• ফুটবল, অন্যান্য
  • " />

     

    ট্যাকটিকসে হাতেখড়ি-৭: ক্লাসিক ১০ এর মৃত্যু

    ট্যাকটিকসে হাতেখড়ি-৭: ক্লাসিক ১০ এর মৃত্যু    

    জিনেদিন জিদান, রুই কস্তা, ফ্রান্সেসকো টট্টি, ডেনিস বার্গক্যাম্প - ইউরো ২০০০ সেমিফাইনালের চারজন প্লেমেকার বা ক্লাসিক ১০ নম্বর খেলোয়াড়। এই শতাব্দীর শুরু থেকেই ১০ নম্বরদের এমন আধিপত্য এবং ত্রেকার্তিস্তা ছাড়া মাঠে নামা জার্মানি আর ইংল্যান্ডের দুর্দশা দেখে কেউ তখনো ঘুণাক্ষরেও ধারণা করতে পারে নি যে, ফুটবলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অবস্থান - ১০ নম্বর জার্সিধারী ক্লাসিক প্লেমেকার কিংবা ত্রেকার্তিস্তা ব্যাপারটা আগামী এক যুগের মাঝেই অচল বা অধুনালুপ্ত হয়ে যাবে। পেলে, প্লাতিনি, পুসকাস, ক্রুইফ, ম্যারাডোনা, ব্যাজ্জিও - ফুটবলের ইতিহাসে এই প্লেমেকাররাই যুগে যুগে ফুটবলের কৌশল ও খেলায় যোগ করেছেন নতুন নতুন মাত্রা। তাঁদের মাঠের খেলা দেখে প্রায় অর্ধ শতাব্দী ধরে মন্ত্রমুগ্ধ হয়েছে ফুটবলভক্তরা। কিন্তু আধুনিক ফুটবলে ক্লাসিক নাম্বার টেনরা কেন ব্রাত্য হয়ে পড়ছে?

     

    চিরাচরিত ১০ নম্বর জার্সি বা ত্রেকার্তিস্তা বা প্লেমেকারের কাজ হলো ফরোয়ার্ড লাইনের কিছুটা পিছে থেকে ফাইনাল পাস দেওয়া এবং সুযোগ পেলে গোল দিয়ে দেওয়া। 'ত্রেকার্তিস্তা' শব্দটির অর্থ তিন চতুর্থাংশ। মাঠের থার্ড কোয়ার্টারে বিপক্ষের মধ্যমাঠ ও রক্ষণের মাঝ থেকে বল বের করে ফরোয়ার্ড লাইনে যোগান দেওয়া ত্রেকার্তিস্তার মুখ্য দায়িত্ব। কাঁটা কম্পাসে মাপা নিখুঁত পাসিং, মাঠের বাকি খেলোয়াড়দের অবস্থান সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা এবং নস্ত্রাদামুসের মতো না হলেও কিছুটা অন্তত ভবিষ্যত পড়তে পারার ক্ষমতা থাকা - এই গুণাবলীই মাঠে একজন ত্রেকার্তিস্তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে দেয়। জোন ১৪ মূলতঃ ত্রেকার্তিস্তাদের কর্মক্ষেত্র, এখান থেকেই একজন ভাল ১০ নম্বর খেলার ভাগ্য বদলে দিতে পারেন। 

     

    'ডিভাইন পনিটেইল' রবার্তো ব্যাজ্জিওর এক ম্যাজিক মোমেন্ট

     

    তাহলে ত্রেকার্তিস্তারা কেন হারিয়ে যাচ্ছে? আসলে হারিয়ে যাচ্ছে বলাটা ঠিক হবে না, ত্রেকার্তিস্তা রোলটির বিবর্তন হওয়া শুরু হয়েছে এক যুগ আগে থেকেই। আধুনিক ফুটবলের গতি এবং আক্রমণের স্পৃহা দুটোই জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে গত এক যুগে। ট্র্যাডিশনালি একজন ত্রেকার্তিস্তা একটু ঢিমে তালের হয়ে থাকেন, খুব বেশি ছুটোছুটি করার ডাক পড়ে না বললেই চলে। কিন্ত হাল আমলে যখন ইউরোপিয়ান ম্যানেজাররা রক্ষণে জোর দেওয়া শুরু করলেন, তখন ত্রেকার্তিস্তারা পড়লেন বিপদে।


    একজন ত্রেকার্তিস্তাকে রক্ষণ থেকে একজন রেজিস্তা বল বের করে দেবেন আর সেটা সামনে চালান করবেন তিনি - এটাই সরল অঙ্ক। কিন্তু ম্যানেজাররা যখন প্লেমেকারকে এবং প্লেমেকারের পাসিং লেইনগুলো রক্ষণভাগের খেলোয়াড় দিয়ে পাহারা দেওয়া শুরু করলেন তখন ত্রেকার্তিস্তার কাছে বলের যোগান আসা বন্ধ হয়ে গেল। একজন ত্রেকার্তিস্তার আসলে বল যোগান দেয়া ছাড়া খুব বেশি কাজ করার সুযোগ নেই। কাজেই নিজ দলের ত্রেকার্তিস্তাকে রক্ষা করার জন্য দলের ম্যানেজার আরেকজন শক্ত পোক্ত মারমুখী  ধরণের মাঝমাঠের সৈনিককে নিয়োগ দেওয়া শুরু করলেন। চালু হল ডাবল পিভট সিস্টেম এবং ম্যাকলেলে রোল।

     

    ডাবল পিভট সিস্টেম এবং হোল্ডিং মিডফিল্ডারের আগমন একইসাথে ফুটবলের দুইটি ঐতিহাসিক এবং বিখ্যাত পজিশনের মৃত্যুঘন্টা বাজিয়ে দেয় - লিবেরো এবং ত্রেকার্তিস্তা। রক্ষণভাগকে পোক্ত করার জন্য ট্যাকটিকস বোর্ডে হোল্ডিং মিডফিল্ডারের সংযোজনে অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ল লিবেরো এবং স্বাধীনতা কমতে থাকল ত্রেকার্তিস্তাদের। ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে একজন ক্লাসিক ১০ নাম্বারের আগেকার গুরুত্ব বা স্বাধীনতা কোনটাই ছিল না। এই কারণে বিবর্তন হতে থাকল পজিশনের, এলো বক্স-টু-বক্স মিডফিল্ডার, ইনভার্টেড উইংগার, ফলস নাইন, ইনসাইড ফরোয়ার্ড।

     

    ক্লাসিক ১০ নাম্বারদের একটা সমস্যা ছিল যে তারা রক্ষণে কোন কাজে আসতেন না। ১০ নাম্বারদের কাজই ছিল বল নিয়ে, বল ছাড়া তাঁদের খুব একটা ছুটোছুটি করতে দেখা যেত না। দলের সবচেয়ে প্রতিভাবান খেলোয়াড়ও নিচে নেমে রক্ষণে সাহায্য করবে, এই ধারণাটা আধুনিক ফুটবলে পোক্ত হয়ে গেলেও তখন এই ব্যাপারটা নিয়ে বেশ একটা মাথা ঘামানোই হতো না। কাজেই যখন ইউরোপের ম্যানেজাররা রক্ষণকৌশলের দিকে মনোযোগ দিতে থাকলেন, তাঁরা অনুধাবন করতে পারলেন যে একজন খেলোয়াড়কে কেবল ফাইনাল পাস দেওয়ার জন্য দলে রাখাটা বেশ ব্যয়বহুল হয়ে যাচ্ছে।

     

    এখনকার খেলায় এমনকি খোদ স্ট্রাইকাররাও ডিফেন্স লাইন পর্যন্ত নেমে আসেন। কাজেই ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে যে মিডফিল্ডার সেন্ট্রাল পজিশনে খেলেন তাঁকেও বলা হল ওঠানামা করতে। গতি ব্যাপারটা ক্লাসিক প্লেমেকারদের জন্য জরুরী ছিল না, শারীরিক দক্ষতা বা শক্তিও নয়। কিন্তু আধুনিক খেলায় যখন বার্সেলোনা বা বায়ার্ন আপনার দলের বিপক্ষে ৪০ গজ দূর থেকে কাউন্টার অ্যাটাক শুরু করে তখন কিছু বুঝে ওঠার আগেই বল আপনার জালে জড়িয়ে যাবে, গতিময়তা এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে। কাজেই আক্রমণের স্বার্থে হোক আর রক্ষণের জন্য হোক, একজন সেন্ট্রাল প্লেমেকারকে এখন হয় হতে হবে পগবা বা ভিদালের মতো শক্তিশালী, যেন দরকার হলে আপনি প্রতিপক্ষের অ্যাটাকারদের সামনে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে যেতে পারেন আবার আক্রমণের সময় জার্মান ট্যাংকের মতো সব বাধা ভেঙ্গেচুরে গোলের সামনে উপস্থিত হয়ে যেতে পারেন। অথবা আপনার প্লেমেকারকে হতে হবে আরো গভীর জলের মাছ, মাঝমাঠে পাহারা দিয়ে বল রিকভারি করবে এবং জায়গামতো সেই বলের যোগান দেবে। আর যতি ক্ষিপ্রতা আর গতি আপনার অস্ত্র হয়, তবে আপনাকে দায়িত্ব দেওয়া হবে ওয়াইড চ্যানেলে, লিওনেল মেসি বা আঁতোয়া গ্রিজম্যানের মত ক্রমাগত ওয়াইড থেকে ন্যারো চ্যানেলে ঢুকে বিপর্যস্ত করবেন প্রতিপক্ষ রক্ষণকে।

     

    লিওনেল মেসি, ওয়াইড থেকে ত্রেকার্তিস্তা ভূমিকায়

     

    তাহলে যাদের গতি এবং শক্তি দুই দিকেই বেশ খানিকটা ঘাটতি আছে, সেসব ত্রেকার্তিস্তাদের কি হবে? দক্ষিণ আমেরিকা বিশেষ করে আর্জেন্টিনায় এই ত্রেকার্তিস্তা বা ক্লাসিক ১০ নাম্বার ব্যাপারটাকে একটু অন্য চোখে দেখা হয় এখনো। এজন্যই আমরা কয়েক যুগ ধরেই ''নতুন ম্যারাদোনা"র খোঁজ দেখি আর্জেন্টিনায়। রিকুয়েলমে, পাবলো আইমার, স্যাভিওলা, আন্দ্রেস দালেসান্দ্রো - এদেরকে কেন নতুন ম্যারাডোনার তকমা দেওয়া হত? কারণ লাতিন আমেরিকানরা ফুটবলে ক্লাসিক ১০ নাম্বারকে নিয়ে এখনো স্বপ্ন দেখে। ক্লাসিক টেন তাঁর শৈল্পিক জাদুময়তা দিয়ে যেমন একাই একটা ম্যাচ বের করে নিয়ে আসতে পারেন, সেই মোহ ভেঙ্গে বে্রিয়ে আসতে তাদের বেশ সময় লেগেছে।  ইউরোপ অবশ্য এই ধ্যান ধারণা থেকে আগেই বের হয়ে এসেছে। ফ্যাব্রেগাস, মদ্রিচ, দেলে আলি, রাকিটিচদের ইউরোপ তৈরি করছে, যারা ম্যারাডোনা-জিদানদের মতো একার ক্যারিশমায় হয়তো ম্যাচ বের করে আনতে পারেন না, কিন্তু তাঁরা পুরনো ১০ নাম্বারদের থেকে মাঠে অনেক বেশি ব্যস্ত সময় কাটান।

     

    বর্তমানে ডিপ লাইং প্লেমেকার ব্যাপারটা অনেকটা দখল করে নিয়েছে ক্লাসিক প্লেমেকারের জায়গাটা। পিরলো, জাবি আলোনসো কিংবা হালের মার্কো ভেরাত্তিরা মাঝমাঠের নিচ থেকে যেভাবে খেলার নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেন তা বর্তমানের ম্যানেজারদের কৌশলে এনেছে নতুন মাত্রা। এরপর আছেন বক্স-টু-বক্স সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার - অ্যারন র‍্যামজে, ইয়াইয়া তোরে বা পল পগবার মতো, যারা তাদের অফুরন্ত দম আর শক্তির সুযোগ নিয়ে এক ডি বক্স থেকে আরেক ডি বক্সে লাগাতার পাহারা দিয়ে যান। এ ধরনের মিডফিল্ডাররা সাধারণত রক্ষণের সাপোর্ট এবং গোল করার বাড়তি একটা সাপোর্ট হিসেবে কাজ করে থাকেন।


    আধুনিক ত্রেকার্তিস্তা বা ১০ নাম্বার হওয়ার সবচেয়ে ভাল প্রার্থী হতে পারতেন ইব্রাহিমোভিচ বা লেফানদফস্কি বা লুইস সুয়ারেজ। এদের প্রত্যেকেরই পাসিং ক্ষমতা, দূরদৃষ্টি, শক্তিমত্তা বা গতি, কোনো ডিপার্টমেন্টেই ঘাটতি নেই। কিন্তু তাঁদের ফাইনাল থার্ডের দক্ষতা এবং দুর্দান্ত ফিনিশিংয়ের কারণে তাঁদেরকে ১০ থেকে ৯ নাম্বার পজিশনে চলে যেতে হয়েছে। বর্তমানের ১০ নাম্বারদের মাঝে হয়তো ডেভিড সিলভা, মেসুত ওজিল বা আন্দ্রেস ইনিয়েস্তাই এখনো একটু সেকেলে রয়ে গেছেন। ক্লাসিক প্লেমেকারদের সকল গুণই তাঁদের আছে এবং ক্লাসিক প্লেমেকারদের মত রক্ষণে সাহায্য করার সামর্থ্যও তাদের খুব একটা নেই!  

     

    ক্লাসিক ১০ টাইপ ইনিয়েস্তা, সিলভা'র সাথে আধুনিক ১০ টাইপদের তুলনা

     

    ক্লাসিক টেন বা ত্রেকার্তিস্তার বিবর্তনের সবচেয়ে নতুন আকর্ষণ 'ফলস টেন'। 'ফলস নাইন' ব্যাপারটা লিওনেল মেসি আমাদের মাথায় ভালভাবেই ঢুকিয়ে দিয়েছেন, কিন্তু 'ফলস টেন' ব্যাপারটা তাহলে কি? একজন খেলোয়াড় খেলা শুরু করার সময় ১০ নং অবস্থান অর্থাৎ প্রধান স্ট্রাইকারের একটু নিচে থেকে খেলা শুরু করবেন কিন্তু খেলার দরকার অনুযায়ী মাঝমাঠে নেমে বা ওয়াইড চ্যানেলে সরে গিয়ে বিপক্ষের রক্ষণের খেলোয়াড়দের নিজেদের পজিশন থেকে সরিয়ে আনতে পারবেন। ফিলিপ্পে কুটিনিয়ো, দেলে আলি, অ্যারন র‍্যামজে, ইভান রাকিটিচ, পল পগবারা প্রথম ধারার 'ফলস টেন' হিসেবে খেলতে পারেন। এঁরা ১০নং পজিশনে শুরু করেন এবং বেশিরভাগ সময়ে আক্রমণেও যান ১০ হিসেবেই, কিন্তু বল ছাড়া তাঁরা তাঁদের হোল্ডিং মিডফিল্ডারের পাশাপাশি নেমে এসে রক্ষণে সাহায্য করেন।

     

    ফলস টেনঃ কুটিনিয়ো'র ত্রেকার্তিস্তা এবং হোল্ডিং মিডের মাঝে অদলবদল

     

    আবার লিওনেল মেসি এখন যে ধরনের পজিশনে খেলছেন তাঁকে ঠিক ইনভার্টেড উইংগার বলাটা মুশকিল। ইনভার্টেড উইংগারের সবচেয়ে ভাল উদাহরণ হলেন আরিয়েন রবেন। সাধারণত একজন উইঙ্গার যদি ডানের উইংয়ে খেলেন, তাহলে তাঁর শক্তিশালী পা হয় ডান পা, কারণ তাঁকে ডান থেকে বামে ক্রস করতে হবে। রবেন ডানে খেললেও তিনি বাম পায়ের খেলোয়াড়, তাঁর কাজ হল উইং এর ওয়াইড চ্যানেল থেকে ন্যারো চ্যানেলে বল নিয়ে ঢুকে যাওয়া এতে করে তিনি গোলে শট করার সুযোগও পাবেন, আবার তিনি ন্যারো চ্যানেলে সরে আসলে পেছনের ফুলব্যাক রাইট উইংয়ে ওভারল্যাপ করে বিপক্ষ ফুলব্যাককে ব্যতিব্যস্তও রাখতে পারবে। কিন্তু লিওনেল মেসি বর্তমানে ওয়াইড পজিশনে খেলা শুরু করে প্রয়োজনমতো ন্যারো চ্যানেলে সরে আসেন শুধুমাত্র গোলে শট করার জন্য নয়, বরঞ্চ একজন ত্রেকার্তিস্তার দায়িত্ব পালন করে অন্যান্য অ্যাটাকারদের ফাইনাল পাস দেওয়ার জন্য। এটাকেও আমরা 'ফলস টেন' হিসেবে আপাতত চিহ্নিত করতে পারি।

     

    ফলস টেনঃ লিওনেল মেসির ওয়াইড এবং সেন্ট্রাল রোলের মাঝে অদল বদল


    আবার 'ফলস টেন' এর আরেক ধরনের প্রকরণ আমরা দেখতে পাই ওয়েসলি স্নাইডার বা মেসুত অজিলের জাতীয় দলের হয়ে খেলায়। এরা দুজনই ১০নং হিসেবে শুরু করলেও আক্রমণের সময় এরা স্ট্রাইকারের পাশাপাশি বা এমনকি সামনে চলে গিয়ে সেকেন্ড স্ট্রাইকারের ভূমিকা পালন করেন। ফুটবল অ্যানালিস্ট টম উইলিয়ামস এবং জোনাথান উইলসনের মাঝে এই ব্যাপারে খানিকটা দ্বিমত আছে। কিন্তু দুজনই এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে, বর্তমানে 'ফলস টেন' ব্যাপারটা একটু ধোঁয়াশার মাঝে থাকলেও ভবিষ্যতে ট্যাকটিকস বোর্ডের হয়তো অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হবে 'ফলস টেন' এর কার্যকারিতা।

     

    একসময় ফুটবলে ১০নং জার্সি ছিল সবচেয়ে আরাধ্য, দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সবচেয়ে ক্যারিশমাটিক খেলোয়াড়। হয়ত স্কুল-কলেজ-ভার্সিটির খেলায় আপনিও ১০ নাম্বার জার্সিটি পড়তে চেয়েছেন এক-আধবার হলেও। একজন ১০ নাম্বার জার্সিধারীর পায়ে বল গেলেই দর্শকরা ম্যাজিক দেখার অপেক্ষায় থাকতো। বার্গক্যাম্পের টাচ, ম্যারাডোনার ড্রিবলিং, জিদানের ৩৬০ ডিগ্রি টার্ন - সকল ফুটবল ভক্তদের মনেই আঁচড় কেটে গিয়েছে আজীবনের জন্য। একসময় বার্গক্যাম্পের সমালোচনা করা হচ্ছিল রক্ষণের সময় নিচে না নামার প্রবণতার কারণে। তখন ডাচ মিডিয়াগুলো অবজ্ঞাভরে জানিয়েছিল, বার্গক্যাম্পের মতো কিংবদন্তী ১০ নাম্বারদের কাজ মাঠে জাদু দেখানো, গাধার মত দৌড়াদৌড়ি করা নয়! কিন্তু মরিনিয়ো, গার্দিওলা, ক্লপ - প্রায় সকল আধুনিক ফুটবলের ম্যানেজাররাই চান দলের প্রতিটি খেলোয়াড় মাঠে যতক্ষণ আছে, ততক্ষণ দৌড়ে যাবেন।

     

    স্টাইল, স্কিল আর ড্রিবলিংয়ের জাদুময়তাকে হটিয়ে দিয়ে এখন জায়গা করে নিয়েছে গতি, শক্তি এবং ওয়ার্ক রেটের টেকনিক্যালিটি। খেলার বিবর্তন হবেই, আর এই বিবর্তনের ধারায় ক্লাসিক ১০ নাম্বার জার্সির জাদুকরেরা হারিয়ে যাবেন, কিন্তু তাঁদের জাদুর স্মৃতিগুলো ঠিকই রয়ে যাবে ফুটবল দর্শকের হৃদয়ের কোণের এক গহীন কোঠায়। পুরনো ঘর ঝাড়ু দেওয়ার মতো ইউটিউবে জাদুকরদের পারফরম্যান্স দেখে সেই কোণা ঝেঁটিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাসই বেরুবে মুহূর্তের জন্য। পরক্ষণেই পরবর্তী উইকের খেলার বিচার-বিশ্লেষণে মেতে পড়বো আমরা, ফুটবলও গড়াতে থাকবে সামনের দিকে।