• ইংল্যান্ড-পাকিস্তান
  • " />

     

    পাকিস্তানের শেষ জুটি, ইংল্যান্ডেরই শেষ হাসি!

    পাকিস্তানের শেষ জুটি, ইংল্যান্ডেরই শেষ হাসি!    

    শেষ উইকেট জুটিতে ৫০ রান, রাহাত আলি ও সোহেল খানের প্রতিরোধটা ৬৭ বলের। পাকিস্তান ইনিংসে বলের দিক দিয়ে শুধু নয়, রানের দিক দিয়েও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জুটি! ফিরে ফিরে আসে সেই এজবাস্টন, ২০০৫ সালের এজবাস্টন। ব্রেট লি ও মাইকেল ক্যাসপ্রোভিচের জুটি যেখানে আশা দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়াকে, হারা ম্যাচটা প্রায় জিতে গিয়েও হারতে হয়েছিল তাঁদের! পাকিস্তান অবশ্য জিততে নয়, দূরসীমাতে ছিল ড্র। শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার ভাগ্যই বরণ করতে হলো পাকিস্তানকে, অস্ট্রেলিয়া থেমেছিল ৩ রান দূরে, পাকিস্তান থামলো ৮০ বল ও ১৪২  রান দূরে।   

     

    রাহাত-সোহেলের জুটিটার কথাই বলতে হচ্ছে মূলত পাকিস্তানের এক ‘এপিক’ ধ্বসের কারণেই! ২৩ বল, ১ রান, ৪ উইকেট। ‘এপিক’ এজবাস্টনের চিত্রনাট্য গড়া থেকে এক ধাক্কায় ‘এপিক’ ধ্বস পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ে! ১২৪ রানে ৩ উইকেট থেকে ১২৪ রানে ৭ উইকেট নেই! ফল মিললো ইংল্যান্ডের ধৈর্য্যের, ফল মিললো অ্যালেস্টার কুকের বোলারদের ওপর আস্থার! প্রথম ইনিংসে ১০৩ রানে লিড পাওয়া পাকিস্তানকেই তাই এজবাস্টনে হারিয়ে দিল ইংল্যান্ড, এগিয়ে গেল সিরিজে। ওভালে না হারলেই হবে ইংল্যান্ডের, জিতবে সিরিজ।

     

    ৩১১ রানের লিড নিয়ে শেষ দিনে ব্যাট করতে নেমেছিল ইংল্যান্ড, জনি বেইরস্টোর(৮৬) সেঞ্চুরি হয়নি, বরং মঈন আলি করেছেন ৬০ থেকে ৮৩ রান। ৩৪৩ রানে লক্ষ্য দিয়ে থেমেছে ইংল্যান্ড, পাকিস্তানের টিকে থাকার লড়াইটাও সেখান থেকেই। ম্যাচ জেতার আশা নেই, টিকে থাকাটাই তো সব!

     

    প্রথমে গুবলেট পাকিয়েছেন মোহাম্মদ হাফিজ, স্টুয়ার্ট ব্রডের লেগস্ট্যাম্পের বাইরের বল পুল করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন ওকসকে। ইংল্যান্ডের ‘ভাগ্য-সহায়ক’ উইকেট, পাকিস্তানের ভাগ্য-নির্ধারনের পূর্বাভাসও হয়তো!

     

    ফ্ল্যাট উইকেটে কিছু নেই, তবে ইংলিশ বোলাররা বল একটু পুরোনো হয়ে যাওয়ার পরই করতে শুরু করেছেন রিভার্স সুইং। লাইন লেংথে ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন লম্বা সময় ধরে। আর মঈন আলি আদায় করেছেন ড্রিফট। সামি আসলাম ও আজহার আলির ৭৩ রানের জুটিটাও ভেঙ্গেছে এভাবেই, মঈন আলি টসড-আপ ডেলিভারিতে আজহারকে প্রলুব্ধ করেছেন ড্রাইভ খেলতে, পরে ধোঁকা দিয়েছেন ড্রিফটে। স্লিপে ক্যাচ!

     

    এরপর অ্যান্ডারসনের রিভার্স সুইং, ইংল্যান্ডে এবারের সফরে ধুঁকতে থাকা ইউনুস ক্যাচ দিয়েছেন ওই স্লিপেই। মিসবাহ সংগ দেয়ার চেষ্টা করেছেন সামিকে, তবে ফিনের পেস আর সামান্য সিম-বৈচিত্রে তিনিও ক্যাচ দিয়েছেন বেইরস্টোকে। লর্ডসে উইকেটশুণ্য থাকা ফিন বাদ পড়েছিলেন ওল্ড ট্রাফোর্ডে, একটা উইকেটের জন্য অপেক্ষাটা অবশেষে শেষ হলো তাঁর!

     

    এরপরই পাকিস্তানের ওই ধ্বস, যার আপাত শেষটা হয়েছিল সামিকে দিয়েই। স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে থাকা তরুণ পাকিস্তানী ওপেনারের শেষটা হলো করুণই, ফিনের ভেতরের দিকে বলটা ছেড়ে দিয়ে যে হলেন বোল্ড! পাকিস্তানের টেল-এন্ডাররা এরপর একটা করে ডেলিভারি টিকে যান, ফিরে আসে কি সেই ‘এপিক’ এজবাস্টনের স্মৃতি!

     

    যে এজবাস্টনে চতুর্থ দিনের শেষ বলে বোল্ড হয়েছিলেন মাইকেল ক্লার্ক, স্টিভ হার্মিসনের বলে। সেই এজবাস্টনেই তো এগিয়ে থাকা পাকিস্তান পিছিয়ে গিয়েছিল দ্বিতীয় দিনের শেষ বলে যখন ক্রিস ওকসের বলে পেছনে ক্যাচ দিলেন আজহার আলি!

     

    রাহাত আলি আর সোহেল খান মিলে খেলতে থাকেন, একটা করে বাউন্ডারি হয়, প্রায় শেষ হতে যাওয়া টেস্টের শেষটাও তাই হয় না। মাইকেল ক্যাসপ্রোভিচের আউটে শেষ হয়েছিল সেবার, এবার সোহেল খান। রোমাঞ্চে নিশ্চিতভাবে এগিয়ে সেই ২০০৫ অ্যাশেজের দ্বিতীয় টেস্টটাই, তবে এবারেরটা আর যাই হোক, সেরকম কিছু আভাস তো দিয়েছিল!


    তবে সেবার কিংবা এবার, কোনোবারই ইংল্যান্ডকে নিরাশ করলো না এজবাস্টনের শেষ দিন!