মুশফিকের জায়গায় থাকলে ওই মুহুর্তে যা করতেন পান্ডিয়া
মুশফিকুর রহিম বা মাহমুদউল্লাহকে ওই ম্যাচটা তাড়া করে ফিরেছে অনেকদিন। আত্মবিশ্বাসকে নিয়ে গেছে তলানিতে, এমন পরিস্থিতি আসলেই ঘুরেফিরে এসেছে সেই ম্যাচের স্মৃতি। ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বেঙ্গালুরুর ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটি বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসেও আছে অন্যতম দুঃসহ স্মৃতি হয়েই। মুশফিকের উইকেট দিয়েই মূলত পতন শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের। শেষ ওভারের বোলার হারদিক পান্ডিয়া বলছেন, তিনি থাকলে অবশ্যই আগে নিরাপদ অবস্থায় যাওয়ার চেষ্টা করতেন, এরপর খেলতেন বড় শট।
শেষ ওভারে ১১ রান থেকে শেষ ৩ বলে প্রয়োজন ছিল ২ রান, পান্ডিয়ার প্রথম বলে মাহমুদউল্লাহ সিঙ্গেল নিয়ে দেওয়ার পর পরের ২ বলে মুশফিক মেরেছিলেন ২ চার। তবে এরপর শেষ ৩ বলে ৩ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ হেরেছিল বাংলাদেশ। ৪র্থ বলে পান্ডিয়ার গুডলেংথের বলটা পুল করতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়েছিলেন মুশফিক। সে ম্যাচ জয়ের ওপর নির্ভর করছিল সে টুর্নামেন্টে ভারতের টিকে থাকার অনেকখানিই।
ক্রিকবাজের এক শো-তে হার্শা ভোগলেকে পান্ডিয়া বলেছেন সে ম্যাচ নিয়ে নিজের মানসিক অবস্থা, “সত্যি বলতে কী, যা ঘটেছে আমার মনে হয় না এটা সম্ভব মনে হয়েছিল তখন। সে সময়ে যদি আমি থাকতাম অমন অবস্থায় (মুশফিকের জায়গায়), তাহলে সিঙ্গেল নিয়ে জয় (টাই) নিশ্চিত করতাম। তারপর সিগনেচার শটে ছয় মেরে ম্যাচ শেষ করার মতো ব্যাপারগুলি আসতে পারত।”
“আমি যেটা ভাবছিলাম, কেউ সিঙ্গেল নিতে চাইলে সবচেয়ে কঠিন বল কী হতে পারে? এজন্যই ভেবেছিলাম, ব্যাক অফ দ্য লেংথের বলটাই এমন- মারতে চাইলেও কঠিন, আবার একইভাবে সিঙ্গেল নেওয়াটাও সহজ নয়। আপনাকে ভালভাবে খেলতে হবে এই বলে সিঙ্গেল নিতে হলে। কিন্তু সে ওই শট খেলতে গেল, এবং এ কারণেই আউট হয়েছিল।”
পরপর দুই বলে চার মেরে বেশ বুনো উদযাপনই করেছিলেন মুশফিক। যদিও কদিন আগে তামিম ইকবালের শো-তে এসে তিনি বলেছিলেন, আদতে ‘হিট অফ দ্য মোমেন্ট’-এ হয়ে গিয়েছিল তেমন, “পরাবাস্তব সব ব্যাপার স্যাপার। ঐ মুহুর্ত থেকে হেরে যাব, ভাবি নাই। ওই মুহুর্তে ২ বলে ২ চার হওয়ার পর সবাই ভেবেছিল আমি উদযাপন করে ফেলেছি। আসলে সেটা না। আমার কাছে যেটা ছিল, লাইন অতিক্রম করার আগে কিছুই না। হয়তো হিট অফ দ্য মোমেন্টে ওই উদযাপন বা কিছু হয়ে গেছে, তবে আমার উদ্দেশ্য ছিল না সেটা।”
মুশফিক ভেবেছিলেন, চাপে থাকার কথা ছিল পান্ডিয়ারই, “পরের বলে ১ বা ২- মাথা এভাবে কাজ করে নাই। আমার মাথায় যেটা ছিল, ২ বলে যেহেতু ২টা চার হয়েছে, বোলার অনেক চাপে থাকবে। সেখান থেকে ফিরে আসতে পারবে না। ও যেটাই করতে চাক, পারবে না। ইয়র্কার করতে গেলে গুডলেংথে পড়বে। তবে ভাগ্যক্রমে বলটা জায়গামতোই ছিল, মারার মতো। আমি এক্সিকিউট করতে পারি নাই। ঐ সময় রিয়াদ (মাহমুদউল্লাহ) ভাই থাকলে ভাল হতো, উনি আরেকটু ঠান্ডা মেজাজের। ১ রান নিয়ে হয়তো (আমাকে স্ট্রাইক ফিরিয়ে দিতে) করতে পারত।”
“খুবই বীভৎস সময় গেছে। যেখানেই যাই, বিমানবন্দর হোক আর যেখানেই হোক। অনেক খারাপ লেগেছে। অনেক সময় লেগেছে (এটা কাটিয়ে উঠতে)। তবে নিদাহাস ট্রফিতে খেলার পর যখন জিতেছি, আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছি। সবার একটা শেখার প্রক্রিয়া থাকে। এটাও তাই ছিল।”
মুশফিকের উইকেটের পরে বলে মারতে গিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহও। এ ম্যাচ তাড়া করে ফিরেছে তাকেও, “আমার জন্য অনেক কঠিন ছিল, ড্রেসিংরুমে সবাই কী পরিস্থিতিতে ছিলাম, মনে আছে। সবাই হোটেলে ফিরেও রুমের বাইরে বসে ছিলাম। ওই ঘা হয়তো কখনোই শুকাবে না। তবে খেলায় ফিরলে ওই জিনিসটা তাড়া করতো সবসময়ই, আমি পারব কিনা। নিদাহাস ট্রফিতে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছি। সংশয় থাকতো, শেষ করতে পারব কিনা। আমার জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষা ছিল সেটি।”
সে ম্যাচের ২ বছর পর নিদাহাস ট্রফিতে শ্রীলঙ্কাকে দুই ম্যাচে হারাতে সহায়তা করেছিল মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহর দারুণ দুটি ইনিংস। যদিও ফাইনালে গিয়ে দীনেশ কার্তিকের শেষ বলের ছয়ে ভারতের কাছে আবারও হেরেছিল বাংলাদেশ, যেটি হয়ে আছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের আরেকটি আক্ষেপের গল্প হয়ে।