• অন্যান্য
  • " />

     

    ছবি কথা কয় : ডারহামের রাশওর্থ, রাশওর্থের ডারহাম-রেকর্ড

    ছবি কথা কয় : ডারহামের রাশওর্থ, রাশওর্থের ডারহাম-রেকর্ড    

    ছবিতে মুহুর্ত থমকে দাঁড়ায় বা বন্দী হয়ে থাকে। ছবি মানে গল্প। ছবি সে গল্পের অনেক কিছু বলে, অনেক কিছু বলে না। তবে সে ছবির সঙ্গে জড়িয়ে যায় সেসব গল্প। হয়ত সে গল্প এ ছবিতে আছে, কিংবা নেই। অথবা স্রেফ আমরা দেখি না সেসব।


    ছবিতে মার্ক উডরা যাকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন, স্কট বর্থউইক যাকে জড়িয়ে ধরেছেন, যিনি নিজে আবেগতাড়িত হয়ে দুহাতে মুখ ঢেকেছেন- তার নাম ক্রিস রাশওর্থ। 

    রাশওর্থের লিস্ট ‘এ’ অভিষেক ২০০৪ সালে, চেস্টার-লি-স্ট্রিটে, শ্রীলঙ্কা ‘এ’ দলের বিপক্ষে। তবে ডারহামের হয়ে সিনিয়র লেভেলে পরের ম্যাচটি খেলতে এই পেসারকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল ২০১০ সাল পর্যন্ত। এমনিতে ডারহামের ঘরের ছেলে তিনি, তাদের একাডেমিরই প্রোডাক্ট। সাসেক্স ও নর্দাম্পটনশায়ারেও ট্রায়াল দিয়েছিলেন, সুযোগ পাননি একটিতেও। ২০০৬ সালে তাকে ছেড়ে দিয়েছিল ডারহামও। রাশওর্থ এরপর জীবিকার তাগিদে করেছেন নানা কাজ- কখনও ডিশ স্যাটেলাইট বিক্রি, কখনও কল সেন্টারের চাকরি। তবে কাউন্টিতে খেলার ইচ্ছাটা ফুরিয়ে যেতে দেননি তিনি, খেলে গেছেন ক্লাব ক্রিকেট। 

    অবশেষে আরেকটি সুযোগ পেয়ে প্রথম শ্রেণিতে যখন অভিষেক হলো তার ডারহামের হয়ে, সে ম্যাচে ২৭ ওভার বোলিং করে থাকলেন উইকেটশূন্য। সে মৌসুমে মোটামুটি পারফর্ম করলেন, কিন্তু পরের মৌসুমে চ্যাম্পিয়নশিপে খেললেন মাত্র একটি ম্যাচ। ২০১২ সালে ডিভিশন ওয়ান থেকে রেলিগেশনের শঙ্কায় পড়লো ডারহাম, এরপর তারা বদলে ফেললো অধিনায়ক। ফিল মাস্টার্ডের বদলে দায়িত্ব নিলেন পল কলিংউড। রাশওর্থ সম্পর্কে মাস্টার্ডের কাজিন, তবে তিনি নিজেকে মেলে ধরলেন কলিংউডের নেতৃত্বে। সে মৌসুমে ১৭-এর নিচে গড়ে নিলেন ৩৮ উইকেট। 
     


    ছবি- কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপ/ইসিবি


    আগের মৌসুমে রেলিগেশন বাঁচানো ডারহাম পরের মৌসুমে হলো চ্যাম্পিয়ন, রাশওর্থ সেবার উইকেট নিলেন ৫৫টি। তবে তবুও তিনি ‘পার্শ্বনায়ক’, থাকলেন ৭০ উইকেট নেওয়া গ্রাহাম অনিয়নের ছায়া হয়েই। ২০১৫ সালে রাশওর্থ পৌঁছে গেলেন শীর্ষে, এক মৌসুমে নিলেন ৮৩ উইকেট, ডারহামের হয়ে এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি উইকেটের রেকর্ড যেটি। সে পারফরম্যান্সে তিনি জিতলেন পিসিএ বা প্রফেশনালস ক্রিকেটারস অ্যাসোসিয়েশনের বর্ষসেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার। 


    ছবি কথা কয়

    'শচীন হু?'

    ওয়ার্ন, কেপি, হ্যাম্পশায়ার ও স্লিপ-কর্ডন

    সময়ের আপেক্ষিকতায় শুরু কিংবা শেষ

    চেনা চিগুম্বুরা, অচেনা 'মিজা'


    এরপর, ২০১৬ সালে রাশওর্থরা পেলেন খবরটা। ঋণের বোঝা সামলাতে না পারা ডারহাম ইসিবির কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা নেওয়ার বিনিময়ে হয়ে গেল রেলিগেটেড। প্রথম স্তরে রেকর্ড মৌসুম খেলা ডারহাম নেমে গেল দ্বিতীয় স্তরে, হারালো টেস্ট ম্যাচ আয়োজনের সুযোগও। ক্লাব ছেড়ে গেলেন স্কট বর্থউইক, গ্রাহাম অনিয়ন, মার্ক স্টোনম্যানরা। তবে রাশওর্থ থেকে গেলেন। ডারহামের সঙ্গে তার সম্পর্কটা যে ছিন্ন করার মতো নয়! ডারহামকে আবারও টেনে তোলার লড়াইয়ে সামিল হলেন তিনি। 


    রেকর্ড গড়ার পর বাবার সঙ্গে রাশওর্থ/কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপ


    ২০১৯ সালে ৫০০ উইকেট থেকে ৬টি দূরত্বে থামলেন, এরপর এলো কোভিড। চ্যাম্পিয়নশিপের বদলে বব উইলিস ট্রফি হলো, প্রথম ম্যাচেই সে মাইলফলকে পৌঁছে গেলেন রাশওর্থ। ডারহামের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেটের তালিকায় তার ওপরে থাকলেন শুধু অনিয়ন ও সাইমন ব্রাউন। প্রথম ৫০০ উইকেটের ২৫৪টিই তার ছিল বোল্ড বা এলবিডব্লিউ- পেস খুব বেশি না হলেও লাইন-লেংথই তার অস্ত্র, তার টিকে থাকার লড়াইয়েরও যেন আরেক পুরস্কার সেসব উইকেট। 

    বদলে যাওয়া কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপের ফরম্যাটে এবারের মৌসুম রাশওর্থ শুরু করেছিলেন অনিয়নের ক্লাব রেকর্ড থেকে ২৬টি উইকেট দূরে থেকে। উস্টারশায়ারের বিপক্ষে ১৩ মে শুরু হওয়া ম্যাচে প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েই ছুঁয়েছিলেন অনিয়নকে। দ্বিতীয় ইনিংসে জ্যাক হেইনসের উইকেট দিয়ে ছাড়িয়ে গেলেন তাকে। ম্যাচে নিলেন ৯ উইকেট, জিতল ডারহাম। ম্যাচশেষে বিশেষ জার্সি উপহার পেলেন সতীর্থদের কাছ থেকে, যেটি তুলে দিলেন সারে থেকে ফিরে নেতৃত্ব নেওয়া বর্থউইক। রাশওর্থ তখনও যেন আবেগে কাঁপছেন। 

    তার কাছে এ মাইলফলকের অর্থ কী, তার খানিকটা তো বুঝা যায় ওপরের ছবিটা থেকেই।