• ইউরো
  • " />

     

    ইউরোর গ্রুপ পর্ব: দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি

    ইউরোর গ্রুপ পর্ব: দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি    

    দ্য গুড

    সার বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকা দর্শকদের সবার দুই হাত ছড়ানো। প্রত্যেকের গায়ে নীল রঙের জার্সি, যেন নীলের অতলান্ত উঠে এসেছে আইসল্যান্ডের সাগরপাড় থেকে। মাঠে দাঁড়িয়ে থাকা খেলোয়াড়েরাও তাদের অভিবাদন জানাচ্ছেন দুই হাত ছড়িয়ে। আইসল্যান্ড ডিফেন্ডার কেরি আরনাসন পরে মুচকি হেসে বলেছেন, "আরে ওই দর্শকের ৫০ ভাগকেই তো আমি চিনি। অন্তত ৫০ ভাগের চেহারা আমার পরিচিত।"

     

     

    সেটা অবশ্য হওয়ারই কথা। যে দেশে মাত্র ৩ লাখ ৩০ হাজার লোকের বাস, সেই জনসংখ্যার আবার ৮ ভাগই চলে এসেছে ফ্রান্সে দলের জন্য চেঁচাতে! সবাই তো লতায়-পাতায় একে অন্যের আত্মীয় হবেনই। আইসল্যান্ড যা করেছে, তাতে অবশ্য এই তথ্যটাও খুব একটা চমক মনে হচ্ছে না। প্রথমবার কোনো বড় আসর খেলতে এসে পুঁচকে দেশটিই যে উঠে গেছে ইউরোর নকআউট পর্বে, তাও আবার অস্ট্রিয়াকে শেষ মুহূর্তের গোলে হারিয়ে।

    লেস্টার সিটির পর আইসল্যান্ডকে নিয়ে এখন ফুটবল রোমান্টিকেরা আচ্ছন্ন। যাদের মূল কোচ পেশায় ডেন্টিস্ট, ছয় বছর আগেও ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে যারা একশর বাইরে, তাদের জন্য এটা রূপকথা বললেও কম বলা হয়।

    শুধু আইসল্যান্ড কেন, এবারের ইউরো মানেই তো ছোটদের জয়জয়কার। কে ভেবেছিল, প্রথমবার খেলতে এসেই প্রতিবেশী "বড় ভাই" ইংল্যান্ডকে টপকে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে ওয়েলস? কে ভেবেছিল, সোনালী সময়ের জাবর কেটে চলা "বাতিল" হাঙ্গেরি নিজেদের গ্রুপে সবার ওপরে চলে যাবে? উত্তর আয়ারল্যান্ডও তো প্রথম অংশ নিয়েই চমকে দিয়েছে সবাইকে। ইউরোতে যে কোনো দলই ফেলনা নয়, সেটা তো তারা সবাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।

    ছোট দলগুলোর রাজত্বে রাজার মুকুটটা আপাতত গ্যারেথ বেলকেই দিয়ে দেওয়া যায়। ওয়েলসের হয়ে প্রথম তিন ম্যাচেই গোল পেয়েছেন, গত দুই ইউরোতে এই কীর্তি নেই আর কারও। বড় দলগুলোর যারা আলো ছড়িয়েছেন, তাদের নামও সেভাবে গোনায় ধরেনি কেউ। তিন গোল নিয়ে বেলের সঙ্গে গোল্ডেন বুটের দৌড়ে এখন সেয়ানে সেয়ানে টক্কর দিচ্ছেন স্পেনের আলভারো মোরাতা।

    সোনার বলের লড়াইয়েও এই দুজন থাকবেন। তবে সেখানেও আছে চমক। ফ্রান্স দলের প্রথম একাদশেই যাঁর জায়গা অনিশ্চিত ছিল, সেই দিমিত্রি পায়েত আভাস দিচ্ছেন এবারের ইউরো নিজের করে নেওয়ার। আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার পায়ে যেন সেই সম্মোহনী জাদু, কে জানে এবারের দলটাকে হয়তো ইউরো শেষে সবাই "ইনিয়েস্তার স্পেন" বলবে!  কে জানে, ক্রোয়েশিয়ান রাকিটিচ বা পেরিসিচদের কেউ হয়তো জিতে নেবেন সোনার বল!

     

    দ্য ব্যাড

    গোল নেই, গোল নেই। এবারের ইউরোতে যেন গোলের হাহাকার। এক পর্তুগাল-হাঙ্গেরি ও চেক প্রজাতন্ত্র-ক্রোয়েশিয়ার ম্যাচ ছাড়া বাকি সব ম্যাচেই তো গোলের জন্য হাপিত্যেশ। গ্রুপ পর্বে ৩৬ ম্যাচে হয়েছে ৬৯ গোল, ম্যাচপ্রতি গড়ে ১.৯২টি। ১৯৯৬ ইউরোর পর আর কোনো বিশ্বকাপ বা ইউরোর গ্রুপ পর্বে এত কম গোল হয়নি। দুটি ম্যাচ গোলশূন্য ড্র হয়েছে, তিনের বেশি গোল হয়েছে মাত্র দুটি ম্যাচে।

     

     

    সেজন্য দায়টা চাইলে অনেকের ওপরেই চাপাতে পারেন। বড় টুর্নামেন্টে কয়েক গোল করা যাঁর অভ্যাস, সেই টমাস মুলার এবার এখন পর্যন্ত কোনো গোলই পাননি। বাছাইপর্বে সবচেয়ে বেশি গোল করেছিলেন রবার্ট লেভানডফস্কি, এবার গোল তাঁর কাছেও সোনার হরিণ। শেষ ম্যাচে জোড়া গোল না পেলে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোও এই দুজনের সঙ্গে এক বন্ধনীতে থাকতে পারতেন। ইংল্যান্ডের হ্যারি কেনও টটেনহামের ফর্ম টেনে নিয়ে আনতে পারেননি, ফ্রান্সের অলিভিয়ের জিরুও ব্যর্থ করিম বেনজেমার শূন্যতা পূরণ করতে। ইব্রাহিমোভিচের জন্য তো এবারের আসরটা আরও ভুলে যাওয়ার মতো। টুর্নামেন্ট চলার সময়ই ঘোষণা দিয়েছিলেন, এবারেই তাঁর শেষ আসর। অথচ তিন ম্যাচে কোনো গোল দূরে থাক, গোলে কোনো শটই নিতে পারেননি। ইব্রার বিদায় একদমই মনের মতো হলো না! 

     

    অ্যান্ড দ্য আগলি

    ছয় মাস আগের রক্তের দাগ প্যারিসের রাজপথ থেকে এখনো শুকোয়নি। ইউরোতে আবার আইএসের হামলা হতে পারে, আশঙ্কার এমন একটা চোরাস্রোত বয়ে চলছিল অলক্ষ্যে। কিন্তু ঝামেলা এলো একেবারে উল্টো দিক থেকে। দাঙ্গাবাজ সমর্থকেরা যে ফ্রান্সের রাজপথে রীতিমতো প্রলয়লীলাই চালিয়েছেন!

     

    ইংল্যান্ড-রাশিয়া ম্যাচের আগে দুই দলের সমর্থকেরা মার্শেইতে বাঁধিয়ে দিয়েছে তুলকালাম, আহত হয়েছেন ৩৪ জন। একজন ইংলিশ সমর্থক তো মাথায় লোহার বারের আঘাত পেয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে চলে গিয়েছিলেন। নিসে উত্তর আয়ারল্যান্ড সমর্থকদের সঙ্গে হাতাহাতি হয়ে গেছে স্থানীয়দের, সেখানে আবার সাতজন আহত হয়েছেন।

     

    তবে রাশিয়ার সমর্থকদের দাঙ্গাবাজি আরও বেড়েছে। শেষ পর্যন্ত ইউরো থেকে বাদ দেওয়ার হুমকি দেওয়ার পর একটু টনক নড়েছে তাদের। ক্রোয়েশিয়ার সমর্থকেরাও আরও এক কাঠি সরেস, নিজের দেশের ফেডারেশনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য মাঠেই ছুঁড়ে মেরেছে আতশবাজি। চেক প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে ম্যাচটাই আরেকটু হলে পণ্ড হতে বসেছিল।

     

    জার্মানি কোচ জোয়াকিম লো এমন কিছুই করেননি। কারও সঙ্গে অপ্রীতিকর আচরণ করেননি, কোনো বিতর্কিত মন্তব্যও করেননি। তবে শুধু "বদভ্যাসের" কারণে তাঁকে এমনই "কথা" শুনতে হয়েছে, শেষ পর্যন্ত লো বাধ্য হয়ে ক্ষমাই চেয়েছেন।  কিন্তু সেই বদভ্যাস কী?

    সেটা তো আপনারই জানার কথা, নাকি ?