• পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড সিরিজ
  • " />

     

    ইয়াসিরের ১০ উইকেটের জাদুকরী দিনে বিধ্বস্ত নিউজিল্যান্ড

    ইয়াসিরের ১০ উইকেটের জাদুকরী দিনে বিধ্বস্ত নিউজিল্যান্ড    

    দুবাই টেস্ট
    তৃতীয় দিনশেষে
    পাকিস্তান ১ম ইনিংস ৪১৮/৫ ডিক্লে. (হারিস ১৪৭, বাবর ১২৭*, গ্র্যান্ডহোন ২/৪৪) 
    নিউজিল্যান্ড ১ম ইনিংস ৯০ (রাভাল ৩১, উইলিয়ামসন ২৮*, ইয়াসির ৮/৪১) ও ২য় ইনিংস* (ফলোয়িং-অন) ১৩১/২ (টেইলর ৪৯*, ল্যাথাম ৪৪*, ইয়াসির ২/৬৫)


    প্রথমে, কিছু পরিসংখ্যান। ইয়াসির শাহর ৪১ রানে ৮ উইকেট পাকিস্তানের হয়ে যে কোনও বোলারের তৃতীয় সেরা ফিগার। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ইয়াসিরের বোলিং ফিগার ছাড়িয়ে গেছে সবাইকে। ৮ উইকেট নিতে ৭৫ বল করেছেন ইয়াসির, স্ট্রাইক রেটে যা সব সময়ের মাঝে ৬ষ্ঠ সেরা। তবে শেষ ৭ উইকেট নিতে ইয়াসির খরচ করেছেন ২৭ বল, মানে প্রায় প্রতি ৪ বলে নিয়েছেন একটি করে উইকেট! ৬ জন কিউই ব্যাটসম্যান ডাক মেরেছেন, টেস্টে এক ইনিংসে এতো ডাকের ঘটনা আছে আর চারটি। 

    মোদ্দা কথা, দুবাইয়ে ইয়াসির ছিলেন দুর্নিবার। ছিলেন জাদুকরী। নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং লাইন-আপকে নরম কাঠ ভেবে ধারালো করাতের মতো করে ঢুকে গেছেন তিনি। ৫০ রানে ০ উইকেট থেকে যেন চোখের পলকেই নিউজিল্যান্ড অল-আউট হয়ে গেছে ৯০ রানে। ৩২৮ রানের বিশাল লিড পাওয়া পাকিস্তান ফলো-অন করিয়েছে সফরকারিদের, সে ইনিংসে আরও ২ উইকেট নিয়ে ১৯৯৯ সালে অনীল কুম্বলের পর প্রথম বোলার হিসেবে একদিনে ১০ উইকেট নিয়েছেন ইয়াসির। রস টেইলর ও টম ল্যাথামের অপরাজিত ৪০-পেরুনো ইনিংসে লিডটা ১৯৭ রানে নামিয়ে এনেছে নিউজিল্যান্ড। তবে ইয়াসিরের সামনে আদৌ যথেষ্ট হবে কিছু? 

    বৃষ্টিতে দেরিতে শুরু হয়েছিল খেলা, আর শুরুর উইকেটটায় ভাগ্যের পরশ ছিল ইয়াসিরের। জিট রাভালের রিভার্স সুইপ তার উরুর পর ব্যাটের পিঠ ছুঁয়ে গেছে স্টাম্পে। তবে সেটা যেন ছিল ইয়াসিরের ‘ম্যাজিক-শো’-এর ভূমিকা। কিছুক্ষণ পর টম ল্যাথাম বাড়তি টার্ন আর বাউন্সের শিকার, বলকে মাটিতে রাখতে গিয়েও ধরা পড়েছেন শর্ট লেগে। এরপরের দুই উইকেট এক কথায়- ‘বিউটি’, যাতে গর্বিত হতে পারেন শেন ওয়ার্নের মতো কিংবদন্তিও। 

     

    বোলারের নামটা অনুমান করে নিন/ক্রিকইনফো 

     

    ডানহাতি টেইলরের ক্ষেত্রে বলটা পড়লো লেগস্টাম্পের ওপর, ব্যাটের আউটসাইড-এজ ভেদ করে ভাঙলো অফস্টাম্পের চূড়া। বাঁহাতি হেনরি নিকোলসের বেলায় অফস্টাম্পের বাইরে পড়ে ব্যাটের ইনসাইড-এজকে ফাঁকি দিয়ে ভাঙলো স্টাম্প, এক বলের ব্যবধানে দুই লাইন ধরে ইয়াসির আনলেন একই ফল! লাঞ্চের আগেই এলোমেলো নিউজিল্যান্ড, ৬৩ রানে নেই ৪ উইকেট। 

    ইনিংসের ধসে একটা রান-আউট থাকবে, ক্রিকেটের অলিখিত নিয়ম মেনে বিজে ওয়াটলিং অধিনায়ক উইলিয়ামসনের সঙ্গে ভুল-বুঝাবুঝিতে হলেন রান-আউট। কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম প্রথম টেস্টের মতো করেই এলবিডব্লিউ হাসান আলির বলে। হাসান যেন বললেন, ‘এবার ইয়াসিরের পালা!’ 

    ইশ সোধি ও শেষে গিয়ে ট্রেন বোল্টের উইকেটে থাকলো সরফরাজের সহায়তা, প্রথম জন কট-বিহাইন্ড, পরের জন স্টাম্পড। মাঝে নেইল ওয়াগনার ও আজাজ প্যাটেল এলবিডব্লিউ। ১২.৩-১-৪১-৮, ইয়াসিরের ম্যাজিক ফিগার! এতকিছুর ভিড়ে শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলেন উইলিয়ামসন, তিনি যেন ব্যাটিং করছিলেন সম্পূর্ণ ভিন্ন কোনও উইকেটে, সম্পূর্ণ ভিন্ন কোনও ইয়াসিরের বিপক্ষে। তার অপরাজিত ২৮ রান নিউজিল্যান্ডের পুরো ইনিংসের তুলনায় বিশাল, তবে ম্যাচের প্রেক্ষাপট সেটা আর বদলাতে পারলো কই! 

    আবার ব্যাটিংয়ে এলো নিউজিল্যান্ড, আবার চললো ইয়াসির-শো। দিনে দ্বিতীয়বার ইয়াসিরের বলে ফিরলেন রাভাল, আগবাড়িয়ে খেলতে গিয়ে সরফরাজের তীক্ষ্ণ স্টাম্পিংয়ের শিকার তিনি। উইলিয়ামসন শুরু করলেন প্রথম ইনিংসের ফেলে আসা কাজই, তবে এবার তিনিও আত্মসমর্পণ করলেন ইয়াসিরের কাছে। কট-বিহাইন্ডটা পাকিস্তান পেলো রিভিউ নিয়ে। 

    রস টেইলর ও টম ল্যাথাম অবশ্য একটু ধাতস্থ করলেন এরপর নিউজিল্যান্ডকে। দুজন খেললেন পুরো বিপরীতমুখী দুই ইনিংস। ল্যাথাম ১৪১ বল খেলে করেছেন ৪৪, টেইলর ৪৯ করতে খেলেছেন মাত্র ৫৩ বল। দিনে ১০ উইকেট নিয়েই থেমেছেন ইয়াসির। 

    চতুর্থ দিন তাকে থামাতে পারবে নিউজিল্যান্ড?