ইমরুল-সৌম্যর জোড়া সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের ৩-০
জিম্বাবুয়ে ২৮৬/৫, ৫০ ওভার (উইলিয়ামস ১২৯*, টেইলর ৭৫; নাজমুল ২/৫৮)
বাংলাদেশ ২৮৮/৩, ৪২.১ ওভার (সৌম্য ১১৭, ইমরুল ১১৫)
বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী ও সিরিজ ৩-০ তে জয়ী
দুজনই ওপেনার। দুজনেরই সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা- জাতীয় দল থেকে ডাক আসতে পারে যে কোনও সময়। ইমরুল কায়েস এ সিরিজে জায়গা ধরে রেখেছিলেন অবশ্য। সৌম্য সরকার বাদ পড়েছিলেন, সিরিজের মাঝপথে জাতীয় লিগের ম্যাচ মাঝপথে ফেলে ছুটে এসেছেন। আজ চট্টগ্রামে সৌম্যর পর ইমরুল- দুজনই লাফিয়ে উঠে গর্জন করলেন সেঞ্চুরির পর। ইমরুল এ সিরিজে যেন ব্যাটিংয়ের চিট-মোড বের করেছেন, সিরিজসেরা তিনি। আর সৌম্য ম্যাচসেরা। তাদের জোড়া সেঞ্চুরিতে জিম্বাবুয়ের ২৮৬ রান হেসেখেলে পার হয়ে গেছে বাংলাদেশ, জিতেছে ৩-০ তে। আর দক্ষিণ আফ্রিকার পর বাংলাদেশে এসেও ওই হোয়াইটওয়াশই হলো জিম্বাবুয়ে।
২৮৬ রানের সম্বল ছিল জিম্বাবুয়ের, এ উইকেটে যা চ্যালেঞ্জিং প্রতিপক্ষর জন্য। তবে ইমরুল-সৌম্যর ব্যাটিংয়ে আরও কিছু রানের আক্ষেপটা শুধু বাড়লো জিম্বাবুয়ের। শুরুতে অবশ্য ছিল ভিন্ন চিত্র। ইনিংসের প্রথম বলেই কাইল জারভিসকে ফ্লিক করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ লিটন দাস। জিম্বাবুয়ে দ্রুত উইকেটের জায়গায় পেয়ে গেল অতি দ্রুত উইকেট। এরপর ইমরুল-সৌম্যর ড্রাইভ যেতে লাগলো জিম্বাবুইয়ান ফিল্ডারদের এদিক-ওদিক দিয়ে, হলো এলবিডব্লিউর আবেদন। আরেকটি উইকেট যেন আসছিল শীঘ্রই। জারভিস টানা বোলিং করে গেলেন, আর ইমরুল ও সৌম্য মেরে গেলেন টানা বাউন্ডারি। প্রথম পাওয়ারপ্লের ৮ ওভারেই হয়েছে ১৩টি বাউন্ডারি। আরেকটি উইকেট পড়লো না শীঘ্রই, ম্যাচ থেকে শুধু ছিটকে যেতে লাগলো জিম্বাবুয়ে।
প্রথমে ফিফটি করেছিলেন ইমরুল, ৪১ বলে। সৌম্য সেটা করতে খেললেন ৫৪ বল, তবে তার ফিফটি এলো ছয় মেরে। ৮ ইনিংস পর ফিফটি পেলেন তিনি, যেটাকে এরপর রুপান্তরিত করলেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিতে। ইন ফ্রন্ট অব স্কয়ারে দুর্দান্ত ছিলেন সৌম্য, ছয়টি ছয়ই মেরেছেন লং অন থেকে লং-অফের মাঝে। পরের ফিফটি সৌম্য ছুঁয়েছেন মাত্র ২৭ বলে, সেঞ্চুরিও পেয়েছেন ইমরুলের আগেই।
শুরুতে ইমরুলের ড্রাইভগুলো আজ ততোটা আত্মবিশ্বাসে ভরপুর ছিল না হয়তো, তবে থিতু হওয়ার পর তাকে আটকানোর মতো কিছু থাকলো না জিম্বাবুইয়ানদের। অফসাইডে ড্রাইভ আর পাঞ্চে ইমরুল খেলতে থাকলেন, খেলতেই থাকলেন। আগের ম্যাচে ১০ রানের জন্য টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরির আক্ষেপ ছিল, সেটা পূরণ করলেন। ইমরুল ছাড়িয়ে গেলেন তামিম ইকবালের তিন ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। সৌম্যর সঙ্গে তার জুটি হলো দ্বিতীয় উইকেটে বাংলাদেশের জন্য সর্বোচ্চ। সৌম্যর পর ইমরুল- দুজন আউটও হলেন প্রায় একইভাবেই, তুলে মারতে গিয়ে লং-অফে দিলেন ক্যাচ। তবে ততক্ষণে বাংলাদেশের জন্য বাকি শুধু আনুষ্ঠানিকতা। অথচ প্রথম ইনিংস শেষেও চিত্রটা ছিল ভিন্ন।
শেন উইলিয়ামস দারুণ সেঞ্চুরি করে অংশ থাকলেন তিনটি গুরুত্বপূর্ণ জুটির। প্রথমে ব্রেন্ডন টেইলরের সঙ্গে জিম্বাবুয়েকে বাঁচালেন দ্রুত উইকেটের নিয়মিত বিপর্যয় থেকে, ১৩২ রানের জুটিতে গড়লেন বড় স্কোরের ভিত। সিকান্দার রাজাকে নিয়ে মাঝের ওভারগুলোতে রানের ধারা বজায় রাখলেন ৮৪ রানের জুটিতে। আর শেষে পিটার মুরকে নিয়ে দিলেন উড়ান, ৪৪ বলে ৬২ রানের জুটিতে।
সেফাস জুয়াও ও হ্যামিল্টন মাসাকাদজা আয়েসী শটে দুষ্ট হয়ে ফিরেছিলেন শুরুতেই, যথাক্রমে সাইফউদ্দিন ও রনির বলে বোল্ড হয়ে। ১৪ ওভারে ৪৮ রান ছিল জিম্বাবুয়ের।আরিফুল হকের এক ওভারে দুই বাউন্ডারি মেরে মোমেন্টামটা নিজেদের দিকে আনলেন টেইলর। এরপর প্রায় প্রতি ওভারেই এসেছে বাউন্ডারি, টানা দ্বিতীয় ফিফটি করেছেন টেইলর। নাজমুল অপুর ওভারে দুই চারের পর আবার স্লগ করতে গিয়ে টানা দ্বিতীয় ইনিংসে ৭৫ রানেই থেমেছেন তিনি।
সিকান্দার রাজা নাজমুলকে ছয় মেরে শুরু করেছিলেন, তার ফুলটসেই লং-অনে ক্যাচ দেওয়ার আগে উইলিয়ামসের সঙ্গে অবশ্য গুরুত্বপূর্ণ এক জুটি গড়লেন। তবে টেইলরের মতো এই উইকেটটাও অসময়ে হারিয়েছে জিম্বাবুয়ে। রাজার উইকেটের আগে থেকেই রান চেক দেওয়া শুরু করেছিলেন মাহমুদউল্লাহরা, ৪৬তম ওভারে মাশরাফিকে পরপর দুই ছয়ে মোমেন্টাম আবার ছিনিয়ে নিয়েছেন পিটার মুর। শেষ ৫ ওভারে জিম্বাবুয়ে তুলেছে ৪৮ রান।
এসবের মাঝে ছিলেন উইলিয়ামস। গুরুত্বপূর্ণ সব জুটিতে খেলেছেন পরিস্থিতি বুঝে, রিভার্স সুইপও করেছেন দরকার পড়লে। ক্যারিয়ারের ২য় সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন ১২৪ বলে। সেঞ্চুরির পর বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন রানের গতি। অসময়ে টেইলর বা রাজা না আউট হলে হয়তো স্কোরটা আরও বড় হতে পারত জিম্বাবুয়ের। সেটা হয়নি। মোস্তাফিজ-মিরাজকে ছাড়াই বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণ যে জিম্বাবুয়েকে যে নিরাপদ জায়গার অনেক আগেই থামিয়েছে, সেটাই তো পরে প্রমাণ করলেন ইমরুল-সৌম্য।