নেট সেশন: সেই ক্রাইস্টচার্চে ফিরছে বাংলাদেশ, (মাঠের ক্রিকেটে) এবার সঙ্গী ডানেডিন-দুঃস্মৃতিও
বাংলাদেশের নিউজিল্যান্ড সফর, ২০২১
২য় ওয়ানডে
কবে, কখন
২৩ মার্চ
বাংলাদেশ সময় ৭টা (০৭০০)
২০১৯ সালের মার্চে ক্রাইস্টচার্চের এই হ্যাগলি ওভালেই সিরিজের তৃতীয়* টেস্ট খেলার কথা ছিল বাংলাদেশের। ১৫ মার্চ শুক্রবার ম্যাচের আগেরদিন তারা বেঁচে গিয়েছিলেন অল্পর জন্য, যে মসজিদে জুম্মার নামাজ পড়তে যাওয়ার কথা ছিল তাদের, সেটি শিকার হয়েছিল ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার। সিরিজ স্থগিত করে মাঝপথেই দেশে ফিরেছিল বাংলাদেশ, ভয়াবহ এক স্মৃতিকে সঙ্গী করে। সেই ক্রাইস্টচার্চে, সেই হ্যাগলি ওভালে, সেই মার্চে আবারও ফিরছে বাংলাদেশ জাতীয় দল। এবার এক ওয়ানডের জন্য।
সেই সন্ত্রাসী হামলার স্মৃতি কতোখানি জীবন্ত, সেটা তামিম ইকবালরাই ভাল বলতে পারবেন। তবে সেটি বাদ দিলে, মাঠের ক্রিকেটে এই সফরে এখন পর্যন্ত অভিজ্ঞতাটা সুবিধার নয় তামিমদের। ডানেডিনে প্রথম ওয়ানডেতে বিধ্বস্ত হয়েছে তারা। এমনই একপেশে ম্যাচ, যেখান থেকে ইতিবাচক দিক খুঁজে পাওয়াটা রীতিমত গলদঘর্ম অবস্থার মতো বাংলাদেশের কাছে।
অবশ্য প্রথমেই দায়টা গিয়ে পড়বে ব্যাটিংয়ের ওপর। ট্রেন্ট বোল্ট অ্যান্ড কোং-এর বিষের কবলে তারা ঠিকই পড়েছেন, তবে যে ব্যাটিং করেছেন তারা, সেটিতে শুধুই ভাল বোলিংয়ের দায় ছিল না। ম্যাচশেষে সেটি স্বীকারও করেছেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল।
নিউজিল্যান্ডের মাটিতে তাদের বিপক্ষে কখনোই জিততে না পারার রেকর্ডটা বদলানোর যে আশা করেছিল বাংলাদেশ, সেটি রীতিমতো হুমড়ি খেয়ে পড়েছে ডানেডিনে। ক্রাইস্টচার্চে সে আশা নতুন করে করতে হলে নিশ্চিতভাবেই ব্যাটিংটা সবার আগে ভাল করতে হবে বাংলাদেশের। আগেরদিনই তামিম বলেছিলেন, টপ ফাইভে রান না পেলে আসলে সেটা সম্ভব হবে না।এবং তিন ম্যাচের সিরিজে এবার যুক্ত হচ্ছে টিকে থাকার লড়াইও, এ ম্যাচ হারলে তো সিরিজও শেষ। অবশ্য কোনো ফরম্যাটেই কখনও জিততে না পারা বাংলাদেশের জন্য সিরিজ জয় কতোটা সমীকরণের মাঝে আছে, সে প্রশ্ন থেকেই যায়!
প্রথম ম্যাচের পর দিন দুয়েকের বিরতি দিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং ভাল হবে তখনই, যদি আগেরদিনের ব্যাটিংকে শুধুই একটা ‘ব্যাড ডে ইন অফিস’ হিসেবে ভাবতে পারেন তারা। কাজটা নিশ্চিতভাবেই সহজ নয়, নিউজিল্যান্ড-জুজুর সঙ্গে এমন বাজে পারফরম্যান্সকে পেছনে ফেলতেও তো প্রয়োজন কঠিন মানসিক দৃঢ়তা, পরিকল্পনা ও সেসবের বাস্তবায়ন।
নিউজিল্যান্ডের দিক দিয়ে এর চেয়ে ভাল শুরু বোধহয় তারা পেতে পারতো না। নিয়মিত অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন, অভিজ্ঞ রস টেইলর, পেস আক্রমণে লকি ফার্গুসনের অনুপস্থিতির পরও এমন দাপুটে পারফরম্যান্সের পর নিশ্চিতভাবেই আরও উজ্জীবিত থাকবে টম ল্যাথামের দল।
বাংলাদেশ পারবে, উজ্জীবিত নিউজিল্যান্ডকে থামাতে? এবং তারও আগে প্রশ্ন, বাংলাদেশ পারবে নিজেদের উজ্জীবিত করতে?
রঙ্গমঞ্চ
হ্যাগলি ওভাল, ক্রাইস্টচার্চ
এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রাইস্টচার্চের এই ভেন্যুতে খেলেছে তিনটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ-- দুটি ওয়ানডে ও একটি টেস্ট। সবকটিতেই তারা হেরেছে বড় ব্যবধানে। শেষ ২০১৯ সালের সফরে স্থগিত হয়ে যাওয়ার টেস্টটির আগে এখানে একটি ওয়ানডে খেলেছিল তারা, মার্টিন গাপটিলের সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের দেওয়া ২২৭ রানের লক্ষ্য নিউজিল্যান্ড পেরিয়ে গিয়েছিল ৮ উইকেট ও ৮৩ বল বাকি রেখেই।
যাদের ওপর চোখ
তাসকিন আহমেদ
প্রথম ওয়ানডেতে তাসকিনের বোলিং ছিল একটু হলেও আশাজাগানিয়া। অবশ্য দল ১৩০ রানে গুটিয়ে গেলে তাসকিনদের তেমন কিছু করার থাকেও না অমন কন্ডিশনে। তবুও ব্যাটিংয়ে যদি লড়াই করার মতো স্কোর গড়তে পারে বাংলাদেশ, অথবা আগে বোলিং করলে আলাদা করে নজর থাকবে তাসকিনের ওপরও।
মার্টিন গাপটিল
প্রথম ম্যাচের আগেও গাপটিলই ছিলেন প্যাভিলিয়ন প্রিভিউয়ের এ সেকশনে, এবারও থাকছেন তিনিই। বাংলাদেশকে পেলেই আলাদা করে জ্বলে ওঠা নিউজিল্যান্ড ওপেনারের দিক থেকে চোখ ফেরানোই যে মুশকিল। আগের ম্যাচে বোল্ট-থান্ডারেই মূলত জ্বলে-পুড়ে ছারখার হয়ে যাওয়া বাংলাদেশকে আলাদা করে হুমকি দিয়েছিলেন তো তিনিও।
সম্ভাব্য একাদশ
টপ অর্ডারে সৌম্য সরকার টিকে গেলে টিম কম্বিনেশনে পরিবর্তন আনার তেমন সম্ভাবনা কম বাংলাদেশের। একটা অপশন হতে পারে মিঠুনের বদলি হিসেবে অলরাউন্ডার সাইফউদ্দিনের দলে আসা।
বাংলাদেশ
তামিম ইকবাল (অ), লিটন দাস, সৌম্য সরকার, মুশফিকুর রহিম (উই), মাহমুদউল্লাহ, মোহাম্মদ মিঠুন/মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, মেহেদি হাসান মিরাজ, শেখ মাহাদি হাসান, মোস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ
চোটের কারণে ২য় ওয়ানডেতে থেকেও ছিটকে গেছেন রস টেইলর। ফলে নতুন কোনো চোট বা তেমন সমস্যা ছাড়া পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা নেই নিউজিল্যান্ড একাদশেও।
নিউজিল্যান্ড
মার্টিন গাপটিল, হেনরি নিকোলস, ডেভন কনওয়ে, টম ল্যাথাম (অ, উ), উইল ইয়াং, জেমস নিশাম, ড্যারিল মিচেল, মিচেল স্যান্টনার, ম্যাট হেনরি, কাইল জেমিসন, ট্রেন্ট বোল্ট
সংখ্যার খেলা
- হ্যাগলি ওভালে ওয়ানডেতে যুগ্মভাবে সর্বোচ্চ ওয়ানডের স্কোরের রেকর্ড নিউজিল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের। ২০১৪ সালে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে কানাডার বিপক্ষে আগে ব্যাটিং করে ৯ উইকেটে ৩৪১ রান তুলেছিল স্কটল্যান্ড। নিউজিল্যান্ডের ৩৪১ এসেছিল ২০১৬ সালে, বাংলাদেশের বিপক্ষেই।
তারা বলেন
“আমার মনে হয়, এখানে যে আন্তর্জাতিক দলই খেলতে আসুক না, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা উন্নতি করে। এবং আমরা নিশ্চিতভাবেই আগের ম্যাচে আমাদের ভাল দিকগুলি নিয়ে আলোচনা করব, এখনও কোথায় উন্নতি করতে পারি, সেসব নিয়ে আলোচনা করব।”
গ্যারি স্টিড, নিউজিল্যান্ড হেড কোচ
“আমাদের মনে হয় একটা ভাল বোলিং আক্রমণ আছে। যদই ২৬০-২৭০ বোর্ডে তুলতে পারি তাহলে ভাল কিছু হবে। তবে আগে ২৬০-২৭০ করতে হবে, যেটা নিয়ে আমরা কথা বলছি।”
ওটিস গিবসন, বাংলাদেশ পেস বোলিং কোচ
(স্টিড ও গিবসনের কথা স্টাফডটসিওডটএনজেড থেকে নেওয়া)
*ভুলবশত দ্বিতীয় টেস্ট লেখা হয়েছিল