২২ গজের সেলুলয়েড : এ শুধু মিসের দিন!
ছবির পরে ছবি চলে নাকি তৈরী হয় সিনেমা। ক্রিকেট ম্যাচও তো তাই। টুকরো টুকরো অসংখ্য ছবি জন্ম নেয় যেখানে। ২২ গজ আর সবুজ ওই উদ্যানের ছবিগুলোকে যদি ধরা যেত সেলুলয়েডে!
চারে এসে তিন
এ মাসেই দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে সিরিজে অভিষেক। তবে ‘অভিষেক’ উইকেটটার দেখাই যে মিলছিল না অ্যাডাম জ্যাম্পার। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে করেছিলেন এক ওভার, ৩ রান দিলেও মেলেনি উইকেটের দেখা। অবশেষে বাংলাদেশের সঙ্গে ‘অধরা’ উইকেটটা মিললো, মোহাম্মদ মিঠুনকে ওয়াটসনের ক্যাচ বানানোর পর আউট করলেন সাকিব ও শুভাগতকেও। আগের তিন ম্যাচ উইকেটশূন্য জ্যাম্পা এক ম্যাচেই পেলেন তিন উইকেট!
দেখা শুধু বিশ্বকাপেই
অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশ এর আগে খেলেছে তিনটি টি-টোয়েন্টি। তিনটিই বিশ্বকাপে, ২০০৭, ২০১০ ও ২০১৪ সালে। হেরেছে তিনটিতেই। অস্ট্রেলিয়া সে রেকর্ডটা নিয়ে গেল চার-এ। টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে অস্ট্রেলিয়া ছাড়া ভারত, নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে এখনও টি-টোয়েন্টিতে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের সঙ্গে হিসাবটা অবশ্য এসব জয়-পরাজয়ের উর্ধ্বে, তাদের সঙ্গে যে এখনও টি-টোয়েন্টিই খেলেনি বাংলাদেশ!
শরীর যখন বাধা
মুশফিক চেষ্টা করলেন স্কুপ করতে। ব্যাটে লাগার পর বলটা যেন খুঁজে ফিরছিলেন, বল যে শরীরে বাধা পেয়ে গেছে আরেক দিকে! অবশ্য শরীর বাধা না দিলে বিপদও হতে পারতো মুশফিকের, ডিপ ফাইন লেগে যে ছিলেন ফিল্ডার। মাহমুদউল্লাহ এরপর করতে গেলেন স্লগ, ইনসাইড-এজ হয়ে বল লাগলো তাঁর প্যাডে! এ যাত্রায় মনমতো শট খেলতে না পারলেও বাংলাদেশকে লড়াইয়ের পুঁজিটা তো এনে দিলো এ দুজনেরই জুটিটা!
সজীবের প্রথম, খাওয়াজার প্রথম
তাসকিন-সানির স্থলাভিষিক্ত হয়ে উড়ে গেছেন, শুভাগত-সজীবকে নামানো হলো অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ম্যাচেই। শুভাগত এর আগে ১৩টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ(৭ টেস্ট, ৪ ওয়ানডে, ২ টি-টোয়েন্টি) খেলেছেন, তবে সজীবের আন্তর্জাতিক অভিষেকই এ ম্যাচে। বল হাতে দিলেন ৩.৩ ওভারে ৪০ রান, ‘শুরু’টা ঠিক মনমতো হলো কই তাঁর!
তবে ‘শুরু’র ফিফটিটা হয়তো মনেই রাখবেন খাওয়াজা। বিগ-ব্যাশে অসাধারণ পারফরম্যান্সে দলে সুযোগ পেয়েছেন, নিজের পঞ্চম ম্যাচে এসে খাওয়াজা পেলেন পঞ্চম ফিফটি। সামনেও হয়তো তাঁর ব্যাটের দিকে অনেকখানি তাকিয়ে থাকবে অস্ট্রেলিয়া!
ক্যাচ তুমি কার!
মুস্তাফিজুরের কাটারটা বুঝতে পারেননি, শেন ওয়াটসনের লিডিং-এজ উঠলো মিড-অনে। মিঠুন দৌড়ালেন মিডউইকেট থেকে, তবে মাশরাফি যেন একটু ‘ধীর’ভাবেই এগুলেন। শেষ মুহুর্তে লাফ দিয়েও বলের নাগাল পেলেন না মিঠুন, যে ক্যাচটা সহজ হওয়ার কথার ছিল, তাই মিস হলো কঠিন হয়ে!
মানিকজোড়
ডেভিড ওয়ার্নার নেমে গেছেন নীচে, অ্যারন ফিঞ্চ তো চলে গেছেন দলের বাইরেই! সব ওই খাওয়াজা-ওয়াটসনের ওপেনিং জুটির জন্যই। তবে জুটিটা যে কার্যকর, তার প্রমাণ তো তাঁরা দিলেন আরেকবার। বাংলাদেশের সঙ্গে আগের দশ টি-টোয়েন্টিতে কোনো দলের ওপেনাররাই পঞ্চাশ করতে পারেননি, সেখানে এই দুইজন করলেন ৬২। গড়ে দিলেন তো অস্ট্রেলিয়ার সফল রান তাড়া করার ভিত্তিটাও!
এ শুধু মিসের দিন
মিঠুনের ওই ক্যাচ মিসের পর বাংলাদেশ সুযোগ হারিয়েছে আরও, মিস করেছে ফিল্ডিংও। এক ১৮ ওভারেই হ্যাসটিংস প্রথমে ক্যাচ দিলেন আল-আমিনকে, ধরতে পারলেন না তিনি। পরের বলে মুশফিক থ্রোটা গ্লাভসে জমাতে পারলে হতে পারতেন রান-আউট। ওই ওভারেই সাকিবকে তুলে মারতে গিয়ে আউট হলেন হ্যাসটিংস, তবে আগের মিসগুলোর ‘সেলামী’স্বরুপই কিনা ম্যাচটা গুনতে হলো বাংলাদেশকে! ফিকে হয়ে গেল সেমিফাইনাল খেলার আশাটাও!