ইংল্যান্ড ফেরার দুর্গম পথে বিপিএল স্টেশনে বোপারা
মাইকেল লাম্ব, পল কলিংউড, ড্যারেন গফ, পল নিক্সন, জেরেমি স্নেইপ- ইংল্যান্ডের হয়ে ৩৪ বা এর বেশি বয়সে টি-টোয়েন্টি খেলেছেন এই ৫ জন। এর মাঝে লাম্ব ২০১৪ সালে বাংলাদেশে ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টিতে খেলেছিলেন, আর প্রথম আসরে ২০০৭ সালে একটি ম্যাচ খেলেছিলেন স্নেইপ। সামনের বছর অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরুর সময় বোপারার বয়স পেরিয়ে যাবে ৩৫। ইংল্যান্ডের হয়ে এই বয়সে টি-টোয়েন্টি খেলার ক্রিকেটারের তালিকা দুই জনের- নিক্সন ও গফ।
নিক্সন এবার বিপিএলে এসেছেন চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের কোচ হয়ে। আর ৭ম বার বোপারা এসেছেন অন্যান্য লক্ষ্যের সঙ্গে আরও একটি তাড়না নিয়ে- টি-টোয়েন্টিতে ইংল্যান্ড জাতীয় দলে ফেরা। তেমন কিছু যদি আদতেই হয়ে যায়, নিক্সনের সঙ্গে সে তালিকায় যোগ দেবেন বোপারা। অবশ্য পথটা এখনও দুর্গম। বিপিএল সেখানে স্টেশন মাত্র।
বিপিএলে এর আগে ছয় আসরেই খেলেছিলেন বোপারা। ম্যাচসেরা হয়েছিলেন ৫ বার। ২৯ রান (৩৮ বল) ও ১ উইকেট/৮ রান, ৪/১৮ ও ৫০(৩৮), ১/১৩ ও ৫৫(৪৪), ০/৯ ও ৩৯(২৩), ৩/৭- ম্যাচগুলিতে পারফরম্যান্স ছিল তার এমন।
৭ম আসরের প্রথম ম্যাচে এসে আবার ম্যাচসেরা হলেন বোপারা। তবে এবার তার পারফরম্যান্স থাকলো একটু আলাদা- ১/১৫, ৩ ওভার বোলিং করে। ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ালো তিনটি রান-আউটে অবদান রাখাটা। ম্যাচশেষে বললেন, ফিল্ডিংয়ের আধিপত্য আছে- এমন পারফরম্যান্স দিয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কার হয়তো এবারই প্রথম জিতলেন তিনি। এবারের বিপিএলটাও একটু আলাদা বোপারার জন্য।
তার যে সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে। আবার ইংল্যান্ড জাতীয় দলে ফেরার সময়টা! ২০১৫ বিশ্বকাপে শেষ ইংল্যান্ডের হয়ে খেলেছিলেন, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে খেলেছিলেন তার আগের বছর। ৩৪-পেরুনো বয়সে বোপারা আবারও আশা করছেন ইংল্যান্ড দলে ফেরার, লক্ষ্য সামনের বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।
এর আগে চারবার ফাইনাল ডে-তে এসে এসেক্সের সঙ্গে খালি হাতে ফিরে যাওয়া বোপারা এবার ইংল্যান্ডের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি লিগ ব্লাস্টের শিরোপার স্বাদ পেয়েছেন। তবে মৌসুম শেষে ১৮ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করে পাড়ি জমিয়েছেন সাসেক্সে। এসেক্সের সঙ্গে বনিবনা হচ্ছিল না ঠিক, আর সাসেক্স তার বিশ্বজোড়া টি-টোয়েন্টি লিগ খেলার জন্যও একটু বেশি স্বস্তিদায়ক হবে।
২০১৯ সালে টি-টোয়েন্টি ব্লাস্টটা শুধু এসেক্স ইগলসের হয়ে শিরোপা জেতার জন্য নয়, ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সেও দারুণ গেছে তার। ১১ ইনিংসে ২৯১ রান করেছেন, ৭.৪৫ ইকোনমিতে বোলিং করে নিয়েছেন ১২ উইকেট। বিপিএলে এসেছেন দক্ষিণ আফ্রিকায় মেজানজি সুপার লিগে খেলে। বিপিএলে রাজশাহীয় রয়্যালসের হয়ে খেলা শেষ করে যাবেন পাকিস্তানের পিএসএলে, সেখানে ডায়মন্ড ক্যাটাগরিতে মুলতান সুলতানস দলে নিয়েছে তাকে।
বোপারা সব টুর্নামেন্টকেই দিচ্ছেন গুরুত্ব, “যে কোনও টি-টোয়েন্টি খেলাই এখন গুরুত্বপূর্ণ। যদি আবার আমার দেশের হয়ে খেলতে চাই, প্রতি লিগেই পারফর্ম করতে হবে। বাংলাদেশ আছে, পিএসএল আছে। আরও লিগ আসছে।”
তবে বোপারার হাতে সময় নেই খুব বেশি, বলছেন তিনি, “ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করে যেতে হবে। কারণ সময় নেই বেশি। পরের বছরই বিশ্বকাপ। তাড়াতাড়ি পারফর্ম করতে হবে। যথেষ্ট পারফর্ম করতে হবে, নির্বাচকদের দেখাতে হবে। দেখা যাক।”
এবার অন্যরকমের এক আশা নিয়ে এসেছেন, তবে বাংলাদেশে তিনি আসছেন নিয়মিতই। বোপারার যেন আরেকটি ঘরের মাঠ হয়ে উঠছে বাংলাদেশ, “হ্যাঁ, শেষ ছয় বছর ধরে আসছি। এখানে অনেক বন্ধু আছে, সবাই বন্ধুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে ক্রিকেট খেলা দারুণ। ঘরের মতো অনুভূতি।”
মিরপুরের উইকেটকে লো-স্কোরিং জানলেও এবার কিছুটা ভিন্ন দেখছেন। তবে মাঠের বালির ভিত কাজে লাগিয়ে বোপারার পরিকল্পনা করেছিলেন রান-আউটের, “আমরা আগেই বলেছি, আমাদের একটা রান-আউট লাগবে। এ মাঠের ভিত বালির, বল আটকে যাবে। ব্যাটসম্যানরা ধন্দে পড়ে যাবে। তখন রান-আউট পাওয়া যাবে। আমরা রান-আউট করার মতো স্মার্ট ছিলাম। আমরা জানতাম রান-আউট পেলে বড় পার্থক্য গড়ে উঠবে।”
আবার জাতীয় দলে ফিরতে অন্যান্যদের সঙ্গে পারফরম্যান্সে পার্থক্য গড়ে তুলতে হবে বোপারাকে। বোপারা সেটি জানেন। সেটা জেনেই ছুটছেন তিনি- টি-টোয়েন্টি ব্লাস্ট, মেজানজি সুপার লিগ, বিপিএল...।