নিউজিল্যান্ডে রেকর্ড বদলাতে ডমিঙ্গো-তামিমের আশা পেস আক্রমণ
২০০১ সাল থেকে ২০১৯-- নিউজিল্যান্ডে প্রথম থেকে এর আগে দ্বিপক্ষীয় সিরিজের শেষ সফরে সব ফরম্যাট মিলে বাংলাদেশ খেলেছে ২৬টি ম্যাচ, তবে জেতা হয়নি একটিও। এবার সে রেকর্ডটা বদলাবে, সিরিজ শুরুর আগে বাংলাদেশের হেড কোচ রাসেল ডমিঙ্গো ও ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল করছেন তেমন আশা। দুজনের কাছেই এবার ফলটা ভিন্ন হওয়ার একটা প্রভাবক মনে হচ্ছে পেস আক্রমণ। ডমিঙ্গো বলছেন, তাদের জন্য দারুণ একটা সুযোগ এটি। আর তামিমের মতে, সিরিজ শুরুর আগে তাদের প্রস্তুতি এবং বিশ্বাস-- সবকিছু মিলিয়ে বেশ ভাল অবস্থানে আছেন তারা।
দুই ফরম্যাটের জন্য এ সফরের ২০ জনের স্কোয়াডে অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ছাড়া পেসার আছেন মোট ৬ জন- মোস্তাফিজুর রহমান, রুবেল হোসেন, আল-আমিন হোসেন, তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ ও অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা শরিফুল ইসলাম। ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে অন্তত তিনজন পেসার এবং সঙ্গে অলরাউন্ডার নিয়ে নামার ইঙ্গিত দিয়েছেন তামিম। তার মতে, পাঁচজন স্পেশালিস্ট বোলার নিয়ে নামা উচিৎ নিউজিল্যান্ড কন্ডিশনে, এবং বিশেষ করে ছোট মাঠে যেখানে হাই-স্কোরিং ম্যাচ হয়।
এবং নিজেদের শক্তিমত্তার জায়গাও সেখানেই দেখছেন তিনি, “দেখেন সত্যি কথা, আমাদের এবার যেটা হলো যে, আমাদের পেস বোলিং আক্রমণ হয়তোবা আগে যতবার এসেছি তার চেয়ে ভালো অবস্থায় আছে। ভালো অবস্থায় আছে অবশ্যই ভালো করাও লাগবে কিন্তু এতটুক বলতে পারি যে এখন যে গ্রুপটা আছে পেস বোলারদের, তারা খুবই ভালো।
“দ্বিতীয়ত আমার কাছে যেটা গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় বিদেশ সফরগুলোতে নিজের প্রতি বিশ্বাস। আমার কাছে মনে হয় যে দলে বিশ্বাস আছে তারা কিছু করতে চায়। তো ওইটাই আমি আশা করছি যে আমরা প্রথম ম্যাচ থেকেই যে লক্ষ্য আমাদের ভালো করার সেটা যেন আমরা পূর্ণ করতে পারি।”
ক্রাইস্টচার্চে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন, কুইন্সটাউনে ৫ দিনের ক্যাম্পের পর ডানেডিনে এসেছে বাংলাদেশ। তামিম বলছেন, অন্তত প্রস্তুতিতে ঘাটতি নেই তাদের, “আমি বিভিন্নভাবে বলেছি যে, কথা অনেক কিছু বলতে পারি কিন্তু চূড়ান্তভাবে পুরো জিনিসটা বাস্তবায়ন করাটা হলো গুরুত্বপূর্ণ। গত ৬-৭দিন আমরা নিজেদেরকে যেভাবে প্রস্তুত করেছি, আমরা চেষ্টা করছি যে আমরা সবকিছু যেন ব্যবহার করতে পারি। এতটুকু বলতে পারি যে আমরা প্রথম ম্যাচের আগে পুরোপুরিভাবে প্রস্তুত। হয়তোবা আমাদের মুখে শুনবেন না যে (এমনকি এই সিরিজ ভালো হোক কিংবা খারাপ হোক) প্রস্তুতির ঘাটতি ছিল। আমার কাছে মনে হয় যে এখন পর্যন্ত যে প্রস্তুতি নিয়েছি তাতে আমরা সন্তুষ্ট।”
নিউজিল্যান্ডে রেকর্ড বদলাতে হলে আক্রমণাত্মক ক্রিকেটের বিকল্প নেই বলে মনে করা তামিমের মতে, এক্ষেত্রে মূল ভূমিকা থাকবে বোলিং ডিপার্টমেন্টেরই, “চাপ তৈরি করার চাইতে আমাদের ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলতে হবে, আমাদের আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলতে হবে। আক্রমণাত্মক ক্রিকেট বলতে প্রতি ১০ ওভারে ১০০ রান করতে হবে সেটা বুঝাইনি বা প্রথম ৫ ওভারে ৫ উইকেট নিয়ে নিতে হবে। আমাদের সবকিছুতে ইতিবাচক থাকতে হবে, যাই করিনা কেন। যেহেতু আমাদের অতীত রেকর্ড ভালো না এখানে সেহেতু ভিন্নভাবে কাজ করতে হবে, ভিন্নভাবে ভাবতে হবে। আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হল বোলিং বিভাগ।
“আমরা যদি বোলিংয়ে আক্রমণাত্মক থাকতে পারি... আমি আসলে আমাদের নতুন পেসারদের নিয়ে বেশ আশাবাদী। এভাবেই তাদের শিখতে হবে। আমি খুবই রোমাঞ্চিত। তারা কঠোর পরিশ্রম করছে। নেটে বলেন, প্রস্তুতি ম্যাচ বলেন ওরা ভালো বোলিং করেছে। সুতরাং আমি খুব আশাবাদি তারা ভালো করবে। ওরা যদি ভালো করে তবে আমাদের জন্য অনেক সহজ হয়ে যাবে।”
বাংলাদেশের এখনকার যে পেস আক্রমণ, সেটির ধরন নিউজিল্যান্ডের কাছে অচেনা বলে তাদেরকে ‘চমকে’ দেওয়ার একটা সুযোগ থাকবে বলেও মনে করেন হেড কোচ ডমিঙ্গো, “আমার মনে হয় এই মুহুর্তে ৫০-ওভারের ফরম্যাট আমাদের সবচেয়ে শক্তিমত্তার জায়গা। যদি বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স দেখেন, সব মিলিয়ে পারফরম্যান্স এবং খেলোয়াড়দের গড় দেখেন, তাহলে আমাদের ওয়ানডে ক্রিকেটের সংখ্যা বেশ ভাল। আমাদের দারুণ কিছু তরুণ পেসার আছে, যাদেরকে নিউজিল্যান্ড হয়তো কখনও দেখেনি। এটা দেখতে পারা রোমাঞ্চের। হাসান মাহমুদ বা তাসকিন আহমেদ ভাল বোলিং করছে, আমাদের ভাল সম্ভাবনাময় ক্রিকেটার আছে। কিছু পেসারদের নিয়ে আমরা রোমাঞ্চিত।”
সব মিলিয়ে নিউজিল্যান্ডে ইতিহাস গড়ার দারুণ একটা সুযোগ বলছেন ডমিঙ্গো, “এটা দারুণ একটা সুযোগ, আমরা যে কথা বলেছি তা না। এটা বাংলাদেশের হয়ে আমার প্রথম নিউজিল্যান্ড সফর। এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে এসেছিলাম। আমি জানি এটা সফরের জন্য কঠিন একটা জায়গা, তবে কিছু তরুণ ক্রিকেটাররের জন্য ভাল একটা সুযোগও। তিন বছরের মাথায় বিশ্বকাপ আছে একটা এবং নিউজিল্যান্ড বিশ্বের সেরা দলগুলির একটি। আপনি যদি ভারতে ভাল করতে চান, তাহলে এমন বড় সিরিজে ভাল পারফর্ম করতে হবে। কোনও বাংলাদেশ দল যেটা করতে পারেনি, সেটা করার জন্য আমাদের দারুণ একটা সুযোগ এটি। আমরা রোমাঞ্চিত।”