• উইমেনস টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২০
  • " />

     

    'অচেনা' অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে 'চেনা' আঁধারে বাংলাদেশ

    'অচেনা' অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে 'চেনা' আঁধারে বাংলাদেশ    

    উইমেনস টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২০
    অস্ট্রেলিয়া ১৮৯/১, ২০ ওভার (হিলি ৮৩, মুনি ৮১*; সালমা ১/৩৯)
    বাংলাদেশ ১০৩/৯, ২০ ওভার (ফারজানা ৩৬, নিগার ১৯; শুট ৩/২১, জোনাসেন ২/১৭)
    ফল : অস্ট্রেলিয়া ৮৬ রানে জয়ী


    ভারতের কাছে হেরে আসর শুরু করেছিলেন সালমা খাতুনরা। আজ প্রতিপক্ষ হিসেবে তাদের সামনে ছিল ‘অচেনা’ অস্ট্রেলিয়া। টি-টোয়েন্টির বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে এর আগে কখনোই খেলার সুযোগ হয়নি বাংলাদেশের। এমন প্রতিপক্ষের সামনে অভিজ্ঞতার শূন্য ঝুলি নিয়ে কূলকিনারা করাটা ছিল রীতিমত রাডার ছাড়া সমুদ্রের অচেনা পথে পাড়ি দেওয়ার মতো। বাংলাদেশ পারেও নি। প্রায় সব বিভাগেই অজিদের থেকে যোজন যোজন পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ ৮৬ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছে। 

    শুরুতে ব্যাট করে বাংলাদেশী ফিল্ডারদের বদান্যতায় মাত্র ১ উইকেট হারিয়ে ১৮৯ রানের পাহাড় গড়ে অস্ট্রেলিয়া। জবাবে ব্যাট করতে নেমে বাজে শট নির্বাচনের খেসারত দিয়েছে বাংলাদেশ। পুরো ২০ ওভার খেলেও ৯ উইকেটে ১০৩ রানের বেশি তুলতে পারেননি ফারজানা হক-নিগার সুলতানারা। দুই ম্যাচের দুটিতেই হেরে গ্রুপ এ-র পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে এখন বাংলাদেশ। আর অস্ট্রেলিয়া ৩ ম্যাচে ২ জয় নিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করা ভারতের পরই। 
     


    হিলি-মুনির জুটিতেই ছিটকে গেছে বাংলাদেশ/আইসিসি ভায়া গেটি 


    মূলত ব্যাটিং দিয়েই বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ক্যানবেরার মানুকা ওভালে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং নিয়েছিল স্বাগতিকরা। জাহানারা আলমের করা ইনিংসের প্রথম ওভারে তিনটি বাউন্ডারি মেরেছিলেন অ্যালিসা হিলি, অবশ্য শুরুতে শটগুলোতে তেমন নিয়ন্ত্রণ ছিল না তার। তবে হিলি এবং বেথ মুনি- দুজনেরই বড় ইনিংসে রানের পাহাড়ে চড়েছে অস্ট্রেলিয়া।  

    প্রথম ৭ ওভারে তাদের রানরেট ছিল দশের বেশি। মুনি কিছুটা রয়েসয়ে খেললেও সালমা-জাহানারাদের বোলিংকে রীতিমত তুচ্ছ করে খেলতে থাকেন হিলি। ইনিংসের অষ্টম ওভারে খাদিজা-তুল-কুবরাকে টানা দুই ছয় মেরে মাত্র ২৬ বলে ফিফটি করেছেন তিনি। 

    প্রায় অর্ধ ডজন ক্যাচ মিস এবং দুর্বল ফিল্ডিং করে অস্ট্রেলিয়ার কাজ আসলে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছিল বাংলাদেশ। বাজে ফিল্ডিংয়ের বরাতে পাওয়া জীবন দুই ওপেনারই দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত ইনিংসের ১৭ তম ওভারে ৫৩ বলে ৮৩ রান করে সালমার বলে পয়েন্টে সানজিদা ইসলামকে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান হিলি, তবে এর আগেই অস্ট্রেলিয়ার নারী ক্রিকেট ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছেন এই ব্যাটসম্যান। মুনির সঙ্গে তার ১৫১ রানের জুটি টি-টোয়েন্টিতে যেকোনো উইকেটে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় জুটি। তারা ভেঙেছেন ২০০৫ সালে কেট ব্ল্যাকওয়েল ও ক্যারেন রোল্টনের ১৪৭ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটির রেকর্ড, যেটি হয়েছিল ২০০৫ সালে টন্টনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। হিলি ফিরে গেলেও মুনি ছিলেন শেষ পর্যন্ত, ৫৮ বলে ৯ চারে ৮১ রান করে। দ্বিতীয় উইকেটে অ্যাশলি গার্ডনারের সঙ্গে ৩৮ রানের জুটি গড়েছেন তিনি ১৮ বলে।  
     


    ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা তো চেনাই বাংলাদেশের কাছে/আইসিসি ভায়া গেটি


    ব্যাটিং বাংলাদেশের সমস্যা সবসময়ই, সেখানে ১৯০ রানের লক্ষ্য রীতিমতো ছিল অসম্ভব। শুরু থেকেই ফিল্ডিংয়ে অস্ট্রেলিয়া ছিল বাংলাদেশের পুরো উলটো মেরুতে। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে মুরশিদা খাতুনকে ফেরাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে যেই ক্যাচটি নিয়েছেন জেস জোনাসেন, সেটি দেখে নিশ্চয়ই কপাল চাপড়েছেন বাংলাদেশ ফিল্ডাররা। 

    পাওয়ারপ্লে শেষ হওয়ার আগেই মাত্র ২৬ রানে টপ অর্ডারের ৩ ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ। চতুর্থ উইকেটে ফারজানা হক এবং নিগার সুলতানার সমানসংখ্যক বলে ৫০ রানের জুটিতে কিছুটা থিতু হওয়ার চেষ্টা করেছিল বাংলাদেশ, তবে অতি সাবধানী হয়ে খেলার চেষ্টা রানরেটকে নিয়ে গেছে নাগালের বাইরে। 

    ১৪তম ওভারের শেষ বলে যখন ৩২ বল খেলে মোটে ১৯ রান করে নিগার আউট হন, ওভারপ্রতি প্রয়োজনীয় রান রেট তখন ১৯ ছাড়িয়ে গেছে। এই জুটির পর রুমানা আহমেদের সঙ্গে ১৯ রানের আরেকটি জুটি গড়েছেন ফারজানা। তবে ১৩ রানে জোনাসেনের বলে ক্যাচ দিয়ে রুমানা ফিরে যাওয়ায় আরেকটু পিছিয়ে গেছে বাংলাদেশ। 

    রুমানা আউট হওয়ার পর দলীয় সর্বোচ্চ ৩৬ রান করা ফারজানাও আর বেশি সময় ক্রিজে থাকতে পারেননি। মেগান শুটের বলে সুইপ করতে গিয়ে হিলির ক্যাচ হয়ে ফিরেছেন তিনিও। ৯৫ থেকে ১০৩- এই ৮ রানের মাঝে ৫ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। 

    ২৯ ফেব্রুয়ারি মেলবোর্নে গ্রুপ পর্বের তৃতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ, যেটি হবে তাদের বাঁচামরার লড়াই।