শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের শর্ত মেনে এখন কোনোভাবেই সফর সম্ভব নয় : বিসিবি প্রেসিডেন্ট
বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের শ্রীলঙ্কা সফর ‘কোনোভাবেই সম্ভব নয়’ বলে জানিয়েছেন বিসিবি প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপন। দুই বোর্ডের মাঝে কথাবার্তার পর বিসিবি যা বুঝতে পেরেছে, পাপনের মতে, তাতে ‘দুই বোর্ডের মাঝে চিন্তার বড় পার্থক্য আছে’, সঙ্গে ‘ভাবনা ও বাস্তবতার’ মিলও খুঁজে পাচ্ছে না বিসিবি। কোয়ারেন্টাইনের নিয়ম, অনুশীলন, জিমনেশিয়ামের ব্যবহার-- এসবের ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট (এসএলসি) যেসব শর্ত দিয়েছে, সেসব মেনে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ খেলা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন পাপন। ফলে ঘটনা নাটকীয় কোনো মোড় না নিলে শ্রীলঙ্কা যাচ্ছে না বাংলাদেশ, কার্যত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরাও পিছিয়ে যাচ্ছে।
অক্টোবরে ৩ টেস্ট সিরিজের জন্য শ্রীলঙ্কা সফরে যাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের। সে সফরের জন্য এ মাসের শেষদিকেই বাংলাদেশ রওনা দেবে, কথা ছিল এমন। কোভিড-১৯ মহামারিতে দুই দেশের তুলনামূলক পরিস্থিতির কারণে বেশিরভাগ অনুশীলনই সেখানে গিয়ে করার কথা ছিল বাংলাদেশের, দেশে কন্ডিশনিং ক্যাম্পের সময়ও কমিয়ে আনা হয়েছিল। তবে সেখানে গিয়ে কতোদিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে, সে নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল বরাবরই।
সেখানে অনুশীলনের সুযোগ দিচ্ছে না শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট, এমন বলেছেন পাপন, “আমাদের বলা হয়েছিল তাদের ওখানে করোনা নাই বলতে গেলে। তারপর দেখলাম ওদের ওখানে লিগ-টিগ হচ্ছে। পরে আমরা ওদের জানালাম যে আমরা বড় স্কোয়াড নিয়ে যাব। তাদের ওখানে আমরা অনুশীলন করবো। ওরা এখন অনুশীলনেরও সুযোগ দিচ্ছে না। কোনো অনুশীলন ছাড়া, যেখানে আমাদের খেলোয়াড়দের ৭ মাস ধরে খেলা নেই সেখানে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ তো হতেই পারে না। ওখানে গিয়েও আমরা অনুশীলন করতে পারবো না, সেটা তো সম্ভব না। কাজেই এই মুহূর্তে এটা হওয়া সম্ভব না।”
“যেহেতু আমাদের এখানে অনুশীলন, খেলাধুলা বন্ধ করে রেখেছি… এখানে অনুশীলন করা কঠিন। সেজন্য আমরা চিন্তা করলাম, খেলোয়াড় কোচ সবার কথা চিন্তা করে ওদের ওখানে গিয়ে অনুশীলন করা নিরাপদ হবে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সিরিজটির জন্য রাজি হয়েছিলাম এবং আমরা বলেছিলাম ওখানে যাবো এবং বিশাল বাহিনী নিয়ে যাবো। আমাদের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক যে কথাবার্তা হয়েছে সেগুলো এরকমই ছিল।
তবে, “কালকে যে চিঠিটা এসেছে,, এটা দেখে বুঝলাম আমরা যে ভেবেছি তার ধারের কাছে তো না-ই। অন্যান্য যেসব দেশে এখন ক্রিকেট খেলা হচ্ছে তাদের সঙ্গেও কোনো মিল নেই।
“কতগুলো জিনিস একেবারেই নতুন। যেমন ধরেন, অন্যান্য জায়গায় কোনো দেশে সাতদিনের কোয়ারেন্টাইনে হচ্ছে। কিন্তু অনুশীলন করতে পারছে। তারা তাদের মতো করে অনুশীলন করছে। কোনো জায়গায় তিন পরই অনুশীলন করতে পারছে। জিমনেশিয়াম ব্যবহার করতে পারছে। কালকে যেটা পেলাম তাতে মনে হচ্ছে কেউ ১৪ দিন হোটেলের রুম থেকে বের হতে পারবে না। খাওয়ার জন্যও বের হতে পারবে না।
সব মিলিয়ে যে পরিমাণ সুযোগ-সুবিধা প্রয়োজন, সেসবের কিছুই পাচ্ছে না বিসিবি, বলেছেন তিনি, “ওই যে বললাম না নেট অনুশীলনের জন্য বোলার নিয়ে যাওয়া লাগবে না আমার? থ্রোয়ার লাগবে, মেডিকেল টিম লাগবে। ওরা তো আমাদের মেডিক্যাল সহায়তা দেবে না। সে হিসেব করলে তো ১১ জন ক্রিকেটারই আমি নিতে পারবো কিনা সন্দেহ আছে।”
বিসিবি প্রেসিডেন্টের কথা অনুযায়ী, শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের সঙ্গে কথা বলে আরও বড় ধোঁয়াশায় পড়ে গেছেন তারা, “মানে এরা যে বলছে কী সেটাই আমি বুঝতে পারছি না। সে জন্যই এখনই কিছু আপনাদের বলতে চাচ্ছি না। তারা যেটা দিয়েছে সেটা দিয়ে ক্রিকেট খেলা সম্ভব না। এবং আমরা যাচ্ছি না। আমরা বলে দিয়েছি এভাবে খেলা সম্ভব না। অপেক্ষার আর কিছু নাই। আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছি।
“ওরা যেই নিয়ম কানুন বেধে দিয়েছে এটা ইতিহাসে বিরল। এটা দিয়ে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ সম্ভব না। এই খবরটাই ওদের দিতে চাই। আমাদের প্রথম বার্তা এটা। এরপর তারা যদি বলে আচ্ছা আসেন আলাপ আলোচনা করি, কী কী মানা যায় না যায়। তখন আমরা বলবো কী কী শর্ত রয়েছে, কী কী শিথিল করতে হবে। সেটা পরে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে হতে পারে। কিন্তু এই অবস্থায় খেলা হবে না এটা তাদের বোঝা উচিৎ।”
এর মাঝে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট সিদ্ধান্ত না দিলে নিজেদের মতো করে এগিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন পাপন, “তারা এর ভেতর জানালে তো জানালোই। আর আমরা অন্যান্য পরিকল্পনা নিয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু করে দিয়েছি। বলেও দিয়েছি আমরা এগিয়ে যাবো। যতো তাড়াতাড়ি উত্তর দেয় ততো তাড়াতাড়িই ভালো। আর আমরা একবার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলে সেখান থেকে তো আর পেছাবো না।”
শ্রীলঙ্কা সরকারের বেঁধে দেওয়া কোয়ারেন্টাইনের নিয়মের সঙ্গে মিল না হওয়ায় এর আগে লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগ স্থগিত করেছিল এসএলসি। তবে সম্প্রতি আবারও সেটি চালু করার ঘোষণা দিয়েছে তারা। এটিও বিস্মিত করছে পাপনকে, “এটা ওরা ভালো বলতে পারবে ভাই। কিন্তু এলপিএল করলো কীভাবে সেটা ঠিক বুঝতে পারছি না। আমাদের একটা দলকেই শ্রীলঙ্কা সরকার সামলাতে পারছে না, তাহলে এতগুলো ফ্র্যাঞ্চাইজিকে কীভাবে সামলাবে? আমি তো এটাই বুঝলাম না, একটা দলকেই পারছে না, এতগুলো দলকে কীভাবে পারবে?”
আর বিসিবির ক্রিকেট অপারেশনস কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান বলেছেন, ব্যাপারটা দুঃখজনক, “ওরা জানাবে জানাবে বলে শেষের দিকে এসে সিদ্ধান্ত দিয়েছে যা আমাদের জন্য কঠিন। ২০-২৫ দিন আগে যাওয়ার যে পরিকল্পনা করেছিলাম এটার কোনো মূল্য হয়না। কোনো কাজে আসবেনা, এটা আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক। এখন আমরা অনুরোধ করেছি তারা যদি মানে যেতে পারি নাহয় অন্য পরিকল্পনা করতে পারি।”