শেষের নাটকে বার্সেলোনাকে বিদায় করে সুপারকাপের ফাইনালে অ্যাটলেটিকো
ফুল-টাইম
বার্সেলোনা ২-৩ অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ
ম্যাচের ৮০ মিনিট পর্যন্তও সব ঠিকঠাক ছিল বার্সেলোনার। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে পিছিয়ে পড়েও লিওনেল মেসি এবং আঁতোয়া গ্রিযমানের গোলে ফাইনাল থেকে হাতছোঁয়া দূরত্বে ছিল এর্নেস্তো ভালভার্দের দল। ফাইনালে এল ক্লাসিকোর স্বপ্নে হয়তো বিভোর তখন মেসি-সুয়ারেজরা। কিন্তু বার্সার সেসব হিসাবনিকাশ পাল্টে দেন রিয়াল মাদ্রিদেরই সাবেক স্ট্রাইকার আলভারো মোরাতা। শেষদিকে এক গোল করে এবং আনহেল কোরেয়াকে দিয়ে আরও এক গোল করিয়ে জয় নিশ্চিত করেছেন দলের, পিছিয়ে পড়েও স্প্যানিশ চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে দিয়েছে ডিয়েগো সিমিওনের দল।
অথচ ম্যাচের শুরুটা দুর্দান্ত হয়েছিল বার্সেলোনারই। ম্যাড়ম্যাড়ে প্রথমার্ধে গোলের বেশি সুযোগ তৈরি করেছিলেন মেসি-সুয়ারেজ-গ্রিযমানই। বার্সেলোনার জার্সিতে এই ম্যাচে খুব সম্ভবত নিজের সেরাটাই দিয়েছেন ফ্রেঞ্চ ফরোয়ার্ড। প্রথমার্ধে দু’বার গোলের দ্বারপ্রান্তে গিয়েছিলেন গ্রিযমান, কিন্তু সাবেক সতীর্থ ইয়ান ওবলাকের দুর্দান্ত জোড়া সেভে আর গোল পাওয়া হয়নি তার। ওবলাক না থাকলে প্রথমার্ধেই নিশ্চিত হয়ে যেত ম্যাচের ভাগ্য। গোলরক্ষকের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের প্রতিদানও দিয়েছেন অ্যাটলেটিকো। দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হওয়ার ২০ সেকেন্ডের মাথায়ই এগিয়ে যায় তারা। সেন্টারের পর পার্টি, লেমারের পা ঘুরে বল আসে কোরেয়ার পায়ে। আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডের থ্রু পাসে ডিবক্সে বল পেয়েই দলকে লিড এনে দেন কোকে।
প্রথমার্ধে গোলের একাধিক সুযোগ হাতছাড়া করা বার্সার টনক নড়ে এরপরই, মিনিট পাঁচেক পর অবশেষে ওবলাক দুর্গ ভেদ করতে সক্ষম হয় ভালভার্দের দল। সার্জি রবার্তোর ক্রসে ডিবক্সে অ্যাটলেটিকোর দুই ডিফেন্ডারের চার্জেও বল দখলে রেখে মেসিকে পাস বাড়ান সুয়ারেজ। বল পেয়ে দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ডানপায়ের জোরাল শটে দলকে সমতায় ফেরান বার্স অধিনায়ক। সমতায় ফেরার কিছুক্ষণ বাদে লিডও নেয় বার্সা। অ্যাটলেটিকো ডিফেন্ডার ফেলিপের ক্লিয়ারেন্স ডিবক্সে পেয়ে যান মেসি। সল নিগুয়েজকে কাটিয়ে তার শট জড়ায় অ্যাটলেটিকোর জালে। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা যায়, ফেলিপের ক্লিয়ারেন্স লেগেছিল মেসির হাতে; ফিফার নতুন নিয়মানুযায়ী হাতে লাগলেই হ্যান্ডবল নীতিতে বাতিল হয় গোল।
দ্বিতীয়ার্ধে গোল হজম করলেও ওবলাক ছিলেন স্বরূপেই। গ্রিযমানের দুটি প্রচেষ্টা ফিরিয়ে দিয়েছেন দুর্দান্তভাবে। তবে শেষ পর্যন্ত ৬২ মিনিটে সাবেক দলের বিপক্ষে গোলটা পেয়ে যান ফ্রেঞ্চ ফরোয়ার্ড। জর্দি আলবার ক্রসে সুয়ারেজের হেড দুর্দান্তভাবে ফিরিয়ে দেন ওবলাক, কিন্তু ফিরতি বল আর ফেরাতে পারেনি অ্যাটলেটিকো। গ্রিযমানের হেডে লিড নেয় কাতালানরা। ২০১৬ সালে শেষবারের বার্সাকে হারিয়েছিল সিমিওনের দল, পিছিয়ে পড়ার পর হয়তো আরও এক হারের দিকেই এগুচ্ছিল তারা। ৭৫ মিনিটে সে আশঙ্কা ঘনীভূত হতে পারত অ্যাটলেটিকোর। ফ্রিকিকে আর্তুরো ভিদালের পাস থেকে গোল করেন জেরার্ড পিকে। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা যায়, পাস ছাড়ার সময় অফসাইডে ছিলেন চিলিয়ান মিডফিল্ডার। ‘ভিএআর’-এ আবারও বাতিল হয় গোল। দুই গোল বাতিল, ওবলাকের দক্ষতা- শেষদিকে অ্যাটলেটিকোর ম্যাচে ফেরার অনুপ্রেরণা ছিল এগুলোই, অনুপ্রেরণা কাজেও লাগিয়েছে তারা।
৮৩ মিনিটে সলের থ্রু পাসে বার্সা গোলরক্ষক নেটোকে একা পেয়ে যান অ্যাটলেটিকোর বদলি ফরোয়ার্ড ভিতোলো। বল কেড়ে নিতে গিয়ে স্প্যানিশ ফরোয়ার্ডকে ডিবক্সে ফেলে দেন তিনি, পেনাল্টির বাঁশি দেন রেফারি। ১২ গজ থেকে দলকে সমতায় ফেরান মোরাতা। পুরো ম্যাচে নিষ্প্রভ মোরাতা জ্বলে ওঠেন এরপরই, আর তাতেই নিভে যায় বার্সার ম্যাচে ফেরার সম্ভাবনা। ৮৬ মিনিটে বার্সার অর্ধে বল পেয়ে যান মোরাতা। ইভান রাকিটিচ এবং ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ংকে কাটিয়ে বাঁ-প্রান্ত থেকে ভেতরের দিকে ঢুঁকতে থাকা কোরেয়ার দিকে পাস বাড়ান স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড। আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডের শট ফেরানোর প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন নেটো, কিন্তু তার হাতে লেগে বল জড়ায় জালে। গোলের একেবারে সামনে থেকে ক্লিয়ার করার চেষ্টা করেছিলেন রাকিটিচ, কিন্তু ততক্ষণে বল অতিক্রম করেছিল লাইন।
অ্যাটলেটিকোর দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনে কিংকর্তব্যবিমূঢ় বার্সা ম্যাচে ফিরতে নামিয়ে দেয় আনসুমান ফাতিকেও, কিন্তু কাজের কাজটা আর হয়নি। নকআউট ম্যাচে অ্যাটলেটিকোকে হয়তো প্রতিপক্ষ হিসেবে চাইবে না বার্সা। শেষ ৩ নকআউট ম্যাচেই তাদের বিদায় করে দিয়েছে সিমিওনের দল। কোচিং ক্যারিয়ারে ২৭ ম্যাচে বার্সাকে এই ৩বারই হারাতে পেরেছেন সিমিওনে, জয়ের সংখ্যা কম হলেও স্মৃতিগুলো তাই অবিস্মরণীয়ই হয়ে থাকবে আর্জেন্টাইন ম্যানেজারের জন্য।