• লা লিগা
  • " />

     

    ছোট রোনালদিনহোকে বড় রোনালদিনহোর চিঠি

    ছোট রোনালদিনহোকে বড় রোনালদিনহোর চিঠি    

    ৮ বছর বয়সী পোর্তো আলেগ্রের রোনালদিনহোর সাথে যদি আজকের রোনালদিনহোর দেখা হতো, কী বলতেন তিনি? প্লেয়ারস ট্রিবিউনের জন্য রোনালদিনহোর লেখা সেই চিঠির অংশবিশেষের অনুবাদ এখানে। 


     

    প্রিয় রোনালদিনহো,

    তোমার বয়স ৮ হলো কেবল। আগামীকাল তুমি মাঠ থেকে ফুটবল খেলে বাড়ি ফিরে দেখবে তোমার বাসায় অনেক মানুষ। তোমার চাচারা, প্রতিবেশিরা এবং নাম না জানা আরো অনেক মানুষ ভিড় করে তোমার বাসার ভেতর দাঁড়িয়ে আছে। তোমার প্রথমে মনে হতে পারে, ওরা এসেছে তোমার জন্মদিনের সারপ্রাইজ পার্টির জন্য। হয়তোবা তোমার বড় ভাই রবার্তোর ১৮তম জন্মদিনের পার্টিটাও তোমাকে না জানিয়েই করা হচ্ছে। হতেই পারে। 

    প্রতিদিন ফুটবল মাঠ থেকে বাড়ি ফিরে মাকে তুমি হাসতে দেখ, ঠাট্টা মশকরা করতে দেখ। সেদিন তুমি দেখবে মা কাঁদছেন। তারপর তুমি রবার্তোকে দেখবে। সে তোমাকে জড়িয়ে ধরে টেনে নিয়ে যাবে এক কোণায়। সে তোমাকে এমন কিছু বলবে যার অর্থ তুমি তখন ধরতে পারবে না।

    একটা দুর্ঘটনা হয়েছে রোনি। বাবা আর নেই। 

    তুমি কিছুই বুঝতে পারবেনা তখন। নেই মানে? বাবা কোথায় গিয়েছেন? কখনই বা ফিরে আসবেন? তোমার ছোট্ট মাথায় ঢুকবে না রবার্তোর কথাগুলো। 

    বাবাই তোমাকে শিখিয়েছিলেন যে ফুটবলটা কেবলই খেলা, ফুটবল থেকে আনন্দ খুঁজে নিতে হবে। খেলতে হবে নিজের মতো করে, নিজের স্টাইলে। বল নিয়ে যা করতে ভাল লাগবে সেটাই করবে, কারণ ফুটবল মানে আনন্দ, ফুটবল মানে স্বাধীনতা। তোমার ওপর বাবার আস্থা ছিল আকাশচুম্বী। গত বছর যখন রবার্তো গ্রেমিওর সিনিয়র দলে সুযোগ পেল তখন বাবা সবাইকে বলেছিলেন, রবার্তো অনেক ভাল খেলে, তবে রোনির দিকে সবাই নজর রেখো। সে সবাইকে ছাড়িয়ে যাবে। বাবা তোমার সুপারহিরো ছিলেন। সপ্তাহের ৫ দিন তিনি শিপ ইয়ার্ডে কাজ করতেন আর ছুটির দিনগুলোতে গ্রেমিওর স্টেডিয়ামে নিরাপত্তারক্ষীর শিফট দিতেন। কেন? কারণ তিনি ফুটবলকে মনেপ্রাণে ভালবাসতেন। সেই ফুটবলকে ভালোবাসা বাবাটা আর নেই মানে? রবার্তোর কথার আগামাথা কিছুই তুমি বুঝবে না।
     
    বাবা চলে যাওয়ার দুঃখটা তুমি সাথে সাথে টের পাবে না। শোকের ধাক্কাটা তোমাকে আঘাত করবে কিছুদিন পর, যখন তুমি বুঝতে পারবে যে বাবা আর কোনদিন ফিরবেন না। কিন্তু রোনি, যতক্ষণ তোমার পায়ে বল আছে, বাবাও তোমার পাশে আছেন। আমার এই কথাটা মনে রেখো। 
    তুমি ভাগ্যবান কারণ বাবা চলে গেলেও তোমার পাশে রবার্তো থাকবে। সে তোমার থেকে ১০ বছরের বড়, গ্রেমিওর হয়ে পেশাদার ফুটবল খেলাও শুরু করে দিয়েছে তখন। কিন্তু রবার্তো সবসময় তোমার পাশে থাকবে, সে তোমার বড় ভাইয়ের থেকেও বেশি কিছু হবে। সে হবে তোমার বাবা, তোমার নতুন সুপারহিরো। 

    তুমি ওর মত খেলতে চাইবে, ওর মত হতে চাইবে। প্রতিদিন সকালে যখন গ্রেমিওর ছোটদের দলের হয়ে তুমি প্র্যাক্টিসে যাবে, দেখবে বড়দের দলের সাথে রবার্তো ট্রেনিং করছে। গ্রেমিওর ড্রেসিংরুমে তোমার ভাই তোমাকে ডেকে নিয়ে যাবে। রাতে একই ঘরে ঘুমানোর সময় তুমি টের পাবে যে তুমি কত ভাগ্যবান, তোমার হিরোর সাথে তুমি একই রুমে থাকছো। 

    তোমার আর রবার্তোর বেডরুমে কোন ফুটবলারের পোস্টার থাকবে না, কারণ তোমাদের টাকা নেই। বাসায় একটা ছোট্ট টিভি, কিন্তু সেটা দেখবার সুযোগ তোমার হবে না। কারণ প্রতিদিনই হয় তুমি রবার্তোর খেলা দেখতে যাবে অথবা রবার্তোর সাথে ট্রেনিং সেশনে যাবে।

     

    রবার্তো সবসময় তোমার পাশে থাকবে, সে তোমার বড় ভাইয়ের থেকেও বেশি কিছু হবে। সে হবে তোমার বাবা, তোমার নতুন সুপারহিরো। 


     
    পোর্তো আলেগ্রের বস্তিতে বড় হতে হবে তোমাকে। জীবনটা সেখানে অনেক কঠিন। মাদক আর গুন্ডারা তোমার আশেপাশে ঘুরে বেড়াবে। ওসব দিকে নজর না দিয়ে তুমি কেবল ফুটবলেই মনোযোগ দিও। ট্রেনিং থেকে বের হয়ে সোজা পার্কে চলে যাবে। সেখানে আবার ফুটবল খেলবে তোমার বন্ধুদের সাথেই, বড় ভাইয়ের সাথে, তোমার কুকুরটার সাথে। তোমার কুকুর বমবম তোমার সাথে খেলতে খেলতে দারুণ ডিফেন্ডার হয়ে উঠবে, তোমার ছোট্ট বন্ধুদের থেকেও ভাল। 

    তুমি যখন পার্কে সবার সাথে ফুটবল খেলবে, একটা সময় দেখবে সবাই ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তোমার দম কিন্তু কখনোই ফুরিয়ে যাবে না। তোমার আরো খেলতে ইচ্ছে করবে। এজন্য পার্কে সবসময় বমবমকে নিয়ে যাবে। ব্রাজিলিয়ান লোকেদের মত ব্রাজিলিয়ান কুকুররাও ফুটবল ভালবাসে। তোমার ড্রিবলিং আর স্কিলের প্র্যাক্টিসে দারুণ সাহায্য করবে বমবম। ওর সাথে খেলতে গিয়েই তুমি ‘ইলাস্টিকো’ শিখবে। এর বহু বছর পর যখন তুমি ইউরোপে খেলবে, সেখানকার ডিফেন্ডাররা তোমাকে বমবমের কথা মনে করাবে। তুমি তাদের ড্রিবল করে যখন পার হয়ে যাবে তখন তারা বমবমের মতোই হতভম্ব হয়ে থাকবে। 

    তোমার কৈশোর হবে অন্যদের থেকে আলাদা। তোমার বয়স যখন ১৩ হবে, দেখবে সবাই তোমাকে নিয়ে কথা বলছে, তোমার ফুটবল প্রতিভা, স্কিল নিয়ে আলোচনা করছে। ওসবে মাথা ঘামানোর দরকার নেই, ফুটবল তখনো তোমার কাছে কেবল একটা খেলাই। কিন্তু ১৯৯৪ সালে, যখন তোমার বয়স ১৪, তখন তুমি বুঝতে পারবে ফুটবল কেবল একটা খেলা নয়, আরো বেশি কিছু। অনেক বেশি।
     
    জুলাই ১৭, ১৯৯৪ - এই তারিখটা সকল ব্রাজিলিয়ানদেরই মনে থাকবে। সেই দিন তুমি গ্রেমিওর ছোটদের দলের সাথে একটা ম্যাচ খেলতে যাবে বেলো হরিজন্টেতে। টিভিতে তখন বিশ্বকাপের ফাইনাল দেখাচ্ছে - ব্রাজিল বনাম ইতালি। ২৪ বছর পর ক্যানারিনহোরা ফাইনালে উঠেছে। তুমি দেখবে, গোটা ব্রাজিল স্তব্ধ হয়ে খেলা দেখছে। তুমিও সেই খেলা দেখবে তোমার টিমমেটদের সাথে। খেলা শেষের বাঁশি বাজাবেন রেফারি, স্কোর ০-০। খেলার ফলাফল হবে পেনাল্টিতে।
     
    ইতালি প্রথম পেনাল্টিটা মিস করল, ব্রাজিলও তাই। এরপর ইতালি গোল করল, রোমারিও এসে দাঁড়ালেন। তার শট বারে লেগে ঢুকে গেল গোলে। ইতালি আবারও গোল করল। ব্রাঙ্কো গোল করলেন ব্রাজিলের হয়ে, তাফারেল একটা দারুণ শট ঠেকিয়ে দিলেন, দুঙ্গা গোল করলেন। এরপর ব্যাজ্জিও এলেন কিক নিতে, মিস করলেন ব্যাজ্জিও। 

    ব্রাজিল বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। পাগলের মত চেঁচামেচি, কান্নাকাটি আর হল্লার মাঝে হঠাৎ তুমি বুঝতে পারবে তুমি বড় হয়ে কী হতে চাও। ব্রাজিলিয়ানদের কাছে ফুটবলের অর্থ কী তুমি খানিকটা বুঝতে পারবে। এটা কেবলই একটা খেলা নয়, শত কষ্টের মাঝে থেকেও একজন ব্রাজিলিয়ানের মুখে হাসি ফোটাতে পারে ফুটবল, এটা শুধু খেলা কীভাবে হয়? 

     

    তোমার কুকুর বমবম তোমার সাথে খেলতে খেলতে দারুণ ডিফেন্ডার হয়ে উঠবে, তোমার ছোট্ট বন্ধুদের থেকেও ভাল। 

     

    আমি ব্রাজিলের হয়ে খেলব- তুমি সেদিনই মনস্থির করবে। কিন্তু তোমার পথটা সোজা হবে না, অনেকেই তোমার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। বিশেষ করে একজন কোচ, যার তোমার খেলার ধরন পছন্দ না। তিনি তোমাকে বারবার বলবেন আরো সিরিয়াস হতে, আরো হিসেবি হতে। তিনি বলবেন, এত ড্রিবল করে কোন ফায়দা নেই, স্কিল দেখানো বন্ধ কর। তিনি তোমাকে বলবেন যে তুমি কখনো পেশাদার ফুটবলার হতে পারবে না। 
    ওসব শুনে হতোদ্যম হয়ে যেও না। নিজের উপর বিশ্বাস রাখো, ওনার কথাগুলো অনুপ্রেরণা হিসেবে ব্যবহার কর। চোখ বন্ধ করে তোমার হিরোদের কথা ভাবো যারা তোমার মত সুন্দর ফুটবল খেলতে পছন্দ করতেন - তোমার বড়ভাই, ম্যারাডোনা, রোনালদো। চোখ বন্ধ করে তোমার বাবার কথাগুলো মনে করো, খেলতে হবে আনন্দের জন্য, নিজের মতো, ফুটবলের অর্থ তোমার কাছে স্বাধীনতা, যেমন ইচ্ছে বলকে নিয়ে খেলার স্বাধীনতা। যখন মাঠে নামবে এত হিসেব করার দরকার নেই, সব এমনিতেই হবে, তোমার রক্তে ফুটবল আছে। মাথা দিয়ে চিন্তা করার দরকার নেই তোমার, তোমার পা তোমার মাথার আগে জানবে কী করতে হবে। 
    রোমারিওকে ট্রফি ওঠাতে দেখার কয়েকমাসের মাঝেই তোমার গ্রেমিওর কোচ তোমাকে জানাবেন যে তুমি ব্রাজিলের অনূর্ধ্ব ১৭ দল থেকে ডাক পেয়েছো। তুমি তেরেসোপোলিসের ট্রেনিং গ্রাউন্ডে ঢুকে হাঁ হয়ে যাবে। ক্যাফেটেরিয়ায় ঢুকে দেখবে দেয়ালে বাঁধাই করা ছবি ঝুলছে - জিকো, পেলে, সক্রেটিস, বেবেতোর। ঐ কিংবদন্তীরা যে হলরুমে হেঁটেছেন, যে ক্যাফেটেরিয়ায় খেয়েছেন সেখানেই তুমি খাবে। ওনারা যেই ডর্মিটরিতে ঘুমিয়েছেন সেখানে তুমিও ঘুমাবে, আর স্বপ্ন দেখবে। 

    এর পরের চার বছর খুব দ্রুত চলে যাবে তোমার, ফুটবল ছাড়া আর কিছু করার সময় পাবে না তুমি। ১৯৯৮ সালে তোমার বয়স যখন ১৮ হবে তখন তোমার একটা স্বপ্ন পূরণ হবে। গ্রেমিওর সিনিয়র দলে খেলার সুযোগ পাবে তুমি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তোমার ভাই রবার্তোর সাথে খেলা তোমার হবে না। হাঁটুর ইনজুরিতে সে গ্রেমিও ছেড়ে পাড়ি জমাবে সুইজারল্যান্ডে। কিন্তু তুমি তো রবার্তোর সাথেই বড় হয়েছ, এই গ্রেমিওর সব কিছুই তুমি জানো, কী করতে হবে কী বলতে হবে। তোমার কোন সমস্যাই হবে না। ম্যাচের দিন যখন গায়ে গ্রেমিওর নীল কালো শার্ট চড়াবে তখন তোমার হয়ত মনে হবে তুমি যা চেয়েছিলে তার সবটুকুই পেয়ে গিয়েছ। কিন্তু না, তোমার গল্পের আরো অনেক অধ্যায় তখনো বাকি। 

    এর পরের বছরই ব্রাজিল জাতীয় দলের ক্যাম্পে ডাক পাবে তুমি। কিন্তু সেই ক্যাম্পে তুমি হাজিরা দেবে এক দিন দেরিতে, কারণ প্রথম ট্রেনিং এর দিন তুমি গ্রেমিওর হয়ে ক্যাম্পিওনাতো গাউচো ট্রফির ফাইনাল খেলতে মাঠে নামবে। তোমার প্রতিপক্ষ ইন্টারন্যাসিওনাল, সেই দলের ক্যাপ্টেন হলেন দুঙ্গা যাকে ৫ বছর আগে তুমি বিশ্বকাপ ট্রফি উঁচিয়ে ধরতে দেখেছ।
     
    ঐ ম্যাচ খেলে যখন তুমি পরদিন ব্রাজিলের ট্রেনিং ক্যাম্পে যোগ দেবে তখন অবাক হয়ে দেখবে, তোমার হিরোরা, বিশ্বকাপ জয়ী ব্রাজিলের তারকারা তোমাকে নিয়েই কথা বলছে। ১০ নাম্বার জার্সির ছোট্ট ছেলেটা কীভাবে দুঙ্গাকে কাটিয়ে ম্যাচ জেতানো গোল দিয়েছে সেটা নিয়ে তারা কথা বলছে। ওটা হবে তোমার জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্তগুলোর একটি। তুমি তখন বুঝতে পারবে, তোমার হিরোরা এখন তোমার টিমমেট।
     
    এখন তুমি কী করবে? তোমার মতই খেলবে নাকি হিসেবি হয়ে যাবে? চিন্তা করে বড়দের মত খেলবে? যেমনটা তোমার কোচ বলতেন।
     
    তোমাকে একটাই উপদেশ দিব আজ আমি। নিজের মত খেলে যাও, ফুটবলকে ছোটবেলায় যেমনটা ভালবাসতে তেমনি ভালবেসে যাও। ফুটবলের সুর আর তালটা বোঝার চেষ্টা কর, তাহলেই জীবনে অনেক মজা পাবে। 

    ব্রাজিল দলে সুযোগ পাওয়ার কারণে অনেক রাস্তা খুলে যাবে তোমার সামনে। তুমি ইউরোপে খেলার স্বপ্ন দেখা শুরু করবে। রোনালদো তোমাকে তাঁর বার্সেলোনার জীবন সম্পর্কে বলবেন। তুমি তাঁর ব্যালন দ’অর দেখবে, ক্লাবের হয়ে অর্জন সম্পর্কে জানবে। তোমার মনে হবে এমন ইতিহাসের অংশ তোমারও হওয়া উচিত। ২০০১-এ তুমি গ্রেমিওকে বিদায় বলে পিএসজিতে যোগ দেবে। 

    প্যারিসের জীবনটা কেমন? কী মুশকিল। সারা জীবন বস্তিতে বড় হওয়া একটা ছেলেকে আমি কীভাবে বুঝাবো ইউরোপের জীবন কেমন? অসম্ভব, আমি বললেও তুমি বুঝবে না বা বিশ্বাস করবে না। তুমি প্যারিস থেকে বার্সেলোনায় যাবে, তারপর যাবে মিলানে। সব খুব দ্রুত ঘটে যাবে। ইউরোপের অনেকেই তোমার খেলার ধরনটা বুঝতে পারবে না। অনেকেই বুঝতে পারবে না কেন তোমার মুখে সবসময় হাসি লেগে থাকে। তুমি তাদের বুঝাতে পারবে না যে তোমার হাসিমুখের একটাই কারণ-- ফুটবল। ফুটবলই তোমার আনন্দের চাবিকাঠি। এত সিরিয়াস হওয়ার কী আছে? ফুটবলের থেকে মজার আর কী আছে বল? আবারও মনে করিয়ে দেই, হিসেবি না হয়ে নিজের মত খেল।

    বিশ্বাস করবে না এখন হয়ত, তাও বলি। নিজের মত খেললে একদিন তুমি ব্রাজিলের হয়ে বিশ্বকাপ জিতবে। নিজের মত খেললে একদিন তুমি চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতবে, লা লিগা, সিরি আ জিতবে। নিজের মত খেললে তোমার হিরো রোনালদোর মত তুমি ব্যালন দ’অর জিতবে একদিন। তোমার জন্য সবচেয়ে গর্বের বিষয় কি হবে জানো? তুমি নিজের মত খেলে বার্সেলোনার ফুটবলকে বদলে দেবে। তুমি যখন স্পেনে পৌঁছাবে তখন রিয়াল মাদ্রিদ সবার স্বপ্নের ক্লাব। আর তুমি যখন স্পেন ছেড়ে যাবে তখন সব বাচ্চারাই খেলতে চাইবে বার্সেলোনার মত, তোমার মত। 

    বার্সেলোনায় থাকতেই তুমি সেখানকার ছোটদের দলের এক ছেলের নাম শুনবে। সে তোমার মতই ১০ নাম্বার জার্সি গায়ে খেলে। তোমার মতই ছোটখাটো সে, তোমার মতই সে ফুটবলকে নিয়ে নিজের মত খেলতে ভালবাসে। একদিন তুমি আর তোমার বার্সেলোনার সতীর্থরা বার্সেলোনার ছোটদের দলের খেলা দেখতে যাবে এবং ঐ ম্যাচ শেষে বুঝতে পারবে এই ছেলেটা সর্বকালের সেরাদের একজন হবে। এই ছেলেটা সবার থেকে আলাদা, তার নাম লিও মেসি। তুমি কোচদের অনুরোধ করবে যেন ছেলেটাকে বড়দের দলে নিয়ে আসা হয়। সে যখন প্রথম ড্রেসিং রুমে ঢুকবে সে দেখবে বার্সেলোনার সব খেলোয়াড়রা তাকে নিয়ে কথা বলছে। ঠিক যেমনটি তোমার সাথে হয়েছিল।

     

    তুমি ঐ ছেলেটিকে একটাই উপদেশ দেবে। তাকে বলবে, আনন্দের সাথে খেল। নিজের মত খেল।


     
    তুমি ঐ ছেলেটিকে একটাই উপদেশ দেবে। তাকে বলবে, আনন্দের সাথে খেল। নিজের মত খেল। বল নিয়ে যা করতে ভালো লাগবে সেটাই কর। দেখবে তোমার কথা ছেলেটা শুনবে। তুমি বার্সেলোনা ছেড়ে চলে গেলেও তোমার খেলা মেসির মধ্য দিয়ে বার্সেলোনায় বেঁচে থাকবে।
     
    জীবনে ভাল, খারাপ অনেক ঘটনাই ঘটবে। কিন্তু যা-ই হোক না কেন, ফুটবল ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে মাথা ঘামাবে না তুমি। অনেকে তোমার খেলার ধরন নিয়ে প্রশ্ন তুলবে, জিজ্ঞেস করবে কেন ম্যাচ হারার পরও তোমার মুখে হাসি থাকে। শত বিপদেও, শত ঝামেলাতেও একটা ছবি তুমি সবসময় তোমার সাথে রাখবে। বাবা আর তোমার একটা ছবি আছে, সেখানে তোমরা দুইজন ফুটবল খেলছ। দুইজনের মুখে হাসি। তোমার পায়ে বল, তুমি ফুটবল নিয়ে খেলে খুশি। বাবা তোমাকে দেখছেন, তিনি তোমার খেলা দেখে খুশি। ছবিটা দেখবে মাঝে মাঝে, ঐ অনুভূতিটা মনে করার চেষ্টা করবে।
     
    বাবা যা বলেছেন সবসময় মনে রাখবে, খেলবে তোমার মত করে। বল নিয়ে যা করতে ভাল লাগবে সেটাই করবে। কারণ ফুটবল মানে আনন্দ, ফুটবল মানে স্বাধীনতা।