• আইসিসি টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০১৬
  • " />

     

    ২২ গজের সেলুলয়েড : ক্যালিপসোয় 'চ্যাম্পিয়ান, চ্যাম্পিয়ান' সুর!

    ২২ গজের সেলুলয়েড : ক্যালিপসোয় 'চ্যাম্পিয়ান, চ্যাম্পিয়ান' সুর!    

    শুরুতেই হতাশা

    প্রথম বলে পায়ে লাগলো, আবেদনে সাড়া দিলেন না কুমার ধর্মসেনা। পরের বলটা সোজাই ছিল, একটু নীচু। সোজা খেলতে গিয়েই মিস করলেন রয়, উপড়ে গেল লেগস্ট্যাম্প, শূন্য রানেই প্রথম উইকেট নেই ইংল্যান্ডের! ২০০৯ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে তিলকারত্নে দিলশান, ২০১২ সালে জনসন চার্লস প্রথম ওভারেই আউট হয়েছিলেন, তবে দুজনই আউট হয়েছিলেন পঞ্চম বলে। রয়ের পর হেলস আউট হয়েছেন ১ রান করে, দুই ওপেনার মিলে ইংল্যান্ডের জন্য সর্বনিম্ন রান এটিই। সব মিলিয়ে প্রথম ছয় ওভারে এলো ৩৩ রান, অথচ টুর্নামেন্টের আগের ম্যাচগুলোতে পাওয়ারপ্লেতে ৯.১২ করে রান তুলেছিলেন ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা। তখন কে জানতো, ইংলিশদের মতো একই হতাশায় পুড়বে ক্যারিবীয়রাও!

     

    তবুও বেশী

    শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ড করলো ১৫৫ রান। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে প্রথম ইনিংসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোর। প্রথম আসরে পাকিস্তানের সঙ্গে ১৫৭ রান করে জিতেছিল ভারত, আর কোনোবারই দেড়শর কোঠা ছুঁতে পারেনি কোনো দল!

     

    রুউউউউউউউট!

    দ্বিতীয় বলেই উইকেট যাওয়ার পর নেমেছিলেন। খেলেছেন ৩৬ বলে ৫৪ রানের এক গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস, গড়েছেন বাটলারের সঙ্গে ৬১ রানের জুটি। ব্যাট হাতে টুর্নামেন্টের অসাধারণ ফর্মটা টেনে এনেছেন ফাইনালেও। সেই জো রুটকেই দ্বিতীয় ওভারে বোলিংয়ে আনলেন মরগান, অধিনায়কের ‘ফাটকা’র কী জবাবটাই না দিলেন তিনি! প্রথম বলেই ক্যাচ বানালেন চার্লসকে, দ্বিতীয় বলে ৫০তম টি-টোয়েন্টি খেলতে নামা গেইল মারলেন চার। পরের বলে তুলে মারতে গেলেন, গেইলের শটটা গেল স্টোকসের হাতেই! এর আগে ১৯ ম্যাচে ৬টি উইকেট ছিল রুটের, এবার এক ওভারেই পেলেন দুইটি! ফাইনালে নিজের চিত্রনাট্যটা যেন নিজেই লিখতে চেয়েছিলেন জো রুট, পেরেছেন কই! 

     

    শুরুতেই ‘বেশি’ হতাশা!

    ইংল্যান্ডের শুরুটা যদি হতাশাজনক হয়, ওয়েস্ট ইন্ডিজের শুরুটা তাহলে বিপর্যয়। উইলির প্রথম ওভারে এলো এক রান, পরের ওভারে ক্যারিবীয়রা হারালো দুই উইকেট। উইলি দ্বিতীয় ওভারে তুলে নিলেন আরও একটি উইকেট, ১১ রানেই ৩ উইকেট নেই! ফাইনালে দ্বিতীয় ইনিংসে এর আগে সবচেয়ে কম ৫১ রানে ৩ উইকেট হারিয়েছিল শ্রীলঙ্কা, এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গেই, ২০১২ সালে।

     

    দ্বিতীয় জীবন

    প্লাঙ্কেটের বলে এজ হলো স্যামুয়েলসের, ধরলেন বাটলার। ইংল্যান্ডের আবেদনে সাড়াও দিলেন রড টাকার। স্যামুয়েলস হাঁটা দিলেন, দুই আম্পায়ার একত্র হয়ে শুরু করলেন আলোচনা। টেলিভিশন আম্পায়ার রিপ্লে দেখে বুঝলেন, বাটলারের গ্লাভসে লাগার আগেই বল ছুঁয়েছে ইডেনের ঘাস। সিদ্ধান্ত বদলালেন টাকার, ড্রেসিংরুমের বদলে আবার উইকেটে ফিরে এলেন স্যামুয়েলস!

     

    ত্রাতা স্যামুয়েলস

    ২০১২ সালে ফাইনালের আগে ৬ ম্যাচে করেছিলেন ১৫২ রান। শূন্য রানেই ১ উইকেট যাওয়ার পর নেমে খেলেছিলেন ৫৬ বলে ৭৮ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস। এ ফাইনালের আগে ৫ ম্যাচে করেছেন ১০০ রান, ফাইনালে নামলেন যখন ১ রানেই প্রথম উইকেট নেই। এবার করলেন ৬৬ বলে ৮৫ রান। থাকলেন শেষ পর্যন্ত, ব্র্যাথওয়েটকে নিয়ে গড়লেন ইতিহাস!

     

    সুপারম্যান!

    দরকার ১৯ রান। প্রথম বলে মিডউইকেটের ওপর দিয়ে ছয়। দ্বিতীয় বলে লং-অন দিয়ে। তৃতীয় বলে লং-অফ দিয়ে ছয়, ম্যাচ টাই! ৩ বলে ১ রান, বেন স্টোকস আর শট ইংলিশ সমর্থকদের কোনো প্রার্থনাতেই হলো না কিছু, সুপারম্যান বনে যাওয়া কার্লোস ব্র্যাথওয়েট আবার মারলেন ছয়! ইডেনের রাতের আকাশে হারিয়ে গেল বল, হারিয়ে গেলেন তো ক্যারিবীয়রাও! বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাসে, স্টোকসদের কান্না পড়ে রইলো সেখানেই!

     

    ইতিহাস! 

    প্রথম দল হিসেবে ওয়ানডেতে দুইবার বিশ্ব-চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টি-টোয়েন্টিতে এর আগের পাঁচ আসর দেখেছিল পাঁচ চ্যাম্পিয়ন। দুই সাবেক চ্যাম্পিয়নের লড়াইয়ে ইতিহাস গড়লো ওয়েস্ট ইন্ডিজ, যেদিন ক্যারিবীয়রা মেয়েরা প্রথমবার টি-টোয়েন্টির বিশ্বসেরা হলো, সেদিনই ছেলেরা জিতলো দ্বিতীয় বিশ্বকাপ, প্রথমবারের মতো!