শ্রীলঙ্কা সফর নিয়ে কোয়ারেন্টাইন-ধোঁয়াশা কাটেনি এখনও
শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়ে কতোদিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে, সেই কোয়ারেন্টাইনে থাকা অবস্থায় অনুশীলন করা যাবে কিনা, সেসব নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি এখনও। বিসিবি, শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট এ বিষয়ে নিজেদের পর্যবেক্ষণ শেয়ার করলেও শেষ পর্যন্ত সে দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়া যাবে না, এমন জানিয়েছেন বিসিবির গেম ডেভলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান নাইমুর রহমান দুর্জয়। সঙ্গে সফরে সদস্যসংখ্যা কমানোর কথাও বলছে শ্রীলঙ্কা, যেখানে উলটো মত বিসিবির।
অক্টোবরে ৩ টেস্ট সিরিজের জন্য শ্রীলঙ্কা যাচ্ছে বাংলাদেশ, বিসিবি এটি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেছিল ১২ আগস্ট। এর দিন চারেক পর বিসিবির ক্রিকেট অপারেশনস কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান বলেছিলেন, কোয়ারেন্টাইন নিয়ে ‘কনফিউশন’-এ আছেন তারা। এর প্রায় মাসখানেক পেরিয়ে গেলেও সে ‘কনফিউশন’ দূর হয়নি এখনও। সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে এ নিয়ে নতুন করে খবর আসার পর নতুন করে ঘিরে ধরেছে সংশয়ও। দূর্জয় বলছেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে শ্রীলঙ্কা গিয়ে ৭ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে, এ বিষয়ে দুই ক্রিকেট বোর্ড একমত হয়েছে। তবে শ্রীলঙ্কার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, সেখানে গিয়ে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে ১৪ দিন।
কোয়ারেন্টাইনের সময় অনুশীলন করা যাবে কিনা, দুর্জয় বলছেন সে নিয়েও আছে সংশয়, “সবকিছু আসলে শ্রীলঙ্কান বোর্ড করতে পারছেনা। দুই বোর্ড এখনো পর্যন্ত একমত হয়েছে ৭ দিনের কোয়ারেন্টাইন। শ্রীলঙ্কান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা বলছে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন। একই সাথে আগে যেটা ছিল কোয়ারেন্টাইনে থাকা অবস্থায় আমরা অনুশীলন করতে পারবো, কিন্তু এখন সেটাতেও নিষেধ আসছে। কাজেই আমরা আমাদের পর্যবেক্ষণগুলি তাদের জানাচ্ছি। এটা শ্রীলঙ্কা বোর্ডের নিয়ন্ত্রণে না, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, সেনাবাহিনী অনেক ব্যাপার আছে। সফরে সদস্য সংখ্যাও কমানোর চিন্তা ভাবনা করছে। সেটাও একটা ইস্যু। সেখানে আমরা আরও বাড়ানোর কথা বলছি।”
নেটে মাহমুদউল্লাহ, এখনও দলীয় অনুশীলন শুরু করেনি বাংলাদেশ/বিসিবি
তিনি বলছেন, জাতীয় দলের সঙ্গে এইচপি দল যাবে, এসব কিছুর পরও এখনও সে পরিকল্পনাতেই আছেন তারা, “শ্রীলঙ্কা বোর্ড ও আমাদের বোর্ড অনেক ক্ষেত্রে একমত ছিল সেখানে শ্রীলঙ্কার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। যার কারণে আমাদের একটু ধীরগতিতে এগুতে হচ্ছে। যোগাযোগটা আরও বাড়াতে হচ্ছে, আজকেও আমরা বসেছিলাম। পর্যবেক্ষণগুলো পাওয়ার পর বসেছি, আমরা আবার আমাদের পর্যবেক্ষণগুলো তাদেরকে দিব। তারপর শ্রীলঙ্কান বোর্ড তাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করে আমাদেরকে ফিডব্যাক দিলে... আসলে আমরা এখনো কোন সিদ্ধান্ত নিইনি।
“আজকের আলাপে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার জায়গায় যাওয়া যায়নি। আমরা দুটি বোর্ডই পর্যবেক্ষণগুলো দিচ্ছি। যেহেতু এখানে শ্রীলঙ্কান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা সুতরাং তাদের আদেশের বাইরে তো যাওয়া যাবেনা। সেই আলাপ আলোচনাটাই চলছে।”
শ্রীলঙ্কার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বোর্ডের কোয়ারেন্টাইন নিয়ে ঝামেলা অবশ্য এটিই নতুন নয়। এর আগে এ কারণে স্থগিত হয়ে গিয়েছিল তাদের ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টুর্নামেন্ট লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগও। সম্প্রতি সে লিগের নতুন সময় দেওয়া হয়েছে, ঘোষণা করা হয়েছে ক্রিকেটার নিলামের সময়সূচিও। তবে ৭ দিন নাকি ১৪ দিন, সেই ধোঁয়াশা কাটেনি।
খালেদ মাহমুদ সুজন, নাইমুর রহমান দূর্জয়, আকরাম খান, মিনহাজুল আবেদিন নান্নু
মার্চের পর থেকে খেলার বাইরে আছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। সফরের আগে দেশে কন্ডিশনিং ক্যাম্পের দৈর্ঘ্য কমিয়ে এনে যতো বেশি সেখানে অনুশীলন করা যায়, বিসিবির পরিকল্পনা ছিল এমন। সেখানকার স্থানীয় ক্রিকেটারদের সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলা যাবে না বলেই এইচপি দলকে সঙ্গে নেওয়ার পরিকল্পনা, দূর্জয় মনে করিয়ে দিচ্ছেন সেটাও, “এইচপির সফরটা তো আলাদা, অগ্রাধিকার তো পাবে জাতীয় দলের সফর। কারণ এইচপির যে আমাদের ক্যাম্প সেটা আমরা এখন করতে পারবো পরেও করতে পারবো। কিন্তু জাতীয় দলের যে সফর সেখানে কিছুটা সীমাবদ্ধতা আছে যে আপনারা জানেন টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ব্যাপার আছে। সেক্ষেত্রে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের সাথে যদি আমরা যদি এই উইন্ডোটা মিস করি তাহলে নতুন উইন্ডো বা স্লট বের করা কঠিন হবে। সুতরাং জাতীয় দলের টেস্ট সিরিজটা অগ্রাধিকার পাবে।
তবে, “শঙ্কা না, আসলে আপনি খেলতে চাচ্ছেন কিন্তু খেলার পরিবেশটাতো থাকতে হবে। সেই পরিবেশটা তৈরি এবং সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে যেন আমরা খেলতে পারি। ৬-৭ মাস খেলার বাইরে সেক্ষত্রে টেস্ট ম্যাচ খেলাটা, সেই টেস্টের প্রস্তুতিটাও ঠিকঠাক আমরা করতে না পারি সেটা তো কঠিন হবে। আমরা দুই বোর্ডই আন্তরিক আছি, সবকিছু ঠিকঠাক করে যেন মাঠে নামতে পারি।”
এ মাসের শেষদিকে শ্রীলঙ্কার উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার কথা বাংলাদেশের। কোয়ারেন্টাইন-ধোঁয়াশায় অদল-বদল হতে পারে সে সূচিও।