• আইসিসি টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০১৬
  • " />

     

    চমক আছে এবারের আসরেও

    চমক আছে এবারের আসরেও    

    ঘটন-অঘটন ছাড়া কি আর বিশ্বকাপ কল্পনা করা যায়? আর সেটা যদি হয় কুড়ি ওভারের ধুন্ধুমার ক্রিকেট, চমকের ঠমকটা রং চড়ায় একটু বেশীই। এবারের আসরেও তার ব্যত্যয় হয় নি। শেষ হতে চলা বিশ্বকাপের তেমনই কিছু চমক চোখ ফিরিয়ে দেখা যাক।


     

    কিউইদের স্পিন যাদু

     

    উপমহাদেশের উইকেট নিউজিল্যান্ডের কাছে বরাবরই হয়ে এসেছে এক বিভীষিকার নাম। বিগত পাঁচ বছরে টেস্ট-ওয়ানডে মিলিয়ে এ অঞ্চল থেকে সিরিজ জিতে ফেরা দূরে থাকুক, ম্যাচ জিততেই গলদঘর্ম হয়েছেন ম্যাককালামরা। উল্লেখিত সময়কালে উপমহাদেশে ক্রিকেট খেলে নিউজিল্যান্ডের প্রাপ্তি বলতে শ্রীলংকার বিপক্ষে একটি করে টেস্ট আর ওয়ানডে জয়। টানা চারটে সিরিজে হতে হয়েছে হোয়াইট-ওয়াশ, যার দুটো আবার বাংলাদেশের বিপক্ষে; একটি করে শ্রীলংকা আর ভারতের কাছে। এখানকার উইকেটে খেলাটা কিউইদের জন্য কতোটা অস্বস্তিকর তা এসব পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট।

     

    সেই নিউজিল্যান্ডকে তাই ভারতের মাটিতে চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে দেখার চিন্তা আদৌ ক’জন করতে পেরেছিলেন বলা কঠিন। অথচ গ্রুপ পর্বের খেলা শেষে টুর্নামেন্টের একমাত্র অপরাজিত দলটির নাম নিউজিল্যান্ড! চার জয়ের একটি প্রতিবেশী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে, আর বাকি তিনটিই কিনা আবার উপমহাদেশেরই তিন দেশের বিপক্ষে! বিগত দুই যুগে ভারতের মাঠে ভারতকে হারানোর রেকর্ড যাদের সব ধরণের ক্রিকেট মিলিয়ে সাকুল্যে একটি, সেই তাঁরাই কিনা সুপার টেনের প্রথম ম্যাচে ভারতকে হারিয়ে দিলো ৪৭ রানে! তারচেয়েও বড় ব্যাপার, সবাইকে অবাক করে দিয়ে দলের সেরা তিন পেসারকে বসিয়ে রেখে নিউজিল্যান্ড নামলো তিন স্পিনার নিয়ে। কিউইদের স্পিন আক্রমণে ভারতের দুর্ধর্ষ ব্যাটিং গুটিয়েও গেলো মাত্র ৭৯ রানে। অশ্বিন-জাদেজাদের ছাপিয়ে আলোচনায় স্যান্টনার-সোদি-নাথান ম্যাককালামরা!

     

     

    সেই কিউই-চমক অব্যাহত থাকলো গ্রুপ পর্বের শেষ অব্দি। চার ম্যাচের সবক’টিতেই আগে ব্যাট করে কেবল পাকিস্তানের বিপক্ষে ছাড়া আর কোনোটিতে দেড়শ’ পেরোয় নি ব্ল্যাক ক্যাপদের স্কোর। কিন্তু স্যান্টনারদের জন্য যেন যে কোনো পুঁজিই সই! আর মাত্র দুই ম্যাচ দূরে বহুদিনের অধরা একটি ক্রিকেট বিশ্বকাপ। উইলিয়ামসনদের হাতেই শেষ অব্দি সেটা উঠলে ক্রিকেটের ইতিহাসই তো পেয়ে যাবে এক ভিন্ন মাত্রা!

     

    শটের সাতকাহন

     

    রিভার্স সুইপের নাম শুনেছেন, সুইচ-হিটের নামও তো শুনেছেন। আফগান ব্যাটসম্যান সামিউল্লাহ শেনওয়ারি এবার দুটোর সমন্বয়ে জন্ম দিয়েছেন ‘রিভার্স সুইচ’ নামে এক নতুন শটের, মারটা অনিচ্ছাকৃত ছিল বলে সাথে যোগ হয়েছে ‘স্লিপ’ শব্দটিও, সবমিলিয়ে শেনওয়ারির নতুন আবিষ্কারের পুরো নাম ‘রিভার্স সুইচ স্লিপ শট’। শ্রীলংকার বিপক্ষে ম্যাচে ১৬তম ওভারে থিসারা পেরেরার একটি বল ‘সুইচ হিট’ করতে চেয়েছিলেন সামিউল্লাহ। কিন্তু ব্যাট চালাতে গিয়ে ভারসাম্য হারিয়ে মাটিতে পড়ে যান। বল অবশ্য ততোক্ষণে উইকেটের পিছন দিয়ে সীমানা ছাড়ানোর পথে!

     

     

    এর আগে সুইচ হিটের শখ পূরণ করতে গিয়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচেও নতুন আরেক শটের জন্ম দিয়েছিলেন ওই শেনওয়ারিই। সে যাত্রায় পানিয়াঙ্গারার শর্ট পিচ ডেলিভারি শেনওয়ারির ব্যাটে দিক বদলে সীমানা ছাড়ায় ‘রিভার্স পুল’ নামে!

     

    একই দলের উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ শাহজাদকে ইতোমধ্যেই সময়ের অন্যতম সেরা ‘এন্টারটেইনিং’ ক্রিকেটার বলতে শুরু করেছেন অনেকে। টি-টোয়েন্টি র‍্যাংকিংয়ের আট নম্বরে উঠে আসা শাহজাদ নিজের নামে একটা শটও লিখিয়ে নিয়েছেন এবার। স্কটল্যান্ডের বেরিংটনের করা অফ স্ট্যাম্পের বেশ খানিকটা বাইরের বল দারুণ দক্ষতায় ফাইন লেগ দিয়ে সীমানার বাইরে পাঠান, যেটিকে এখন বলা হচ্ছে ‘শাহজাদ-স্কুপ’!

     

    পাকিস্তানের বিপক্ষে অজি অধিনায়ক স্টিভ স্মিথের শটটা হয়তো এমন বাহারি কোনো নাম এখনও পায় নি, তবে বিনোদোনের মাত্রা বিবেচনায় সেটাকেও পিছিয়ে রাখার কোনো সুযোগ নেই। উনিশতম ওভারের শেষ বলটা করার আগে ফাইন লেগের ফিল্ডারকে ত্রিশ গজ বৃত্তের ভিতরে নিয়ে আসেন ওয়াহাব রিয়াজ। ওদিকে স্মিথ পজিশন নিলেন অফ স্ট্যাম্পের অনেকটা বাইরে, সম্ভবত বোলারকে উইকেট বরাবর বল করতে প্রলুব্ধ করার চেষ্টাতেই, যেন সেটা ফ্লিক করে এগিয়ে আনা ফিল্ডারের মাথার উপর দিয়ে সীমানাছাড়া করা যায়। রিয়াজই বা সে ফাঁদে পা দেবেন কেন? তিনি স্মিথের অবস্থান লক্ষ্য করেই ইয়র্কার দিতে চাইলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবেই কিনা সেটা হয়ে গেলো ফুল টস। স্মিথ অবশ্য মোটেও ভড়কে গেলেন না। বাংলা ধারাবিবরণীর ভাষায় যাকে বলা যায়, দুর্দান্ত এক কব্জির মোচড়ে মিড-উইকেট দিয়েই বলটিকে চারে পরিণত করলেন।

     

     

    বদলে যাওয়া খাজা

     

    আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক বছর চারেক আগে। কিন্তু সপ্রতিভ শুরুর পর ইনিংস লম্বা করতে না পারার ব্যর্থতায় দলে নিয়মিত হতে পারেন নি। দীর্ঘদিন পর গত নভেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে ফিরে টানা দু’ টেস্টে পেয়ে যান শতক। চার বছরের ক্যারিয়ারে যেখানে একটিও শতক ছিল না, সেখানে চার মাসে খাজার নামের পাশে চার শতক! রান পেয়েছেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একদিনের সিরিজেও।

     

    টি-টোয়েন্টির হাতটাও যে মন্দ নয় সেটার প্রমান দিয়েছিলেন ঘরোয়া লিগ বিগ ব্যাশেই। প্রতিদান হিসেবে পাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুযোগটাও হেলায় হারান নি। বাংলাদেশের বিপক্ষে তাঁর ৪৫ বলে ৫৮ রানের শুরুটা না হলে ম্যাচের ফল অন্যরকম হলেও হতে পারতো। এর আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও করেন ২৭ বলে ৩৮ রান। পাকিস্তান ও ভারতের সঙ্গে ভালো শুরু করেও ইনিংসটা বেশি দূর নিয়ে যেতে পারেননি।

     

    শেষ চারে এশিয়ার এক!

     

    এ পর্যন্ত হয়ে যাওয়া পাঁচটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের তিনটিতেই ছিল ‘অল-এশিয়া’ ফাইনাল, চতুর্থটিতেও ছিল এশিয়ার প্রতিনিধি। কেবল ২০১০ বিশ্বকাপেই এশিয়ার কোনো দল ফাইনাল খেলতে পারে নি। তবে সেমিফাইনালে অন্তত দুটো এশীয় দল ছিল প্রতি আসরেই। এবারই প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলবে এশিয়ার একটিমাত্র দল। বাংলাদেশের বিপক্ষে এক রানের নাটকীয় জয়টা না পেলে অবশ্য সেই ভারতকেও সেমিফাইনালের দর্শক বনে যেতে হতো!

     

    "ক্যাচ মি ইফ ইউ ক্যান" 

    দুর্দান্ত কিছু ক্যাচও দেখেছে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। প্রথম পর্বে ওমানের জিশান মাকসুদ যে ক্যাচ ধরেছিলেন, সেটা বহুদিন চোখে লেগে থাকবে। তবে চূড়ান্ত পর্বে এসে ক্যাচের ভেলকি দেখালেন বাংলাদেশের সৌম্য সরকার। মোহাম্মদ হাফিজের বলটা নিশ্চিত ছয় হয়ে যাচ্ছিল, সৌম্য অবিশ্বাস্যভাবে সেটি ক্যাচ বানিয়ে ফেলেন। ভারতের সঙ্গে ম্যাচেও হার্দিক পান্ডিয়ার বলে আরেকটি দুর্দান্ত ক্যাচ ধরেন।