ফাইনাল খেলার মতো দল বাংলাদেশের, বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে বলে গেলেন অ-১৯ অধিনায়ক আকবর
মিরপুরের শের-ই-বাংলা প্রায় খাঁ খাঁ করছিল যেন। এমনকি ক্রিজের সোজা সাইটস্ক্রিনের স্ট্যান্ড যেন দাঁড়িয়ে আছে কঙ্কাল হয়ে, সরিয়ে ফেলা হয়েছে পেছনের পর্দাও। বিপিএল আপাতত সিলেটে, বাংলাদেশ ক্রিকেটের অনেক কিছুও আপাতত সেখানেই। এরই মাঝে একটা ছোটখাট সংবাদ সম্মেলন হয়ে গেল এখানে। যেখানে প্রত্যাশা আর সম্ভাবনার গল্প শুনিয়ে গেলেন বাংলাদেশ অ-১৯ দলের অধিনায়ক আকবর আলি। শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকা ছাড়বে তার দল, গন্তব্য জোহানেসবার্গ। দক্ষিণ আফ্রিকায় অ-১৯ বিশ্বকাপের আসর এবার। আকবর বললেন, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ অ-১৯ দলের বিশ্বকাপে সেরা অর্জন সেমিফাইনাল নয় শুধু, সম্ভব ফাইনাল খেলাও।
২০১৬ সালে নিজেদের মাটিতে সেমিফাইনালে গিয়েছিল মেহেদি হাসানের মিরাজের নেতৃত্বে বাংলাদেশ। গত আসরে অবশ্য ফিরতে হয়েছিল কোয়ার্টার ফাইনালে হেরেই। এবার দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশ যাচ্ছে বেশ সাফল্যমন্ডিত হয়ে, গত বিশ্বকাপের পর থেকে সবচেয়ে বেশি ১৮টি ম্যাচ জেতা দল তারা। শেষ তিনটি দ্বিপক্ষীয় সিরিজেই জিতেছে বাংলাদেশ, নিউজিল্যান্ডকে তাদের মাটিতে ৪-১ ব্যবধানে হারানোর সঙ্গে আছে ইংল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কাকে দেশের মাটিতে যথাক্রমে ৩-০ ও ৪-১ ব্যবধানে জয়ের রেকর্ড।
অবশ্য দলের শ্রীলঙ্কান কোচ নাভিদ নওয়াজ বলছেন, আপাতত তারা অনেক দূরে তাকিয়ে বাড়তি চাপ না নিয়ে এগুতে চান ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে টুর্নামেন্টকে ভাগ করে, “আমার মনে হয়, সামগ্রিক দিক দিয়ে তাকালে আমাদের প্রথম লক্ষ্য নক-আউটে যাওয়া। ছোট ছোট ভাগে ভাগ করতে হবে টুর্নামেন্টকে, প্রথমে লক্ষ্য নকআউট পর্বে যাওয়া। ম্যাচ ধরে ধরে এগুবো আমরা। শুরুতে চাপ দিতে চাই না সবাইকে। অতীতেও আমরা এভাবেই কাজ করেছি, এর ফলে সবাই তার ভূমিকাটা বুঝবে। ইনশাআল্লাহ, আমরা শেষ করতে পারব।”
আকবর ম্যাচ ধরে ধরে এগুনোর প্রক্রিয়ায় কোচের সঙ্গেই সুর মেলালেন, “আমাদের প্রত্যাশার কথা যেটা বললেন, সাম্প্রতিক সময়ে ভাল ক্রিকেট খেলেছি বলেই প্রত্যাশা বেড়ে গেছে। (তবে) আমরা ফলের দিকে তাকাচ্ছি না (আপাতত), কোচ যেটি বললেন- প্রতি ম্যাচে যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করি, সেটাই করব। বহুদূরে দেখতে চাচ্ছি না, হয়তো বাড়তি চাপ দেবে সেটা। আগে নক-আউটে যাওয়া, ম্যাচ ধরে ধরে এগুতে হবে। যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছি এতদিন, সেটাই করব।”
অবশ্য এরপরই মনে করিয়ে দিলেন নিজেদের সামর্থ্যটাও, “আমাদের দলের কথা যদি বলেন, সেমিফাইনাল কেন, ফাইনালে যাওয়াও খুব সম্ভব। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা যা খেলেছি, যে কম্বিনেশনে খেলেছি, দলে যে ভারসাম্য, ফাইনালে যাওয়ার মতো দল রয়েছে আমাদের।”
“অধিনায়কত্ব উপভোগ করি, বাড়তি চাপ হিসেবে নিতে চাই না। কিপিং বা অধিনায়কত্ব- দুটিই উপভোগ করি। অন দ্য ফিল্ড, অফ দ্য ফিল্ড যেসব কাজ আছে, সেগুলো উপভোগ করি। কাউকে আদর্শ মানি না, নিজের মতো করেই করি।”/ আইসিসি
দক্ষিণ আফ্রিকার কন্ডিশন বিবেচনায় নিয়ে প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ, বগুড়ায় তিন সপ্তাহের প্রস্তুতি ক্যাম্পে তারা অনুশীলন করেছেন ঘাসের উইকেটে। দক্ষিণ আফ্রিকায় আগেভাগে গিয়েও পচেফস্ট্রুমের নর্থওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের হাই-পারফরম্যান্স সেন্টারে ঘাঁটি গাড়বেন তারা। দলের ম্যানেজার বললেন, এরই মাঝে তাদেরকে অনুরোধ করা হয়েছে, যাতে বিশ্বকাপের আদলে উইকেট বানানো হয় সেখানে। অফিসিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচের আগে আফগানিস্তান ও স্থানীয় একটি দলের সঙ্গে বাড়তি দুটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলবে বাংলাদেশ। এরপর মূল টুর্নামেন্টে গ্রুপ সি-তে তাদের সঙ্গী পাকিস্তান, জিম্বাবুয়ে ও স্কটল্যান্ড।
এই দলের শক্তিমত্তার জায়গা হিসেবে ব্যাটিংয়ের কথা বলেছেন কোচ নওয়াজ, “ব্যাটিং আমাদের শক্তির জায়গা। অতীতের সিরিজগুলিতে যা দেখেছি। বোলিং যে দূর্বল তা নয়, ভাল একটা আক্রমণ আছে আমাদের। তবে আমরা ব্যাটিংয়ের ওপর নির্ভরশীল।”
পরিসংখ্যানও সমর্থন করছে নওয়াজকে। গত বিশ্বকাপের পর থেকে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি রান করেছে শুধু শ্রীলঙ্কা অ-১৯, আর উইকেটপ্রতি রানে বাংলাদেশের (৩১.১৭) চেয়ে এগিয়ে আছে শুধু অস্ট্রেলিয়া (৩৬.৩৯)। নওয়াজ অবশ্য শুধু মাঠের ক্রিকেট নয়, মাঠের বাইরে ছেলেদের কর্মকান্ডেও খুশি। এ দলটিকে তিনি বলছেন ‘পেশাদার’, “আমরা দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কায় গিয়েছি। দল যেভাবে মাঠে ও মাঠের বাইরে কাজ করেছে, তাতে আমি খুশি। এ দলটা পেশাদার।”
কোচ খুশি অধিনায়ককে নিয়েও। সবকিছু বিবেচনায় এনেই তাকে দেওয়া হয়েছে এ দায়িত্ব। গত বিশ্বকাপের পর থেকে অধিনায়ক হিসেবে তৃতীয় সর্বোচ্চ ৫১৭ রান করেছেন আকবর, ৪৩.০৮ গড়ে। সবচেয়ে বেশি ৪৬টি ডিসমিসালও আছে এই উইকেটকিপারের। নিজের অধিনায়কত্বের দর্শন নিয়ে তিনি বলছেন, “যেখানেই অধিনায়কত্ব করেছি, বাড়তি দায়িত্ব হিসেবে নিতে চাইনি। প্রতিপক্ষকে কীভাবে চাপে ফেলব- সেটি নিয়েই ভেবেছি। অধিনায়কত্ব না করলেও উইকেটের পেছন থেকে ম্যাচটা বুঝার চেষ্টা করেছি।”
“অধিনায়কত্ব উপভোগ করি, বাড়তি চাপ হিসেবে নিতে চাই না। কিপিং বা অধিনায়কত্ব- দুটিই উপভোগ করি। অন দ্য ফিল্ড, অফ দ্য ফিল্ড যেসব কাজ আছে, সেগুলো উপভোগ করি। কাউকে আদর্শ মানি না, নিজের মতো করেই করি।”
আপাতত আকবরদের উপভোগ করারই সময়। দক্ষিণ আফ্রিকাও গিয়েও নিজেদের উপভোগ করতে পারলে দেশে ফেরার পর সংবাদ সম্মেলনটা হয়তো তাদের জনাকীর্ণই হবে অনেক।