চার বছর পর সেভিয়ার মাঠে রিয়ালকে জয় এনে দিলেন বেনজেমা
৫ মে, ২০১৫। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর হ্যাটট্রিকে সেভিয়ার মাঠ স্তাদিও রামোন সানচেজ পিজুয়ান থেকে জয় নিয়ে ফিরেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। এরপর সেভিয়ার মাঠে আরও চারবার খেলেছে রিয়াল, হেরেছে প্রতিবারই। চার বছর পর অবশেষে রামোন সানচেজ গেরো খুলল রিয়ালের৷ করিম বেনজেমার একমাত্র গোলে সেভিয়াকে ১-০ গোলে হারিয়েছে জিনেদিন জিদানের দল।
গ্রানাদার কাছে বার্সেলোনা হারায় এবং সেল্টা ভিগোর কাছে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ পয়েন্ট হারানোয় রিয়ালের জয়টা অর্থবহ হয়ে উঠেছে আরও। ৫ ম্যাচে ১১ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দুইয়ে উঠে এসেছে তারা, কেবল গোল ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় শীর্ষে আছে অ্যাথলেটিক বিলবাও। সাত মাস পর অবশেষে ক্লিনশিট রাখতে সক্ষম হয়েছে রিয়াল। জয়ের সাথে তাই হয়তো রক্ষণের দৃঢ়তায় আরও খুশি হবেন জিদান। ম্যাচের শুরু থেকেই অবশ্য সেভিয়াকে গোল করতে না দেওয়ার দৃঢ়প্রতিজ্ঞা নিয়েই যেন নেমেছিল রিয়াল, অন্তত রামোস-ভারানদের শারীরিক ভাষা বলছিল সেটাই।
একবিংশ শতাব্দীতে রিয়ালের জন্য সবচেয়ে অপয়া স্টেডিয়াম রামোন সানচেজ পিজুয়ান। ২০০১ থেকে এই মাঠে খেলা ১৮ ম্যাচের ১১টিতেই হেরেছে তারা। পুরো মৌসুমেই রিয়ালের খেলায় প্রেসিংয়ের অভাবটা চোখে পড়েছে দারুণভাবে। কিন্তু সেভিয়ার বিপক্ষে যেন কাঁটা দিয়েই যেন কাঁটা তুলেছে রিয়াল। প্রেসিং করে খেলায় পারদর্শী সেভিয়াকে ঐ টোটকা দিয়েই আটকে দিয়েছে তারা। রামোস, কাসেমিরোদের সাথে পেরেই উঠেননি বানেগা-ফার্নান্দোরা। প্রথমার্ধে অবশ্য গোল করার চেয়ে গোল হজম না করা এবং মাঝমাঠের দখল নিজেদের করে নেওয়ার দিকেই নজর বেশি ছিল দু'দলের৷
বল দখলের লড়াইয়ে সেভিয়ার ওকাম্পোস এবং রিয়ালের রামোস, কারভাহাল
সেজন্যই হয়তো ম্যাচে গোলের প্রথম সুযোগের দেখা পেতে সময় লেগেছে ৩৫ মিনিট। মাঝমাঠে ফার্নান্দোর পা থেকে বল কেড়ে বেনজেমাকে পাস বাড়ান হামেস রদ্রিগেজ। ড্যানিয়েল কারিসোকে কাটিয়ে ডিবক্সের বাঁ-প্রান্তে এডেন হ্যাজার্ডকে পাস বাড়ান ফ্রেঞ্চ স্ট্রাইকার৷ কিন্তু বেলজিয়ান ফরোয়ার্ডের শট দারুণভাবে রুখে দেন সেভিয়া গোলরক্ষক থমাস ভাচলিক। আজকের পারফরম্যান্সে সেভিয়ার চেক গোলরক্ষক যেন জানান দিলেন, কেন লা লিগার প্রথম চার ম্যাচে কেবল এক গোলই হজম করেছে তার দল। মিনিট চারেক পর আবারও রিয়াল এবং গোলের মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়ান ভাচলিক।
আবারও মাঝমাঠে বল কেড়ে নেন হামেস, থ্রু পাসে খুঁজে নেন দানি কারভাহালকে৷ কিন্তু হ্যাজার্ডের মত ভাচলিককে পরাস্ত করতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনিও। প্রথমার্ধে রক্ষণ যতটা দারুণ ছিল সেভিয়ার, আক্রমণ ছিল ততটাই বিবর্ণ। প্রথমার্ধে গোলে একবারও শটই নিতে পারেনি হুলেন লোপেতেগির দল৷ সাবেক দলের বিপক্ষে প্রথমার্ধে মেজাজ হারিয়ে হলুদ কার্ডও দেখেছেন তিনি। প্রথমার্ধের মত দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেও গোল করার চেয়ে মাঝমাঠে আধিপত্য বিস্তারেই নজর বেশি ছিল দু'দলের। মাঝমাঠে ছোট ছোট পাসে রিয়ালের রক্ষণ ভাঙতে না পেরে ম্যাচের বাকিটা সময় ক্রসেই খেলেছে সেভিয়া। কিন্তু তাতে লাভ অবশ্য হয়নি খুব একটা।
সেভিয়ার বিপক্ষে লিড এনে দেওয়ার পর ম্যানেজার জিদানের আলিঙ্গনে আবদ্ধ বেনজেমা
প্রথমার্ধে প্রেসিংয়েই সেভিয়াকে আটকে দিয়েছিল রিয়াল। দ্বিতীয়ার্ধে সেভিয়ার ক্রসিং ট্যাকটিক্সেই তাদের রক্ষণদুর্গ ভেদ করে জিদানের দল। ৬৪ মিনিটে প্রতি-আক্রমণের সময় এভার বানেগার পা থেকে বল কেড়ে নেন রাফায়েল ভারান, পাস বাড়ান হামেসকে। কলম্বিয়ান মিডফিল্ডারের পাসে ডানপ্রান্তে বল পান গ্যারেথ বেল। থ্রু পাসে ওভারল্যাপে থাকা কারভাহালকে খুঁজে নেন তিনি। স্প্যানিশ ফুলব্যাকের ক্রসে মাথা ছুঁয়ে অবশেষে ভাচলিককে পরাস্ত করেন বেনজেমা৷
গোল খাওয়ার পর ম্যাচে ফেরার শত চেষ্টা করেও তেমন সুবিধা করতে পারেনি সেভিয়া। গোলের আশায় সাবেক রিয়াল স্ট্রাইকার হাভিয়ের হার্নান্দেজকেও নামিয়ে দিয়েছিলেন লোপেতেগি। আরেকটু হলেই বাজিটা কাজে লেগেছিল তার। ৮৬ মিনিটে নোলিতোর ক্রসে পা ছুঁয়ে রিয়ালের জালে বল পাঠান 'চিচারিতো', কিন্তু অফসাইডে থাকায় বাতিল হয় গোল।
সমতায় ফেরার আশায় আক্রমণ করতে থাকা সেভিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের বাকি সময় প্রতি-আক্রমণে খেলেছে রিয়াল। সুযোগও পেয়েছিল বেশ কয়েকবার। কিন্তু বেল, হ্যাজার্ডদের ভুলে আর ব্যবধান বাড়ানো হয়নি রিয়ালের। পিএসজির কাছে বড় হারের পর দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ানো রিয়াল এক ম্যাচেই দিল অনেক প্রশ্নের জবাব।