নামের মতোই উজ্জ্বল জ্যোতি
গত বছরের ডিসেম্বরের কথা। সদ্যই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করে দেশে ফিরেছে বাংলাদেশ প্রমীলা ক্রিকেট দল। ক্ষণিকের অবসরে দলের অন্যান্যদের মতো উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান তরুণীটিও ছুটলেন নিজ শহরে। ঢাকা থেকে বাসে চড়ে শেরপুর নেমেই অভিভূত নিগার সুলতানা জ্যোতি। বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ এক ঝাঁক ক্রিকেটপ্রেমী সাধারণ মানুষ ফুল হাতে দাঁড়িয়ে তাঁকে বরণ করে নেবার জন্য!
থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ফাইনালে আয়ারল্যান্ডের মেয়েদের কাছে শেষ বলের রোমাঞ্চে ২ উইকেটে হেরে যায় বাংলাদেশ। কিন্তু সে ম্যাচে ব্যাট হাতে ৪১ রান করে আলো ছড়ান জ্যোতি। সে পারফরম্যান্সেরই স্বীকৃতিস্বরূপ শেরপুরবাসীর দেয়া সংবর্ধনায় ১৮ বছরের তরুণী কথা দিয়েছিলেন, অনাগত আগামীতে আরও ভালো কিছু করে দেশের মুখ উজ্জ্বল করবেন।
এখনও শৈশবে থাকা বাংলাদেশ প্রমীলা ক্রিকেট দলকে বড় সাফল্য পেতে হয়তো অপেক্ষা করতে হবে আরও অনেকদিন। কিন্তু দলটার তরুণ অনেক প্রতিভার মতো জ্যোতিও আলাদা করে নজর কাড়ছেন ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে। চলতি বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত বাংলাদেশের খেলা তিনটি ম্যাচেই দলের হয়ে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান তাঁর।
প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ২৫ বলে ২৭ রানের পর দ্বিতীয় ম্যাচে ইংল্যান্ডের সাথে ২৮ বলে ৩৫। সে ইনিংসে ৪টি চারের সাথে লং অন দিয়ে জ্যোতির মারা ছয়টি টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের হয়ে এখনও পর্যন্ত একমাত্র। এরপর গতকাল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও করেছেন ২৭ বলে ২৭ রান, ২টি চারসহ।
উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়েও দারুণ সপ্রতিভ তিনি। অবিরত আওয়াজ তুলে চাঙ্গা রাখছেন বোলারদের। শেষ দুই ম্যাচে করেছেন দুটো করে স্ট্যাম্পিংও। দুই ম্যাচেই দুই সর্বোচ্চ স্কোরারকে ফিরিয়েছেন, যাঁদের একজন আবার মেয়েদের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এ যাবতকালের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ইংল্যান্ডের অধিনায়ক শার্লট এডওয়ার্ডস।
শেরপুর শহরের রাজবল্লভপুর এলাকার সিরাজুল হক ও সালমা হক দম্পতির মেয়ে জ্যোতি শেরপুর সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী। এ পর্যন্ত পাওয়া সাফল্যের জন্য তিনি কৃতজ্ঞ কোচ মোখলেসুর রহমানের প্রতি। মা-বাবা আর ভাইয়ের উৎসাহও তাঁর এগিয়ে চলার বড় প্রেরণা। দেশবাসীর দোয়া পুঁজি করে জ্যোতি দ্যুতি ছড়িয়ে যেতে চান, সম্মান বয়ে আনতে চান দেশের জন্য।