নেট সেশন: নিউজিল্যান্ডে রেকর্ড বদলানোর সুযোগ, তবে চ্যালেঞ্জ পুরোনো বাংলাদেশের
বাংলাদেশের নিউজিল্যান্ড সফর, ২০২১
১ম ওয়ানডে
কবে, কখন
২০ মার্চ
বাংলাদেশ সময় ৪ টা (০৪০০)
“এটাই কি সেরা সুযোগ?”
“দেখেন, সুযোগ সবসময়ই থাকে, যদি আপনি মাঠে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারেন, সবকিছু ঠিকঠাক করতে পারেন, আপনি সুযোগ পাবেন।”
প্রশ্নকর্তার ইঙ্গিত ছিল প্রথম ওয়ানডেতে কেন উইলিয়ামসন, রস টেইলরের না থাকা, সঙ্গে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে কখনোই তাদেরকে না হারানোর বাংলাদেশের রেকর্ডের দিকে। তামিমের উত্তরটা হলো দার্শনিক, একদম ‘বেসিক’। হয়তো শেষ পর্যন্ত গিয়ে আটকায় ওই বেসিকেই। নিউজিল্যান্ড-জুজু, নিউজিল্যান্ডের অপার সৌন্দর্যে বিমোহিত হওয়ার সঙ্গে মাঠের ক্রিকেটে গুবলে পাকানো-- সবকিছু পেরিয়ে গিয়ে ঠেকে তো ওই বেসিকেই। সব বক্সে টিক দেওয়া, পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা। ২০০১ থেকে ২০১৯, এর আগে এই এত বছরে সব ফরম্যাট মিলিয়ে ২৬টি ম্যাচে যা হয়নি বাংলাদেশের জন্য।
এবার চিত্রটা বদলাবে কিনা, সে প্রশ্নের সঙ্গে আসছে সেই সুযোগের প্রসঙ্গও। এবং সেটিতে মিশে আছেন উইলিয়ামসন-টেইলর। উইলিয়ামসনের না থাকা নিশ্চিত হয়েছিল সিরিজের আগেই, কনুইয়ের চোট তাকে ওয়ানডে থেকে ছিটকে দিয়েছে, আইপিএলের কারণে টি-টোয়েন্টি সিরিজেও তাকে না পাওয়ার সম্ভাবনা জোরালো। টেইলরের চোট নতুন, সতর্কতা হিসেবে ডানেডিনের প্রথম ওয়ানডেতে থাকবেন না তিনি। বাংলাদেশ হেড কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর কথা ধরে বলতে গেলে, এই দুজনের ম্যাচসংখ্যা বা খেলার মান-- এসবের বদলি আনা তো সহজ নয় মোটেই।
২০০৮ সালে শেষ এই দুজনকে ছাড়া বাংলাদেশের বিপক্ষে কোনও ফরম্যাটে খেলেছে নিউজিল্যান্ড। ওয়ানডেতে যে কোনো দলের বিপক্ষেই এই দুজন নেই, এমন ম্যাচ তারা শেষ খেলেছিল ২০১৪ সালে। ফলে এই ঘটনাটা নিউজিল্যান্ডের কাছে নতুন, নতুন এই সিরিজেও। চোটের কারণে নেই লকি ফার্গুসন, কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমও। তবে তার মানেই কি সুযোগ বেড়ে গেল অনেকখানি বাংলাদেশের? মানসিক দিক দিয়ে হয়তো একটু, তবে দিনশেষে তো সবই ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন আর বক্সে টিক করা।
অবশ্য টেইলর-উইলিয়ামসন যেমন নেই, তেমনি নেই শুধু বাংলাদেশের নয়, নিউজিল্যান্ড-বাংলাদেশ সিরিজেরই অন্যতম সেরা পারফর্মার সাকিব আল হাসান। এ দুই দলের লড়াইয়ে ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি উইকেট সাকিবের, টেইলরের পর সবচেয়ে বেশি রান। অবশ্য টেইলর-উইলিয়ামসনের না থাকা যেভাবে আসছে, সাকিবের না থাকা সেভাবে আসছে না হয়তো মাঝে এক বছর তার না থাকার কারণেই! যদিও কোভিড-১৯ এর কারণে সে সময়ে সাকিবকে খুব বেশি ‘মিস’ করতে হয়নি বাংলাদেশকে।
সাকিব-উইলিয়ামসন-টেইলরের অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম রোমাঞ্চিত পেস বোলিং আক্রমণ নিয়ে। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বলেছেনে সেটির কথা, একই সুর ছিল হেড কোচ রাসেল ডমিঙ্গোরও। স্কোয়াডে সব মিলিয়ে আছেন ৭ জন পেসার, এর মাঝে অভিষেক হয়নি শুধু শরিফুল ইসলামের। নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে অবশ্য রোমাঞ্চকর পেস বোলিং আক্রমণ যদি শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্যও কার্যকর হয়, তাহলে বদলাতে পারে ইতিহাস। অবশ্য ডানেডিনের অপেক্ষাকৃত ছোট মাঠে বড় স্কোর গড়ার একটা ‘চাপ’ থাকবে ব্যাটসম্যানদের ওপরও।
সবকিছু মিলিয়ে আসলে দিনশেষে সবই ওই ‘বেসিক’-- পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, সব বক্সে টিক চিহ্ন। সেটি উইলিয়ামসন-টেইলর-সাকিব থাকলেও তাই, না থাকলেও তাই।
রঙ্গমঞ্চ
ইউনিভার্সিটি ওভাল, ডানেডিন
ডানেডিনের এ মাঠ নিউজিল্যান্ডের আরও সব মাঠের মতোই বেশ ছোট, ফলে হাই-স্কোরিং রেটও বেশি। শেষ এই ভেন্যুতে ওয়ানডে হয়েছিল ২০১৯ সালে, সেবারও খেলেছিল বাংলাদেশই। ৩৩১ রানের জবাবে বাংলাদেশ গুটিয়ে গিয়েছিল ২৪২ রানেই, সাব্বির রহমানের সেঞ্চুরির পরও।
যাদের ওপর চোখ
তামিম ইকবাল
দেশের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করে শুরু হয়েছিল তামিমের অধিনায়কত্বের পূর্ণমেয়াদ, এবার বিদেশের আরও কঠিন চ্যালেঞ্জ। সঙ্গে টি-টোয়েন্টি সিরিজে খেলবেন না বলে আরেকটু বেশি আলোচনায় এসেছেন তিনি। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে এমনিতেও রেকর্ডটা আহামরি নয় তার, গড় আর স্ট্রাইক রেট- ওয়ানডেতে ক্যারিয়ার-সংখ্যার চেয়ে দুটিই নেমে আসে তার। তামিম পারবেন, ‘সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে’?
মার্টিন গাপটিল
রেকর্ডের দিক দিয়ে ঠিক তামিমের বিপরীত দিকে নিউজিল্যান্ড ওপেনার। বাংলাদেশের বিপক্ষে দেশের মাটিতে ১০ ম্যাচে আছে তার ৩ সেঞ্চুরি, সঙ্গে ১টি ফিফটি গড় ৬৪.৩৭ (ক্যারিয়ার গড় ৪২.৫০), স্ট্রাইক রেট ১০৩ (ক্যারিয়ার স্ট্রাইক রেট ৮৭.৪৫)। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শেষ টি-টোয়েন্টি সিরিজনির্ধারণী ম্যাচে খেলেছিলেন ম্যাচজয়ী ইনিংস।
সম্ভাব্য একাদশ
অন্তত তিন পেসার, আর ৫ জন স্পেশালিস্ট বোলার-- ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে নিজের চাওয়াটা বলেছিলেন তামিম। মোস্তাফিজুর রহমান, রুবেল হোসেন, তাসকিন আহমেদের সঙ্গে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের দিকে ঝুঁকতে পারে বাংলাদেশ, অবশ্য হাসান মাহমুদ বা শরিফুল ইসলামকে নিয়েও চেষ্টা করতে পারে তারা। স্পিনার হিসেবে মেহেদি হাসান মিরাজের সম্ভাবনা বেশি খেলার।
আর দেশের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সৌম্যকে সাতে খেলানোর পরিকল্পনা থাকলেও সেটি থেকেও সরে এসেছে বাংলাদেশ। তামিম জানিয়েছেন, দলে থাকলে সৌম্য খেলবেন ওপরের দিকেই।
বাংলাদেশ
তামিম ইকবাল (অ), লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত/সৌম্য সরকার, মুশফিকুর রহিম (উই), মাহমুদউল্লাহ, মোহাম্মদ মিঠুন/মোসাদ্দেক হোসেন, সাইফউদ্দিন, মেহেদি হাসান মিরাজ/শেখ মাহাদি হাসান, মোস্তাফিজুর রহমান, রুবেল হোসেন, তাসকিন আহমেদ/হাসান মাহমুদ
নিউজিল্যান্ড
মার্টিন গাপটিল, হেনরি নিকোলস, ডেভন কনওয়ে, টম ল্যাথাম (অ, উ), উইল ইয়াং, জেমস নিশাম, ড্যারিল মিচেল, মিচেল স্যান্টনার, টিম সৌদি, কাইল জেমিসন, ট্রেন্ট বোল্ট
সংখ্যার খেলা
- ডানেডিনের ম্যাচ হবে ল্যাথামের শততম ওয়ানডে
তারা বলেন
“রোমাঞ্চকর একটা সিরিজ হবে। নিউজিল্যান্ডে আমাদের রেকর্ড ততোটা ভাল না, তবে সেসব বদলানোর দারুণ একটা সুযোগ সামনে। দলে কিছু তরুণ ক্রিকেটারদের নিয়ে রোমাঞ্চিত আমি, বিশেষ করে পেস বোলিং আক্রমণ নিয়ে। আশা করি কাল ভাল শুরু হবে।”
তামিম ইকবাল, বাংলাদেশ অধিনায়ক
“আমরা জানি, তারা এমন একটা দল, যারা শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যায়। আমি নিশ্চিত, এবারও ব্যতিক্রম হবে না। কুইন্সটাউনে প্রস্তুতির অনেক সময় পেয়েছে তারা। শুনেছি সেখানে উপভোগও করেছে।”
টম ল্যাথাম, নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক