ইউনুসেই উজ্জ্বল পাকিস্তানের স্বপ্ন
ইনিংসে সেটাই প্রথম ছয় নয়। মঈন আলিকেও প্রথম মারা ছয় নয়। বাউন্ডারি মেরে ‘ল্যান্ডমার্ক’-এ পৌঁছানোটাও নতুন নয়। ইউনুস খানের জন্য ডাবল সেঞ্চুরিও তো নতুন নয়। পাকিস্তানকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করা বা অনেক এগিয়ে দেয়া ইনিংস খেলাও নতুন নয় তাঁর। তবুও, ওভালে মঈন আলিকে মারা সেই ছয়টা বিশেষ কিছু। তবুও, ইউনুস খানের এই ডাবল সেঞ্চুরিটা বিশেষ কিছু। তাঁর জন্য, তাঁর দলের জন্য।
শেষ স্বীকৃত ব্যাটসম্যান সরফরাজ আহমেদ যখন আউট হন, ইউনুস ডাবল সেঞ্চুরি থেকে তখনও ৭২ রান দূরে। তৃতীয় দিনে প্রথম রানটা নিতেও ১৩ বল অপেক্ষা করতে হয়েছিল। ১৩৩ রানে তো এলবিডব্লিউও দিয়েছিলেন ব্রুস অক্সেনফোর্ড। রিভিউ নিয়ে বেঁচে গেলেন। সব ছাপিয়ে, টেল-এন্ডারদের নিয়েই ষষ্ঠ ডাবল সেঞ্চুরি করলেন ইউনুস। ৩৫ বছর পূর্ণ হওয়ার পর তাঁর এটি তৃতীয় ডাবল, এত বছর পর সমানসংখ্যক ডাবল সেঞ্চুরি আছে শুধু কুমার সাঙ্গাকারার।
অথচ সিরিজের আগের ইনিংসগুলোতে ইউনুস শুধু নিজেকেই খুঁজে ফিরেছেন। ৩৮ বছর বয়স হয়ে গেছে, ইউনুসের একেকটা ব্যর্থ ইনিংস যেন বেলাশেষের গানে নতুন করে সুর তোলে প্রতিবার। মঈনকে সেই ছয় মেরে ইউনুস সেই সুরটা কেটে দিলেন আরেকবার। ওভালের গ্যালারিতে গিয়ে পড়া বলটার মতোই দূরে সরিয়ে দিলেন সমালোচনা।
ইউনুসের ইনিংসটা কিন্তু ছিল মাথা উঁচু করে রাখার মতো....
তবে ইউনুস থামলেন, জিমি অ্যান্ডারসনের অফস্পিনের মতো এক ডেলিভারিতে, ৩০৮ বলে ২১৮ রান করে। ৩১ চার, ৪ ছয়। ততক্ষণে পাকিস্তানের হয়ে পাঁচ নম্বরে নেমে সবচেয়ে বড় ইনিংস খেলা হয়ে গেছে। পাকিস্তানের লিডও ছাড়িয়ে গেছে ২০০। শেষ তিন উইকেটে ১৪৫ রান তুলেছে পাকিস্তান, ওভালের উইকেট ব্যাটিং সহায়কই তো! ঠিক তা নয়। উইকেটে এখনও বাউন্স আছে, আছে টার্নও। পাকিস্তানের চিরায়ত পেস আক্রমণের সঙ্গে ইয়াসির শাহর লেগস্পিন, ইংল্যান্ডের জন্য কাজটা সহজ হওয়ার কথা ছিল না।
হয়নিও। ওয়াহাব রিয়াজের পেস আর বাউন্সে প্রথমে হার মেনেছেন অ্যালেস্টার কুক। তারপরের গল্প ইয়াসির শাহ কেন্দ্রিক। অ্যালেক্স হেলস আর জো রুটকে করেছেন এলবিডব্লিউ, জেমস ভিনস দিয়েছেন কাভারে ক্যাচ। দুইদিন বাকী আছে, তবে ইংল্যান্ড এখনও পিছিয়ে ১২৬ রানে। হাতে ৬ উইকেট। প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ডের দুই ত্রাতা জনি বেইরস্টো ও মঈন আলি আছেন এখনও। আছেন তাঁকে দলে ফেরানো স্বপক্ষে কিছু যুক্তি দেখানোর অপেক্ষা থাকা গ্যারি ব্যালান্স।
তাঁদের মধ্যে কাউকেই খেলতে হবে বড় কোনো ইনিংস। সিরিজ জিততে হলে তাঁদের মধ্যেই কাউকে নিতে হবে ইউনুস খানের মতো দায়িত্ব। যিনি বয়ে নিবেন ইংল্যান্ডের ভার।
তবে এমন কেউ করলেও তুলনাটা হবে শুধু ইউনুসের মহাকাব্যিক এক ইনিংসের সঙ্গেই! যে ইনিংসটার সবরকমের ক্ষমতা আছে, ম্যাচের গতিপথ নির্ধারণের!