২২ গজের সেলুলয়েড : নতুন ইতিহাস, পুরোনো ইতিহাস
সুপার টেন নাকি ফাইনাল?
মমতা থেকে শচীন, ইমরান থেকে অমিতাভ, ইডেন গার্ডেনসে এইদিন কে ছিলেন না! ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের আগের আনুষ্ঠানিকতা যেন ছাড়িয়ে গেল অন্য অনেক আসরের উদ্বোধনী বা ফাইনাল ম্যাচের আগে পরের কার্যকলাপকেও! বৃষ্টিতে দেরী হওয়া ম্যাচ শুরু হলো নির্ধারিত সময়ের পরে, টসের আগে হলো এই ‘সংবর্ধনা-যজ্ঞ’।
অবাক উইকেট
নাগপুরের স্পিনিং উইকেটে কিউইদের কাছে হাবুডুবু খেয়েছিল ভারতীয়রা। ইডেন গার্ডেন যেন আরেক কাঠি সরেস! যেন শুধু বলটা হাত থেকে ফেললেই হয়, ঘুরে যাবে নিজে থেকেই! জাদেজা-অশ্বিন-আফ্রিদিদের তো রীতিমত ‘সংগ্রাম’ করতে হলো, বলের স্পিন কমাতে! বিশাল টার্নের সঙ্গে আবার ছিল বাউন্সও! টি-টোয়েন্টির বড্ড অপরিচিত উইকেটেই খেলতে হলো চেনা দুই প্রতিদ্বন্দ্বীকে!
ব্যাটসম্যান আউট, ফিল্ডার আউট
সারজিল খানের ‘অস্বস্তিকর’ সময় ফুরিয়ে এলো হারদিক পান্ডিয়ার অসাধারণ এক ক্যাচে। লং অফ থেকে দৌড়ে এসে সামনে ঝাঁপিয়ে পান্ডিয়া ক্যাচ নিলেন, তবে ভার সামলাতে পারলেন না ঠিকমতো! মাথাটা আঘাত করলো মাঠে, শরীর উল্টিয়ে ভারসাম্য রক্ষা করলেন। রায়নার বলে সারজিল আউট হলেন, ‘আউট’ হয়ে মাঠের বাইরে চলে গেলেন পান্ডিয়াও!
জুটি মূল্যবান
প্রথম বাউন্ডারি তৃতীয় ওভারে এসে, প্রথম ছয় ১৪তম ওভারে। ৪.৯৫ রানরেটে ৩৮, ৪.৮০ রানরেটে ৮, ৫.৬০ রানরেটে ১৪- পাকিস্তানের প্রথম তিন জুটির চিত্রটাও ছিল ‘বাউন্ডারি-সংকট’ এর মতোই ‘বিবর্ণ’। চিত্রটা বদলালো উমর আকমল ও শোয়েব মালিকের চতুর্থ উইকেট জুটিতে এসে। ১০.২৫ রানরেটে ৪১ রান, সঙ্গে দুই ছয় আর তিন চার। পাকিস্তান ‘লড়াই’ করার মতো একটা স্কোর পেলো তো ওই জুটির কল্যাণেই!
তাঁরই উইকেট নেই!
উইকেটে টার্ন দেখে দ্বিতীয় ওভারেই আশ্বিনকে এনেছিলেন ধোনী। তিন ওভারে দিলেন ১২ রান, ইনিংসে সবচেয়ে ভাল ইকোনমিও তাঁরই(সুরেশ রায়নার সমান ৪)। অথচ তাঁকে দিয়ে কিনা ওভার পূর্ণ করালেন না ধোনী! ছয় বোলারের পাঁচজনই উইকেট পেলেন, পেলেন না শুধু ওই অশ্বিনই!
কোহলি মূল্যবান
২৩ রানে নেই ৩ উইকেট, স্পিনিং উইকেটে চোখ রাঙ্গাচ্ছিলেন পাকিস্তানী পেসাররাই! টপ অর্ডারের আর সবাই যখন ব্যর্থ, দাঁড়িয়ে গেলেন বিরাট কোহলি। করলেন ৩৭ বলে ৫৫, যুবরাজকে নিয়ে প্রথমে ৬১ রানের জুটি গড়লেন, পরে ধোনীকে নিয়ে ৩৫ রানের। ভারতের টেস্ট অধিনায়ক মাঠ ছাড়লেন ভারতকে জিতিয়েই!
সামির ‘আলো-আঁধারি’
আগের ম্যাচে খেলেননি বাংলাদেশের সঙ্গে। স্পিনিং উইকেটেই কিনা চতুর্থ পেসার হিসেবে তাঁকে খেলালো পাকিস্তান। প্রথম ওভারেই দিলেন নো বল, মোহাম্মদ সামি সবাইকে যেন নিয়ে গেলেন মিরপুরের এশিয়া কাপে বাংলাদেশের সঙ্গে ম্যাচটিতে! তবে এবার আর ‘ম্যাচ’টা খরচ করলেন না নো বল দিয়ে, উল্টো সেই ওভারেরই পরপর দুই বলে আউট করলেন ধাওয়ান ও রায়নাকে! পরের ওভারে এসে আবার দিলেন ১২ রান, ম্যাচে আর তাঁকে দিয়ে বলই করালেন না আফ্রিদি!
ইতিহাস পাল্টালো, ইতিহাস রয়ে গেল!
ইডেন গার্ডেনসে এর আগে কখনও হারেনি পাকিস্তান। আইসিসির কোনো বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে আবার হারেনি ভারত। ভারত-পাকিস্তানের দুই ইতিহাসকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের এই ম্যাচে। ভারত জিতলো, ইতিহাস রক্ষা করেই। ম্যাচের মতো ইতিহাসের ‘গৌরব’টাও হারালো পাকিস্তান!