টাইব্রেকারে অ্যাটলেটিকোকে হারিয়ে স্প্যানিশ সুপারকাপ জিতল রিয়াল মাদ্রিদ
ফুল-টাইম
রিয়াল মাদ্রিদ ০ (৪)-০ (১) অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ
ফাইনালে টাইব্রেকার। রিয়াল মাদ্রিদ বনাম অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। খেলা গড়াল অতিরিক্ত সময়ে। ২০১৩-১৪ এবং ২০১৫-১৬ চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল যেন ফিরে এল সৌদি আরবের কিং আব্দুল্লাহ স্পোর্টস সিটিতে। ২০১৯-২০ স্প্যানিশ সুপারকাপের ফাইনালে ফিরে এল মিলানে বছর তিনেক আগের চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের স্মৃতি। টাইব্রেকারে এবারও রিয়ালের কাছে পাত্তা পেল না অ্যাটলেটিকো। ডিয়েগো সিমিওনের দলকে ৪-১ ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়েছে ‘লস ব্লাঙ্কোস’রা, বছর দুয়েক পর আবারও ঘরে তুলেছে স্প্যানিশ সুপারকাপের শিরোপা।
টাইব্রেকারে অবশ্য রিয়ালের সামনে দাঁড়ানোরই সুযোগ পায়নি অ্যাটলেটিকো। দানি কারভাহাল গোল করলেও নিজেদের প্রথম পেনাল্টি মিস করেছেন সল নিগুয়েজ। কর্তোয়াকে অন্যদিকে ডাইভ দিলেও সলের শট ফিরে আসে বারপোস্টে লেগে। দ্বিতীয় শটেও গোল পায় রিয়াল, ১৯ বছর বয়সী রদ্রিগো গোজ স্নায়ুচাপকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে দুর্দান্ত পেনাল্টিতে পরাস্ত করেন অ্যাটলেটিকো গোলরক্ষক ইয়ান ওবলাককে। থমাস পার্টি এগিয়ে আসেন সিমিওনের দলের দ্বিতীয় শটের জন্য। রীতিমত অবিশ্বাস্য সেভে তাকে ফিরিয়ে দিয়ে ব্যবধান ২-০ করেন কর্তোয়া।
রিয়ালের পরের শটে গোল করেন লুকা মদ্রিচ, কিয়েরন ট্রিপিয়েরে অবশেষে পরাস্ত হন বেলজিয়ান গোলরক্ষক। ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে থাকা রিয়ালের জন্য ‘ম্যাচ পয়েন্ট’ আসে অধিনায়ক সার্জিও রামোসের পায়ে। মিলানেও ওবলাকের জালে বল পাঠিয়েছিলেন তিনি, ব্যতিক্রম হয়নি এবারও। অধিনায়কের জয়সূচক পেনাল্টিতেই মৌসুমের প্রথম শিরোপা নিশ্চিত হয় রিয়ালের।
টাইব্রেকারের আগেই অবশ্য ম্যাচ জেতার সুযোগ এসেছিল অ্যাটলেটিকোর সামনে। কিন্তু পুরো ম্যাচে মোরাতা-ফেলিক্সদের একাধিকবার ফিরিয়ে রিয়ালকে ম্যাচে রেখেছেন কর্তোয়া। গোলের নিশ্চিত সুযোগ ধরলে হয়তো এগিয়ে থাকবে অ্যাটলেটিকোই। অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধে কর্তোয়াকে একা পেয়ে গিয়েছিলেন মোরাতা। কিন্তু পেছন থেকে ট্যাকেল করে গোলের নিশ্চিত সুযোগ কেড়ে নেন ফেদেরিকো ভালভার্দে, লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে।
ভালভার্দের ট্যাকেলে অবশ্য কাজও হয়েছে, শেষ পর্যন্ত আর গোল করতে পারেনি অ্যাটলেটিকো, শেষ হাসিও হেসেছে রিয়ালই। কিন্তু বেলজিয়ান গোলরক্ষক ছিলেন দুর্দান্ত ফর্মে। নিজের শেষ ১৩ ম্যাচে ১০টি ক্লিনশিট রাখা কর্তোয়া প্রথমার্ধে মোরাতার দুটি নিশ্চিত গোল ফিরিয়ে দিয়েছেন অবিশ্বাস্যভাবে। ট্রিপিয়েরের ক্রস থেকে রামোসের ওপর লাফিয়ে মোরাতার দুর্দান্ত হেড হাওয়ায় ভেসে ফিরিয়ে দিয়েছেন কর্তোয়া। প্রথমার্ধের শেষদিকে ডিবক্সের বাইরে থেকে কর্তোয়াকে পরীক্ষায় ফেলেছিলেন সাবেক রিয়াল স্ট্রাইকার, কিন্তু এবারও মোরাতাকে ফিরতে হয়েছে খালি হাতে।
ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে সেমিফাইনালের একাদশই নামিয়েছিলেন রিয়াল ম্যানেজার জিদান। পাঁচ মিডফিল্ডার খেলানোর বাজিটা এবার অবশ্য কাজে দেয়নি রিয়ালের। বল ধরে রাখলেও আক্রমণে বেশ নিষ্প্রভই ছিলেন তারা। আরও একবার হতাশ করেছেন স্ট্রাইকার লুকা ইয়োভিচ। অ্যাটলেটিকোর ডিফেন্ডাররা প্রথমার্ধে রীতিমত পকেটবন্দি করে রেখেছিলেন স্টেফান সাভিচরা। দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণের ধার আরও বাড়িয়ে দেয় অ্যাটলেটিকো। কোরেয়া-মোরাতাদের আটকাতে রীতিমত হিমশিম খেতে হয়েছে রামোসদের। মাঝমাঠে পাঁচজন খেললেও থমাস পার্টি এবং হেক্টর হেরেরাই দখল নিয়েছিলেন মাঝমাঠের।
কিন্তু কর্তোয়ার দক্ষতা এবং ফরোয়ার্ডদের ভুলে গোলটাই পাওয়া হচ্ছিল না সিমিওনের দলের। সুযোগটা আরেকটু হলেই কাজে লাগাতে পারত রিয়াল। কিন্তু ৬৭ মিনিটে রদ্রিগোর ক্রসে গোলের একেবারে সামনে থেকে হেড বাইরে মেরেছেন ভালভার্দে। ৭৮ মিনিটে খুব সম্ভবত নিজেদের সেরা সুযোগটা পেয়েছিল অ্যাটলেটিকো। কিন্তু কোরেয়া এবং পার্টিকে দুর্দান্ত ‘ডবল সেভ’-এ ফিরিয়ে দেন কর্তোয়া। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে জয় ছিনিয়ে আনার সুযোগ পেয়েছিল রিয়াল। কিন্তু ডিবক্সের ভেতর থেকে রদ্রিগোর শট ফিরিয়ে দেন ওবলাক।
অতিরিক্ত সময়ে গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারেনি কেউই। দুই গোলরক্ষকের সামনে ফরোয়ার্ডদের খালি হাতে ফেরার দিনে শেষ পর্যন্ত হাসলেন কর্তোয়াই। রিয়ালে আসার পর থেকে কম সমালোচনা সইতে হয়নি তাকে। এই ম্যাচ দিয়েই হয়তো নিন্দুকদের মুখে কুলুপ এঁটে দিলেন তিনি। অবশেষে জানান দিলেন, কেন রিয়ালের গোলবারের নিচে তাকেই দেখতে চান জিদান এবং রিয়াল প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ।