জিদানপুত্রের দিনে মারিয়ানো হ্যাটট্রিক
প্রথম লেগে ৭-১ গোলের জয়। শেষ বত্রিশের দ্বিতীয় লেগটা রিয়াল মাদ্রিদের জন্য তাই শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতাই ছিল। কিন্তু প্রতিপক্ষ খুদে কালচারাল লিওনেসার জন্য ম্যাচটি ছিল খুব সম্ভবত তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড়। সেগুন্দা ডিভিশন বি-এর ক্লাবটির জন্য সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে খেলাটা ছিল তো অনেক বড় সম্মান। ম্যাচের ফলটা অনুমিতই ছিল, লিওনেসাকে ৬-১ গোলে হারিয়ে ১৩-২ অ্যাগ্রিগ্রেটে উঠে গেছে কোপা দেল রের শেষ ১৬-তে। ওদেগার্দ, মারিয়ানো ও জিদানপুত্র এনজোই ছিল এই ম্যাচে রিয়ালের প্রাপ্তি।
শনিবার এল ক্লাসিকোর কথা মাথায় রেখে বলতে গেলে প্রায় দ্বিতীয় সারির দলই নামিয়েছিলেন জিদান। এক ঝাঁক তরুণ দিয়ে সাজানো দলটিতে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ছিলেন টিনএজার মার্টিন ওদেগার্দ। দলবদলে রীতিমত যুদ্ধ করে কেনা এই বিস্ময়বালককে রিয়ালের হয়ে প্রথম সুযোগ পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৬৭৯ দিন! কিন্তু পুরো ম্যাচে নিজের পায়ের জাদুতে মুগ্ধ করে রেখেছিলেন সমগ্র বার্নাব্যুকে। মাদ্রিদ সমর্থকদের মুহুর্মুহু 'ওদেগার্ড! ওদেগার্ড!!' মুখর ছিল সমগ্র স্টেডিয়াম। এদিন সুদীর্ঘ ২ মাস ইঞ্জুরি কাটিয়ে ফিরেছেন ক্যাসেমিরো।
ম্যাচ শুরু হতে না হতেই গোল! মাত্র ২২ সেকেন্ডে অ্যাসেন্সিওর পাস থেকে রিয়ালকে লিড এনে দেন মারিয়ানো দিয়াজ, যা কোপা দেল রে ইতিহাসে রিয়ালের দ্রুততম গোল। ২৩ মিনিটে দানি কারভাহালের নিখুঁত ক্রসে হেড করে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন হামেস রদ্রিগেজ। এর মিনিট বিশেক পরেই নিজের দ্বিতীয় গোল করেন মারিয়ানো। আবারো কারভাহালের পাস থেকে আগুনে এক শটে লিওনেসা জালে বল জড়ান এই স্ট্রাইকার। রিয়ালের হয়ে নেওয়া মাত্র ৪ শটের ৩টিতেই লক্ষ্যভেদ করলেন দ্যা জাগুয়ার'। প্রথমার্ধেই হ্যাটট্রিকটাও পেয়ে যেতে পারতেন মারিয়ানো, কিন্তু রেফারির ভুলে বাতিল হয়েছিল অন্য গোলটি। খেলার অন্তিম মুহূর্তে গোল পাওয়ায় অবশ্য ম্যাচবলটা ঠিকই বাড়ি নিয়ে যেতে পারছেন এই স্ট্রাইকার। মারিয়ানোর গোলের পরপরই ৩০ গজ থেকে নেওয়া শটে ব্যবধান কমান গঞ্জালেজ। দর্শনীয় গোলটির পর গঞ্জালেহ সমগ্র বার্নাব্যুর বাহবাও পেয়েছেন। ১৯৫৫ সালের পর আবার বার্নাব্যুতে গোলের দেখা পেল লিওনেসা।
দ্বিতীয়ার্ধের ৪৬ মিনিটেই ইস্কোর বদলে মাঠে নামেন জিদানপুত্র এনজো। রিয়ালের হয়ে প্রতিযোগীতামূলক খেলায় অভিষেকেই গোল পেতে এনজোর সময় নিয়েছেন মাত্র ১৮ মিনিট, তাও আবার প্রথম শটেই! ৬৪ মিনিটে ওদেগার্ডের চমৎকার ড্রিবলের পর পাওয়া পাস থেকে প্রতিপক্ষ গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন এনজো। বাবা জিদানের প্রথম গোলের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল ৩৪৫ মিনিট।
গোলের পর থেকেই 'এনজো! এনজো!!' চিৎকারে ভারী হয়ে যায় বার্নাব্যুর বাতাস। অভিষিক্তদের মধ্যে ওদেগার্ড, এনজোর পাশাপাশি নজর কেড়েছেন তরুণ রাইটব্যাক আলভারো তেহেরো। ভাগ্য সহায় হলে গোলও পেয়ে যেতে পারতেন এই তরুণ। তার দর্শনীয় এক ভলি দুর্দান্তভাবে রুখে দেন লিওনেসা কিপার মন্তেগাউড। গোল না পেলেও অ্যাসিস্ট ঠিকই পেয়েছেন তেহেরো। তার নিখুঁত ফ্রিকিক থেকেই নিজের হ্যাটট্রিক পূরণ করেন মারিয়ানো। অতিরিক্ত সময়ে নাচোর ক্রস ক্লিয়ার করতে গিয়ে বল নিজেদের জালে ঠেলে দেন মরগাদো। ৬-১ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে জিদানের তরুণ তুর্কিরা।
এই জয়ে কোপা দেল রের শেষ ১৬-তে ওঠারর পাশাপাশি একটি রেকর্ডও করেছেন জিদান। টানা ৩২ ম্যাচ জিতে পেরিয়ে গেছেন আনচেলত্তিকে। রিয়ালের ইতিহাসে টানা সবচেয়ে বেশি ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড থেকে এখন দুই ম্যাচ দূরত্বে ফরাসি কিংবদন্তী। ৩৪ ম্যাচ জিতে জিদানের সামনে এখন কেবল ডাচ কোচ লিও বিনহাক্কের।