• বিগ ব্যাশ লিগ
  • " />

     

    ২২ গজ থেকে ফ্রেঞ্চ ওপেন চ্যাম্পিয়ন

    ২২ গজ থেকে ফ্রেঞ্চ ওপেন চ্যাম্পিয়ন    

    ব্রিসবেন হিটসের হয়ে যখন বিগ ব্যাশ মাতাচ্ছিলেন

     

    ফ্রেঞ্চ ওপেনের নারী এককের শিরোপা যখন উঁচিয়ে ধরলেন তিনি, অনেক ক্রিকেট ভক্তরই হয়ত মনে হয়েছে, এই মেয়েটাকে টেনিস কোর্ট ছাড়াও কোথায় যেন দেখেছি। অস্ট্রেলিয়ান ঘরোয়া ক্রিকেটের খোঁজখবর যারা রাখেন, তাঁরা হয়ত খানিকটা অবাক হয়েই বলে উঠেছেন, আরে  এই মেয়েটা তো বিগ ব্যাশেও খেলতেন! টেনিস খেলোয়াড়ের পাশাপাশি ক্রিকেটার, অ্যাশলি বার্টির পরিচয় আসলে দুটিই। যদিও ক্রিকেট খেলেছেন মাত্র এক বছর, বার্টির জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে ওই সময়টাই। চতুর্থ অস্ট্রেলিয়ান নারী হিসেবে ফ্রেঞ্চ ওপেন জয়ের পর বার্টি বলছেন, শিরোপা জয়ের পেছনে বড় ভূমিকা আছে তাঁর সংক্ষিপ্ত ক্রিকেটিং ক্যারিয়ারেরও।

    টেনিস ক্যারিয়ারের শুরুটা হয়েছিল দুর্দান্তভাবে। ২০১১ সালে ১৫ বছর বয়সে বার্টি জিতেছিলেন জুনিয়র উইম্বলডনের শিরোপা। স্বভাবতই এরপর তাঁকে ঘিরে প্রত্যাশার পারদটা ছিল তুঙ্গে। সেটাই কাল হয়েছে, পরের তিন বছর সিনিয়রদের টুর্নামেন্টে তেমন কোন সাফল্য পাননি। চারটি গ্র্যান্ড স্ল্যামের কোনটিতেই কোয়ার্টার ফাইনালের মুখ দেখেননি। এককে সাফল্য না পেলেও দ্বৈত বিভাগে অবশ্য তিনবার ফাইনাল খেলা হয়ে গিয়েছিল বার্টির। তবুও নিজের প্রতিভার প্রতি সুবিচার করতে না পেরে শিরোপা জয়ের স্বাদ পাওয়া হয়নি তাঁর।

    ২০১৪ সালের ইউএস ওপেনের পর হুট করেই আসে ঘোষণাটা। বার্টি জানিয়ে দেন, টেনিস থেকে স্বেচ্ছায় বিরতি নিচ্ছেন তিনি। মাত্র ২০ বছর বয়সেই বার্টির এমন সিদ্ধান্ত সবাইকে অবাক করে। আরও অবাক করে টেনিস ছেড়ে বার্টির অস্ট্রেলিয়ার নারী দলের হয়ে খেলার ইচ্ছার ব্যাপারটি। টেনিসের মতো ক্রিকেটটাও খুব একটা খারাপ খেলতেন না তিনি! বার্টির ক্রিকেটীয় কৌশল দেখে মুগ্ধ হন কুইন্সল্যান্ড ফায়ারের কোচ অ্যান্ডি রিচার্ডস। তাঁকে ২০১৫ সালের জুলাই থেকে দলের সাথে অনুশীলন করার অনুমতিও দেওয়া হয়।

    ইউএস ওপেনের দ্বৈত শিরোপা জয়ের পর

     

    এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি বার্টিকে। ব্রিসবেনের স্থানীয় টি-টোয়েন্টি লিগে সুযোগ পান ওয়েস্টার্ন সাবার্বস ডিসট্রিক্ট ক্রিকেট ক্লাবে, সেখানে খেলেছেন ১৩ ম্যাচ, করেছেন সেঞ্চুরিও! তাদের হয়ে শিরোপাও জিতেছেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম নারী বিগ ব্যাশ লিগেও তাঁকে দলে নেয় ব্রিসবেন হিটস। সেখানে খুব বেশি সাফল্য না এলেও ক্রিকেটে যে বেশ থিতু হয়ে গেছেন, সেটা ভালোভাবেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন।

    বিগ ব্যাশের সেই মৌসুম শেষে ২০১৬ সালের শুরুতে বার্টি ঘোষণা দেন, আবার টেনিসে ফিরতে চান তিনি। টেনিস কোর্টে নিজের ‘দ্বিতীয় অধ্যায়ে’ অনেকটাই নতুনরূপে আবির্ভূত হন বার্টি। একক কিংবা দ্বৈত, দুই বিভাগেই তরতর করে এগোতে থাকে বার্টির র‍্যাংকিং। ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন ও উইম্বলডনের দ্বৈত বিভাগে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠেন। চূড়ান্ত সাফল্য আসে গত বছরের ইউএস ওপেনে, যুক্তরাষ্ট্রের কোকো ভ্যান্ডেওইয়েগের সাথে জুটি বেধে জেতেন নিজের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা।

     

     

    এই বছরের শুরুতে অস্ত্রেলিয়ান ওপেনে কোয়ার্টারেই বাদ পড়তে হয়েছিল। ফ্রেঞ্চ ওপেনে সেই হতাশা ঘুচিয়ে বার্টি জিতেছেন নিজের প্রথম একক গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা। নির্বাসন থেকে ফেরার দুই বছরের মাঝেই এত সাফল্য, বার্টি এর কৃতিত্বটা দিচ্ছেন সেই এক বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারকেই, ‘ওই বছরটা আমার জীবনের অন্যতম সেরা সময় ছিল। তাঁরা আমাকে দারুণভাবে আপন করে নিয়েছিল। এখনো তাদের সাথে সেই সম্পর্কটা আছে। তাঁরা সবাই তো আমাকে ফ্রেঞ্চ ওপেনের সময় অনেক ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েছে। ক্রিকেট খেলার সময় যে বন্ধুদের পেয়েছি, তারাই আমার জীবনের সেরা বন্ধু। হুট করে নিজদের ড্রেসিংরুমে চলে আসা একজন অপেশাদার ক্রিকেটারকে তাঁরা আপন করে নিয়েছিল, এটা অসাধারণ ব্যাপার। আজীবন তাদের সাথে আমার বন্ধুত্বটা থেকে যাবে। ওই সময়টা আমাকে খেলোয়াড় হিসেবে অনেক এগিয়ে দিয়েছে।’

    হতাশা থেকে টেনিস থেকে বিরতি নিয়েছিলেন বার্টি। তবে ফিরে আসার ইচ্ছাটা সবসময়ই ছিল তাঁর, ‘কখনোই এটা ভাবিনি যে টেনিসে আর ফিরব না। আমার শুধু নিজেকে তৈরি করার জন্য সময় দরকার ছিল। টেনিসই আমার প্রথম ভালবাসা, সেটাকে খুব মিস করতাম।’

    বার্টির কোচ ক্রেগ টিজারের বিশ্বাস, ওই এক বছর টেনিস ছেড়ে ক্রিকেট না খেললে আজ শিরোপা জিততে পারতেন না তিনি, ‘ওই বিরতিটা তাঁর জীবনের সেরা সিদ্ধান্ত ছিল। নিজের জীবনকে নতুনভাবে গুছিয়ে নিয়ে শুরু করতে চেয়েছিল সে। বিরতি থেকে ফিরে এভাবে দুর্দান্ত পারফর্ম করে শিরোপা জেতা অবিশ্বাস্য ব্যাপার। আসলে আমরা নিজেও ভাবিনি এমন কিছু হয়ে যাবে! সে খুবই পরিশ্রমী, আত্মবিশ্বাসী। কখনোই সে হাল ছাড়তে রাজি নয়।’

    বার্টির ক্রিকেট কিটব্যাগটা এখনো তাঁর বাড়িতেই আছে। অস্ট্রেলিয়া ফিরে নিজের ব্যাটটা হাতে নিয়ে হয়ত সেটাকে বিশেষ একটা ধন্যবাদই দেবেন। এই ব্যাটের কারণে পাওয়া আত্মবিশ্বাসের কারণেই যে আজ তিনি ফ্রেঞ্চ ওপেন চ্যাম্পিয়ন!