• এশিয়া কাপ
  • " />

     

    এশিয়া কাপ ২০২২: কার শক্তি কেমন, দুর্বলতা কোথায়?

    এশিয়া কাপ ২০২২: কার শক্তি কেমন, দুর্বলতা কোথায়?    

    আফগানিস্তান-শ্রীলংকা ম্যাচের মধ্য দিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে এশিয়ান ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই এশিয়া কাপ। এশিয়ার শীর্ষ মুকুট দখলের  লড়াইয়ে নামছে ছয় দল; ভারত, পাকিস্তান, বাংলাএশ, আফগানিস্তান, শ্রীলংকা ও হংকং। দ্বিতীয়বারের মতো টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এশিয়া কাপ। ২০১৬ এশিয়া কাপ হয়েছিল টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। 

    এশিয়া কাপের গত দুই আসরের রানার আপ বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে ১২ আসরে খেললেও একবারও জেতা হয়নি এশিয়ান ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্বের আসল লড়াই। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সাফল্য তিনবার রানার আপ হওয়া। র‍্যাংকিংয়ের নবম অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের এই বছরের টি-টোয়েন্টি পারফর্ম্যান্স একেবারেই আশা জাগানিয়া নয়। আট ম্যাচের মাত্র দুটি জিতেছে বাংলাদেশ। 

     

    এবার প্রশ্ন হতে পারে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের শক্তির জায়গা কোথায়? পাওয়ার প্লে ব্যাটিং, পাওয়ার হিটিং নাকি ডেথ ওভার বোলিং? কারণ এতদিনেও টি-টোয়েন্টির মূল এই ভিতটা শক্ত হয়নি বাংলাদেশের। তবে এক্স ফ্যাক্টর হতে পারেন ৩ বছর পর জাতীয় দলে ফেরা সাব্বির রহমান। এশিয়া কাপের ২০১৬ সালের আসরে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন তিনি। ডিপিএলের গত আসরে বড় ইনিংস আছে কেবল দুটি। ৯০ ও ১২৫ রানের ইনিংস খেলেছিলেন লেজেন্ডস অফ রুপগঞ্জের হয়ে। 

    এর বাইরে কোথায় স্বস্ত্বি খুঁজতে পারে বাংলাদেশ? মোস্তাফিজুর রহমানের ডেথ বোলিং? এ বছর ডেথ ওভারে বল করে বাঁহাতি এই পেসার নিয়েছেন ২ উইকেট। তবে রান দিয়েছেন ওভারপ্রতি প্রায় ১০। 

    টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের অন্যতম সমস্যা পাওয়ার হিটিং। যার প্রতিফলনটা দেখা যায় পাওয়ারপ্লের ব্যাটিংয়ে। প্রথম ৬ ওভারের ব্যাটিং গড় এখনো ২০-এর নিচে বাংলাদেশের। ডেথ ওভারের ব্যাটিংয়ে আরও দৈন্যদশা। শেষ চার ওভারের ব্যাটিং গড় মাত্র ১৩। ডট বল খেলার সাথে বাংলাদেশ উইকেটও হারিয়েছে সমানতালে। 

    আসরের সফলতম দল ভারত। তাদের প্রথম ম্যাচ চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিপক্ষে। সাতবারের চ্যাম্পিয়নদের গত আসরগুলোতে দাপট ছিল চোখে পড়ার মতো। চলতি বছরেও টি-টোয়েন্টিতে ভারত ছিল দারুণ ধারাবাহিক। মোট ২১ ম্যাচের ১৬টিতে জিতেছেন রোহিত শর্মারা। ভারতের অন্যতম শক্তির জায়গা তাদের টপ অর্ডার।  গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর থেকে শীষ ২০ রান সংগ্রাহকের তালিকায় ছিলেন এশিয়া কাপের স্কোয়াডে থাকা তিন ব্যাটার। 

    পাওয়ারপ্লেতে দ্রুতগতিতে রান তুলতে পারার সক্ষমতা তাদের এগিয়ে রাখবে বাকি সবার চেয়ে। যে বদলটা এসেছে গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর থেকে। পাওয়ারপ্লেতে ওভারপ্রতি প্রায় ৯ রান করে তুলেছে ভারত। এর সাথে হার্দিক পান্ডিয়া-রিশাভ পান্ট-দিনেশ কার্তিকের ডেথ ওভারের কার্যকরী ব্যাটিং ভারতকে যোগাতে পারে স্বস্ত্বি। তবে চিন্তার কারণ হতে পারে ব্যাটিং অর্ডারের ধরন। দলটির সম্ভাব্য সেরা একাদশের শীর্ষ চার ব্যাটারই ডানহাতি। যাদের ভোগাতে পারে প্রতিপক্ষের বাঁহাতি স্পিনাররা। ২০২০ সালের পর থেকে বাঁহাতিদের বলে সবচেয়ে বেশি আউট হয়েছেন সূর্যকুমার। কোহলির রেকর্ডও আশাব্যঞ্জক নয়। 

    দূর্বলতার তালিকায় আসতে পারে কোহলির সাম্প্রতিক ফর্মও। সব ফরম্যাটেই রানের জন্য হাপিত্যোশ করছেন ডানহাতি এই ব্যাটার। এ বছর টি-টোয়েন্টি খেলেছেন মাত্র চারটি। গেল আইপিএলেও সুবিধা করতে পারেননি। পেস আক্রমনের ফ্রন্টম্যান জাসপ্রিত বুমরাহ নেই এশিয়া কাপে। ডেথ ওভার-পাওয়ারপ্লে বোলিংয়ের দায়িত্ব তাই বর্তাবে আভেশ খান-ভুবনেশ্বরদের কাঁধে। ডেথ ওভারে ভুবনেশ্বর পরিক্ষিত হলেও অনভিজ্ঞ আভেশকে নিয়ে শঙ্কা থেকেই যায়। যদিও ডেথ ওভারের চেয়ে পাওয়ারপ্লেতেই তার ওপর ভরসা করতে পারেন অধিনায়ক রোহিত। এর ওপর সর্বশেষ ২০ ম্যাচে ভারতের চেয়ে বেশি ডট বল (৯২৭) করতে পারেনি আর কোনো দলই। 

    পাকিস্তান, এশিয়া কাপের দুইবারের চ্যাম্পিয়ন। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর থেকে টি-টোয়েন্টিতে ধারাবাহিক এক দল র‍্যাংকিংয়েও আছে উপরের দিকেই; ৩। এশিয়া কাপে তাদের সাম্প্রতিক সর্বোচ্চ সাফল্য ২০১৪ সালের আসরে রানার আপ হওয়া। গত দুই আসরেও তেমন সুবিধা করতে পারেনি। তবে এবারের স্কোয়াড নিয়ে আশাবাদী পাকিস্তান। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সর্বশেষ আসরে দাপুটে ছিল পাকিস্তান। ব্যাট হাতে নেতৃত্বে ছিলেন দুই ওপেনার বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান। বিশ্বকাপের পর থেকে দুজনের জুটি থেকে এসেছে ৩০০ রান। 

    পরিসংখ্যান বলছে তাদের শুরুটা দারুণ। পাওয়ারপ্লের ব্যাটিং গড়ও সেই সাক্ষ্যই দিচ্ছে। তবে তাদের ব্যাটিংয়ের ধরন নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা আছে বিস্তর। তাদের স্ট্রাইকরেট আর উইকেট খোয়ানোর মাশুল পাকিস্তানকে দিতে হয়েছে বড়  ম্যাচে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেমিফাইনাল ম্যাচই এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ । নেপথ্যে দুজনের ১৩০ এর কম স্ট্রাইকরেট। তবে পাকিস্তানের মিডল অর্ডার বেশ শক্তিশালী। ফখর জামান, আসিফ আলী, শাদাব খানদের স্ট্রাইকরেট ১৩০-এর বেশি। 

    পাকিস্তানকে ভোগাতে পারে হাঁটুর চোটে ছিটকে যাওয়া শাহীন শাহ আফ্রিদির না থাকা।  বাঁহাতি এই পেসার ছিলেন পাকিস্তানের বোলিং আক্রমনের নেতৃত্বে। তিনি না থাকায় বাড়ি দায়িত্ব থাকছে  শাহনেওয়াজ দাহানি, নাসিম শাহ, হারিস রউফদের কাঁধে। 

    রাজনৈতিক কারণে এক প্রকার বিধ্বস্ত এশিয়ার অন্যতম সফল দল  শ্রীলংকা ক্রিকেটকে আঁকড়ে ধরে সেসব ভুলে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে শ্রীলংকা। স্কোয়াডে কেবল স্বীকৃত দুই ওপেনার, ব্যাটিংয়ে ভরসা মিডল অর্ডারের চান্দিমাল-সিলভারাই। তবে বেশি বৈচিত্র্যপূর্ণ স্কোয়াড গড়েছে লংকানরা। এশিয়া কাপের আগের আসরগুলোতেও তাদের দাপট ছিল স্পষ্ট। অবশ্য এ বছরের টি-টোয়েন্ট পারফর্ম্যান্সে পিছিয়ে ছিল শ্রীলংকা। শ্রীলংকা আশায় বুক বাঁধতে পারে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে নিয়ে।  দারুণ লেগস্পিনে আটকে ধরতে পারেন রানের চাকা, উইকেটও পান নিয়মিত। গত এক বছরেও ছিলেন ছন্দে। 

     

    পেস আক্রমণটাও ঘুরিয়ে ফিরেয়ে দেখার সুযোগ ছিল দাসুন শানাকার। কিন্তু দুশমন্ত চামিরা ছিটকে পড়ায় লংকার পেস আক্রমণ দূর্বল হয়ে পড়তে পারে কিছুটা। আরও ভোগাতে পারে শুরুর ৬ ওভারের ব্যাটিং। কারণ স্কোয়াডে কেবল দুই ওপেনার। পাওয়ারপ্লেতে রান তোলার হার প্রায় ৭। 

    এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের আবির্ভাব ২০১৪ সালে। সর্বশেষ খেলেছে ২০১৮ সালের আসরে। বড় মঞ্চে সাফল্য ধরা না দিলেও টি-টোয়েন্টি ভালোই রপ্ত করেছেন দলটি। এ বছর খেলা বেশিরভাগ ম্যাচই জিতেছে আফগানরা। এবারের স্কোয়াডও গড়েছে নিজেদের শক্তির জায়গাকে প্রাধান্য দিয়েই। পাওয়ার হিটিং আর বৈচিত্র্যময় স্পিন আক্রমণ তাদের মূল অস্ত্র। হযরতউল্লাহ যাযাইয়ের মতো বিস্ফোরক ওপেনারের সাথে আছেন নবি-রশিদ-নাজিবউল্লাহদর মতো ফিনিশার। আলাদা নজরে থাকবেন রশিদ খান। ২০২১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত নিয়েছেন ২৩ উইকেট। বোলিং গড় আছে ১৯-এর নিচে। তার সাথে বৈচিত্র্য যোগ করবেন মুজিব উর রহমান। 

     

    বাছাইপর্ব পেরিয়ে এসেছে হংকং। র‍্যাংকিংয়ের ২৩ তম অবস্থানে থাকা দলটিকে সব মিলিয়ে এশিয়া কাপে তাদের চতুর্থবার দেখা যাবে।  এশিয়া কাপে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো অঘটনের জন্ম দিতে পারেনি হংকং। যদিও ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে হারিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। এবারও তেমন কিছু তারা করতে পারবে কি?