বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৭-০তে এগিয়ে গেল ভারত
ভারত ৫০ ওভারে ৩৩৬/৪৫(রোহিত ১৪০, কোহলি ৭৭, রাহুল ৫৭; আমির ২/৩৪)
পাকিস্তান ৪০ ওভারে ২১২/৬ (ফাখার ৬২, বাবর ৪৮, ইমাদ ৪৬*; শংকর ২/২২, কুলদীপ ২/৩২, পান্ডিয়া ২/৪৪)
ফলঃ ভারত ডিএল মেথডে ৮৯ রানে জয়ী
বিশ্বকাপে ভারতকে কখনো হারাতে পারেনি পাকিস্তান। তথ্যটা হয়তো আপনার জানা, সঙ্গেও এটাও হয়তো জানেন আসলে পাকিস্তান বিশ্বকাপে ভারতের সঙ্গে খুব একটা লড়াইও করতে পারেনি কখনো। তবে সেটা যে যে আরও একপেশে হয়ে আসছে, সেই প্রমাণই মিলল আজ আরও একবার। বৃষ্টিও বাঁচাতে পারল না পাকিস্তানকে, হারতে হলো ৮৯ রানের বড় ব্যবধানে। দুই ‘চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর’ লড়াইয়ে ভারত যে এখন যোজন ব্যবধানে এগিয়ে, সেই বার্তাই দিল আরেকবার।
প্রথম ইনিংসে ভারতের ৩৩৬ রানের পরেই ম্যাচের ভাগ্য আসলে অনেকটা লেখা হয়ে গেছে। বিশ্বকাপের ইতিহাসে কখনো সেই এত রান তাড়া করেনি জেতেই কেউ, আর পাকিস্তান নিজেরাই বিশ্বকাপে ২৭০ রানের বেশি তাড়া করে জেতেনি কখনো। তারপরও ভাগ্য একটু পাকিস্তানের পক্ষ নিচ্ছিল, তৃতীয় ওভারেই যখন হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে মাঠ ছাড়লেন ভুবনেশ্বর কুমার। পরে আর বলই করতে পারেননি, এই ম্যাচের জয়ের চেয়েও বোধ হয় সেটা নিয়ে কিছুটা উদ্বেগ থাকবে কোহলির।
কিন্তু পাকিস্তান সেই সুযোগও কাজে লাগাতে পারল না। উলটো ভুবনেশ্বরের জায়গায় বল করতে এসে প্রথম বলেই উইকেট পেয়ে গেলেন বিজয় শংকর। এই ম্যাচে যার বল করা দূরে থাক, খেলারই কথা ছিল না। ইমাম উল হকের ওই আউটের পর একটু ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করেছিল পাকিস্তান। দ্বিতীয় উইকেটে ১০৪ রান যোগ করেছিলেন বাবর আজম ও ফাখার জামান। কী আশ্চর্য, বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে এটাই পাকিস্তানের প্রথম শত রানের জুটি। রান রেট কম হলেও তখন ম্যাচটা হাতছাড়া হয়ে যায়নি পাকিস্তানের।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভারতের স্পিনাররাই কাল হলেন। কুলদীপের দুর্দান্ত এক বলে বোল্ড হয়ে বাবর ফিরলেন ৪৮ রানে, এক ওভার পর ফাখারও কুলদীপকে সুইপ করতে গিয়ে দিলেন ক্যাচ। পান্ডিয়ার পরের ওভারের পঞ্চম বলে ডিপ স্ক্যয়ার লেগে ক্যাচ দিলেন হাফিজ, আর শেষ বলে মুখোমুখি প্রথম বলেই বোল্ড হয়ে গেলেন শোয়েব মালিক। ইংল্যান্ডের মাটিতে মালিকের গড় আর পাকিস্তানের জয়ের আশা, দুটিই যখন আরও নিচে নামছে।
এরপর ম্যাচের সব প্রতিদ্বন্দ্বিতা শেষই প্রায়। এর মধ্যে আবার বৃষ্টি এসেছে, ইমাদ ওয়াসিম শুধু ব্যবধান একটু কমাতে পেরেছেন। তবে ভারত-পাকিস্তানের শক্তির পার্থক্য আরও বেশি হয়েই ধরা দিয়েছে।
ম্যাচের আগে চোখ রাঙাচ্ছিল বৃষ্টি। ভারতের ইনিংসের শেষের দিকে খেলাও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। অবশ্য ততক্ষণে কোহলিরা উঠে গেছেন রানের পাহাড়ে। ভারত যেভাবে ব্যাট করেছে, তাতে অবশ্য একটা সময় ৩৬০-৭০ও খুব সম্ভব বলে মনে হচ্ছিল। শিখর ধাওয়ানের চোটে রোহিত শর্মার সঙ্গে ওপেন করতে নেমেছিলেন কেএল রাহুল। শুরুতে আমিরকেই যা একটু সমঝে চলছিলেন রোহিতরা, অন্যদের পাত্তাই দিচ্ছিলেন না। এর মধ্যে রান আউটের যাও একটা সুযোগ দিয়েছিলেন দুজন, সেটি নিতে পারেনি পাকিস্তান।
এমনিতে রোহিত শর্মা একটু স্লথ শুরু করলেও আজ শুরু থেকেই খেলেছেন হাত খুলে। ৩৫ বলে পেয়েছেন ফিফটি, ওয়ানডে ক্যারিয়ারেই যা দ্রুততম। ১০৫ বলে ১০০ পেয়ে গেছে ভারত। রাহুল একটু বেশিই সাবধানী ছিলেন, ফিফটি পেতে পেতে খেলতে হয়েছে ৬৯ বল।
তবে রোহিত এগিয়ে যাচ্ছিলেন তরতর করে। শেষ পর্যন্ত দুজনের জুটি ভেঙেছেন ওয়াহাব রিয়াজ, হাফভলি বলে কাভারে ক্যাচ প্র্যাকটিস করিয়েছেন রাহুল। ৭৮ বলে ৫৭ রানে আউট হয়েছেন, তার আগে উদ্বোধনী জুটিতে উঠে গেছে ১৩৬ রান।
রোহিতকে অবশ্য ঠেকানো যাচ্ছিল না। ৮৫ বলে পেলেন সেঞ্চুরি, বিশ্বকাপের যা দ্বিতীয়। আর নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২৪তম। বিরাট কোহলি একপাশে দর্শকের ভূমিকায়, বরং রোহিতই দুর্দান্ত সব শট খেলছেন। মনে হচ্ছিল, আজও বড় কিছু করে ফেলবেন। শেষ পর্যন্ত আউটও হলেন নিজের দোষে। হাসান আলীর স্লোয়ারটা স্কুপ করতে গিয়ে শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ তুলে দিলেন। তবে তার আগে ১১৩ বলে করে ফেলেছেন ১৪০ রান।
বিরাট কোহলি ঠিক করলেন, এবার একটু গা ঝাড়া দিয়ে উঠবেন। হার্দিক পান্ডিয়া চারে উঠে এলেন, দুজন মিলে শুরু করলেন ঝড়। পান্ডিয়া দেখতে দেখতে ১৯ বলে করে ফেলেছেন ২৬ রান, আমিরের বলে হেলিকপ্টার শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন লং অনে। ধোনিও টিকলেন না বেশিক্ষণ, আমিরের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিলেন ১ রানে। এর মধ্যে চার মেরে কোহলি ছুঁয়ে ফেলেছেন ১১ হাজার রানের মাইলফলক। সেটি হলো তৃতীয় ভারতীয় হিসেবে, আর ওয়ানডে ইতিহাসে সবার আগে। ভারত যখন মনে হচ্ছিল ৩৫০ করবে, তখনই নামল বৃষ্টি। এরপর অবশ্য পাকিস্তান একটু ফেরার চেষ্টা করেছে, কিন্তু সর্বনাশ যা হওয়ার সেটা আগেই হয়ে গেছে। আমির ছাড়া আর কাউকেই পাত্তা দেয়নি ভারত। সঙ্গে জানান দিয়েছে, পাকিস্তানের সঙ্গে লড়াইটা এখন ভুলে যাওয়া গল্প।
তার আগে টসেও হয়ে গেল একটা ইতিহাস। পাকিস্তানের অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ টসে জিতে নিলেন বোলিং। বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে এই প্রথম কোনো অধিনায়ক টসে জিতে আগে বোলিং নিলেন। সেটির জন্য এখন একটু আফসোস হতেই পারে তার।