'ওয়েস্ট ইন্ডিজ নির্বোধের দল নয়'
আফগানিস্তানের কাছে ম্যাচ হারের পর মোহাম্মদ নবীদের সাথে ক্রিস গেইলের নাচ কিংবা সেমিফাইনালে ভারতকে হারানোর পর স্যামি-ব্র্যাভোদের উদযাপন...দল হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ কতোটা আমোদপ্রিয় সেটা বলে দেয় এসব ছবিই। দুনিয়াজোড়া ক্রিকেটপ্রেমীরাও আনন্দের এমন সোজাসাপ্টা বহিঃপ্রকাশ ভালোবেসে ছড়িয়ে দিচ্ছেন সোশ্যাল মিডিয়ার পাতায় পাতায়। তবে বেরসিক কারও কারও চোখে বোধকরি এসবও বালখিল্য আচরণ। পত্রিকার রাশভারী কলামে তাঁদেরই কেউ ক্যারিবিয় ক্রিকেটারদের ‘নির্বোধ’, ‘ভাড়াটে’ বলে হেয় করেন। যাদের উদ্দেশ্য করে বলা, তাঁরা যে এসব পড়ে-শুনে আহত হতে পারেন সে বোধটুকুও বিবেচনার ধার ধারেন না। কিংবা হয়তো ভাবেন এমন আমুদে খেলোয়াড়েদের এসব ‘জ্ঞানগর্ভ’ কলাম পড়ার বা বোঝার সময় কোথায়! কিন্তু ড্যারেন স্যামিরা যে সবই পড়েন, শোনেন এবং কষ্টও পান- ফাইনালের লড়াইয়ে নামার আগে সেটা খোলাখুলিই জানিয়ে দিলেন ক্যারিবিয়ান ক্যাপ্টেন।
সর্বশেষ তিনটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে উঠে এসেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মাঝে গতবারের বাংলাদেশ আসরেও তাঁরা পৌঁছেছিল শেষ চারে। এমন একটি দলকে নিয়ে এ ধরণের মন্তব্য লোকে কিভাবে করে সেটাই ভেবে পান না স্যামি, “আপনি কিভাবে বলেন যে একজন মানুষের মাথায় কিছু নেই? মগজ তো পশুদেরও পর্যন্ত থাকে। আমরা তো আর জড়বস্তু নই। ব্যাক্তিগতভাবে বলবো, এ ধরণের মন্তব্য আমাকে খুবই কষ্ট দেয়। শ্রদ্ধাভাজন একজন যার সাথে আমার সম্পর্কও ভালো, এমন কেউ যখন এই সেদিন বিশ্বকাপ জিতে আসা আমার দলকে ব্রেইনলেস বলেন, তখন সেটা আসলে কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।”
তবে লোকে যাই বলুক, স্যামি বলছেন তাঁরা তাঁদের মতোই থাকতে চান, “এই প্যাশন, আবেগ, রাগক্ষোভ- যেসব নিয়ে লোকে আমাদের কথা শোনায়, এগুলো আমাদের মধ্যে সবসময়ই ছিল। এসব পুঁজি করেই আমরা মাঠে নামি, রোমাঞ্চকর ক্রিকেট খেলি।”
বোর্ডের সাথে খেলোয়াড়দের দ্বন্দ্বে ক্যারিবিয় ক্রিকেটের তথৈবচ অবস্থা দীর্ঘদিনের। এবারের বিশ্বকাপের দল গঠনেও সেটার প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ প্রভাব ছিলই। তবে যে কোনো কঠিন পরিস্থিতি থেকে প্রেরণা খুঁজে নেয়াটাকেই নিজেদের শক্তি বলে মনে করেন স্যামি, “এই টুর্নামেন্টের আগে অনেক কিছুই ঘটেছে। তবে আমি মনে করি কারণ ছাড়া কিছু ঘটে না। টুর্নামেন্টের আগের বিশৃঙ্খলা আমাদেরকে দল হিসেবে আরও ঐক্যবদ্ধ করেছে। মাঝে মাঝে মনে হয় সবাই যেন আমাদের বিপক্ষে। এই ফরম্যাটের ক্রিকেটে আমরা ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলে আসছি। তারপরও কোনো আসরেই কেউ আমাদেরকে শিরোপার দাবীদার বলে মনে করে না। এই নেতিবাচক ধারণা থেকেও আমরা প্রেরণা খুঁজে নেই। আমাদের অনেকেরই বয়স হয়ে যাচ্ছে, দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অনেকের জন্য হয়তো এটা শেষ বিশ্বকাপ। এসব ভেবেও আমরা আরও সংঘবদ্ধ হই। আমরা আমাদের মতো করে ছোট একটা বৃত্ত বানিয়ে নিয়েছি।”
সব নেতিবাচকের মধ্যে খুঁজে পাওয়া এমন ইতিবাচক প্রেরণাগুলো পুঁজি করেই আরও একটি বিশ্বকাপ ঘরে তুলতে চায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ, “শিরোপাটা কেবল আর এক ধাপ দূরত্বে, সেটা আমরা জয় করে নিতে পারবো বলেই বিশ্বাস রাখি।”