নিজেদের পাতা ফাঁদেই ভারতের সর্বনাশ
সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ নিউজিল্যান্ড ১২৬/৬, ২০ ওভার (অ্যান্ডারসন ৩৪; নেহরা ১/২১, বুমরাহ ১/১৫), ভারত ৭৯, ১৮.১ ওভার (ধোনি ৩০, কোহলি ২৩; স্যান্টার ৪/১১)
ফলঃ নিউজিল্যান্ড ৪৭ রানে জয়ী
ম্যাচ সেরাঃ মিচেল স্যান্টনার (নিউজিল্যান্ড)
নিজেদের মাঠে ঘূর্ণি বলের শক্তিতেই হয়তো প্রতিপক্ষকে কাবু করার অভিপ্রায় ছিল। কিন্তু দিনশেষে কৌশলটা বুমেরাং হয়েই এলো স্বাগতিকদের জন্য। ১২৭ রানের সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রতিপক্ষের স্পিনেই ঘায়েল হয়ে গেলো ধোনি বাহিনী। সুপার টেনের প্রথম ম্যাচে ভারত হেরে গেলো ৪৭ রানে।
পেস নির্ভর নিউজিল্যান্ড দলে নিয়মিত তিন পেসার সাউদি, বোল্ট, ম্যাক্লেনাঘানদের অনুপস্থিতি বিস্মিত করেছিল অনেককেই। কিন্তু উইকেট কন্ডুশন বিবেচনায় তিন স্পিনার নিয়ে নামাটাই শেষ পর্যন্ত সাফল্য এনে দিলো কিউইদের। সীমিত পুঁজিতে নাথান ম্যাককালামের অফস্পিনেই আক্রমণের সূচনা করেন উইলিয়ামসন। প্রথম ওভারেই শিখর ধাওয়ানকে এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলেন ম্যাককালাম। এক ওভার বাদে বাঁহাতি স্পিনার মিচেল স্যান্টার ফিরিয়ে দেন রোহিত-রায়নাদের। আরও এক ওভার বিরতি দিয়ে ফের আঘাত হানেন ম্যাককালাম। এ যাত্রায় কট এন্ড বোল্ড করে ফেরান যুবরাজকে। ভারতের স্কোরবোর্ডে রান তখন ২৬, ৪ উইকেট হারিয়ে। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে চতুর্থ উইকেট পতনের সময় এটি ভারতের তৃতীয় সর্বনিম্ন স্কোর।
প্রাথমিক বিপর্যয় সামলে নিতে শুরু করা ধোনি-কোহলির জুটিটা নবম ওভারে গিয়ে ভাঙেন লেগ স্পিনার ইশ সোদি, কোহলিকে উইকেটের পিছনে রঙ্কির তালুবন্দী করেন। একপ্রান্ত আগলে রেখে অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি দেখছিলেন সতীর্থদের আসাযাওয়া। নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে ধোনিও যখন ফিরে গেলেন, ভারতের স্কোরবোর্ডে রান তখন মাত্র ৭৯। ভারতের জন্য যেটি টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্কোর।
এর আগে উইকেট ব্যাটিং সহায়ক ভেবেই কিনা, টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্তই নিলেন কিউই ক্যাপ্টেন কেন উইলিয়ামসন। প্রথম ওভারে অশ্বিনের প্রথম বলটা বোলারের মাথার উপর দিয়ে সীমানা ছাড়া করে বড় ঝড়েরই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মার্টিন গাপ্টিল। কিন্তু তারপর? নির্ধারিত কুড়ি ওভার শেষে নিউজিল্যান্ডের স্কোরবোর্ডে রান বলছে গল্পটা অনুমিত পথে এগোয় নি।
কিউই ইনিংসে প্রাথমিক ছন্দপতনের কৃতিত্বটা অবশ্য ভারতীয় কোনো বোলারের নয়, লংকান আম্পায়ার ধর্মসেনার। প্রথম বলে অশ্বিনকে ছয় মেরে দ্বিতীয় বলটা সুইপ করতে চেয়েছিলেন গাপ্টিল। কিন্তু তাঁর ব্যাট ফাঁকি দিয়ে বল আঘাত হানে প্যাডে। এলবিডব্লুর আবেদনে সাড়া দিয়ে দেন আম্পায়ার। অথচ রিভিউতে দেখা গেলো বলটা পরিষ্কারভাবেই স্ট্যাম্পের উপর দিয়ে যেত।
অস্থিরতার খেসারত দিয়ে পরের ওভারে কলিন মুনরোও ফিরে গেলে কার্যত খেই হারিয়ে ফেলে নিউজিল্যান্ড। টানা নয় টি-টোয়েন্টিতে ‘পাওয়ার প্লে’ থেকে দু’ উইকেট তুলে নেয়ার কৃতিত্ব ধরে রাখে ভারত। প্রথম ছ’ ওভার থেকে নিউজিল্যান্ডের রান আসে মাত্র ৩৩, এ বছর যে কোনো দলের বিপক্ষে যা নিউজিল্যান্ডের জন্য ছিল ৫০-এর উপর। আর ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে পাওয়ার প্লে থেকে এটিই কিউইদের সর্বনিম্ন স্কোর।
এরপর উইলিয়ামসন-অ্যান্ডারসন জুটি ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করেছিলেন বটে। কিন্তু সপ্তম ওভারে উইলিয়ামসনকে স্ট্যামিংয়ের ফাঁদে ফেলে সংকট আরও ঘনিয়ে তোলেন সুরেশ রায়না।
ক্রমেই শ্লথ হতে থাকা রানের গতির সাথে সাথে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট খুইয়ে ধীরে ধীরে বড় স্কোরের সম্ভাবনা ফিকে হতে শুরু করে নিউজিল্যান্ডের জন্য। নেহরা-রায়নার পর বুমরাহ-জাদেজাদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে শেষ পর্যন্ত ব্ল্যাক ক্যাপদের রানের চাকা থেমে যায় রানে।