যাকে মনরেয়াল খুব একটা ভাল নৈপুণ্য দেখাতে পারেননি ৩ মৌসুম। তবে গতও মৌসুমের শেষভাগে এসে আর্সেনের আস্থার প্রতিদান দেওয়ার পাশাপাশি মন জয় করে নিয়েছেন। কিছুটা রক্ষণাত্মক হওয়ায় রক্ষণে দলের সামর্থ্য বেড়ে যায়। কিয়েরন গিবসও বদলি হিসেবে বা বেশকিছু ম্যাচে প্রথম একাদশে খেলবেন।

     

    রক্ষণটা মোটামুটি আঁটসাঁটই বলা চলে। শিরোপা দৌড়ে সব ম্যাচ খেলার মত রসদ আছে ওয়েঙ্গারের কাছে।

     

     

    নির্ভরতার নাম মধ্যভাগ

     

    কোকুলান, গত মৌসুমে প্রিমিয়ার লীগের সেরা একাদশে থাকার সম্মান পেয়েছিলেন। কেন পেয়েছিলেন, তা বিশ্লেষণ করার চেয়ে চার্ল্টন অ্যাথলেটিকে লোনে থাকা এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের গত মৌসুমের পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যাবে। ২২ ম্যাচে ৭২টি ট্যাকল যার মধ্যে ৮৬% সফল। ৯৯৯ পাসটি সঠিক পাস দিয়েছেন, পাসিং সফলতা ৮৯%। একজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার কিভাবে একটা দলের মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করে কোকুলান তা মাঠে করে দেখিয়েছেন। পুনরুত্থান হয়েছে। সাথে আছেন ওয়েলশ উইজার্ড অ্যারন রামজে। অসাধারণ ভিশন, গোলে সহায়তা, সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় থেকে গোল দেওয়া, পাস, পুরো মধ্যভাগকে সৃষ্টিশীল করে তোলা  এই তরুণ গত দুই মৌসুম ইংলিশ ফুটবল কাঁপিয়ে বেড়াচ্ছেন।

     

    মাঝে কাযোরলাকে রেখে বায়ে ওজিল, আর ডানে সানচেজ।৩ জনের দূরপাল্লার গোল, ফ্রি কিক, পাস, গোলে সহায়তা সবকিছুই দুর্দান্ত। অ্যালেক্সিস প্রথম মৌসুমে এসেই ২৫ গোল, ১১ অ্যাসিস্ট করেছেন।

     

    এই তারকা ভরা মধ্যভাগে আরও আছেন উইলশেয়ার, চেম্বারলিন, রসিস্কি, আর্টেটা। এরা দলের বর্তমান অবস্থায় প্রথম একাদশে সুযোগ না পেলেও বদলি হিসেবে বা ছোট দলগুলোর সাথে খেলতে নামবেন। রকম বেঞ্চ খেলোয়াড়রা থাকা মানে একটা দলে সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই।  

     

    আশা-নিরাশার ফরোয়ার্ড লাইন 

     

    দলে ফরোয়ার্ড হিসেবে আছেন অলিভিয়ের জিরু, থিও ওয়ালকট এবং ড্যানি ওয়েলব্যাক। জিরু লীগে গত মৌসুমে ২৭ ম্যাচে ১৪ গোল করেছেন, বেশ ভালই বলা যায়। কিন্তু হেড আর বক্সে উইং অ্যাটাক ছাড়া তিনি খুব একটা সফল নন। মিস করেন সহজ সুযোগ।

     

    থিও ওয়ালকট যেরকম সম্ভাবনা নিয়ে এসেছিলেন, আঘাতের পর আঘাতে অনেকটাই প্রতিভার প্রতি সম্মান দেখাতে পারেননি। তবে এখন বেশ ভাল ফর্মে আছেন। গত ১৬ ম্যাচে করেছেন ১৩ গোল। জিরু আর তার মধ্যে দলের একমাত্র স্ট্রাইকার হিসেবে খেলার ভাল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। যেহেতু, ওয়েলব্যাক আঘাত থেকে এখনো সেরে ওঠেননি, ফরোয়ার্ড লাইনে বাকি দুজনের কেউ ইঞ্জুরিতে পড়লে আর্সেনালকে ভুগতে হতে পারে। দরকার একটা স্ট্রাইকার কেনার।

     

    আর্সেনের গত দুই মৌসুমের চমকের পর তৃতীয় চমক হিসেবে কে আসেন সেটাই দেখার বিষয়।

     

    ২০১৪ কমিনিউটি শিল্ডে জিতে মৌসুম শুরু করলেও লীগের শুরুটা ভাল হয়নি। তাই মাঝপথে এসে একের পর এক ম্যাচ জিতলেও শিরোপা জেতার স্বপ্নটা ততক্ষণে আরও একবার মিইয়ে গেছে। গত দুবছর ধরেই আর্সেনাল দলটা নিজেদের অভাব-দুর্বলতার জায়গাগুলো আস্তে আস্তে পুষিয়ে নিচ্ছে। বেশ কয়েক বছর এমিরেটস স্টেডিয়ামের ঋণ আর ক্লাবের বকেয়া পরিশোধ করতে করতে ট্রান্সফারে প্রতি মৌসুমে দুর্দান্ত সব খেলোয়াড়কে বিক্রি করেছে। থিয়েরি অরি, সামির নাসরি, সেস্ক ফ্যাব্রেগাস, রবিন ভ্যান পার্সি ক্লাবের তারকারা চলে গিয়েছেন। কিন্তু এতদিন পর আর্সেনাল আর্থিকভাবে বেশ স্বাবলম্বী। গত দুই মৌসুমে মেসুত ওজিল, অ্যালেক্সিস সানচেজের মত বড় তারকাকে নিয়ে এসেছেন আর্সেন।

     

    ১৯৯৬ থেকে আছেন আর্সেনালের প্রতীক হয়ে। নিজেকে আর্সেনালের ইতিহাসের সবচেয়ে সফল ম্যানেজার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করলেও গত এক দশক তাকে অনবরত দেখতে হয়েছে ট্রফি না পাওয়ার বেদনা আর সমালোচনা। তারপরও থেকে গেছেন। আর্সেনাল লীগ জিতলে অবসর নিতে পারেন ম্যানেজার পদ থেকে যেমনটি করেছিলেন ফার্গুসন। এবার, আর্সেনাল লীগ জেতার ব্যাপারে বেশ প্রতিশ্রুতি দেখাচ্ছে। দল ভাল ফর্মে আছেন। মেজর ট্রফি জিতেছে। চেলসিকে হারিয়ে মৌসুম শুরু করেছে। সবই ভালোর পথে। সাথে আছে ২০১৪-১৫ মৌসুমের শেষভাগের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স। 

     

    আর্সেন, এবার পারবেন তো?

     

    এক নজরে আর্সেনাল

     

    * প্রতিষ্ঠাকাল – ১৮৮৬

    * যে নামে পরিচিত – গানার্স

    * স্টেডিয়াম – দ্যা এমিরেটস (আগের স্টেডিয়াম ছিল হাইবুরি) 

    * লীগ শিরোপা – ১৩ বার এফএ কাপ – ১২ বার (রেকর্ড)

    * শেষবার লীগ শিরোপা – ২০০৩-০৪

    * শেষ মেজর শিরোপা – ২০১৫ এফএ কাপ

    * ২০১৪-১৫ মৌসুম – ৩য়

    * ২০১৫-১৬ প্রেডিকশন – ১ম