• বাংলাদেশের নিউজিল্যান্ড সফর ২০২১
  • " />

     

    বাংলাদেশের ওয়েলিংটন-বিভীষিকা গল্পের টি-টোয়েন্টি সংস্করণ হ্যামিল্টনে

    বাংলাদেশের ওয়েলিংটন-বিভীষিকা গল্পের টি-টোয়েন্টি সংস্করণ হ্যামিল্টনে    

    ১ম টি-টোয়েন্টি, হ্যামিল্টন
    টস- নিউজিল্যান্ড/ব্যাটিং
    নিউজিল্যান্ড ২১০/৩, ২০ ওভার (কনওয়ে ৯২*, ইয়াং ৫৩, গাপটিল ৩৫, ফিলিপস ২৪, নাসুম ২/৩০, মাহাদি ১/৩৭) 
    বাংলাদেশ ১৪৪/৮, ২০ ওভার (আফিফ ৪৫, সাইফউদ্দিন ৩৫*, নাইম ২৭, সোধি ৪/২৮, ফার্গুসন ২/২৫, বেনেট ১/২০)


    ওয়েলিংটনে শেষ ওয়ানডের গল্পটাই বাংলাদেশের জন্য যেন টি-টোয়েন্টি সংস্করণে ছাপা হলো হ্যামিল্টনে। আগে ফিল্ডিংয়ে নেমে শুরুতে একটু চাপ তৈরি করা, ডেভন কনওয়ের সঙ্গে আরেকজনের ইনিংসে বড় স্কোরের নিচে চাপা পড়া, এরপর ব্যাটিংয়ে শুরুতেই লড়াইয়ে ছিটকে গিয়ে বড় পরাজয়। ফরম্যাট বদলালো, অধিনায়ক বদলালো, একাদশের চেহারা বদলালো-- বদলালো না শুধু নিউজিল্যান্ড সফরে বাংলাদেশের গল্পটাই। ডেভন কনওয়ের ৫২ বলে ৯২, অভিষিক্ত উইল ইয়াংয়ের ৩০ বলে ৫৩ রানের পর গ্লেন ফিলিপসের ১০ বলে ২৩ রানের ক্যামিওতে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে সেডন পার্কের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১০ রানের স্কোর গড়ার পর ইশ সোধির এক স্পেল, লকি ফার্গুসনের পেসে বাংলাদেশকে গুঁড়িয়ে দিয়ে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে নিউজিল্যান্ড। 

    অভিষিক্ত নাসুম আহমেদ প্রত্যাশার প্রতিদান দিয়েছেন, তবে তার ভাল বোলিংকে সে অর্থে সমর্থন দিতে পারেননি পেসাররা। ফিল্ডিংয়ে অন্তত ওয়ানডে সিরিজ থেকে উন্নতি হলেও একদম শীর্ষ পর্যায়ের ছিল না সেটি। আর ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশকে দিশা হারানো পথিক মনে হয়েছে প্রায় শুরু থেকেই, শুরুতে নাইম শেখ আর শেষদিকে আফিফ হোসেনের সঙ্গে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন একটু ইতিবাচক ছিলেন, তবে ৫৬ বলে ৬৩ রানের জুটি যে ইনিংসে সর্বোচ্চ-- সেখানে আর যাই হোক, ২১১ রান তাড়া করার ব্যাপারটা থাকে না নিশ্চয়ই। 

    একটা চারের পর টিম সাউদিকে জোরের ওপর খেলতে গিয়ে আকাশে বল তুলেছিলেন লিটন, ফার্গুসনকে প্রথম বলেই চারের পর ফুললেংথ থেকে এলবিডব্লিউ হয়েছেন নাইম। এরপর শুরু হয়েছে সোধি-ধ্বংসযজ্ঞ। রং-আন বুঝতে না পেরে ফিরতি ক্যাচ দিয়েছেন সৌম্য, বীভৎস হোয়্যাক করতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন মোহাম্মদ মিঠুন। মাহমুদউল্লাহ ও মাহাদি হাসান-- দুজনই বল ডেকে এনেছেন স্টাম্পে, প্রথমজন কাট করতে গিয়ে, পরেরজন কোনোমতে আটকাতে গিয়ে। ৫৯ রানে ৬ উইকেট নেই-- সেডন পার্কে ম্যাচ বলতে গেলে শেষ ওখানেই। 

    এরপর এখানে ওখানে কিছু শট খেলে অস্ট্রেলিয়া উইমেনের সঙ্গে নিউজিল্যান্ড উইমেনের ম্যাচের আগে হ্যামিল্টন দর্শকদের বিনোদন দেওয়ার চেষ্টা করেছেন আফিফ, পরাজয়টাও বিলম্বিত করেছেন। অবশ্য মার্টিন গাপটিল শরিফুল ইসলামের যে ক্যাচ নিয়েছেন কাভারে পেছন ছুটে, তাতে এসেছে বড় এক উল্লাসের কোরাস। তাতে বাংলাদেশের জন্য মিশে ছিল শুধুই বিষাদের সুর।


     এর আগে টসে হেরে বোলিং ওপেন করতে অভিষিক্ত নাসুম আহমেদকে এনেছিলেন মাহমুদউল্লাহ, আরেক অভিষিক্তি ফিল অ্যালেনকে ফিরিয়ে শুরুটা দারুণ করেছিলেন এই বাঁহাতি স্পিনার, তাকে আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে ২০০৫ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে কাইল মিলস ও ম্যাথু সিনক্লেয়ারের পর আবারও অভিষেকে গোল্ডেন ডাকের অভিজ্ঞতা হয়েছে অ্যালেনের। বাংলাদেশ ইনিংসে শেষ পর্যন্ত নাসুমই যা একটু চাপ তৈরি করতে পেরেছেন, আরেক স্পিনার মাহাদি হাসান উইকেটের দেখা পেলেও খরুচে ছিলেন, পেসাররা ছিলেন উইকেটশূন্যই। 

    শততম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলতে নামা মার্টিন গাপটিল নাসুমের দ্বিতীয় শিকার ছিলেন, আঁটসাঁট বোলিংয়ের পর বেশ বাইরের বলে শটে প্রলুব্ধ করেছিলেন তাকে নাসুম, তাতে মরিয়া হয়ে শট খেলতে গিয়ে লং-অনে ক্যাচ দেওয়ার আগে নিউজিল্যান্ড ওপেনার করেছেন ২৭ বলে ৩৫। অ্যালেনের পর ডেভন কনওয়েকে নিয়ে গাপটিলের জুটি ছিল ৩৮ বলে ৫২ রানের, পাওয়ারপ্লেতে নিউজিল্যান্ড তুলেছিল ৪৮ রান। 

    গাপটিল ফিরলেও ইয়াংয়ের সঙ্গে নিউজিল্যান্ডকে বড় সংগ্রহের দিকে নিয়ে গেছেন কনওয়ে। আন্তর্জাতিক অভিষেকে প্রথম মৌসুমটা স্বপ্নের মতো যাচ্ছে কনওয়ের, এদিন ফিফটি পেয়েছেন অবশ্য নাটকীয়তার মাঝে। নাসুমের করা শেষ ওভারে তাকে তুলে মেরে স্কয়ার লেগে শরিফুলের হাতে ধরা পড়েছিলেন কনওয়ে, অন-ফিল্ডে সফট সিগন্যালও ছিল আউটই। তবে টিভি আম্পায়ার নাকচ করেছেন সেটি, ক্যাচ নেওয়ার সময় শরিফুলের বুট বাউন্ডারি কুশন স্পর্শ করেছিল- এমন সিদ্ধান্তে এসে। 

    কনওয়ের পর ফিফটি পেয়েছেন ইয়াং, এরপর মাহাদিকে স্লগ করতে গিয়ে মিডউইকেটে ক্যাচ দেওয়ার আগে করেছেন ২৯ বলে ৫৩, ২ চার ও ৪ ছয়ে। কনওয়ের সঙ্গে তার জুটি ছিল ৬০ বলে ১০০ রানের, দুজন মিলে জুটিতে মেরেছেন ৭টি চার ও ৬টি ছয়। অবশ্য ইয়াং ফিরলেও নিউজিল্যান্ডের তেমন কিছু যায় আসেনি, শেষ ৪ ওভারে তারা তুলেছে ৬৪ রান।