কনওয়ে-মিচেল-হেনরিতে পিষ্ট হয়ে হোয়াইটওয়াশড বাংলাদেশ
৩য় ওয়ানডে, ওয়েলিংটন
টস- নিউজিল্যান্ড (ব্যাটিং)
নিউজিল্যান্ড ৩১৮/৬, ৫০ ওভার (কনওয়ে ১২৬, মিচেল ১০০*, রুবেল ৩/৭০, তাসকিন ১/৫২, সৌম্য ১/৩৭)
বাংলাদেশ ১৫৪ অল-আউট, ৪২.৪ ওভার (মাহমুদউল্লাহ ৭৬*, নিশাম ৫/২৭, হেনরি ৪/২৭)
নিউজিল্যান্ড ১৬৪ রানে জয়ী ও সিরিজ ৩-০তে জয়ী
ডেভন কনওয়ে ও ড্যারিল মিচেলের জোড়া ‘অভিষেক’ সেঞ্চুরির পর ম্যাট হেনরির দুর্দান্ত সিম বোলিং, সঙ্গে জেমস নিশামের ৫ উইকেটে বেসিন রিজার্ভের রেকর্ড জয়ে বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করেছে নিউজিল্যান্ড। ৩১৯ রানতাড়ায় শুরুতেই খেই হারিয়েছে বাংলাদেশ হেনরির বোলিংয়ে, এরপর তাদের পরাজয় ছিল সময়ের অপেক্ষা। সে সময়টা অবশ্য দীর্ঘায়িত হয়েছে বেশ, শেষদিকে এসে ৭৩ বলে ৭৬ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন মাহমুদউল্লাহ। তবে ম্যাচের চিত্র এমন ছিল, মাহমুদউল্লাহর সে ইনিংস শুধু অবধারিত পরাজয়কে একটু বিলম্বিতই করতে পেরেছে।
রানতাড়ায় বাংলাদেশ ঠিকপথে ছিল না বলতে গেলে কখনোই। হেনরির শর্ট অফ দ্য লেংথ থেকে ছোবল মারা বলে ব্যাট বাড়িয়ে তামিম এজড হয়েছিলেন ৩য় ওভারে। সৌম্য সরকার পুল করতে গিয়ে ক্যাচ তুলেছেন, দারুণ কয়েকটি শট খেলা লিটন দাস ফিরেছেন টপ-এজড হয়ে থার্ডম্যানে উড়ন্ত ট্রেন্ট বোল্টের হাতে ধরা পড়ে। মোহাম্মদ মিঠুন ও মুশফিকুর রহিম এরপর করেছেন প্রায় ১১ ওভার ধরে টিকে থাকার সংগ্রাম, ওয়েলিংটনের বিখ্যাত বাতাস এদিন দৃশ্যমান ছিল না সেভাবে, তবে তাদের ব্যাটিং দেখে মনে হয়েছিল, কোনো অদৃশ্য শক্তির বিপক্ষে একটা অস্বস্তিকর লড়াই চলছে তাদের।
৩৯ বলে ৬ করে মিঠুন জেমিসনকে তুলে মারতে গিয়ে মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়ে সে লড়াই থেকে মুক্তি পেয়েছেন, এরপর মুশফিকুর রহিম ৪৩ বলে ২১ রান করে ফিরতি ক্যাচ দিয়েছেন নিশামের বলে বেসামাল হয়ে। এরপর মেহেদি হাসান মিরাজ ও মাহেদি হাসান নিশামের শিকার, তাসকিন আহমেদকে ফিরিয়ে চতুর্থ উইকেটটি পেয়েছেন হেনরি। ১০ ওভারে তিনি দিয়েছেন মাত্র ২৭ রান, ক্যারিয়ারে যা তার সবচেয়ে ইকোনমিক্যাল বোলিং ফিগার।
মাহমুদউল্লাহ শেষদিকে এসে কিছু শট খেলেছেন, ৬টি চারের সঙ্গে মেরেছেন ৪টি চার, হয়তো বেসিন রিজার্ভের দর্শকদের শেষদিকে বিনোদনটা একটু পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। ফিফটির পর একসময় সেঞ্চুরিও সম্ভব মনে হচ্ছিল, তবে শীঘ্রই সঙ্গীর অভাবে পড়ে গেছেন তিনি। রুবেল হোসেন ও মোস্তাফিজুর রহমানের উইকেট দিয়ে ক্যারিয়ারের ২য় পাঁচ পূর্ণ করেছেন নিশাম, তাতেই সম্পন্ন হয়েছে এ মাঠে রানের হিসেবে সবচেয়ে বড় জয়, বাংলাদেশের হোয়াইটওয়াশ হওয়াও।
অথচ ম্যাচটায় বেশ আশাজাগানিয়া শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের। ৫৭ রানে ৩ উইকেটের পর ১২০ রানে ৪র্থ উইকেট হারিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। কিন্তু ক্রাইস্টচার্চে পিচ্ছিল ফিল্ডিংয়ের ভূত বাংলাদেশের ওপর এসে ভর করেছে এখানেও। সহজ ক্যাচ, কঠিন ক্যাচ, রান-আউটের সুযোগ, আউটফিল্ডে মিস-- সবকিছু মিলিয়ে ম্যাচ থেকে বাংলাদেশ ছিটকে গেছে ধীরে ধীরে। আর নিউজিল্যান্ড মেতেছে উল্লাসে। ডেভন কনওয়ের পর ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি পেয়েছেন ড্যারিল মিচেলও, ৩০ ওভারে ৪ উইকেটে ১৪৯ রান করা নিউজিল্যান্ড ৫০ ওভার শেষে লাফ দিয়ে গেছে এ মাঠের রেকর্ড ৩১৮ রানের স্কোরে।
টসে জিতে সবুজাভ উইকেটে ব্যাটিং নিয়েছিলেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক টম ল্যাথাম। মোস্তাফিজুর রহমান-তাসকিন আহমেদের ওপেনিং বোলিং জুটি শুরুতে সে অর্থে সফল হয়নি, তবে এ ম্যাচে সিরিজে প্রথমবারের মতো খেলতে নামা রুবেল হোসেন আসার পর বদলে গেছে চিত্রটা।
অবশ্য সে চাপ বিফলে গিয়েছিল শুরুতে, তাসকিনের বলে হেনরি নিকোলসের মোটামুটি রেগুলেশন ক্যাচ ছেড়েছিলেন মুশফিক। অবশ্য এক বল পর ড্রাইভ করতে গিয়ে গালিতে লিটনের হাতে ধরা পড়েছেন নিকোলস। নিজের দ্বিতীয় ওভারে সফল হয়েছেন রুবেলও, তার শর্ট বলে তুলে মারতে গিয়ে টো-এজড হয়ে মিড-অনে লিটনের হাতে ক্যাচ দিয়ে আরেকবার ভাল শুরুর পরও ইনিংস বড় করতে পারেননি মার্টিন গাপটিল। সিরিজের প্রথমবার নামা রস টেইলরও জীবন পেয়েছিলেন, মিড-অনে রুবেলের বলে ৩ রানে মোস্তাফিজের হাতে। পরের বলে বাউন্ডারিতে বাংলাদেশকে বড়সড় আরেকটি মাশুলের ইঙ্গিত দিলেও ঠিক পরের বলে শরীরঘেঁষা কাট করতে গিয়ে এজড হয়েছেন তিনি।
আগের ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের নায়ক টম ল্যাথামের সঙ্গে কনওয়ের ৬৩ রানের জুটি ভেঙেছিল সৌম্য সরকারের বোলিংয়ে। দিনের প্রথম ওভার করতে এসেই ব্রেকথ্রু দিয়েছিলেন তিনি, অবশ্য মেহেদি হাসান মিরাজের পয়েন্টে নেওয়া ক্যাচ ছিল দুর্দান্ত। বাংলাদেশের এদিন ফিল্ডিংয়ের সঙ্গে মিরাজের ক্যাচটা অবশ্য বেমানানই।
৩০ ওভারে নিউজিল্যান্ডের স্কোর ছিল ৪ উইকেটে ১৪৯ রান, এরপর মিচেলকে রান-আউটের একটা সুযোগও এসেছিল। তবে বদলি ফিল্ডার আফিফ হোসেন ঠিকঠাক সংগ্রহ করতে পারেননি বলটা। এর আগেই ৫২ বলে ফিফটি হয়ে গেছে কনওয়ের। পরের ১০ ওভারে ৬২ রান তুলেছেন দুজন, নিউজিল্যান্ডের বড় স্কোরের দারুণ ভিত হয়ে গেছে তাতেই।
ক্রাইস্টচার্চে মেহেদি হাসান মিরাজ ও মাহাদি হাসানের স্পিন-জুটি যেমন চাপ তৈরি করেছিল, এ উইকেটে সেটি করতে পারেননি তারা। সৌম্যকে দিয়ে ৮ ওভার বোলিং করিয়েছেন তামিম।
কনওয়ে এরপর দারুণ এক গ্রীষ্মে একমাত্র যেটি মিসিং ছিল, সেই তিন অঙ্কের দেখা পেয়ে গেছেন। ৯৫ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন তিনি তাসকিন আহমেদকে কাট করে চার মেরে। যখন নেমেছিলেন, দলের অবস্থা তেমন সুবিধার ছিল না। তবে কনওয়ে নিউজিল্যান্ডকে নিয়ে গেছেন দারুণ এক পজিশনে, ১১০ বলে ১২৬ রানের ইনিংসে মেরেছেন ১৭টি চার।
এরপরের গল্পটা মিচেলের। ৬৩ বলে ফিফটি করেছিলেন, এরপর ৬৪ রানে সহজ ক্যাচ তুলেও বেঁচেছিলেন মাহমুদউল্লাহর হাতে। মাঝে জিমি নিশাম লিটনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরার পর মিচেল স্যান্টনার সঙ্গী ছিলেন তার। মোস্তাফিজের শেষ ওভার শুরুর আগে সেঞ্চুরি থেকে তার দূরত্ব ছিল ১৭ রানের। প্রথম তিন বলে টানা চার, একটি নো-বলে ভর করে শেষ বলে সেঞ্চুরির জন্য তার প্রয়োজন ছিল দুই রান। মিডউইকেটে খেলে এরপর পড়িমড়ি করে ছুটলেন তিনি, থ্রো-টা যখন মুশফিকের কাছে গেল, পপিং ক্রিজ থেকে বিশাল ব্যবধানে বাইরে ছিলেন তিনি। তবে মুশফিক মিস করলেন, মিচেল মাতলেন বুনো উল্লাসে।
শেষের ওই ঘটনা আসলে পুরো ইনিংসেরই হাইলাইটস। আর দ্বিতীয় ইনিংসের চিত্রটা তো বাংলাদেশের জন্য আরও বিবর্ণ।