'কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়'
আয়ারল্যান্ড, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ত্রিদেশীয় সিরিজ। এরপর আবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। অন্তত দেড় মাসের জন্য দেশের বাইরে থাকছে বাংলাদেশ দল। ইংল্যান্ডে ক্যাম্পের আগে সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। দলের সম্ভাবনা, লম্বা সফরের ক্লান্তি, মানসিক প্রস্তুতি- কথা বলেছেন এমন অনেক কিছু নিয়েই…
কঠিন, তবে অসম্ভব নয়
গ্রুপটা কঠিন। আয়ারল্যান্ডের ত্রিদেশীয় সিরিজের চারটা ম্যাচ জিতে আত্মবিশ্বাস আনতে হবে। তখন বলবো, কঠিন তবে অসম্ভব নয়। বাস্তবতা চিন্তা করলে, আপনি যদি প্রতিপক্ষ দেখেন, এটা সহজ হবে না। আমরা এই কন্ডিশনেও আগে ইংল্যান্ডকে হারিয়েছি, কার্ডিফেই অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছি। সেগুলো অবশ্য ইতিহাস। তবে আমার কাছে মনে হয়, (ভাল করা) সম্ভব। এটা নির্ভর করছে, আমরা কিভাবে মানসিকতা তৈরী করি। ২০-২৫ দিনের প্রস্তুতিতে খুব বেশী ব্যবধান হবে না, যতক্ষণ না আমরা মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে পারি।
মানসিক প্রস্তুতিই আসল
এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের পুরো দলেরই মানসিকভাবে প্রস্তুত হওয়া উচিৎ। আমার মনে হয় না, ২০-২৫ দিনের প্রস্তুতিতে আপনি ওখানে গিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে যেতে পারবেন। বড় বড় দলের বিপক্ষে খেলাগুলোতে মানসিক লড়াই থাকবে। তাদের পরিচিত কন্ডিশনে খেলতে হবে। প্রাক-গ্রীষ্ম হলেও শীতের আমেজ থাকবে। প্রতিপক্ষ যা করবে, আমাদের দুইগুণ করতে হবে, অন্তত মানসিক দিক দিয়ে। এজন্য আয়ারল্যান্ড সিরিজ গুরুত্বপূর্ণ। অনেক হিসাব নিকাশের ব্যাপার আছে এখানে। ওইখানে ভাল খেললেই চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ভাল খেলার সুযোগ থাকবে, কারণ খারাপ করলে চাপ চলে আসবে। সবকিছুর জন্য বলবো, মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে না পারলে কঠিন হবে। যদি আমরা প্রস্তুত থাকি, সুস্থ থাকি, আশা করি ভাল খেলা হবে।
গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতি ম্যাচ
প্রস্তুতি ম্যাচ মানে আমার কাছে জয়-পরাজয় না। আমার কাছে মনে হয়, এটা হলো আপনি যেটা করতে চাচ্ছেন, সেটা হচ্ছে কিনা। আমি যেমন কিছু করতে গেলে যদি ব্যর্থও হই, সেটাই করতে চাই। কিছুটা হলেও কাজে দেয় এটা। আমার তো মাঝে মাঝে মনে হয়, প্রস্তুতি ম্যাচে রান না করলেই ভাল, উইকেট না নিলেই ভাল। আমি যে প্রস্তুতি নিচ্ছি সেটাই। আমার কাছে এটাই মনে হয়েছে সারাজীবন।
হঠাৎ ধ্বসের দিকেও রাখতে হবে নজর
শ্রীলঙ্কার সাথে শেষ ওয়ানডেতে ২৮০ করতে পারিনি। আবার প্রস্তুতি ম্যাচে ৩৫০ প্রায় চেজ করে ফেলেছিলাম। দ্রুত উইকেট পড়ে যাওয়াতে সমস্যা হয়ে গেছে। কিছু জিনিস আছে, শক্তভাবে মোকাবেলা করতে হয়। সাম্প্রতিক সময়ে কিছু জায়গায় ব্যর্থ হয়েছি। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে দ্বিতীয় বা তৃতীয় ওয়ানডে দেখেন, ধ্বস নেমেছে ইনিংসে। এসব জায়গায় আরেকটু শক্ত হতে হবে। সেগুলো ভালভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে। ম্যাচের অবস্থা বুঝতে হবে।
ভাল শুরু, বাড়তি আত্মবিশ্বাস
টুর্নামেন্টের শুরুতে ভাল করতে পারলে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। তখন কী হতে পারে, আপনি জানবেনও না। বিশ্বকাপে আমরা এমন অবস্থায় ছিলাম। তবে এবারের ব্যাপারটা আবার আলাদা। বড় স্কোর করার মানসিকতা থাকতে হবে। ২৮০-৩০০ রান ইংল্যান্ডের উইকেটে হবে, এটা নিশ্চিতই। আইসিসির টুর্নামেন্টগুলোতে উইকেট এমনিতেই ফ্ল্যাট থাকে।
লম্বা সফরের ক্লান্তি
এতো বড় সফর তো প্রথম করছি না। তবে এটা আমাদের সাথে হয়। এমনও হয়েছে সফরের শেষদিকে, একটা সেশন খুব ভাল খেলে পরের সেশনটা বাজে খেলেছি। এমন ইতিহাস আছে অবশ্যই। ২০১৫ তে সবসময় জয়ের ভেতরে ছিলাম। পয়েন্ট টেবিলে এমন অবস্থায় ছিলাম, যে কোনো সময় ভাল জায়গায় যেতে পারি। এ কারনে সেবার অবসাদ আসেনি। যে কারণে আগেভাগের জয় গুরুত্বপূর্ণ।
বোলিং কম্বিনেশন
পাঁচটা পেসার আছে। সাকিব আছে। মিরাজ আছে। রিয়াদ ভাল বোলিং শুরু করেছে, যদিও টি-টোয়েন্টিতে। সৌম্য আছে, যদিও তাকে দিয়ে তেমনটা করানো হয় না। আসলে বোলিংয়ে আমাদের ‘অপশন’ আছে। তিন পেসার খেলানোর সম্ভানাই বেশী। সেখানে গেলেই আসলে বুঝা যাবে।
একতাই বল
দলের সবার একসাথে থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ। সবার একসাথে ভাল সময় যাবে না। হয়তো কারও খারাপ সময় যাবে। একটা পরিবারের মতো করে থাকলে এসব কাটানো যাবে। আর ব্যক্তিগত কোনও লক্ষ্য নেই। টি-টোয়েন্টি ছেড়েছি। একসময় এটাও ছাড়তে হবে। এটা ভেবে তাই আলাদা চাপ নেয়ার দরকার নেই।