কিক অফের আগে : বার্সার টানা দ্বিতীয় 'ডাবল', না ভ্যালেন্সিয়ার পুনর্জাগরণ?
কোপা ডেল রে ফাইনাল
২৫(২৬) মে, রাত ১টা, এস্তাদিও বেনিতো ভিয়ামারিন
ডিভক ওরিগির গোলে অ্যানফিল্ডে তখন কান পাতা দায়। 'ইউ উইল নেভার ওয়াক অ্যালোন'- আসলেই তাই, অ্যানফিল্ডে সেদিন একা ছিলেন না কেউই, একজন বাদে। সেন্টারের সামনে দু'হাঁটুতে ভর করে শূন্য দৃষ্টিতে স্কোরবোর্ড দেখছিলেন লিওনেল মেসি। অ্যানফিল্ড দুঃস্বপ্নের সপ্তাহখানেক আগেই স্প্যানিশ লিগ ঘরে তুলেছিল বার্সা, কাতালানদের লিগ শিরোপা ধরে রাখার মতো গত সপ্তাহে মেসি নিশ্চিত করেছেন ইউরোপের সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার রেকর্ডও। আজ রিয়াল বেটিসের মাঠ এস্তাদিও বেনিতো ভিয়ামারিনে ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে কোপা ডেল রে ফাইনালে মাঠে নামছে বার্সা, সামনে হাতছানি 'ডাবল' জেতার, টানা ৫ম বারের মত স্প্যানিশ কাপ নিজেদের করে রাখার। কিন্তু বার্সার অধিনায়ক স্বীকার করছেন, এখনও চ্যাম্পিয়নস লিগের সেই অপ্রত্যাশিত বিদায় তাড়িয়ে বেড়ায় তাকে।
৪ বছর পর আজই প্রথম ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন মেসি। স্পেনে এবং ইউরোপে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন, দলকে জিতিয়েছেন লিগ, এই মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগেরও সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনিই। কিন্তু সব ছাপিয়ে যায় আসল মেসির চ্যাম্পিয়নস লিগ হতাশা। লিগে দারুণ এক মৌসুম কাটিয়েও তাই মেসির কাছে গ্লাসটা অর্ধেক ভরার চেয়ে মনে হয় অর্ধেক খালিই, 'লিগে আমরা ভাল করেছি। কিন্তু প্রতি মৌসুমেই চ্যাম্পিয়নস লিগ নিয়ে আমাদের আলাদা পরিকল্পনা থাকে। এবারও ছিল, আমরা ফর্মেও ছিলাম। কিন্তু অ্যানফিল্ডে লিভারপুল নিজেদের জাত চিনিয়েই ফাইনালে গেছে। সত্যি বলতে, নিজস্ব অর্জন (সর্বোচ্চ গোলদাতা) নিয়ে একদমই ভাবতে চাই না আমি। চ্যাম্পিয়নস লিগে এবারের বিদায় আমাদের পুরো স্কোয়াডকে মানসিকভাবে বেশ প্রভাবিত করেছে।’
সেমিফাইনাল থেকে বিদায়ের পরই বার্সা ম্যানেজার এর্নেস্তো ভালভার্দের চাকরিটা হয়ে গেছে আরও বেশি নড়বড়ে। টানা দুবার এমন বিদায়ের পরও ভালভার্দেতেই বিশ্বাস রাখছেন মেসি, ‘পরের মৌসুমে এর্নেস্তোকেই আমাদের ম্যানেজার হিসেবে চাই। তার অধীনে সময়টা বেশ ভালোই কেটেছে আমাদের। সামর্থ্যের জানান দিয়েই এতদিন তিনি আছেন, পরের মৌসুমে তাকেই হটসিটে চাই আমরা।’
মেসির সাথে অ্যানফিল্ডে সেদিন ছিলেন জেরার্ড পিকেও। অধিনায়কের সাথে গলা মিলিয়েছেন তিনিও, ‘প্রথম লেগের পর ফাইনাল খেলা নিয়ে বেশ আশাবাদী ছিলাম আমরা। কিন্তু অ্যানফিল্ডে সব হিসাবনিকাশ বদলে গেল। ফাইনালের এত কাছে এসেও বিদায় নেওয়াটা অবশ্যই হতাশার। স্কোয়াডের সবারই মানসিক অবস্থা খুব একটা ভাল ছিল না কয়েকদিন ধরে। কিন্তু ফুটবলে অতীত নিয়ে পড়ে থাকা চলবে না। ভ্যালেন্সিয়া অসাধারণ দল, পা হড়কানোর সুযোগ নেই আমাদের। শিরোপা দিয়েই এই মৌসুমকে বিদায় জানাতে চাই আমরা।’
যাকে নিয়ে এত জল্পনা-কল্পনা-সমালোচনা, সেই ভালভার্দেও ছিলেন সংবাদ সম্মেলনে। চাকরি নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে দিলেন স্প্যানিশ ম্যানেজার, ‘বার্সার হর্তাকর্তারা যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটাই আমি মেনে নেব। ন্যু ক্যাম্পে ফুটবলার হিসেবে আমার দারুণ সব স্মৃতি আছে, ম্যানেজার হয়েও সেরকম আরও অনেক কিছু পেয়েছি। আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ। অবশ্যই ন্যু ক্যাম্পেই থাকতে চাই আমি, তবে সেটা আমার ওপর নির্ভর করছে না। সিদ্ধান্ত যাই হোক, মেনে নিতে কোনও অসুবিধা নেই আমার। তবে এখনই ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে চাচ্ছি না। টানা দ্বিতীয় ‘ডাবল’ জেতার দোরগোড়ায় আমরা। ভ্যালেন্সিয়া শক্ত প্রতিপক্ষ, আরও এক শিরোপা উদযাপন দিয়েই এই মৌসুমকে বিদায় জানাতে চাই আমরা।’
বার্সেলোনার সঙ্গে খেলা ভ্যালেন্সিয়ার, অথচ পাদপ্রদীপের আলোর ছিঁটেফোঁটাও নেই যেন সেদিকে। সেটা নিয়ে অবশ্য মাথা ঘামাচ্ছেন না ভ্যালেন্সিয়া কোচ মার্সেলিনো গোমেজ। অবশ্য বার্সার মত মৌসুমটা দুর্দান্ত কেটেছে তাদেরও। আক্ষরিক অর্থেই খাদের কিনারা থেকে দলকে উঠিয়ে এনেছেন তিনি। লিগ টেবিলে ১৪তম হয়ে বছর শুরু করেছিল ভ্যালেন্সিয়া।
এরপর একের পর এক দারুণ পারফরম্যান্সে নিশ্চিত করেছে আগামী মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগের টিকেট। আর্সেনালের কাছে ইউরোপা লিগের সেমিতে না হারলে আরও স্মরণীয় হত তাদের মৌসুম, কিন্তু মেসির মত অপ্রাপ্তির চেয়ে ইতিবাচক দিকগুলোর দিকেই নজর দিচ্ছেন তিনি, ‘মৌসুমের শেষটা এত দুর্দান্ত হবে, সত্যি বলতে জানুয়ারিতেও ভাবিনি আমরা। কিন্তু এখন আর পেছনে ফেরা যাবে না। ফাইনালে বার্সাই ফেভারিট, তবে এতদূর এসে কাউকে ছেড়ে কথা বলব না আমরা।’
দলের খবর
লিগের মত কোপার শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখার ম্যাচে লুইস সুয়ারেজকে পাচ্ছে না বার্সা। থাকছেন না গোলরক্ষক মার্ক আন্দ্রে টার স্টেগানও। এছাড়া উসমান ডেম্বেলে, কেভিন প্রিন্স-বোয়াটেং, আর্থার মেলো এবং ফিলিপে কুতিনিয়োর খেলা নিয়ে আছে সংশয়। ভ্যালেন্সিয়ার হয়ে থাকছেন না সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ ফরোয়ার্ড ডেনিস চেরিশেভ এবং এজেকুয়েল গারায়।
সম্ভাব্য মূল একাদশ
বার্সেলোনা (৪-৩-৩): সিলিসেন; রবার্তো, পিকে, লংলে, আলবা; বুস্কেটস, ভিদাল, রাকিটিচ; মেসি, সুয়ারেজ, ম্যালকম
ভ্যালেন্সিয়া (৪-৩-৩): ডমেনেখ; ওয়াস, দিয়াখাবি, পাউলিস্তা, গায়া; সোলের, পারেহো, ককোলান; গুইদেস, রড্রিগো, মিনা
সংখ্যায় সংখ্যায়
- এই মৌসুমে বার্সার বিপক্ষে হারেনি ভ্যালেন্সিয়া (২ ম্যাচে ২ ড্র)
- ২০১৬-এর পর বার্সাকে হারাতে পারেনি ভ্যালেন্সিয়া
- ১১ বছর পর কোপার ফাইনালে খেলবে ভ্যালেন্সিয়া