মিডফিল্ড ম্যাজিকে ভ্যালেন্সিয়াকে হারিয়ে সুপারকাপের ফাইনালে রিয়াল
ফুল-টাইম
ভ্যালেন্সিয়া ১-৩ রিয়াল মাদ্রিদ
মৌসুমের শুরুতেই রিয়াল মাদ্রিদ ম্যানেজার জিনেদিন জিদান বলেছিলেন, মিডফিল্ডারদের ধারাবাহিকতাই সাফল্য এবং ব্যর্থতার মাঝে ব্যবধান গড়ে দেবে তার দলের জন্য। থিবো কর্তোয়া, সার্জিও রামোস, গ্যারেথ বেল- রিয়ালের হয়ে এবার ফর্ম হারিয়েছেন সবাই। কিন্তু টনি ক্রুস, লুকা মদ্রিচ, কাসেমিরোরা পুরো মৌসুমেই খেলছেন দুর্দান্ত। স্প্যানিশ সুপারকাপের স্কোয়াডে ইনজুরির কারণে বেল-বেনজেমা না থাকায় মিডফিল্ডারদের ওপর দায়িত্ব বেড়ে গিয়েছিল অনেকগুণ। সৌদি আরবের কিং আব্দুল্লাহ স্পোর্টস সিটিতে জিদানের আস্থার প্রতিদানটা দুর্দান্তভাবে দিলেন তার মিডফিল্ডাররা। ভ্যালেন্সিয়াকে ৩-১ গোলে হারিয়ে চার দলের স্প্যানিশ সুপারকাপের প্রথম আসরের ফাইনালে চলে গেল জিদানের দল, গোল করেছেন তিন মিডফিল্ডার ক্রুস-ইস্কো-মদ্রিচ।
নিজেদের শেষ ১৪ ম্যাচে অপরাজিত রিয়াল, লা লিগা টেবিলের ভ্যালেন্সিয়ার চেয়ে অনেক ওপরে তারা। কিন্তু ‘লস চে’রাও পিছিয়ে ছিল না ফর্মে, নিজেদের শেষ ১২ ম্যাচে মাত্র ১বার হেরেছিল আলবার্তো সেলাদেসের দল। মাঠের খেলায় অবশ্য রিয়ালের সামনে পাত্তাই পায়নি ভ্যালেন্সিয়া। ম্যাচের প্রথম ১০ মিনিটেই গোলের দুটি সুযোগ পেয়েছিল জিদানের দল, তবে ভ্যালেন্সিয়া গোলরক্ষক হাউমে ডমেনেখ ফিরিয়ে দেন ভারান-ভালভার্দেকে। অবশ্য তাতে খুব একটা লাভ হয়নি ভ্যালেন্সিয়ার, সেই হাউমের সিদ্ধান্তহীনতায়ই কিছুক্ষণ পর পিছিয়ে পড়ে সেলাদেসের দল।
১৫ মিনিটে কর্নার পায় রিয়াল, রক্ষণ সাজাতে ব্যস্ত হাউমে গোল ফাঁকা রেখে এগিয়ে আসেন খানিকটা। সুযোগটা হাতছাড়া করেননি ক্রুস, চকিত কর্নারে সরাসরি ভ্যালেন্সিয়ার জালে বল পাঠান জার্মান মিডফিল্ডার। শেষ মুহূর্তে আপ্রাণ চেষ্টা করে বল নাগালও পেয়েছিলেন হাউমে, কিন্তু ক্রুসের কর্নার ফেরাতে পারেননি তিনি। পিছিয়ে পড়ার পর প্রথমার্ধে আর সুবিধা করতে পারেনি ভ্যালেন্সিয়া। মাঝমাঠে কাসেমিরো, ভালভার্দের ‘ডবল পিভোট’-এ নড়তেই পারেননি সোলের-পারেহোরা। রক্ষণে রামোস-ভারান ছিলেন দুর্দান্ত ফর্মে, গামেইরো-তোরেসদের রীতিমত পকেটবন্দি করে রেখেছিলেন তারা। মাঠজুড়ে একচ্ছত্র আধিপত্য বিরাজ করা রিয়াল ব্যবধান দ্বিগুণ করে প্রথমার্ধের শেষদিকে।
৩৯ মিনিটে দানি কারভাহালের পাস থেকে ভ্যালেন্সিয়া ডিবক্সের ডানপ্রান্তে বল পান ভালভার্দে। তার মাইনাসে মদ্রিচের শট ফিরে আসে মিডফিল্ডার জেফ্রি কন্ডগবিয়ার গায়ে লেগে। কিন্তু ফিরতি বল দুর্দান্তভাবে নিয়ন্ত্রণে এনে লক্ষ্যভেদ করেন ইস্কো। রিয়ালের হয়ে যেন রীতিমত পুনর্জন্মই হয়েছে তার, প্রায় ব্রাত্য হয়ে পড়া ইস্কো এখন রিয়ালের একাদশে অন্যতম প্রথম নাম। মিনিটখানেক পর ব্যবধান ৩-০ করতে পারতেন তিনিই। কিন্তু কারভাহালের ক্রসে তার হেড হাউমেকে পরাস্ত করলেও প্রতিহত হয় বারপোস্টে। ফিরতি বল পেয়ে যান রিয়াল স্ট্রাইকার লুকা ইয়োভিচ, কিন্তু দুর্দান্ত সেভে তাকে ফিরিয়ে দেন ভ্যালেন্সিয়া গোলরক্ষক। প্রথমার্ধে রিয়ালের মিডফিল্ডাররাই ছড়ি ঘুরিয়েছেন ভ্যালেন্সিয়ার ওপর।
দ্বিতীয়ার্ধেও জিদানের আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন ভালভার্দে-ইস্কোরা। সেলাদেসের দল রিয়ালের আক্রমণ সামলাতেই ব্যস্ত ছিল পুরোটা সময়। পুরো ম্যাচে ভ্যালেন্সিয়ার গোলে ৯বার শট নিয়েছে জিদানের দল, কর্তোয়ার জালে গামেইরোরা শট নিয়েছেন মাত্র ৩বার। দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি সময়ে ভ্যালেন্সিয়ার ম্যাচে ফেরার ন্যূনতম সম্ভাবনাও নিঃশেষ করে দেন মদ্রিচ। ইয়োভিচের পাস থেকে ডিবক্সে বল পেয়ে ডানপায়ের ‘আউটসাইড অফ দ্য বুট’ দিয়ে করা শটে ব্যবধান ৩-০ করেন ক্রোয়েশিয়ান মিডফিল্ডার। জয় নিশ্চিত দেখে হামেস রদ্রিগেজ এবং মারিয়ানো দিয়াজকেও বদলি হিসেবে খেলার সুযোগ করে দেন জিদান, কিন্তু কেউই তেমন সুবিধা করতে পারেননি।
শেষদিকে কিছুটা আত্মতুষ্টিতেই ভুগছিল রিয়াল, দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে ভ্যালেন্সিয়া সান্ত্বনাসূচক গোলটাও পেয়েছে রিয়ালের ভুলেই। ডিবক্সে সোলেরের ক্রস রিয়াল অধিনায়ক রামোসের হাতে লাগায় পেনাল্টির বাঁশি দেন রেফারি। ১২ গজ থেকে কর্তোয়াকে পরাস্ত করেন দানি পারেহো। অল্পের জন্য আরও এক ক্লিনশিট পাওয়া হল না বেলজিয়ান গোলরক্ষকের। ১৩ জানুয়ারি বার্সেলোনা বা অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে ফাইনাল খেলবে ‘লস ব্লাঙ্কোস’রা।