• অস্ট্রেলিয়ান ওপেন
  • " />

     

    যেভাবে নাদালের কাছে 'একুশ' এলো নেমে

    যেভাবে নাদালের কাছে 'একুশ' এলো নেমে    

    ০-২ সেট ডাউন আর তৃতীয় সেটে ২-৩ গেমে থাকা অবস্থায় ০-৪০ পয়েন্টে পিছিয়ে যিনি আছেন, তার বয়স যদি হয় ৩৫ আর যদি জানেন শেষ ৬ মাস তিনি খেলেনইনি ইনজুরিতে পড়ে, তাহলে তাঁর পক্ষে বাজি ধরার লোক খুব বেশি নাও পেতে পারেন। কিন্তু আবার যদি জানেন, সেই লোকটার নাম রাফায়েল নাদাল, 'প্রত্যাবর্তন' আর 'সাহস' যাঁর নামের প্রতিশব্দের মত হয়ে গিয়েছে, তাহলে কিছুটা আশায় বুক বাঁধতেও পারেন আপনি তখনও!

    এরপর সকল প্রতিকূলতা পাড়ি দিয়ে 'প্রায়' অসাধ্য সাধন করলেন নাদাল, মেলবোর্নের রড লেভার এরেনাতে গড়লেন ইতিহাস! ক্যারিয়ারে অসংখ্য বার যা করেছেন, তা করলেন আরও একবার; পাড়ি দিলেন বন্ধুর পথ। পেলেন বহুল আরাধ্য সেই মধুর খোঁজ, হাতে তুললেন ২১তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা।

    এই ২১তম শিরোপার ত্রিমুখী ঘোড়দৌড়ে কিন্তু গত বছর ইউএস ওপেনেই জিততে পারতেন নোভাক জোকোভিচ। সেবার তাকে নিরাশ করেছিলেন এই দানিল মেদভেদেভ। এবারও তার কাছেই নাদালের অপেক্ষার প্রহরও দীর্ঘায়িত হবে বলেই মনে হচ্ছিল। প্রথম সেটে নাদাল করলেন ১৬টি আনফোর্সড এরর। মেদভেদেভের সামনে নাদালকে যেন মনে হচ্ছিল ছন্নছাড়া কোনও খেলোয়াড়, সেরাটা যিনি পেছনে ফেলে এসেছেন অনেক আগেই। দ্বিতীয় সেটে যখন নাদাল ঘুরে দাঁড়াবেন বলে মনে হচ্ছিল তখনও নাদালের আনফোর্সড এররের সুযোগ নিয়ে ব্রেক করেন মেদভেদেভ। সেট পয়েন্ট ব্রেক করে পরে সেটও জিতে নেন মেদভেদেভ।


    রাফায়েল নাদাল     ২   ৬(৫)  ৬   ৬  ৭

    দানিল মেদভেদেভ   ৬   ৬(৭)  ৪  ৪   ৫


    দ্বিতীয় সেটে মেদভেদেভের ওই মানসিক দৃঢ়তার কাছেই হার মানতেন হয়ত বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই। তবে খেলোয়াড়ের নাম যখন নাদাল, তখন তার অভিধানে তো হার মানার কোনও সমার্থক শব্দও নেই। আর রড লেভার অ্যারেনায় শুরু থেকেই ''নাদাল, নাদাল'' রব। তৃতীয় সেটে দর্শকদের আচার-ব্যবহারে যারপরনাই বিরক্ত মেদভেদেভের খেলায়ও প্রভাবটা ছিল স্পষ্ট। তৃতীয় সেটের ষষ্ঠ গেমে ০-৪০ পয়েন্টে এগিয়ে থাকা গেমেই বিদঘুটে দুটো ড্রপ শট খেলেন মেদভেদেভ; যেন দর্শকদের জবাব দিতে চাচ্ছেন নীল কোর্টে। নাদাল তখনই পেয়ে গেলেন শিকারের গন্ধ। ওই যে ঘুরে দাঁড়ালেন, এরপর খুব কম সুযোগই দিয়েছেন। ওই গেম হারার পর থেকে বেশ কয়েকবার ম্যাচ রেফারির কাছে দর্শকদের বিষয়ে মেদভেদেভকে অভিযোগও করতে দেখা যায়। তৃতীয় সেট হেরে বসার পর তো রেফারিকে মেদেভেদেভ সরাসরি বলে বসেন যে, দর্শকদের অনাকাঙ্ক্ষিত এই আক্রমণ দমাতে তিনি যথেষ্ট কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।

    মেদভেদেভের বিরক্তিকে নিজের শক্তিতে পরিণত করে নাদাল যতই পয়েন্ট জিততে থাকলেন, গ্যালারি যেন হয়ে উঠলো আরও সরব। ততক্ষণে মেদভেদেভের চোখেমুখে ফুটে উঠেছে ক্লান্তি। অথচ যত গেম গড়াল, ৩৫ বছর বয়সী “তরুণ” নাদাল যেন হয়ে উঠলেন আরও প্রাণবন্ত। প্রতিটা গেম জয় যেন তাকে যোগাচ্ছিল সঞ্জীবনী শক্তি। টানা দুই সেট নাদাল তাই জিতলেন ৬-৪, ৬-৪ ব্যবধানে।

    শেষ সেটে এসে কিছুটা অবশ্য নড়েচড়ে বসেন মেদভেদেভ। বিরক্তিকে একপাশে ঠেলে দিয়ে প্রথম সেটের মেদভেদেভ যেন ফিরে এলেন। তবে ততক্ষণে বড্ড দেরি হয়ে গিয়েছে। প্রায় সাড়ে ৫ ঘণ্টা গড়ানো ম্যাচের ক্লান্তি তাকে পেয়ে বসলেও এসব ম্যারাথনে অভ্যস্ত নাদাল তখনও চাঙ্গা।  পুরো ক্যারিয়ারজুড়েই যে মানসিক, শারীরিক দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছেন তার দেখা মিলল শেষ সেটেও। মেদভেদেভকে হতাশায় ডুবিয়ে নাদাল ঠিকই শেষ সেট জিতে নিলেন ৭-৫ ব্যবধানে। গ্র্যান্ড স্ল্যামহীন ২০২১ সাল, কোভিড সংক্রমণ, ছয় মাস কোর্টের বাইরে থাকা-সবকিছুকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নাদাল আরও একবার প্রমাণ করলেন তিনি অবিনশ্বর। নিজেকে সর্বোচ্চ শিখরে নিয়ে গিয়ে আরও একবার নাদাল বার্তা দিলেন, টেনিস কোর্টে তিনি “ইনেভিটেবল”!