মঈনে ম্লান পাকিস্তান
বাউন্সারটা গিয়ে লাগলো ঠিক হেলমেটের যেখানে ব্যাজটা থাকে, সেখানে। ব্যাজটা উড়ে গিয়ে পড়লো ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে থাকা ফিল্ডারের হাতে। ওয়াহাব রিয়াজ ক্রিজে স্বাগত জানালেন মঈন আলিকে। সে ওভারের শেষ বলেই দারুণ টাইমিং মঈনের, প্যাডের ওপরের বলে বাউন্ডারি। ওই মঈনেরই ‘লোপ্পা’ ক্যাচটা স্লিপে ফেলে দিলেন আজহার আলি ৯ রানে, মোহাম্মদ আমিরের বলে।
তিনটা ঘটনাকে একত্র করলেই ওভাল টেস্টের প্রথম দিনের একটা চিত্র পাওয়া যাবে। পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণ চোখ রাঙিয়ে গেছে, ইংলিশ ব্যাটসম্যান বা আরও নির্দিষ্ট করে বললে মঈন, জনি বেইরস্টো ও ক্রিস ওকস দিয়েছেন উপযুক্ত জবাব, সঙ্গে পেয়েছেন পাকিস্তানের কাছ থেকে ‘ক্যাচ মিসের মহড়া’র উপহার!
সবুজাভ উইকেটে অ্যালেস্টার কুকের টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্তটাকে রীতিমতো উপহাসে পরিণত করেছিলেন পাকিস্তানী পেসাররা। মূল ভূমিকাটা ছিল এ টেস্টে দলে ফেরা রিয়াজের। যদিও শুরুটা করেছিলেন আমির, অ্যালেক্স হেলসকে ‘হলো-কি-হলো-না’ রকমের এক ক্যাচে। এরপর রিয়াজ, পরপর দুই ওভারে ফিরিয়েছেন ইংল্যান্ডের গোল্ডেন বয় জো রুট আর এখনও টেস্টে কিছু করে দেখানোর অপেক্ষায় থাকা জেমস ভিনসকে। গ্যারি ব্যালান্সের ক্যাচও ফেলেছিলেন আজহার, পরে ব্যালান্স সেই তাঁকেই আবার দিয়েছেন ক্যাচ।
১১০ রানে ৫ উইকেট বনে যাওয়া ইংল্যান্ড তখন ধুঁকছে। এরপরই মঈন আর বেইরস্টোর জুটি। ৯৩ রানের জুটি গড়ার আগেই আউট হতে পারতেন দুই ব্যাটসম্যান, মঈন যেমন ক্যাচ দিয়েও বেঁচেছেন, বেইরস্টো বেঁচে গেছেন ইনিংসে সাতটা নো বল করা রিয়াজেরই এক নো বলের কারণে। রিয়াজ আসলে ‘নো’ করেছেন আরও বেশী, আম্পায়ারদের চোখ এড়িয়ে গেছে এসব।
বেইরস্টোকে আমির ফেরালেও মঈনের রান করা থামেনি, এবার সঙ্গ দিয়েছেন ক্রিস ওকস। দুজনের ৭৯ রানের জুটিটা যখন ভাঙ্গে, মঈনের রান তখন ৮৩। সে ওভারেই ব্রড নেই, ওকসের মতো তাঁর উইকেটটাও পেয়েছেন গত টেস্টে পাকিস্তানের বোলিংয়ের মোটা দাগ, সোহেল খান। সব মিলিয়ে ইনিংসে নিয়েছেন ৫ উইকেট! কিন্তু সোহেলকে নিয়ে আসলে কথা হচ্ছে কই, তিনিও যে ম্লান হয়ে গেছেন মঈনের ইনিংসে!
সোহেল যখন ফিনকেও ফেরালেন, মঈন তখনও সেঞ্চুরি থেকে ১১ রান দূরে, সঙ্গ দেয়ার মতো আছেন শুধু জিমি অ্যান্ডারসন। সেই সোহেলকে চার ও ইয়াসির শাহকে ছয় মেরে ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি করেছেন মঈন। লেট মিডল অর্ডারের তাঁর মতো অলরাউন্ডারকের কেন ‘পুষে’ রেখেছে ইংল্যান্ড, জবাব বোধহয় সেটারও এই সেঞ্চুরি!
মঈন বা ইংল্যান্ডের ব্যাটিং যেখান থেকে শেষ, বোলিং শুরু হলো সেখান থেকেই। আগের টেস্টে পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ে হঠাৎ আবিষ্কার সামি আসলামকে এলবিডাব্লিউ করেছেন স্টুয়ার্ট ব্রড। আজহার আলির কালকে ব্যাটিংয়ের সঙ্গী নাইটওয়াচম্যান ইয়াসির, দুজনেরই রানের কলাম এখনও শুন্য। ওভাররেটেও আবার বেশ পিছিয়ে আছে মিসবাহর দল, সব মিলিয়ে খেলা হয়েছে তাই মোটে ৮০ ওভার।
যে ৮০ ওভারে ইংল্যান্ডকে চাপে ফেলেও পাকিস্তান লাগামটা ছেড়ে দিয়েছে তাই। সোহেল-রিয়াজ-আমিরকে ছাপিয়ে ওভালের প্রথমদিনের নায়কের নামও তাই একটাই, মঈন আলি!