• পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড সিরিজ
  • " />

     

    আবুধাবি রোমাঞ্চে পাকিস্তানকে ৪ রানে হারাল নিউজিল্যান্ড

    আবুধাবি রোমাঞ্চে পাকিস্তানকে ৪ রানে হারাল নিউজিল্যান্ড    

    আবুধাবি টেস্ট
    নিউজিল্যান্ড ১৫৩ ও ২৪৯ 
    পাকিস্তান ২২৭ ও ১৭১
    নিউজিল্যান্ড ৪ রানে জয়ী 


     

    নিউজিল্যান্ড কোচ লাফাচ্ছেন বাচ্চাদের মতো। পাকিস্তান কোচ কিছু একটা ছুঁড়ে মারলেন। নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটার উল্লাসে মাতোয়ারা, অভিষেকে ৫ উইকেট নেওয়া আজাজ প্যাটেল উল্লাসে মত্ত, জায়ান্ট স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকা আজহার আলি মুখ লুকাতে চাইছেন দুই হাতের গ্লাভসের আড়ালে, ব্যাটে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মোহাম্মদ আব্বাস যেন বুঝতেই পারছেন না কী হলো! আবেগের বিপরীতমুখী প্রকাশ সব, সব মিলল আবুধাবিতে। যে ম্যাচটা ১ম ইনিংসে ১৫৩ রানে অল-আউট হয়ে প্রথম দিনই পাকিস্তানের কাছে প্রায় হারিয়ে ফেলেছিল, আজাজ প্যাটেলের ৫ উইকেটে প্রত্যাবর্তনের অন্যরকম গল্প লিখে সেটাই ৪ রানে জিতে সিরিজে এগিয়ে গেল নিউজিল্যান্ড। রানের হিসেবে এতো কম ব্যবধানে এর আগে জেতেনি নিউজিল্যান্ড, এর আগে হারেনি পাকিস্তান। সব মিলিয়ে এর চেয়ে কম রানে জেতার রেকর্ড আছে মাত্র চারবার। 

    নিউজিল্যান্ডের প্রত্যাবর্তনে প্রথম দিনের কথা ভুলে যান কিছু সময়ের জন্য, এদিনও লাঞ্চের আগ পর্যন্ত জয়ের পথেই ছিল পাকিস্তান। আজহারের সঙ্গে আসাদ শফিক খেলছিলেন আরামসেই, ৪০ রানে ০ উইকেট থেকে ৪৮ রানে ৩ উইকেটে পরিণত হওয়া পাকিস্তানকে টানল দুজনের ৮২ রানে জুটি। প্যাটেল ও সোধি প্রথম দফা ফিরিয়ে এনেছিলেন নিউজিল্যান্ডকে, ইমাম-উল-হক, মোহাম্মদ হাফিজ ও হারিস সোহেলের উইকেট নিয়ে। তবে লক্ষ্য যখন ১৭৬, এমন পরিস্থিতিতে আজহার-শফিকের ৮২ রানের জুটির গুরুত্ব তো অনেক! তবে হাল ছাড়লো না নিউজিল্যান্ড, হাল ছাড়লেন না নেইল ওয়াগনার। তার শর্ট বল ব্যতিব্যস্ত করে রাখলো শফিককে, এরপর ফুললেংথের বল তাড়া করতে গিয়ে ধরা পড়লেন শফিক। তখনও বোধহয় কেউ জানতো না, লাঞ্চের পর কী অপেক্ষা করছে! কী নিয়ে অপেক্ষা করছেন প্যাটেল! 

    শুরুটা বাবর আজমের রান-আউট দিয়ে। আজহারের সঙ্গে ভুল বুঝাবুঝিতে ফিরলেন পাকিস্তানের প্রথম ইনিংসের নায়ক। প্যাটেলকে সুইপ করতে গিয়ে গ্লাভসের নিচে লেগে ইনসাইড-এজ সরফরাজ, প্রথমে এলবিডব্লিউর আবেদন হলেও পাকিস্তান অধিনায়ক হলেন কট-বিহাইন্ড, ম্যাচে দ্বিতীয়বার আউট হলেন সুইপ করতে গিয়ে। নিউজিল্যান্ড ততক্ষণে ধসের ঘ্রাণ পেয়ে গেছে। 

    এরপর পাকিস্তান যা করলো, তা এক কথায় তা চরম বিশৃঙ্খলা। বিলাল আসিফ, হাসান আলি ও ইয়াসির শাহ শুধু ধসের স্রোতেই গা ভাসালেন, শট খেলতে গিয়ে আউট তিনজনই। প্রথম দুইজন আউট প্যাটেলের বলে, পরেরজন ওয়াগনারের বলে। ১৬৪ রানে ৯ উইকেটে পরিণত হলো পাকিস্তান। ফিফটি পেরুনো আজহারের সঙ্গী শেষ ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ আব্বাস। ওয়াগনার তো শেষ পর্যন্ত করলেন টানা ১৩ ওভার। সঙ্গে প্যাটেলও বল করে যেতে লাগলেন। আর আজহার না করতে লাগলেন সিঙ্গেলে, বড় শটের অপেক্ষায়। 

    চতুর্থ বা পঞ্চম বলে সিঙ্গেল নিচ্ছিলেন, বাকিটা দায়িত্ব ছিল আব্বাসের। জয়ের জন্য ৮ রান দূরে থাকতে আব্বাসের বিপক্ষে রিভিউ নিল নিউজিল্যান্ড, জয়ের উদযাপন করেই ফেললো প্রায় তারা। তবে আল্ট্রা-এজ কিছু দেখালো না, বাড়লো শুধু অপেক্ষা। আজহার বড় শটের চেষ্টা করতে লাগলেন, র‍্যাম্প-রিভার্স সুইপের চেষ্টাও থাকলো তাতে। সফল হলেন না অবশ্য। আর শেষটাও হলো নাটকীয়। আগের বলেই সিঙ্গেল নিতে পারতেন আজহার, সেটা নেননি। চতুর্থ বলটা লেগস্টাম্পে পড়ে তীক্ষ্ণ টার্ন করলো, আম্পায়ার ব্রুস অক্সেনফোর্ড দিলেন এলবিডব্লিউ। রিভিউ নিতে দেরি করলেন না আজহার, হক আই স্টাম্পসে দেখালো আম্পায়ারস কল। 

    এরপরই তো বিপরীতমুখী সব আবেগের ওই বহিঃপ্রকাশ। ক্যারিয়ারের ৬৮তম টেস্টে এসে যেখানে ম্লান আজহার, প্রথম টেস্ট খেলতে নামা প্যাটেলের কাছে। পাকিস্তান আবুধাবির তপ্ত সূর্যের নিচে যেখানে ম্লান নিউজিল্যান্ডের কাছে।