• ইউরো
  • " />

     

    ইউরোর ব্যবচ্ছেদ- গ্রুপ 'সি'

    ইউরোর ব্যবচ্ছেদ- গ্রুপ 'সি'    

    ইউরো শুরু হতে বাকী আর মাত্র কয়েকদিন! প্রথমবারের মতো ২৪ টি দেশ নিয়ে শুরু হতে যাওয়া  ইউরোর প্রতিটি গ্রুপের দলগুলো নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী  লেখা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে  'প্যাভিলিয়নে '। আজ থাকছে গ্রুপ 'সি'-এর হালচাল...

     

    জার্মানি

     

    চব্বিশ বছরের খরা ঘুচিয়ে বার্লিনে বিশ্বকাপ এসেছে দু’ বছর হতে চললো। ইউরোপ-সেরার শিরোপা হাতে ম্যাথিয়াস স্যামার, অলিভার বিয়েরহফদের ছবিটায়ও তো জমে গেছে দু’ দশকের ধুলো। আরেকটা ইউরো তাই জার্মানদের বড্ড প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা সে লক্ষ্যে মাঠে নামবে অন্যতম ‘ফেবারিট’ তকমা গায়ে লাগিয়েই। কিন্তু চৌদ্দ’র মারাকানায় নব্বইয়ের রোম ফিরিয়ে আনা সেই জার্মানি বছর দুয়েকের পরিক্রমায় কিছুটা হলেও যেন দিকভ্রান্ত। দীর্ঘদিনের নাবিক ফিলিপ লাম অবসরে গেছেন, বিশ্বকাপ আর ইউরোর সেরা একাদশে জায়গাটা যিনি একরকম পাকা করে ফেলেছিলেন। রক্ষণের আরেক মোক্ষম অস্ত্র পার মার্টেসেকারও বুটজোড়া তুলে রেখেছেন। আক্রমণভাগে মিরোস্লাভ ক্লোসাও এখন অতীত। শোয়েন্সটাইগার এখনও বিদায় না বললেও এ যাত্রায় তাঁকে ক’ মিনিট মাঠে দেখা যাবে বলা কঠিন। জার্মান যন্ত্রের ‘ব্যাক আপ’ তাই যতোই শক্তিশালী হোক, অভিজ্ঞতার অভাব কিছুটা হলেও ভোগাবে জোয়াকিম লো’র ছেলেদের। অল্পবিস্তর প্রমাণ তো মিলেছেও গত দু’ বছরে। যে আর্জেন্টিনাকে কাঁদিয়ে বিশ্বকাপ জেতা, বাড়ি ফিরেই মুলাররা হেরেছেন সে দলের কাছে। পরাজয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র আর ফ্রান্সের বিপক্ষেও। ইউরোর বাছাইপর্বেও ছিল পোল্যান্ড আর আইরিশ রিপাবলিকের কাছে অপ্রত্যাশিত হার।

     

     

    গত বিশ্বকাপ থেকে ইনজুরির কারণে ছিটকে পড়েছিলেন, এবার ইউরোতেও একই কারণে দর্শক বনে যাওয়া মার্কো রিউস তাঁর ভাগ্যকে দোষারোপ করতেই পারেন। তবে তাতে কপাল খুলছে গত বিশ্বকাপ ফাইনালের নায়ক মারিও গোটশের। বায়ার্নের হয়ে মৌসুমটা খুব ভালো না গেলেও ওজিল, মুলারদের আক্রমণভাগে তাঁর জায়গা এখন একরকম পাকাই। সেন্টার ফরোয়ার্ড পজিশনে দীর্ঘদিন পর দলে ফেরা মারিও গোমেজ যতো দ্রুত নিজেকে ফিরে পাবেন ততোই মঙ্গল জার্মানির জন্য। ইনজুরির হানা আছে মিডফিল্ডেও। আর লাম-মার্টেসেকারবিহীন রক্ষণভাগ খোঁড়াচ্ছে বিশ্বকাপের পর থেকেই। এবারের ইউরোতেও সেটাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে জার্মানির জন্য।

     

    মাঠের এসব সমস্যার সাথে গত বছরের প্যারিস হামলার দুঃসহ স্মৃতি বাড়তি দুশ্চিন্তার কারণ না হোক- ডয়েচে সমর্থকরা তা খুব করেই চাইবেন।


     

    রোড টু ইউরো

     

    পোল্যান্ডের সাথে মাত্র এক পয়েন্ট ব্যবধান ধরে রেখে গ্রুপ সেরা হয়েই মূলপর্ব নিশ্চিত করে জার্মানি। ১০ ম্যাচের ৭টি জয়, ১টি ড্র আর হারতে হয়েছে দুটো ম্যাচ। প্রথমবারের মতো পোলিশদের কাছে হারের স্বাদ নেয়ার পাশাপাশি জার্মানি হারাতে পারে নি আইরিশ রিপাবলিককেও। প্রতিপক্ষের মাঠে পরাজয়ের পর নিজেদের মাটিতে সন্তুষ্ট থাকতে হয় ড্র নিয়েই।

     

    টাচলাইনের বস

     

    ২০০৬ বিশ্বকাপের পর যখন দায়িত্ব নিলেন, তাঁর সামর্থ্যের দৌড় নিয়ে ভ্রু কুঁচকেছিলেন অনেকেই। জবাব দিতে অবশ্য খুব বেশী সময় নেন নি। ২০০৮ ইউরোর পর ২০১০ সালের বিশ্বকাপেও তারুণ্যনির্ভর দল গড়ে দারুণ লড়াই করেন। এরপর তো ‘একীভূত’ জার্মানিকে এনে দিলেন প্রথম বিশ্বকাপের স্বাদ। নিন্দুকের মুখ অবশ্য তাতেও পুরোপুরি বন্ধ হয় নি। বলা হয়, পাইপলাইনে অমন ভুরি ভুরি প্রতিভা থাকলে যে কোনো কোচই মাত করে দেবেন। তবে প্রতিভার প্রাচুর্য থাকলেই যে কেবল হয় না, সেসবের যথাযথ ব্যবহারটাও জানতে হয়, জোয়াকিম লো তা দেখিয়েছেন চোখে আঙ্গুল দিয়েই। নিখুঁত পরিকল্পনার সাথে টেকনিক্যাল ব্যাপারগুলো তাঁর জন্য ঈশ্বরপ্রদত্ত বলেই মনে করেন অনেকে। একটা ইউরো শিরোপা তাঁর গ্রহণযোগ্যতার মাত্রা যে আরও বাড়িয়ে দেবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

     

    তারকা খেলোয়াড়

     

    ২০১০ বিশ্বকাপে সোনার জুতো জেতার পর গত বিশ্বকাপে জিতেছেন রূপোরটা। ইউরোর বাছাইপর্বেও করেছেন ন’ গোল। যখন যেখানে প্রয়োজন, থমাস মুলার দেবদূতের মতো হাজির সেখানেই। গত বিশ্বকাপে চষে বেরিয়েছেন মাঠের সবচেয়ে বেশী জায়গা। প্রতিপক্ষের গোলমুখে শিকারির মতো ওৎ পেতে থেকে জাল খুঁজে নেয়ায় বায়ার্ন তারকার জুড়ি মেলা ভার। অ্যাটাকিং মিডফিল্ড কিংবা ফরোয়ার্ড, দলের প্রয়োজনে উভয় পজিশনেই স্বচ্ছন্দ মুলার নিজেকে বর্ণনা করেন ‘ফাঁকা জায়গা অন্বেষণকারী’ হিসেবে। ক্লোসাবিহীন আক্রমণভাগে ২৬ বছর বয়সী ফরোয়ার্ডের অপরিহার্যতা বেড়ে গেছে আরও বহু গুন। দুর্ভেদ্য রক্ষণে আচমকা চির ধরিয়ে তাঁর করা গোলগুলো হয়তো সবসময় চোখ জুড়োয় না, কিন্তু মোটা দাগে ব্যবধানটা ঠিকই গড়ে দেয়।


     

    নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড

     

    ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপের পর খেলা হয় নি আর কোনো বড় টুর্নামেন্ট। ত্রিশ বছরের অপেক্ষা ঘোচানোর জন্য এবারের ইউরোর চেয়ে ভালো আর কোনো উপলক্ষ হতে পারতো না তাঁদের জন্য। বাইছাইপর্বে ছয় দলের গ্রুপটায় ছিল না কোনো বড় নাম, সবচেয়ে সেরা গ্রিসের বর্তমান ফিফা র‍্যাঙ্কিং ৪০। সুযোগটা ভালোমতোই কাজে লাগালো ও’ নিল অ্যান্ড কো। বাছাইপর্ব শুরুর আগে গ্রুপে ছয় দলের মধ্যে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের অবস্থান ছিল পাঁচ নম্বরে। আর শেষতক কিনা তাঁরা সবার উপরে! ইউরোর ইতিহাসেই এমন ঘটনা নজিরবিহীন। তারকাবিহীন দলটা কেবল অধ্যবসায় আর চমৎকার রসায়ন পুঁজি করে প্রথমবারের মতো খেলতে যাচ্ছে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ।

     

    একাদশে খুব সুপরিচিত কোনো নাম না থাকলেও দলে ভারসাম্যটুকু লক্ষণীয় ছিল পুরো বাছাইপর্ব জুড়েই। অধিনায়ক স্টিভেন ডেভিস মধ্যমাঠ থেকে খেলা গড়বেন। প্রিমিয়ার লিগ ক্লাব ওয়েস্ট ব্রমের ত্রয়ী ক্রিস ব্রান্ট, জনি ইভানস আর গ্যারেথ ম্যাকলির সামলানোর কথা ছিল রক্ষণভাগ। ‘কথা ছিল’ কারণ হাঁটুতে মারাত্মক চোট লেফট-ব্যাক ব্রান্টকে ছিটকে দিয়েছে স্কোয়াড থেকে। পুরো একাদশে ও’ নিলের চিন্তার কারণ ওই একটাই। সেন্টার ব্যাকে জনি ইভানস নিজেকে চিনিয়েছেন ইউনাইটেডে থাকতেই। আক্রমণে কাইল লাফারটি নেতৃত্ব দেবেন সামনে থেকে। পরিস্থিতির প্রয়োজনে ৪-৩-৩ কিংবা ৩-৫-২, যে কোনো কৌশলেই ছক সাজানোর রসদ আছে কোচ ও’ নিলের।

     

    রোড টু ইউরো

     

    ১০ ম্যাচে ৬ ছয়, ৩ ড্রয়ের পাশে পরাজয় মাত্র ১টি ম্যাচে। গ্রুপ চ্যাম্পিয়নদের একমাত্র হার হাঙ্গেরির বিপক্ষে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা রোমানিয়ার সাথে তাঁদের পয়েন্টের ব্যবধান ছিল পাঁচ। এক ম্যাচ হাতে রেখেই নর্দার্ন আইরিশরা কাটে মূলপর্বের টিকিট।

     

    টাচলাইনের বস

     

     

    দলটির এ যাবত পাওয়া সাফল্যের মূল কারিগর তিনি। মাইকেল ও’ নিলের খ্যাতিটা মূলত ‘সবাইকে কাজে লাগাও’ নীতির কারণে। দর্শনে আধুনিকতা আর ট্যাক্টিকসের জ্ঞান কথায় নয়, দেখিয়েছেন কাজেই। ট্রেনিংয়ের পরিবেশটাই এমন বদলে দিয়েছেন যে, ছেলেরা মাঠেই নামে ও’ নিলের জন্য! বাকিটা নতুন এক ইতিহাসের শুরু মাত্র।

     

    তারকা খেলোয়াড়

     

    প্রিমিয়ার লিগের মাঠে তাঁর দেখা মেলে কালে-ভদ্রে, আগামী মৌসুমে হয়তো তা-ও মিলবে না। তাঁর বর্তমান ক্লাব নরভিচ সিটিই যে পড়ে গেছে রেলিগেশনের ফাঁদে! তবে এ দিয়ে কাইল লাফারটিকে বিচার করলে ভুল হবে। জাতীয় দলের সবুজ-সাদা জার্সি গায়ে উঠলেই ২৮ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড বদলে যান। বাছাইপর্বে ন’ ম্যাচ থেকে করেছেন সাত গোল। শেষ মুহূর্তের গোলে ব্যবধান গড়ে দেয়ার দক্ষতাটুকু কাজে লাগাতে পারলে মূলপর্বেও দলকে উপহার দিতে পারেন দারুণ কিছু।

     

    পোল্যান্ড

     

    ১৯৮২ বিশ্বকাপে তৃতীয় হওয়া দলটার পর এটিকেই বলা হচ্ছে পোল্যান্ডের সবচেয়ে সেরা। গত দু’ বার গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয়ার হতাশাটুকু তাই ঝেড়ে ফেলার সুবর্ণ সুযোগ এবার। বাছাইপর্বে দারুণ আক্রমণাত্মক খেলে আসা পোলিশদের গোলসংখ্যা সব দলের মধ্যেই সবচেয়ে বেশী (৩৩)। বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে তারকা বনে যাওয়া রবার্ট লেভানডভস্কির হাত ধরে সত্তর-আশির দশকের স্বর্ণযুগ ফিরে আসবে কিনা সেটা অবশ্য সময়ই বলে দেবে।

     

    লেভানডভস্কি-মিলিক যুগলের আক্রমণভাগই পোল্যান্ডের অন্যতম ভরসা। বাছাইপর্বের গোলবন্যাও তার প্রমাণ। ভোগান্তির কারণ হতে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অহেতুক গোল খেয়ে বসার প্রবণতাটুকু। বাছাইপর্বে কেবল চারটি ম্যাচে গোল হজম করা থেকে বিরত থাকা গেছে। রক্ষণের মতো মধ্যমাঠের রসায়নটাও ঠিক জমছে না অনেকদিন।

     

    গত দু’ আসরেই বাছাইপর্বে দাপট দেখিয়ে মূলপর্ব থেকে ফিরতে হয়েছে একেবারে শূন্য হাতে, একটিও ম্যাচ না জিতে। ১৯৮৬ সালের পর কোনো বড় টুর্নামেন্টের নক-আউট খেলা হয় নি। এবার তাই চ্যালেঞ্জটা গা থেকে ‘আন্ডারডগ’ তকমা মুছে ফেলারও।

     

    রোড টু ইউরো

     

    বাছাইপর্বে গ্রুপে দ্বিতীয় স্থানে থেকে মূলপর্ব নিশ্চিত করা পোল্যান্ড একমাত্র ম্যাচটি হেরেছে জার্মানির কাছে। অবশ্য প্রথমবারের মতো জার্মানদের হারানোর স্বাদটাও পাওয়া গেছে ‘হোম’ ম্যাচে। স্কটল্যান্ডের সাথে দুটো ম্যাচেই ড্র আর আয়ারল্যান্ডের সাথে একটি ম্যাচে পয়েন্ট ভাগাভাগি করতে হয়েছে শেষ মুহূর্তে গোল খেয়ে।

     

    টাচলাইনের বস

     

    খেলোয়াড় হিসেবে খুব বেশী ম্যাচে মাঠে নামার সুযোগ হয় নি। কোচিং ক্যারিয়ার শুরুর আগে বেশ কিছুদিন যুক্তরাষ্ট্রে আধা পেশাদার ফুটবল খেলার পাশাপাশি করেছেন অন্য চাকুরি। দেশে ফিরে একটি গাড়ি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সেলসম্যানের কাজটা ছেড়ে কোচিংটাকেই পেশা হিসেবে নিয়েছেন সে-ও দুই যুগের ওপর হল। দীর্ঘদিন ঘরোয়া ফুটবলে সময় দিয়ে জাতীয় দলের দায়িত্ব নেন ২০১৩ সালে। বাকিটা ‘হোয়াইট ঈগল’দের সময়ের সেরা স্কোয়াডটা গড়ে তোলার গল্প। আসল পরীক্ষাটা অবশ্য হবে মূলপর্বের লড়াইয়েই।

     

    তারকা খেলোয়াড়

     

     

    বছর দুয়েক আগে যখন ডর্টমুন্ড থেকে বায়ার্ন মিউনিখে যোগ দিলেন, অনেকেই বলছিলেন অ্যালিয়েঞ্জ অ্যারেনায় তাঁর জন্য টিকে থাকাটাই কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। চ্যালেঞ্জটা কতোটুকু সাফল্যের সাথে মোকাবেলা করতে পেরেছেন রবার্ট লেভানডভস্কি তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বায়ার্ন কিংবা ইউরোপ তো বটেই, গোটা বিশ্বেই এখন অন্যতম সেরা ফরোয়ার্ড তিনি। ইউরোর বাছাইপর্বে ১৩ গোল নিয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতাও ২৭ বছর বয়সী পোলিশম্যানই। বল দখলে রাখার দক্ষতা, শক্তি আর অধ্যবসায়ের জোরে যে কোনো প্রতিপক্ষের গোলমুখেই লেভানডভস্কি এখন মূর্তিমান আতংকের নাম।

     

    ইউক্রেন

     

    সর্বশেষ ইউরোতে সহ-স্বাগতিক হিসেবে সরাসরি ইউরোর মূলপর্বে খেলার সুযোগ মিলেছিল। এরপর গত চার বছরে নিয়েপার নদীতে বহু জল গড়িয়েছে। সরকার বদলেছে, রাশিয়ার উস্কানিতে রক্ত ঝরেছে দেশের পূর্বাঞ্চলে। ফুটবল নয়, ইউক্রেন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ঘনঘন শিরোনাম হয়েছে গৃহযুদ্ধের কারণে। তবে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা কোনোপ্লায়াংকা-ইয়ারমোলেংকোদের মনোযোগে এতোটুকু চিড় ধরাতে পারে নি। ফলাফল, প্রথমবারের মতো কোনো ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে নিজেদের যোগ্যতায় মূলপর্বের টিকিট।

     

    এমন সংকটের মাঝে সুসংবাদটুকু রাজধানী কেভে আনন্দের বন্যা বইয়েছে সংগত কারণেই। প্যারিস-যাত্রায় তাই ইউক্রেনের সঙ্গী হবে বাঁধভাঙ্গা আবেগও। তবে স্রেফ আবেগ তো আর পরের পর্বে পৌঁছে দেবে না। পারফরম্যান্স দিয়ে ওঠার সামর্থ্য নেই, সেটাও বলা যাচ্ছে না। তারপরও নীল-হলুদ শিবিরের লম্বা দৌড়ে টিকে থাকার দম কতোটা আছে, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

     

    কোনোপ্লায়াংকা-ইয়ারমোলেনকো জুটিকে তুলনা করা হচ্ছে শেভচেঙ্কো-রেবরভের মতো ম্যাচ জেতানো তারকাদের সাথে। সে তুলনার যৌক্তিকতা তর্কসাপেক্ষ। তবে ন্যূনতম সুযোগে যে তাঁরা সবচেয়ে শক্তিশালী রক্ষণভাগকেও ছেড়ে কথা বলবেন তা বুঝিয়েছেন বাছাইপর্বেই। ওটাই যেমন ইউক্রেনের শক্তির জায়গা, ওটাই আবার বড় দুর্বলতাও। এ যুগলের যোগ্য বিকল্প যে নেই! আশার কথা, শাখতার ডোনেস্ক আর ডায়নামো কেভের হয়ে প্রায় পুরো দলই এবার খেলেছে চ্যাম্পিয়নস লিগ। ওই অভিজ্ঞতাটুকুই এ যাত্রায় বড় পুঁজি।

     

     

    রোড টু ইউরো

     

    ১০ ম্যাচে ৬ ছয়, ১ ড্র আর ৩ পরাজয় ইউক্রেনকে দিয়েছিল গ্রুপে তিন নম্বর স্থান, স্পেন আর স্লোভাকিয়ার পর। প্লে অফে স্লোভেনিয়ার বিপক্ষে দুই লেগ মিলিয়ে ৩-১ ব্যবধানের জয়ে নিশ্চিত হয় মূলপর্ব। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন স্পেনের কাছে দুটো ম্যাচই ১ গোলে হেরে যেতে হলেও পারফরম্যান্সে সপ্রতিভতা জানান দিয়েছে সামর্থ্যের।

     

    টাচলাইনের বস

     

    ১৯৭২ সালের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলা সোভিয়েত ইউনিয়ন দলের সদস্য মাইকেল ফোমেংকো (৬৭) বয়সের বিচারে এবারের ইউরোর জ্যেষ্ঠ কোচদের একজনই। যদিও ক্যারিয়ারে এটাই তাঁর প্রথম কোনো বড় টুর্নামেন্ট। গত বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে প্লে অফ পর্যন্ত গিয়েও ফ্রান্সের কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল তাঁর দলের। প্রায় চার দশকের কোচিং ক্যারিয়ারে তিনটি জাতীয় দলসহ সময় কাটিয়েছেন কুড়িটির মতো দলের ডাগ আউটে। অভিজ্ঞতা তাই বড় রসদ হলেও সময়ে সময়ে ‘অতি রক্ষণাত্মক’ বলে দুর্নামও কুড়িয়েছেন। তাতে বয়েই গেছে ফোরম্যাংকোর। ইউক্রেনের দায়িত্ব নেয়ার পর গত ৩ বছরে ৩২টি ম্যাচ খেলে জিতেছেন ২২টিই। পরিসংখ্যান যখন কথা বলে, তখন আর নিন্দুকের দেয়ালে কান পাতা কেন?

     

    তারকা খেলোয়াড়

     

    দীর্ঘ ষোলো বছর পর চ্যাম্পিয়নস লিগের নক-আউট খেলা স্বদেশী ক্লাব ডায়নামো কেভের সাফল্যে নাম ভূমিকাতেই ছিলেন। আক্রমণভাগে যে কোনো প্রান্ত থেকেই প্রতিপক্ষের রক্ষণদুর্গ ভাঙার সামর্থ্য রাখেন। টানা তিন মৌসুমের রেকর্ড বলছে, জাল খুঁজে নেয়াটা একরকম অভ্যেস বানিয়ে ফেলেছেন। ইউরোর মূলমঞ্চে সাফল্য আন্দ্রে ইয়ারমোলেনকোকে আসছে দলবদলের মৌসুমে চড়া দামেই বাজারে তুলবে।