• ইংল্যান্ড-পাকিস্তান
  • " />

     

    এবং রুউউউউট!

    এবং রুউউউউট!    

    শুরুতে শুনলে মনে হবে দুয়ো। একটা করে চার, গোটা মাঠে একটা সুর ওঠে। সুর, নাকি গুঞ্জন? রুউউউউউউউউউউট। ফিফটি হয়, রুটের ব্যাটটা একটু ওঠে, উল্টো করে। কাজ বাকী আছে, জানতেন মনে হয় তখনও!

     

    অষ্টম ওভারে এসেছিলেন ব্যাটিংয়ে। রাহাত আলির ওভার। লর্ডসে প্রথম ইনিংসে রাহাতের শর্ট বলেই টাইমিংটা গড়বড় করেছিলেন। ওল্ড ট্রাফোর্ডের প্রথম বলটা স্ট্যাম্পে, ব্লক করলেন। পরের বল বের হয়ে গেল, ওভার দ্য উইকেট থেকে বাঁহাতি পেসারের ডানহাতি ব্যাটসম্যানের জন্য পরিচিত বল। রুট যেতে দিলেন। এরপর রাহাত একটু ফুললেংথে করলেন, সোজা ব্যাটে খেললেন রুট। সোজা ব্যাট, সোজা চার। টাইমিংয়ে গড়বড় নেই কোনো।

     

    রাহাতের পর আমির ফুললেংথে। আবার কপি-বুক শট, ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে। রাহাত, আমিরের পর ইয়াসির। বল টার্ন করেনা তেমন, টসড আপ ডেলিভারি। অফস্ট্যাম্পে পড়ে বল। রুট ব্লক করেন। কখনও ফ্রন্টফুটে, কখনও ব্যাকফুটে। অপেক্ষা করে থাকেন। ইয়াসির এরপর অফস্ট্যাম্পের বেশ বাইরে করেন, টার্ন করে বেড়িয়ে যাওয়ার পথে টাইমিংটা অসাধারণ হয় রুটের। বাউন্ডারি। লর্ডসে ইয়াসিরকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে আউট হয়েছিলেন রুট।

     

    ইয়াসিরের পর ওয়াহাব রিয়াজ আসেন। গুডলেংথের একটু আগে পড়ে বল। রুট পাঞ্চ করেন ব্যাকফুটে গিয়ে। ব্যাকফুট, ব্যাকফুট। পাঞ্চ, পাঞ্চ। চার, চার। রুউউউউউট!

    ইয়াসিরের লং-হপকে ঘুরিয়ে দেন মিডউইকেটে। ফুলটস পান, সোজা ব্যাটটাই ঘুরিয়ে দেন। সাবধানী রুট, একাগ্র রুট। বাউন্ডারি হতে থাকে। রুট খেলতে থাকেন।

    রাহাত শর্ট করেন। এবার আড়াআড়ি খেলেন রুট। টাইমিংয়ে গড়বড় হয় না, বল মাটিতে নামিয়ে আনতে ভুল হয় না। লর্ডসে আউট হয়েছিলেন শর্ট বলেই কিন্তু।

     

     

    ইয়াসিরকে এরপর স্লগ সুইপ করেন। চার হয়। বল আকাশে ওঠে না। আমিরকে মিডউইকেটে খেলেন। কাট করেন। ইয়াসিরকে ক্লিপ করে চার মারেন। হাত মুষ্ঠি করে লাফ দেন। তিন অঙ্কের দেখা পেয়েছেন যে! হেলমেট খুললে দেখা যায়, একটা নিঃশ্বাস যেন বেড়িয়ে গেল জোরেসোরেই। গ্রীষ্মে প্রথম সেঞ্চুরি, চার নম্বর থেকে তিন নম্বরে আসাটা তাহলে কাজে দিল। রুট স্বস্তি পাবেনই তো একটু। পাকিস্তানী বোলাররা স্বস্তি পেলেন না তবুও।

     

    রুট বল ছাড়তেই লাগলেন। রুটের ক্লান্তি নেই। পছন্দমতো জায়গায় বল আসে এরপর। ড্রাইভ করেন। পুল, শর্ট আর্ম জ্যাব। রুটের দিন শেষ হয় ১৪১ রানে। থামতে চান না পরদিন সকালেও। নিজেই তো বলেছিলেন, রান পেতে চান আরও। রুট রান পান। ওয়াহাবকে পয়েন্টে ঠেলে দিলে রুউউউউউট গুঞ্জনটা জোরালো হয় আরেকটু। ড্রেসিংরুমের দিকে তাকিয়ে রুট একটা হাসি দেন, ব্যাটটা অর্ধ-উর্ধ্ব থাকে। রুটের ১৫০ হলো। পঞ্চমবারের মতো ড্যাডি সেঞ্চুরি।

     

    ইয়াসিরকে ড্রাইভ করতে গিয়ে এজ হয় হঠাৎ। নাগাল পাননা স্লিপে দাঁড়ানো ইউনুস খান। চার। ওয়াহাবকে ড্রাইভ করতে গিয়ে আবার এজ, এবার তৃতীয় স্লিপ দিয়ে চার, সেখানে নেই কোনো ফিল্ডার। একটু ছন্দপতন।

    ছন্দ ফিরে আসে। লেগস্পিনারকে মাপা, শক্ত একটা সুইপ দিয়ে। হাত-মাথার সংযোগটা ছবির মতোই নিঁখুত, দৃষ্টি বলের ওপর নিবদ্ধ। ‘ইন-ফ্রন্ট অব স্কয়ার’-এ দেখিয়ে দেন বলের গতিপথ।

     

    পার্টটাইমার আজহার আলি আসেন। রুট রিভার্স সুইপের ‘বিলাসিতা’ শুরু করেন। সিঙ্গেল নেন। ব্লক করেন। ব্যাটের ফেস উন্মুক্ত থাকে, বন্ধ করে দেন। ১৭০ রানের পর থেকে বাউন্ডারির দেখা নেই রুটের ব্যাটে।

     

    হঠাৎ জেগে ওঠেন। আবার রিভার্স সুইপে চার আসে। এবার আর পার্ট-টাইমার আজহার নন, বোলার আগের টেস্টে পাকিস্তানের নায়ক ইয়াসির। ওল্ড ট্রাফোর্ডে সবচেয়ে জোরালো গুঞ্জনটা শোনা যায়। রুউউউউউউউউউউউউউট। রুটের উদযাপনটাও হয় সবচেয়ে ‘ক্ষিপ্র’। মুষ্টিবদ্ধ হাত, ‘ইয়েস’! ড্রেসিংরুমের দিকে ব্যাটটা দেখান, মাঠের অন্য প্রান্তেও দেখান। সঙ্গী বেন স্টোকসের সঙ্গে উল্লাসে মাতেন।

     

    ৪৪তম টেস্টে রুটের দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি। রুট আবার খোলসবন্দী করেন নিজেকে। দ্বিতীয় দিনের আগে বলেছিলেন, শুধু ডাবল সেঞ্চুরি না, তিনি পেতে চান আরও। মাঝে আজহারকে একটা চার মেরেছিলেন শুধু। রুট আরও পাওয়ার পথে এগিয়ে যান।

     

    ওভার নম্বর ১৪৮। বোলার আজহার। সুইপ, সুইপ, সুইপ। চার, চার, চার। প্রথমটা ফাইন লেগে। পরেরটা একটু স্কয়ারে। এরপরেরটা বেশী ফাইনে! তিন অঞ্চল, রুট যেন পাকিস্তানী ফিল্ডিং নিয়ে খেললেন! কাভারে মোহাম্মদ হাফিজের মিস-ফিল্ডিংয়ে ২৫০ পূর্ণ হলো। রুট এবার ‘ওকে’ চিহ্ন দেখালেন। মুখে হাসি। মাঠে কোরাস উঠলো আবার, রুউউউউউট!

     

    ইয়াসিরকে আবার স্লগ করে চার মারলেন, রুটের লক্ষ্য কি তবে ট্রিপল! রুট থামলেন, ট্রিপলের অনেক আগেই। রাহাতের অফ-কাটারে শটটা খেলে ফেললেন আগেভাগেই, হাফিজ নিলেন অসাধারণ এক ক্যাচ। এমন অসাধারণ এক ইনিংস, শেষেও মিশে থাকলো অসাধারণত্ব! পাকিস্তানীরা এগিয়ে গিয়ে অভিনন্দন জানালেন।

     

    এরই মধ্যে রুট খেলেছেন ওয়ালি হ্যামন্ড ও টম গ্র্যাভেনির পর তিন নম্বরে ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ ইনিংস। কেন ব্যারিংটন সেই ১৯৬৪ সালে ওল্ড ট্রাফোর্ডে ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন, রুট করলেন এরপর। রুট এই গ্রীষ্মের প্রথম সেঞ্চুরি করলেন, সে সেঞ্চুরিকে নিয়ে গেলেন আরও অনেকদূর। লর্ডস থেকে ওল্ড ট্রাফোর্ডে এনে রুট ইংল্যান্ডকে দিলেন নতুন আশা। রুটের হাসিটা ছোট, তবে ভেতরের আনন্দ নাকি আরও বেশী। জয় পেলে তা বাড়বে আরও।

     

    রুট খেললেন। রুট উপভোগ করলেন।

    উঠে যাওয়ার সময় ওল্ড ট্রাফোর্ডে আরেকবার কোরাস উঠলো।

    রুউউউউউউউউউউট!