হেরাথের শেষ ম্যাচে ইংল্যান্ডের গল-দুর্গ জয়

গল টেস্ট
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস ৩৪২ (ফোকস ১০৭, কারান ৪৮, জেনিংস ৪৬, পেরেরা ৫/৭৫, লাকমাল ৩/৭৩) ও ২য় ইনিংস ৩২২/৬ (জেনিংস ১৪৬, স্টোকস ৬২, ফোকস ৩৭, হেরাথ ২/৫৯, পেরেরার ২/৯৪)
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস ২০৩ (ম্যাথিউস ৫২, চান্ডিমাল ৩৩, মইন ৪/৬৬, লিচ ২/৪১) ও ২য় ইনিংস ২৫০ (ম্যাথিউস ৫৩, মেন্ডিস ৪৫, মইন ৪/৭১, লিচ ৩/৬০)
ইংল্যান্ড ২১১ রানে জয়ী
গল রঙ্গনা হেরাথের দুর্গ। এক ভেন্যুতে একশ উইকেট নেওয়া তিন বোলারের একজন তিনি, তার একশর বেশি উইকেট এই গলেই। এই গলে এর আগে কখনও জেতেনি ইংল্যান্ড। ২০১৬ সালে চট্টগ্রামে বাংলাদেশের বিপক্ষে জেতার পর বিদেশের মাটিতে টানা ১৩ টেস্টে জয়হীন ইংল্যান্ড, যা কিনা রেকর্ডও ছিল। ইংল্যান্ডের সেই খরা কাটলো। ইংল্যান্ড গল-দুর্গ জয় করলো। ইংল্যান্ড জিতল হেরাথের দুর্গে, তার শেষ ম্যাচে। অধিনায়ক হিসেবে প্রথমবার দেশের বাইরে জিতলেন জো রুট।
বেন ফোকস ও কিটন জেনিংসের সেঞ্চুরি শ্রীলঙ্কার সামনে খোলা রেখেছিল শুধু রেকর্ডের দরজা। সেদিকে যাওয়ার কোনও হুমকি শ্রীলঙ্কানরা সে অর্থে তৈরি করতে পারেননি। দ্বিতীয় ইনিংসে প্রথম ইনিংসের চেয়ে বেশি রান উঠেছে খানিকটা, তবে রয়ে গেছে সেই বিশৃঙ্খলা।
সকালটা রয়েসয়ে, উইকেট না দিয়েই কাটিয়েছিলেন দুই শ্রীলঙ্কান ওপেনার- দিমুথ করুনারত্নে ও কৌশল সিলভা। তবে পানি-পানের বিরতির পরই ঘাটতি পড়েছে মনযোগে, জ্যাক লিচকে সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পা দিয়েছেন সিলভা। মইন আলিকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে সিলভাকে অনুসরণ করেছেন করুনারত্নে, খানিক বাদেই।
ব্যাটিংয়ে অনেক প্রাপ্তির সঙ্গে ইংল্যান্ডের প্রাপ্তি মইনের বোলিং-ও। দুই ইনিংস মিলিয়ে ১৩৭ রানে ৮ উইকেট নিয়েছেন এই অফস্পিনার, বিদেশের মাটিতে যা তার সেরা ফিগার। গলের উইকেট এই টেস্টে ছিল একটু ভিন্ন, একটু কম টার্ন পেয়েছেন স্পিনাররা। এ উইকেটের চাহিদা ছিল ডিসিপ্লিন, ইংলিশ স্পিনাররা সেটা করেছেন দারুণভাবে- যার নেতৃত্ব দিয়েছেন মইন।
ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ও কুশল মেন্ডিসের জুটিটা আরেকবার পরীক্ষা নিচ্ছিল ইংল্যান্ডের। এবার আঘাত বেন স্টোকসের। দারুণ সব শর্ট বল করেছেন, ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে বেরিয়ে নিয়ে গেছেন বল। শরীর থেকে দূরে থাকা এমনই এক বলে খোঁচা মেরেছেন ধনঞ্জয়া। লাঞ্চের আগে ৩ উইকেট হারিয়েছে শ্রীলঙ্কা।
প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও শ্রীলঙ্কার ‘সেরা’ ব্যাটসম্যান অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। স্টোকসের বলে মিড-অনে জেমস অ্যান্ডারসনকে ক্যাচ দিয়েও বেঁচেছিলেন, পরে পূরণ করেছেন ফিফটি। তার আগে ৪৫ রান করে ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙেছে মেন্ডিসের, লিচকে তুলে মারতে গিয়ে ধরা পড়েছেন মইনের হাতে। তার আগে ক্রিজে নিজের সময়টা দ্রুতই শেষ করেছেন দীনেশ চান্ডিমাল, চোটের কারণে পুরো ফিটও ছিলেন না তিনি। লিচের বলে হয়েছেন বোল্ড। চা-বিরতির আগে নিরোশান ডিকওয়েলাকে নিয়ে ছোটখাট একটা জুটি গড়েছিলেন ম্যাথিউস।
তবে বিরতি আবার কাল হয়েছে তার। এসেই আঘাত করেছেন মইন, স্লিপে স্টোকসের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ডিকওয়েলা। এরপর ফিরিয়েছেন ম্যাথিউসকে। দিলরুয়ান পেরেরার উইকেটটা মাঝে নিয়েছেন রশিদ, মইন এসে আকিলা দনঞ্জয়াকে ফেরানোর আগে।
এভাবেই শ্রীলঙ্কা তখন শেষ উইকেটে। বাকি শুধু রঙ্গনা হেরাথ। করতালিতে নামলেন, প্রথম বলেই সুইপ করেছিলেন। আম্পায়ার মারাই এরাসমাসের আউটের সিদ্ধান্তটা রিভিউ করে বেঁচে গেলেন হেরাথ। তবে শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে যেতে পারলেন না খুব দূরে। ডাবলস নিতে গিয়ে হলেন রান-আউট, যে আউটটা তার অবসরের সিদ্ধান্তটাকে যেন আরেকটু উপযুক্ত করে তুললো।
নিজের দুর্গ ইংল্যান্ড জয় করছে, শেষবেলায় এটায় দেখলেন হেরাথ। শেষ করলেন ১৯ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ার, শ্রীলঙ্কাকে যে ক্যারিয়ারে টেনেছেন অনেকবার। এবার পালা অন্যদের। গলে অন্যরা পারেননি, পাল্লেকেলেতে দ্বিতীয় টেস্ট থেকেই সেই যাত্রাটা শুরু করতে হবে শ্রীলঙ্কার নতুনদের। আর ইংল্যান্ডের আশা- গলের পুনরাবৃত্তি। আপাতত ইংল্যান্ড ১, শ্রীলঙ্কা ০।