• আয়ারল্যান্ড ত্রিদেশীয় সিরিজ ২০১৯
  • " />

     

    দাপুটে জয়ে অনেকগুলো টিকচিহ্ন পেলেন মাশরাফি

    দাপুটে জয়ে অনেকগুলো টিকচিহ্ন পেলেন মাশরাফি    

    ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫০ ওভারে ২৬১/৯ (হোপ ১০৯, চেজ ৫১; মাশরাফি ৩/৪৯, সাইফ উদ্দিন ২/৪৭, মোস্তাফিজ ২/৮৪)

    বাংলাদেশ ৪৫ ওভারে ২৬৪/২ (তামিম ৮০, সৌম্য ৭৩, সাকিব ৬১*, মুশফিক ৩২; চেজ ১/৫১)

    ফলঃ বাংলাদেশ ৮ উইকেটে জয়ী

    পুরো স্কোরকার্ড দেখুন


    ক্লনটার্ফের মাঠে সূর্য হেসেছে সারাদিনই। মাঝে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি একটু চোখ রাঙানি দিচ্ছিল বটে, তবে শেষমেশ বেরসিকের মতো খেলায় বাধ সাঁধেনি। সেটা হলে বাংলাদেশের জন্য ভীষণ আক্ষেপের হতো। এমন জয়ে বিশ্বকাপ প্রস্তুতির মিশনটা যে হয়তো তাহলে শুরু করাই হতো না! দলের ‘অ্যাসাইনমেন্টে’ অনেকগুলো টিকচিহ্নও যে পাওয়া হতো না!

    আপনি বলতে পারেন, এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে ৩০ বল হাতে রেখে ৮ উইকেটের এমন দাপুটে জয়ই তো পাওয়া উচিত। গত বছর ক্যারিবিয়দের তাদের মাটিতে ওয়ানডেতে হারিয়ে এসেছে বাংলাদেশ, বছরের শেষে দেশের মাটিতেও হারিয়েছে আরেক দফা। ভেন্যু বদলে নিরপেক্ষ হলো, তবে বদলাল না চিত্রনাট্য। একটু অবশ্য পার্থক্য আছে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিশ্বকাপ দলের অনেকেই ছিলেন না আজ। গেইল, লুইস, রাসেল, হেটমেয়ার, টমাস, পুরানরা ব্যস্ত আইপিএলে, এই সিরিজে নিয়মিত একাদশের বাইরে অনেকেরই সুযোগ মিলেছে। আগের ম্যাচেই যেমন শেই হোপের সঙ্গে বিশ্বকাপের সুযোগ না পাওয়া জন ক্যাম্পবেল বিশ্বরেকর্ডই গড়ে ফেলেছেন। হোপ বাংলাদেশকে পেলেই জ্বলে ওঠেন , সেটির ব্যতিক্রম হয়নি আজও। তারপরও বাংলাদেশ এমন একটা জয় থেকে স্বস্তির বেশ কিছু রসদ খুঁজে নিতে পারেন।

    সাকিব আল হাসানের ফেরাটা যেমন বড় একটা প্রাপ্তি। নিউজিল্যান্ড সিরিজে চোটের জন্য ছিলেন না, আইপিএলেও মাত্র দুইটি ম্যাচ খেলেছেন। তবে সাকিব আরও একবার প্রমাণ করেছেন, ছন্দে ফেরার জন্য ইঞ্জিনটা চালু করতে জানেন দ্রুত। বল হাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের লাগাম টেনে ধরেছেন শুরুতে, নিয়েছেন দুর্দান্ত একটা ক্যাচ। তবে তুলিতে শেষ আঁচড়টা দিয়েছেন ৬১ বলে ৬১ রানের ইনিংসে, চার মেরে বাংলাদেশকে জয় এনে দেওয়াটাই অনেকটা বলে দিচ্ছে ম্যাচের গল্প।

    সৌম্য সরকারের ছন্দে ফেরাটাও কম স্বস্তি নয়। ওপেনিং জুটি নিয়ে খানিকটা অস্বস্তির খচখচে কাঁটা থাকতেই পারে মাশরাফি-রোডসদের মনে। লিটন দাস-সৌম্য সরকারের কেউই তো ধারাবাহিক হতে পারছিলেন না। আজ সুযোগ পেলেন সৌম্য, আরও একবার দেখালেন কেন তাঁর ওপরে ভরসা রাখা উচিত। স্লথ উইকেটে তামিম যখন এক প্রান্ত আগলে রেখে ব্যাট করছিলেন, সৌম্য স্কোরবোর্ড সচল রাখার দায়িত্বটা তুলে নিলেন নিজের কাঁধে। প্রথম ১০ ওভারে ৩৮ রান ওঠার পর যখন ইশান কোণে একটু মেঘ দেখতে পাচ্ছিল বাংলাদেশ, সৌম্য সেই মেঘ উড়িয়ে দিলেন এক লহমায়।

    নিজের সহজাত পুল আর কাট খেলছিলেন দারুণ, এরপর জেসন হোল্ডারকে মাথার ওপর দিয়ে আছড়ে ফেললেন সীমানার ওপারে। একটা পেরিস্কোপ শটে চার বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেই দুর্দান্ত ইনিংসের কথাও মনে করিয়ে দিলেন। একটা কঠিন সুযোগ অবশ্য দিয়েছিলেন, সেটি নিতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে সৌম্য এগিয়ে যাচ্ছিলেন সেঞ্চুরির দিকে। সেটি হলো না ডিপ মিডউইকেটে ব্রাভোর দারুণ এক ক্যাচে।

    তামিমের শুরুটা ছিল একেবারেই মন্থর, ফিফটি পেয়েছেন ৭৮ বলে। সৌম্যের সঙ্গে সেঞ্চুরি জুটিও হয়ে গেছে এর মধ্যেই, বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটিতে পঞ্চমবারের মতো এলো শত রান। তামিম অবশ্য ফিফটির পর একটু খোলস ছেড়ে বেরিয়ে খেলতে শুরু করেছেন, ডাউন দ্য উইকেটেও আসছিলেন বার বার। ১ রানের মাথায় রস্টন চেজের হাতে জীবন পাওয়ার সুযোগটা সেঞ্চুরিতে থামবে বলেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু ৮০ রানে শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচ দিলেন, সেঞ্চুরিটা পাওয়া হলো না।

     

     

    সাকিব অবশ্য ততক্ষণে হাত খুলে খেলতে শুরু করেছেন। দুই স্পিনার চেজ ও নার্সকে একটি করে ছয়ও মেরেছেন। মুশফিক নামার পর থেকে দুজন মিলে ঠিক করলেন, খেলাটা শেষ করে দেবেন দ্রুতই। দুজন মিলে দলের জন্য ৬৮ রান করলেন মাত্র ৫০ বলে। শেষটা আবার করেছেন কটরেলের এক ওভার থেকেই ১৯ রান নিয়ে। মুশফিক মেরেছেন দুইটি ছয়, ২৫ বলে ৩২ রান করে শেষ করেছেন ম্যাচ। আর সাকিব তো অন্য প্রান্তে ছিলেনই।

    তার আগে বোলিংয়ে বাংলাদেশের বড় টিকচিহ্ন মাশরাফি বিন মুর্তজা পেয়েছেন বেশ কয়েক জায়গায়। শেই হোপ আর সুনিল আম্রিস যেভাবে শুরু করেছিলেন, তাতে বড় কিছুর পথে ছিল উইন্ডিজ। এর মধ্যে মাশরাফির এক ওভারে খুব ক্লোজ দুইটি আবেদন ফিরিয়ে আম্পায়ারও বাড়িয়ে দিয়েছেন হতাশা। আম্রিসকে ফিরিয়ে লাগাম টানার কাজ শুরু মিরাজের, পুরো ম্যাচেই এরপর দুর্দান্ত বল করেছেন। সাকিব তো যথারীতি দুর্দান্ত, ১০ ওভারে ৩৩ রান দিয়ে ১ উইকেটের চেয়ে তাঁর ফিগারটা আরও ভালো হতেই পারত।

    তবে মাশরাফি নিজের বোলিং নিয়েও বেশ সন্তুষ্ট হতে পারেন। শুরুর স্পেলে ৬ ওভারে দিয়েছেন ২৫ রান, তবে পরের পেলেই ছিল কঠিন কাজ। হোপ ততক্ষণে সেঞ্চুরি করে ফেলেছেন, শেষ ১০ ওভারে ঝড় তোলার অপেক্ষায় উইন্ডিজ। ৮ ওভারেও কোনো উইকেট পেলেন না মাশরাফি, ৪০ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ক্যারিবিয়রা তুলে ফেলেছে ১৯৭ রান। মাশরাফি নবম ওভারে ফেরালেন চেজকে, পরের ওভারের প্রথম বলেই ফেরালেন হোপকে। এক বল পর বিপজ্জনক হোল্ডারকে ক্যাচ বানালেন উইকেটের পেছনে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ এরপর শুধু হোঁচটই খেয়েছে। ৪৯ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন মাশরাফি, সাইফ উদ্দিনিও ৪৭ রানে ১ উইকেট দিয়ে নিজের দাবিটা জানান দিয়েছেন। সঙ্গে দলের দুর্দান্ত ফিল্ডিং তো ছিলই, সাকিব আর সাব্বিরের দারুণ দুইটি ক্যাচ ছিল যার প্রতীকী ছবি। পুরো ম্যাচে একটাই অস্বস্তি হতে পারে মাশরাফির, সেটি মোস্তাফিজকে নিয়ে। ১০ ওভারে ৮৪ রান দিয়েছেন মোস্তাফিজ, লাইন লেংথ খুঁজে পাননি একদমই। অনেকগুলো টিক চিহ্নের ভিড়ে এই একটিই হতে পারে অস্বস্তি।