শ্রীলঙ্কা-অস্ট্রেলিয়া: কেমন হবে আপনার ফ্যান্টাসি একাদশ
২০১৬ সালের পর এই প্রথম টি-টোয়েন্টি খেলতে শ্রীলঙ্কাতে গিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা ঘরের মাটিতে বিশ্বকাপের পরেই ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ হারিয়েছিল শ্রীলঙ্কাকে। গত ১২ ম্যাচে ১০টিতেই হেরে বসা লঙ্কানরা অনুপ্রেরণা পেতে পারেন ওই সিরিজে এই অজিদের বিপক্ষে পাওয়া জয় থেকেই। এই সিরিজকে সামনে রেখে কেমন করে সাজাবেন আপনার ফ্যান্টাসি একাদশ? সেটার জন্য আপনার সহায়িকা হতে পারে এই প্রতিবেদন।
ডেভিড ওয়ার্নার
ওপেনার হিসেবে আপনার একাদশে অনায়াসে জায়গা করে নিতে পারে ডেভিড ওয়ার্নার. আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এই অভিজ্ঞ ওপেনারের রেকর্ড দুর্দান্ত। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৫৬.৮৮ গড়ে ওয়ার্নার করেছেন ৫১২ রান; সাথে আছে ৫টি ফিফটি ও ১টি সেঞ্চুরি। অবশ্য শ্রীলঙ্কার মাটিতে ৪ ইনিংসে সেই গড় নেমে আসে ৩০-এর ঘরে। তবে বিশ্বকাপের পর আইপিএলের দুর্দান্ত ফর্ম বলছে শ্রীলঙ্কার পিচে অতীতের রেকর্ডটা এবার ভাল করতে পারবেন এই বাঁহাতি ওপেনার।
পাথুম নিসাঙ্কা
অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক ফিঞ্চের পড়তি ফর্মের জন্য আরেকজন ওপেনার হিসেবে আপনার দলে জায়গা পেতে পারেন শ্রীলঙ্কার পাথুম নিসাঙ্কা। ঘরের মাঠে এর আগে কোনও আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ব্যাট করার সুযোগ পাননি। তবে বিশ্বকাপে দেখিয়েছেন নিজের সক্ষমতা, অস্ট্রেলিয়াতে গিয়েও তাদের বিপক্ষে পেয়েছিলেন ফিফটি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেই সিরিজে ৫ ম্যাচেই ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে ৩৬.৮ গড়ে করেছিলেন ১৮৪ রান। অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের সাম্লানোর ক্ষমতা যে তার আছে সেটা তিনি আগেই প্রমাণ করেছেন।
মিচেল মার্শ
তিনে এই মুহূর্তে বিশ্বেরই সবচেয়ে দুর্ধর্ষ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ব্যাটার বোধহয় মিচেল মার্শ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হয়ত কোনও টি-টোয়েন্টিতে এবারই প্রথম ব্যাট হাতে নামবেন। তবে ২০২১ সাল থেকে প্রায়শই তিনে নেমে ৩৬.৮৮ গড়ে তিনি করেছেন ৬২৭ রান, সাথে আছে ৮টি উইকেট। বিশ্বকাপ ফাইনালের সেরা খেলোয়াড় যে এই সফরেও রান পাবেন সেই ভরসা করাই যায়।
গ্লেন ম্যাক্সওয়েল
চোখ বুঝে আপনি নিতে পারেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে। এই অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার যদি বল নাও করেন, এই সিরিজের জন্য শুধু ব্যাটিং দিয়েই তিনি আপনার দলে জায়গা পাবেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১২ ম্যাচে ৬০.৫৭ গড়ে তিনি করেছেন ৪৫৭ রান। শ্রীলঙ্কাতে তিনি ব্যাট করেছেন ২ ইনিংসে যাতে তার গড় হয়ে দাঁড়ায় ২১১! ম্যাক্সওয়েলের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ইনিংস এসেছিল এই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাল্লেকেলেতে। ওপেন করতে ১৪৫* রানের ইনিংস খেলে অস্ট্রেলিয়াকে এনে দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। পরের ম্যাচেও খেলেছিলেন ৬৬ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস।
চারিথ আসালাঙ্কা
বাংলাদেশের বিপক্ষে দুর্দান্ত এক ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলা আসালাঙ্কার কথা নিশ্চয় মনে আছে।২০২১ সালেই আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করে ১২৪.৪ স্ট্রাইক রেটে আসালাঙ্কা করেছেন ৪১৮ রান। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অবশ্য এই বাঁহাতি ব্যাটারের রেকর্ড খুব একটা সুখকর নয়। বিশ্বকাপের ম্যাচটার পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়াতে খেলেছিলেন ৫-ম্যাচ সিরিজের সবকটাতেই। ১৬.৫ গড়ে অজিদের বিপক্ষে তার ৯৯ রানের রেকর্ড আশাব্যাঞ্জক না হলেও ঘরের মাঠে অজিদের বিপক্ষে রেকর্ডটা হয়ত পরিবর্তন করতে মুখিয়ে থাকবেন তিনি।
মার্কাস স্টইনিস
অলরাউন্ডারের স্থানটা যাচ্ছে ক্রিকেটের হাল্কের কাছেই। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে সেই দারুণ ইনিংসের কথা অবশ্যই আপনার স্মৃতিতে আছে। বল হাতে ইনিংসের শেষার্ধে যে তিনি কার্যকর সেটাও তিনি দেখিয়েছেন সদ্য সমাপ্ত আইপিএলে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৬ ম্যাচে ৩৪ গড়ে ১০২ রান করার পাশাপাশি তার নামের পাশে আছে ১ উইকেট। তবে লঙ্কানদের মাটিতে এবারই প্রথম খেলতে নামা স্টইনিস মুখিয়েই থাকবেন।
ম্যাথিউ ওয়েড
পাকিস্তানের বিপক্ষে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে অবিশ্বাস্য সেই জয়ের কারিগরের আইপিএলটা খুব একটা ভাল যায়নি। তবে শিরোপা জেতার আনন্দ নিয়ে ফেরা ওয়েড অনুপ্রেরণা পেতে পারেন তা থেকেই। এই বছরের শেষে অস্ট্রেলিয়াতে অনুষ্ঠিতব্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলেই অবসরের ইঙ্গিত দেওয়া ওয়েড যে অস্ট্রেলিয়ার হলুদ জার্সি গায়ে নিজেকে নিংড়ে দেবেন সেটা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিনি আউট হয়েছেন মোটে একবার। লঙ্কান্দের বিপক্ষে তার ১৬৬.৬৬ স্ট্রাইক রেটই বলে দেয় ফিনিশারের ভুমিকায় তিনি খেলবেন হাত খুলেই।
ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা
আপনার দলের প্রথম স্পিনার হিসেবে হাসারাঙ্গাকে নিতে খুব একটা ভাবতে হবে না। আইপিএলে ২৬ উইকেট পেয়ে আসা এই লেগ স্পিনার ছিলেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেরও সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তার ইকোনমি রেটটা শঙ্কাজনক হলেও ৫ ম্যাচে পেয়েছেন ৭ উইকেট। শ্রীলঙ্কার মাটিতে মাত্র ৬.৫ ইকোনমি রেটে ১১ ম্যাচে ১৫ উইকেট পাওয়া হাসারাঙ্গাই হবে অজিদের মাথাব্যাথার সবচেয়ে বড় কারণ। সাথে ব্যাট হাতেও যে তিনি পারদর্শী সেটার প্রমাণ তিনি দিয়েছিলেন বিশ্বকাপে।
অ্যাশটন অ্যাগার
দলে নিয়মিত না হলেও জায়গা পেলেই নিজেকে প্রমাণ করেন অ্যাগার। টি-টোয়েন্টিতে অজিদের হয়ে প্রথম ৫-উইকেট পাওয়া স্পিনার তিনি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এর আগে ৬টি ম্যাচই খেলেছেন দেশের মাটিতে। তাতে তিনি পেয়েছেন ৬ উইকেট, তবে সেখানে তার ইকোনমি রেট ৪.৬২! শ্রীলঙ্কার কন্ডিশনে যে এই বাঁহাতি অফ স্পিনার আরও দুর্ধর্ষ হয়ে উঠবেন সেই আশা আপনি করতেই পারেন।
জশ হেজলউড
দুই দলের মাঝে সেরা পেসার হয়ত তিনিই। গত দুই বছরেই ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ টি-টোয়েন্টি খেলা হেজলউড এবারের আইপিএলেও রেখেছেন নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ। আর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তার রেকর্ড তো দারুণ। লঙ্কানদের বিপক্ষে ৪ ম্যাচে তিনি পেয়েছেন ৮ উইকেট; সেটাও মোটে ৫.৬৮ ইকোনমি রেটে।
মাহিশ থিকশানা
অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটারদের ব্যতিব্যস্ত রাখতে পারেন এই রহস্য স্পিনার। চেন্নাইয়ের হয়ে এই আইপিএল নজর কাড়া থিকশানা নজর কেড়েছিলেন বিশ্বকাপেও। ১৫ ম্যাচে ১৪ উইকেট পেলেও তার ইকোনমি ৬.৪১। অস্ট্রেলিয়াতে গিয়েও ৬.৭৮ ইকোনমিতে ৫ ম্যাচে পেয়েছিলেন ৫ উইকেট। নিজেদের মাটিতে উইকেটের মাঝে তাই হয়ত থাকবেন এই ডানহাতি স্পিনার।